আল বাইয়্যিনাত প্রতিবেদন: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান হচ্ছে-উনি শুধু আল্লাহ নন এছাড়া সমস্ত মর্যাদার অধিকারী। আর সে সুমহান মর্যাদাসমূহের প্রকাশিত কয়েকটির অন্যতম হচ্ছে- সিনা মুবারক চাক এবং আরশে আ’যীমে মিরাজ রজনীতে সুমহান আল্লাহ রব তায়ালার পবিত্র নৈকট্য। যা দুই ধনুকের সম্মিলনের চেয়েও অধিকতর নিগূঢ় নৈকট্য। এসবই উম্মতের অনুধাবন হেতু আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। মূলতঃ তিনি অনুক্ষণই আল্লাহ পাক রব্বুল ইজ্জত-উনার একান্ত সান্নিধ্যে দীদারে মশগুল।
ইমামে আ’যম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবে আ’যম, কুতুবুল আলম, সুলতানুন নাছীর, আওলাদে রসূল, মাওলানা, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী মিরাজ শরীফ-এর হাক্বীক্বত আলোচনা প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন।
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন আল্লাহ পাক ও বান্দার মাঝে ইশক ও মুহব্বতের মকবূল মধ্যস্থতাকারী সর্বশ্রেষ্ঠ ওসীলা। অনুরূপ উম্মতের পরবর্তী সর্বশ্রেষ্ঠ ওসীলা হচ্ছেন শায়খ বা মুর্শিদ। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে বান্দা উম্মতী মিরাজের সোপান ছলাত বা নামায লাভ করেছে; নববী যুগের পরে অনুরূপ এই ছলাত যে মিরাজের হাক্বীক্বতে পৌঁছায় তার সোপান বা সিঁড়িও ওই শায়খ বা মুর্শিদ। মূলতঃ আবদিয়তের প্রতিটি বিষয়ের হাক্বীক্বতে পৌঁছার ওসীলাই হচ্ছেন শায়খ বা মুর্শিদ। কাজেই হাক্বীক্বী আবদিয়ত লাভ করতে হলে প্রতিটি বান্দা ও উম্মতকে হক্কানী-রব্বানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফের চর্চার মাধ্যমে ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করতে হবে। অন্যথায় বান্দা কস্মিনকালেও আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব উনাদের মুহব্বত-মারিফত লাভ তথা কামিয়াবী অর্জন করতে পারবে না।
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী আরো বলেন, পবিত্র শবে বরাত আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার পক্ষ হতে বান্দার ভাগ্য সুপ্রসন্ন করার এক বেমেছাল রাত। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পক্ষ হতে এই সুমহান রাত বান্দার জন্য খাছ রহমত, বরকত, ছাকীনা সর্বোপরি মুহব্বত-মা’রিফত, নিছবত-তাওয়াল্লুক বিশেষ করে খাছ সন্তুষ্টি হাছিলের সর্বোত্তম রাত্রি। ক্বুরআন শরীফ-এ মহিমান্বিত এ রাতকে ‘লাইলাতুম মুবারকা’ আর হাদীছ পাক- এ বরকতময় এ রজনীকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ এবং ফার্সিতে এ মুবারক রাতকে ‘শবে বরাত বা শব-ই-বরাত’, বাংলায় ‘ভাগ্য রজনী’ রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
কিন্তু ওহাবী, সালাফী, দেওবন্দী, তাবলীগী, জামাতীসহ সব বাতিল ফিরক্বার লোকেরা এ মহিমান্বিত রাত্রি পালনকে বিদয়াত বা নাজায়িয বলে এ সুমহান রাতের নিয়ামত থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে থাকে যা ইহুদীদেরই নীল নকশার গোপন বাস্তবায়ন। মুসলিম উম্মাহর উচিত এ মহান রাতে বেশি বেশি দোয়া-ইস্তিগফার ও ইবাদত- বন্দিগীর মাধ্যমে আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের রেযামন্দি-সন্তুষ্টি হাছিলের কোশেশ করা। আর প্রত্যেক সরকার প্রধানের উচিত বান্দা যাতে এসব মহান রাত ইবাদত-বন্দেগীতে অতিবাহিত করতে পারে সে জন্যে কমপক্ষে তিন দিন করে ছুটি প্রদান করা।
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী আরো বলেন, পবিত্র রমাদ্বানুল মুবারক অত্যাসন্ন। এ মাসের ইজ্জত-সম্মান রক্ষার ব্যাপারে সরকারের যেমন দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে তেমনি এ মাসে সর্বনি¤œ আয়ের একজন মুসলমানও যেন সস্তায় দ্রব্য সামগ্রী ক্রয় করে সুষ্ঠুভাবে রমাদ্বান শরীফ-এর রোযা পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের রোযা পালন সহজ করণার্থে ডিউটি তথা নির্দিষ্ট কাজ কমিয়ে দেয়াসহ রমাদ্বান শরীফ-শুরুর পূর্বেই অতিরিক্ত ভাতা বা বোনাসের ব্যবস্থা করাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করাও সরকারের অন্যতম দায়িত্ব- কর্তব্য।
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী আরো বলেন, ফ্রান্সে বোরকা ও হিযাব নিষিদ্ধ করাটা মানবতা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের চরম লঙ্ঘন। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পক্ষে এ ধরনের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী আইন পাস অন্য ধর্মমত ও মানবতার নিকৃষ্ট অবমাননা। যা কথিত মানবাধিকার সংরক্ষণকারীদের কর্তৃক অনুষ্ঠিত জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ফ্রান্সের এ অনৈতিক সিদ্ধান্ত মূলত পোপ কর্তৃক ক্রুসেড ঘোষণার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। যে সব দেশই এ ধরনের ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সে সব দেশই যে খ্রিস্টবাদের লালনকারী দেশ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মুসলমানগণ বুঝতে না পারলেও সারা বিশ্বের মুসলমানদের উপর চলছে ভয়াবহ ক্রুসেড যুদ্ধ। এর পরিণামে জালিম, জঙ্গি কাফিরদের উপর নেমে আসছে খোদায়ী আযাব-গযব; যা মুসলমানদের পক্ষ থেকে খোদা তায়ালার নেয়া কাফিরদের জুলুম-অত্যাচারের প্রতিশোধ। তবে মুসলমানদেরও উচিত খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মত ও পথে ধাবিত হওয়া।
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী আরো বলেন, প্রতিবারের মত এ বছরও সউদী ওহাবী সরকার শা’বান মাসকে আগ-পিছ করে মুসলমানদের শবে বরাত, রমাদ্বান শরীফ-এর রোযাসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগী যথাসময়ে পালন থেকে মাহরূম করে সীমাহীন অমার্জনীয় অপরাধ করেছে। মুসলিম বিশ্বের উচিত এ বিষয়ে শক্ত প্রতিবাদ করা এবং ইহুদী পোষ্য এসব ইসলাম দ্রোহীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
উল্লেখ্য, রাজারবাগ শরীফ-এ অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৭ রজব, ১৪৩১ হিজরী পবিত্র মিরাজ শরীফ, ১৪ শা’বান দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হয়। এসব মাহফিল-এ ইমামে আ’যম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে মুবারক নছীহত পেশ ও দোয়া-মুনাজাত পরিচালনা করেন।
আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত ও মাহফিল সংবাদ