আল্লামা মুফতী মুহম্মদ কাওছার আহমদ
স্মর্তব্য যে, দস্তরখানাকে তা’যীম-তাকরীম, সম্মান করা উচিত। দস্তরখানা পা দ্বারা পাড়ানো, দস্তরখানার উপর দিয়ে যাওয়া বেয়াদবি, শরাফত বা শিষ্টাচার বিবর্জিত কাজ। দস্তরখানা সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সুন্নত। অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন রাখা সম্মানিত সুন্নত উনার পরিপন্থী। ঝুটা-কাটা ফেললে দস্তরখানা নোংরা, অপরিচ্ছন্ন হয়। কাজেই দস্তরখানায় ঝুটা-কাটা না ফেলে অন্য কোনো পাত্রে ফেলা উচিত। দস্তরখানায় খাবার খাওয়ার অন্যতম উপকারিতা হচ্ছে- খাদ্য-দ্রব্যে পড়ে গেলে তুলে খাওয়া যায়। খাবার অপচয় হয় না। আর ইহা বিশেষ একটি সুন্নত মুবারক ও বরকত লাভের কারণ। কাজেই দস্তরখানা নোংরা বা অপরিচ্ছন্ন রাখা উচিত নয়, অপরিচ্ছন্ন থাকলে খাদ্য-দ্রব্য পড়ে গেলে তুলে খেতে অরুচিকর বোধ হয়।
পূর্বোল্লিাখিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারাই প্রমাণিত হয়েছে যে, চামড়ার দস্তরখানায় খাবার খাওয়া সুন্নত। সাথে সাথে দস্তরখানার গুরুত্ব ও তাৎপর্যের বিষয়টিও দিবালোকের ন্যায় পরিস্ফুটিত হয়েছে। অথচ কতিপয় উলামায়ে ‘সূ’ এবং অপরিণামদর্শী ও আক্বল-সমঝহীন ব্যক্তিবর্গ অজ্ঞতাবশতঃ ও দুরভিসন্ধিমূলকভাবে এই সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনাকে বিলীন করার নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। নিম্নে তাদের অযৌক্তিক আপত্তি, কুটকৌশল ও দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্যগুলো তুলে ধরে তার সঠিক ও ছহীহ জাওয়াব দেয়া হলো।
সুন্নতবিরোধী ও বিদয়াত
প্রচলনকারীদের বক্তব্য খণ্ডন:
সুন্নতবিরোধী বিদয়াত প্রচলনকারী ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এবং তার সমমনাদের বক্তব্য হচ্ছে- “রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দস্তরখানা ব্যবহার করতেন। তবে ব্যবহার করার কোন নির্দেশ বা উৎসাহ উনার থেকে ছহীহ সনদে বর্ণিত হয়নি।”
সুন্নতবিরোধী ও বিদয়াত প্রচলনকারীরা কত সূক্ষ্মভাবে ধোঁকা দিয়ে আওয়ামুন নাস বা সাধারণ মানুষকে সুন্নতবিমুখ করে তার ছোট একটি উদাহরণ উহা। সে অকপটে স্বীকার করেছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে চামড়ার দস্তরখানা মুবারক ব্যবহার করেছেন তা পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। যেটা সে অস্বীকার করতে পারেনি। তবে উনার ব্যবহার করাটা তার কাছে যথেষ্ট নয়। নাউযুবিল্লাহ!
তার মতে, দস্তরখানা ব্যবহার করার সরাসরি নির্দেশ থাকতে হবে। উৎসাহ দিতে হবে। সেটা আবার ছহীহভাবে বর্ণিত হতে হবে। হাসান কিংবা জঈফভাবে বর্ণনা থাকলেও হবে না। পালন করা যাবে না। নাউযুবিল্লাহ!
এই উলামায়ে সূ’, জ্ঞানপাপী, সুন্নতবিরোধী ও বিদয়াত প্রচলনকারীরা জানে না যে, ছহীহ ও হাসান হাদীছ শরীফ দ্বারা ফরয ও ওয়াজিব ছাবিত (সাব্যস্ত) হয়। কাজেই দস্তরখানা ব্যবহারের সরাসরি নির্দেশ বা উৎসাহ যদি ছহীহ কিংবা হাসানভাবে বর্ণিত হতো, তাহলে তা পালন করা ফরয কিংবা ওয়াজিব অথবা সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছাবিত (সাব্যস্ত) হতো। তখন দস্তরখানা ব্যবহার না করলে ফাসিক বা গুনাহগার হতো।
আর সুন্নতে যায়িদাহ বা মুস্তাহাব ছাবিত (সাব্যস্ত) করার ক্ষেত্রে জঈফ হাদীছ শরীফই যথেষ্ট। এ ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিছীনে কিরাম একমত। সুন্নতবিরোধীরাই শুধু ভিন্ন মত পোষণ করে।
আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা করেছেন, তা অনুসরণ করা উম্মতের দায়িত্ব-কর্তব্য বটে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই উনার ইতায়াত (অনুসরণ-অনুকরণ) করতে হবে। ছোট থেকে বড় সকল কাজেই তিনি আদর্শ। যে কাজে উনার ইতায়াত (অনুসরণ) না হবে, তা হবে শয়তানের ইতায়াত, নফসানিয়াত। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিষেধ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِى السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ اِنَّه لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে সম্মানিত ইসলামে দাখিল হও। আর কোনো ক্ষেত্রে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৮)
ওইসব উলামায়ে সূ’রা এভাবে সুন্নতবিমুখ হওয়ার কারণে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে শয়তানের দোসরে পরিণত হয়েছে। তাদের কাঁধে শয়তান ছাওয়ার হয়েছে। তাদের বক্তব্য ও লিখাগুলোই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। (চলবে)