-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
পবিত্র মসজিদ উনার সুন্নত মুবারক জিন্দাকরণ প্রসঙ্গে
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার ভিত্তি মুবারক স্থাপন করেন চুন ও পাথর মুবারক মিশ্রিত করে। উক্ত স্থানে উঁচু নিচু অংশ কেটে সমতল করা হয়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে নিয়ে পবিত্র মসজিদ উনার দেয়াল মুবারক নির্মাণের জন্য মাটি কাদা করে ইট তৈরি করেছেন। তা রোদ্রে শুকিয়ে নিয়ে দেয়াল গেঁথেছেন সাথে পাথরও দিয়েছেন। পবিত্র মসজিদ উনার ছাদ মুবারক তৈরিতে খেজুরের ছাল মুবারক, পাতা মুবারক ব্যবহার করেছেন। স্তম্ভের জন্যে খেজুরের গাছ সংগ্রহ করেছিলেন।
পবিত্র মসজিদ নির্মানের সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের জন্য মুবারক দোয়া করলেন-
اللهم لا خير الا خير الاخرة. فارحم الانصار والـمهاجرة
অর্থ : আয় আল্লাহ পাক! আখিরাতের কল্যাণ ব্যতীত অন্য কোন কল্যাণ নেই। কাজেই, আপনি সম্মানিত আনসার ও মুহাজির হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের উপর রহমত নাযিল করুন। (জযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব-১/৯৭)
যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ উনার ভিত্তি মুবারক স্থাপন করেন, তখন হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ উনার ছাদ মুবারক হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার ছাদ মুবারক উনার ন্যায় উচ্চতা সাত গজ করবেন। পবিত্র মসজিদ উনার ছাদ মুবারক খেজুরের ছাল মুবারক ও পাতা মুবারক এবং মাটি কাদার সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে। সপ্তম হিজরীতে পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ উনার সংস্কার করা হয় ১০০x১০০ হাত বা গজ।
পবিত্র মিম্বর শরীফ তৈরি করা হয়। দৈর্ঘ্য ছিল ২ হাত, প্রস্থ ১ হাত, উচ্চতা দেড় হাত। প্রতি সিঁড়ি ১ বিঘত, তিন তাক বিশিষ্ট ছিল (ঝাউ গাছের)। খেজুর গাছের লাঠি মুবারক ছিল যা হাত মুবারক-এ ভর করে খুতবা মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র মসজিদ মুবারক নির্মাণ হওয়ার পর সেই পবিত্র মসজিদ মুবারক উনার পূর্ব পার্শ্বে পবিত্র হুজরা শরীফ তৈরি করা হয়। সেখানে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অবস্থান করতেন। সুফফাখানা তথা আহলে সুফফা উনাদের অবস্থানস্থল ছিল সেই পবিত্র মসজিদ মুবারক উনার ডান বা পশ্চিম দিকে।
পবিত্র হুজরা শরীফ উনার উত্তরে ছিল হযরত ফাতিমাতুয যাহরা বিনতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফ মুবারক। হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ মুবারক ছিল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাহির হওয়ার পথে। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ উনার একটি জানালা মুবারক ছিল, যা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ বরাবর ছিল। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার সময় উক্ত জানালা মুবারক দিয়ে হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম ও হযরত হাসান আলাইহিস সালাম এবং হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের খোঁজ-খবর নিতেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফ উনার পশ্চিমে ছিল পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ। ই’তিকাফের সময় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মুবারক উনার চুল মুবারক পবিত্র হুজরা শরীফ থেকে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি আচড়িয়ে দিতেন। সুবহানাল্লাহ!
যেমনটি পবিত্র মসজিদুন নববী শরীফ উনার দেয়াল কাঁচা ইট এবং ছাদ খেজুর গাছের কা- ও ডাল পাতা দিয়ে তৈরি, তেমনি করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফও ওই সমস্ত উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
পবিত্র হুজরা শরীফ উনার ছাদ মুবারক ছিল নিচু। হাত দিয়ে নাগাল পাওয়া যেতো। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ছিল নয় ফুট ও সাড়ে দশ ফুট। পবিত্র হুজরা শরীফ উনার দুটো দরজা মুবারক ছিলো। একটি উত্তরমুখী অন্যটি পশ্চিমমুখী। যা একপাট বিশিষ্ট।