আল্লামা মুফতী মুহম্মদ কাওছার আহমদ
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আসমা বিনতে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান করাকালীন সময়েই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার রেহেম শরীফে তাশরীফ আনেন। রেহেম শরীফে অবস্থানের সময় পূর্ণ হলো। এমতাবস্থায় আমি পবিত্র মদীনা শরীফে চলে আসলাম এবং কুবাতে অবস্থান করলাম। সেই কুবাতে থাকতেই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দুনিয়াতে তাশরীফ আনলেন। আর উনাকে নিয়ে আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত হলাম। উনার মুবারক কোলে উনাকে দিলাম।
“অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেজুর আনতে বললেন। (খেজুর আনা হলো) তিনি তা চিবিয়ে খুবই নরম করলেন। অতঃপর উনার মুখ মুবারকে উনার নূরুল বারাকাত বা লালা মুবারক দিলেন। কাজেই, উনার মুখ মুবারকে সর্বপ্রথম যা প্রবেশ করলো তা হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল বারাকাত মুবারক। তারপর সেই চিবানো খেজুর দ্বারা ‘তাহনীক’ করলেন। অতঃপর বরকতের জন্য দোয়া করলেন। (সম্মানিত হিজরতের পর) তিনি ছিলেন সম্মানিত দ্বীন ইসলামে সর্বপ্রথম জন্মগ্রহণকারী সন্তান। তাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। কেননা, উনাদেরকে বলা হতো যে, ইহুদীরা আপনাদেরকে যাদু করেছে, তাই আপনাদের কোনো সন্তান জন্ম গ্রহণ করেন না।” (মুসনাদে আহমদ)
নবজাতক শিশুর তাহনীক করার পর মায়ের দুধ পান করতে দেয়া যেতে পারে। এ সময় শিশুর একমাত্র খাদ্য-পানীয় হচ্ছে মায়ের দুধ। সন্তানকে দুধ পান করানো মায়ের জন্য ওয়াজিব। তবে যদি সম্মানিত শরীয়ত উনার কোন কারণ থাকে তাহলে দুধ মাতা রেখে দুধ পান করাতে কোন দোষ নেই।
মায়ের দুধ পানের সময়সীমা দুই বছর। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلاَدَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَن يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ وَعلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ لاَ تُكَلَّفُ نَفْسٌ إِلاَّ وُسْعَهَا لاَ تُضَآرَّ وَالِدَةٌ بِوَلَدِهَا وَلاَ مَوْلُودٌ لَّهُ بِوَلَدِهِ وَعَلَى الْوَارِثِ مِثْلُ ذَلِكَ فَإِنْ أَرَادَا فِصَالاً عَن تَرَاضٍ مِّنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِمَا
অর্থ: আর মাতাগণ উনারা নিজের সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বৎসর দুধ পান করাবেন। এই নির্দিষ্ট সময় তার জন্য, যে দুধ পান করানোর মুদ্দত (সময়সীমা) পূর্ণ করতে চান। আর যার সন্তান (পিতা) তার দায়িত্ব কর্তব্য হচ্ছে দুধ পানকারিনীদেরকে ইনসাফের সাথে খোরপোষের ব্যবস্থা করা। কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোন নির্দেশ দেয়া হয়না। আর সন্তানের জন্য সন্তানের মাকে কষ্ট দেয়া উচিত নয়। আবার সন্তানের জন্য সন্তানের পিতাকেও কষ্ট দেয়া উচিত নয়। নিয়মানুযায়ী (সন্তানের দায়িত্বভার) অর্পিত হবে ওয়ারিশদের উপর। কাজেই, যদি উভয়ে মায়ের দুধ ছাড়াবার ইচ্ছা করেন তাহলে নিজেরা সম্মত ও পরামর্শক্রমে করলে তাতে উভয়ের কোন পাপ হবেনা। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ২৩৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَإِنْ أَرَدتُّمْ أَن تَسْتَرْضِعُواْ أَوْلاَدَكُمْ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِذَا سَلَّمْتُم مَّآ آتَيْتُم بِالْمَعْرُوفِ وَاتَّقُواْ اللّهَ وَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
অর্থ: “আর যদি তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে কোন দুধমাতার দুধ পান করাতে চাও তাহলে যদি তোমরা সাব্যস্তকৃত প্রচলিত নিয়মে বিনিময় দিয়ে দাও তবে এতে তোমাদের কোন পাপ হবেনা। মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং দৃঢ় বিশ্বাস রাখ যে, মহান আল্লাহ পাক তোমাদের যাবতীয় কৃতকর্ম ভালভাবেই দেখছেন। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩৩)