আল্লামা মুফতী মুহম্মদ কাওছার আহমদ
সুন্নতবিরোধী ও বিদয়াত প্রচলনকারীরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্তিবা (অনুসরণ-অনুকরণ) করার ক্ষেত্রে ছহীহ কিংবা হাসান হাদীছ শরীফ তালাশ করে। জঈফভাবে বর্ণনা গ্রহণ করে না। আর নিজেদের মুরুব্বীদের ইত্তিবা করতে ছহীহ হাদীছ শরীফ তালাশ করে না। বরং মুরুব্বী যা করেছে, করতে বলেছে তা বিনা দ্বিধায় আমল করে। প্রচার ও প্রসার করে। নাউযুবিল্লাহ!
এরা কত বড় প্রতারক ও ধোঁকাবাজ তা একটু চিন্তা করলে অতি সাধারণ পাঠকও সহজেই বুঝতে পারবে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা নিজে করেছেন, সেটা করাই উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য। আলাদা নির্দেশ মুবারকের প্রয়োজন নেই। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অসংখ্য স্থানে মহান আল্লাহ পাক তিনিই সেকথা বলে দিয়েছেন। সেটা ফরয বটে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا ۚ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা পালন করো। আর তিনি যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো।” (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ০৭)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللّٰـهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনার ইতায়াত (অনুসরণ-অনুকরণ) করো। আর তোমাদের আমলগুলোকে বাতিল করো না।” (পবিত্র সূরা মুহম্মদ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
উল্লেখ্য যে, অনুসরণীয় সকল মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মতে, যে সমস্ত আমল সুন্নত উনার খিলাফ তা বাতিল বলে গণ্য। সুন্নত বিবর্জিত আমলকে আমলে ছালিহ বা নেক আমল বলা হয় না। বরং সম্মানিত সুন্নতের ইত্তিবাই হচ্ছে আমলে ছালিহ বা নেক আমল।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاِنْ تُطِيْعُوهُ تَهْتَدُوا ۚ وَمَا عَلَى الرَّسُولِ اِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ
অর্থ: “যদি তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত করো তাহলে সঠিক পথের সন্ধান পাবে। আর সুস্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়াই উনার দায়িত্ব-কর্তব্য।” (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরী ৫৪)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা করেছেন সেটাই উম্মত করবে। সেটাই যথেষ্ট। আলাদাভাবে নির্দেশ মুবারক দান কিংবা উৎসাহিত করার কোনো প্রয়োজন নেই।
সুন্নতবিরোধী ও বিদয়াত প্রচলনকারী তথা উলামায়ে ‘সূ’রা মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। তাদের বক্তব্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দস্তরখানা ব্যবহার করতেন। তবে তা ব্যবহার করার কোনো নির্দেশ মুবারক বা উৎসাহ প্রদান সম্পর্কিত কোন হাদীছ শরীফ উনার থেকে ছহীহ সনদে বর্ণিত হয়নি।”
তার জাওয়াবে বলতে হয় যে, শুধু দস্তরখানাই নয়; বরং প্রতিটি আমলে প্রতিটি ক্ষেত্রে, সববিষয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্তিবা তথা অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। কোনো ক্ষেত্রে বিমুখ হওয়া যাবে না। যারা সুন্নতবিমুখ হবে, তারা ঈমানদার থাকতে পারবে না। কেননা তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَكَفَرْتُمْ
অর্থ: “যদি তোমরা তোমাদের নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত তরক করো, তাহলে অবশ্যই তোমরা কুফরীতে নিমজ্জিত হবে।” নাউযুবিল্লাহ! (আবূ দাউদ শরীফ) (চলবে)