-হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাকিমুল হাদীছ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার জিন্দাকৃত বা পুণঃপ্রচলন করা কতিপয় সুন্নতের বিবরণ:
পানি পানের সুন্নত জিন্দা বা পূণঃপ্রচলন
বিগত দুটি সংখ্যার আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পানাহার কথাবার্তা, আচার-আচরণ, আমল-আখলাক্ব ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়েরই পুঙ্খানুপুঙ্খ, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ইতায়াত বা অনুসরণ-অনুকরণ করেন- খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হাকিমুল হাদীছ, আশরাফুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি। তাই তো উনার পানীয় পানের বিষয় থেকে শুরু করে কথাবার্তা, আচার-আচরণ, আমল-আখলাক্ব ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ই বান্দা বা উম্মতের জন্য হিদায়েত ও বরকতের কারণ। সুবহানাল্লাহ!
উনার পানীয় পানের বিষয়টিও যে বান্দা বা উম্মতকে আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে রুজু করে দেয় সে সম্পর্কে আমি স্বল্প পরিসরে একটিমাত্র ঘটনা উল্লেখ করা উচিত বলে মনে করি। যা আমারই জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা।
একবার আমার একজন পরিচিত হাফিয ছাহিব, উনার নাম আবুল কালাম আজাদ। তিনি আমাকে একদিন বললেন, আমিও আপনাদের মতো পাগড়ী, রুমাল, কোর্তা, লুঙ্গি পরিধান করতে চাই। একথা বলতে বলতে তিনি আমাকে কিছু টাকাও দিলেন। অবশ্য তিনি তখনও বাইয়াত হননি। আমিও মনে মনে খুব খুশি হলাম। একজন লোক বিদয়াতী পোশাক-পরিচ্ছদ ছেড়ে দিয়ে আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত করতেন সে যে কত খুশির বিষয় তা বলার অপেক্ষাই রাখে না। আমি সে টাকা দিয়ে উনাকে সে সুন্নতী পোশাকাদি কিনে দিলাম। উনার আরযু ছিল আমি যেন নিজ হাতে তা পরিয়ে দেই। আমি উনার অনুরোধ রক্ষা করলাম। আমি উনাকে পাগড়ী, রুমাল পরিধান করিয়ে দিলাম। পাগড়ী পরিধানকালে তিনি আমাকে বললেন, “আমি রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার এক ওয়াজ শরীফ-এর মাহফিলে উনার ওয়াজ শরীফ শুনে এ সকল সুন্নতী পোশাক পরতে দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করি। আমি সেই মাহফিলে উনাকে চা মুবারক পান করতে দেখে আশ্চর্য হয়েছিলাম। মাহফিলের মাঝে মাঝে মীলাদ শরীফ পড়া হতো। মীলাদ শরীফ পড়াকালীন সময়ে শ্রোতাগণ যখন দুরূদ শরীফ পাঠ করতেন, তিনিও সাথে সাথে দুরূদ শরীফ পাঠ করতেন। তখন চা মুবারক পান করতেন না। আর যখন মীলাদ শরীফ-এর কাছীদা শরীফ পাঠ করা হতো তখনই কেবল তিনি চা মুবারক পান করতেন। সুবহানাল্লাহ কি আদব! কি শরাফত!! তিন চুমুক করে তিন বার চা মুবারক পান করতেন তিনি। আমি আঙ্গুলে গুণে গুণে দেখলাম নয় বার হলো। আমি ভালোভাবে লক্ষ্য করছিলাম আর আভিভূত হচ্ছিলাম। আমার জীবনে অনেক নামি-দামি ওয়ায়িয এমনকি পীর ছাহেবগণেরও অনেক ওয়াজই শুনেছি কিন্তু এমন শরাফত, আদব, মুহব্বতের বহিঃপ্রকাশ কখনো দেখিনি। আর দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ওয়াজ করলেন। মাঝে মাঝে উনার ডান হাত মুবারক-এর আঙ্গুল মুবারক দ্বারা ইশারা করলেন। একটি বারের জন্য বাম হাত মুবারক উঠালেন না। বাম হাত মুবারক দ্বারা ইশারাও করলেন না। আর ভাষার এতো শালীনতা ও মাধুর্যতা আমি কারো মাঝে কখনো পাইনি। শালীনতা কাকে বলে উনার মুবারক আলোচনা থেকে তা উপলব্ধি করেছি। তিনি যে আওলাদে রসূল, মুজাদ্দিদে আ’যম তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ রইলো না। কেননা যখনই তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করতেন, সাথে অসংখ্য লক্বব মুবারক উল্লেখ করতেন। আর অত্যন্ত আদব ও মুহব্বতের সাথে এবং অতি স্পষ্ট করে উনার উপর দরূদ শরীফ
তথা صلى الله عليه وسلم পাঠ করতেন। সুবহানাল্লাহ!
আমি দীর্ঘক্ষণ ফিকির করলাম যে, অতি উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ ব্যতীত এমন কাজ কারো পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। এমন ব্যক্তিত্বের দিকে মুহব্বতের দৃষ্টিতে তাকানোটা নিশ্চয়ই উত্তম ইবাদতের মধ্যে গণ্য। তাই সে মাহফিলেই নিয়ত করেছি, উনার হাত মুবারক-এ বাইয়াত হবো এবং যতদিন জীবিত থাকবো উনার অনুসরণে সুন্নত আমল করবো। দোয়া করবেন, আমি যেন সমস্ত সুন্নতই আমল করতে পারি।”
এরূপ একজন হাফিয আবুল কালামই নন, বরং উনার মতো অসংখ্য লোকের অগণিত ঘটনা রয়েছে। যার বর্ণনা দিলে বিরাট আকারের কিতাবে পরিণত হবে। প্রত্যেকেরই বর্ণনা যে, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার প্রতিটি বিষয়ই বান্দা বা উম্মতকে আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নৈকট্য এনে দেয়। মা’রিফাত-মুহব্বতের চরম-পরম স্তরে পৌঁছার পথ রচনা করে।