-আল্লামা মুফতী মুহম্মদ কাওছার আহমদ
লবণের উপকারিতা
লবণের উপকারিতা অপরিসীম। আর এ যুগে লবণের উপকারিতার কথা বর্ণনা করার অপেক্ষা রাখে না। লবণের দ্বারা স্যালাইন তৈরী ও পান করার ফায়দা শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সবাই জানেন। তারপরেও কতিপয় মানুষরূপী পেঁচা এযুগেও লবণের উপকারিতার কথা স্বীকার করতে নারাজ। তারা মওজু হাদীছ শরীফ আখ্যা দিয়ে আওয়ামুন নাসকে সম্মানিত সুন্নত থেকে সরিয়ে বিদয়াতের মধ্যে প্রবেশ করানোর বৃথা কোশেশে সদা তৎপর। এরাই মূলত মিথ্যাবাদী দাজ্জাল।
আল্লামা ডাঃ মুহম্মদ তারিক মাহমুদ তিনি উনার “সুন্নতে নববী আওর জাদীদ সাইন্স” কিতাবে খাওয়ার পূর্বে ও পরে লবণ খাওয়ার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যদিও সে ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়েনা। কারণ, সম্মানিত সুন্নত মুবারকই মূল। আর উক্ত ব্যাখ্যা শুধু সুন্নত বিমুখ ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক হতে পারে।
তিনি বলেন, আহারের পূর্বে সামান্য লবণ মুখে দেয়া হয়। কারণ, লবণের মধ্যে রয়েছে খানার চাহিদা বৃদ্ধি করার উপকরণ। আর লবণ চাটার সাথে সাথেই লালা সৃষ্টিকারী গোশত পেশী হজমকারী অম্লকে বের করে থাকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে খাওয়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। খাবার সুস্বাদু মনে হয়। ক্ষুধা মিটে যায় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতের মূল্যায়ন করা সম্ভবপর হয়।
আর খাবারের শেষে যেহেতু জিহ্বা, গলা ও খাদ্য নালীতে খাদ্য-দ্রব্য, ঘৃত ও অন্যান্য তৈলাক্ত খাবার লেগে থাকে যা স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। তাই লবণ দিয়ে সেগুলোকে নিঃশেষ করা হয়।
মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সালাম মিয়া (হুমায়ুন) তিনি তার “পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” নামক কিতাবের ৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের যখন তীব্র ক্ষুধা লাগে তখন দেহের আভ্যন্তরীণ পিত্ত থলী হতে এক প্রকার তিক্ত রস নির্গত হয়। ইহা এসে মুখের জিহবার মধ্যে অবস্থান করে। তাই যদি কোনো মানুষ তার তীব্র ক্ষুধার মধ্যে কোনো খাদ্য-দ্রব্য খাওয়ার পূর্বে তার জিবে একটু লবণ দেয়, তখন তার উক্ত লবণ খাওয়ার দ্বারা তার জিবের তিক্ত রসের ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তখন সে যে খাদ্য-দ্রব্য খায় তাতে তার বেশ মজা লাগে। সে তৃপ্তি সহকারে খেতে পারে এবং সে খাদ্য অতি সহজেই তার পেটে গিয়ে হজম হয়। তাই উক্ত খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানীরা সকলকেই তার খাদ্য খাওয়ার পূর্বে তার জিহবায় একটু লবণ দিতে বলেন।
খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানীরা আরো বলেন, তরকারি রান্না করার সময়, এর পানিতে মাছ, গোশত, শাক, সবজি, হলুদ, মরিচ, পিঁয়াজ ও রসুনের তিক্ত ও বিস্বাদযুক্ত পদার্থগুলো পরস্পর একত্রে মিশে যায় এবং সমস্ত তরকারিই তখন স্বাদহীন হয়ে যায়। তাই তখন উক্ত তরকারিকে সুস্বাদু ও মজাদার করার জন্য প্রধান ভূমিকা রাখে একমাত্র লবণ। তাই বিজ্ঞানীরা বলেন, তরকারিকে সুস্বাদু করার মূল উপকরণ হচ্ছে লবণ। এ জন্য লবণের বিকল্প নেই। অতএব, দেখা যায় দেহকে সংরক্ষণের জন্যও লবণের ভূমিকা অপরিসীম।
অথচ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের বহুপূর্বেই লবণের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা মুবারক করেছেন, রোগের ঔষধ এবং লবণ হচ্ছে তরকারিকে সুস্বাদু করার জন্য মূল উপকরণ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ الله تَعَالى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ سَيّدُ اِدَامِكُمُ الْـمِلْحُ.
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “লবণ হচ্ছে তোমাদের তরকারির সাইয়্যিদ বা মূল।” (ইবনে মাজাহ ২য় খ- ২৩৮ পৃষ্ঠা)
ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ নিয়ে ফিকির করে, গবেষণা করে মুলতত্ত্ব ও তথ্য লাভ করেন। এমনকি কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারারাও তা থেকে ফায়দা লাভ করে। আর উলামায়ে ‘সূ’ এক চোখা মৌলভীরা পবিত্র হাদীছ শরীফকে মওজু, জয়ীফ বলে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ফায়দা লাভ করা থেকে বঞ্চিত থাকে ও রাখে। ফলে ইহুদী-নাছরাদের দালাল বা গোলামে পরিণত হয়। ইহা তাদের দুনিয়ার শাস্তি। আর আখিরাতে আরো কঠিন শাস্তি রয়েছে।