-মাওলানা মুফতী মুহম্মদ আল কাওছার
সন্তান জন্মগ্রহণের পর পালনীয়
সুন্নত মুবারক প্রসঙ্গে
পরহেযগার, মুত্তাক্বী বা আল্লাহওয়ালা সন্তান-সন্ততি মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ নিয়ামত। প্রত্যেক সন্তানই উত্তম স্বভাব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সম্মানিত দ্বীন উনার হুকুম-আহকাম পালনের যোগ্যতা নিয়েই তারা দুনিয়াতে আসে। পরে তার পিতা-মাতাই তাকে ইহুদী-নাছারা, মজূসী-মুশরিক কিংবা বদ খাছলতের সাথে সম্পৃক্ত করে থাকে।
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كل مولود يولد على الفطرة فأبواه يهودانه او ينصرانه او يـمجسانه
অর্থ : “প্রত্যেক সন্তানই ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। কাজেই, তার পিতা-মাতাই তাকে ইহুদী, নাছারা এবং মজুসীতে পরিণত করে থাকে।” (মুসলিম শরীফ)
কাজেই, সন্তান-সন্ততি আল্লাহওয়ালা বা পরহেযগার মুত্তাক্বী হওয়ার ক্ষেত্রে পিতা-মাতার ভূমিকা অপরিসীম। পিতা-মাতা যদি সে ভূমিকা পালন না করে তাহলে সেই পরম নিয়ামত কিভাবে লাভ করতে পারবে?
সেই নিয়ামতের বিশেষ একটি দিক হচ্ছে নেককার সন্তানের দ্বারা জান্নাতের পথ সুগম হয়। সর্ববিদ নেক কাজের রাস্তা বের হয়। মা’রিফাত-মুহব্বত পাওয়া সহজ হয়।
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু হুরাইরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اذا مات الانسان انقطع عنه عمله الا من ثلاثة الا من صدقة جارية او علم ينتفع به او ولد صالح يدعو له.
অর্থ: মানুষ যখন মারা যায় তখন তার আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমলের ধারা জারি থাকে, বন্ধ হয় না। ১. ছদকায়ে জারিয়াহ, ২. এমন ইলম, যার দ্বারা উপকার সাধিত হয় তথা ইলমে তাছাওউফ উনার সিলসিলা। ৩. নেক সন্তান। যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম শরীফ)
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, একজন নেক সন্তান, আল্লাহওয়ালা সন্তানের দ্বারা অন্যান্য নেক আমলের ধারাও জারি থাকে। যেহেতু আল্লাহওয়ালা সন্তান তিনি নিজে ইলম শিখে আত্মশুদ্ধি করেন এবং অন্যকে শিক্ষা দেন।
কাজেই, ইলমের ধারা জারি থাকে। আবার তিনি ছদকায়ে জারিয়াহ তথা মসজিদ মাদরাসা, ইয়াতীমখানা, লঙ্গরখানা, রাস্তা-ঘাট, পুল-সেতু ইত্যাদি কল্যাণমূলক কাজগুলো করে থাকেন। ফলে তার দ্বারা ছদকায়ে জারিয়াহ উনার বিষয়টিও জারি থাকে। কাজেই, সন্তান-সন্ততি যে মহান আল্লাহ পাক উনার কত বড় নিয়ামত তা সহজেই অনুমেয়।
সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لله ملك السموت والارض يخلق ما يشاء يهب لـمن يشاء اناثا ويهب لـمن يشاء الذكور.
অর্থ: আসমান ও যমিনের মালিক- একচ্ছত্র অধিকারী হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে কন্যা সন্তান দান করেন। আর যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন ছেলে সন্তান। (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৯)
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
او يزوجهم ذكرانا واناثا. ويجعل من يشاء عقيما انه عليم قدير.
অর্থ: আর তিনি তাদেরকে ছেলে ও মেয়ে উভয় সন্তানই দিয়ে থাকেন। আবার যাকে ইচ্ছা তাকে করেন সন্তানহীন বা বন্ধ্যা। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞাত ও মহান ক্ষমতাশীল। (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫০)
আর যারা সন্তানহীনা বা বন্ধ্যা তারা হাক্বীক্বীভাবে উপলব্ধি করতে পারেন সন্তান-সন্ততি কিরূপ নিয়ামত।
কাজেই, যারা এই পরম নিয়ামত লাভে ধন্য হয়েছেন তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে সেই সন্তান সন্ততিগণকে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসাসম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি রেযামন্দি মুবারক হাছিলের জন্য উনাদের রাস্তায় স্বীয় সন্তানকে কুরবান বা উৎসর্গ করা। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা। কেবল তখনই সন্তান-সন্ততি লাভের শুকরিয়া আদায় হতে পারে।