-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
‘মুহইস সুন্নাহ’ লক্বব মুবারক প্রসঙ্গে:
খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম হাকিমুল হাদীছ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-উনার জিন্দাকৃত বা পুনঃপ্রচলন করা কতিপয় সুন্নতের বিবরণ:
না’লাইন বা স্যান্ডেল দু’ফিতা বিশিষ্ট
হওয়াই খাছ সুন্নত
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি একদিন হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললাম, আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার না’লাইন বা স্যান্ডেল মুবারক কিরূপ ছিল?
তিনি বললেন, æপ্রত্যেক স্যান্ডেল মুবারকে দুটি করে ফিতা ছিল।” (শামায়িলুত তিরমিযী)
উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় দু’ফিতাওয়ালা চামড়ার স্যান্ডেলকে খাছ সুন্নত এবং এক ফিতাওয়ালা স্যান্ডেলকে জায়িয বলা হয়েছে। যেমন, ‘ফতহুল বারী’তে উল্লেখ আছে, (এক স্যান্ডেলে দু’ফিতা লাগানো) অর্থাৎ প্রত্যেক স্যান্ডেলে দু’টি করে ফিতা লাগানো সুন্নত। (কারো মতে, প্রশস্ত এক ফিতা লাগানো) জায়িয।” (অনুরূপ ইরশাদুস সারী ও শরহুল কিরমানীতে উল্লেখ আছে।)
‘শামায়িলুত তিরমিযী’তে বর্ণিত রয়েছে, æহযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার না’লাইন বা স্যান্ডেল মুবারকে দুটি করে ফিতা ছিল।” হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনাদেরও তাই ছিল। সর্বপ্রথম যিনি একটি ফিতা বাঁধেন তিনি হচ্ছেন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।”
এই হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণিত যে, এক ফিতাবিশিষ্ট স্যান্ডেল পরিধান করা জায়িয।
এ সম্পর্কে ‘জামউল ওয়াসিল’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, æহযরত ইমাম জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার স্যান্ডেল মুবারকের দুটি ফিতা থাকতো। তার একটি প্রান্ত স্যান্ডেলের সম্মুখ দিকে এমন স্থানে স্থাপিত থাকতো যাতে ওটা বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তর্জনী আঙ্গুলের মাঝে থাকতে পারে। তারপর ওই ফিতাটি গোড়ালি বেড়িয়া এটার অপর প্রান্তটি স্যান্ডেলের সম্মুখ দিকে এমন স্থানে লাগানো থাকতো যাতে এটা মধ্যমা ও অনামিকা অঙ্গুলের মাঝে থাকতে পারে।” (অনুরূপ শরহুল্ মানাবী মিছরী, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলাশ্ শামায়িলিল মুহম্মদিয়া. শরহুত্ ত্বীবী, মিরকাত, আউনুল মা’বূদ ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত আছে।)
এই হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পায়ের গোড়ালিতে বেল্ট দেয়াও জায়িয আছে।
রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার না’লাইন বা স্যান্ডেল মুবারকে দুটি করে ফিতা ছিল। আর প্রত্যেকটি ফিতা ছিল দু’পাট্টা বিশিষ্ট। (শামায়িলুত তিরমিযী)
হযরত উবাইদ ইবনে জুরাইয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, আমি আপনাকে পশমহীন চামড়ার স্যান্ডেল মুবারক পরিধান করতে দেখে আসছি। (তার কারণ কি?)
তিনি বললেন, আমি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এমন না’লাইন শরীফ বা স্যান্ডেল মুবারক পরিধান করতে দেখেছি, যাতে পশম ছিলনা। তিনি ওই স্যান্ডেল মুবারক পরিহিত অবস্থায় ওযূও করতেন। তাই আমি পশমহীন চামড়ার স্যান্ডেল পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। (শামায়িলুত তিরমিযী)
স্পষ্ট হলো যে, ‘সিবতিয়্যাহ’ বা চামড়ার স্যান্ডেল তথা পশমহীন চামড়ার স্যান্ডেল মুবারক খাছ সুন্নত। আর এই পশমহীন চামড়ার স্যান্ডেল মুবারক পরিধান করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওযূ করেছেন।
এ সম্পর্কে ‘আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া আলাশ শামায়িলিল মুহম্মদিয়া’ নামক কিতাবে বর্ণিত আছে, æহযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, বর্ণিত হাদীছ শরীফের মর্মার্থ হচ্ছে- আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্যান্ডেল পরেই উযূ করেছেন। তবে পা মুবারক ধৌত করার সময় স্যান্ডেল থেকে পা মুবারক বের করেছেন। পা মুবারক ধৌত করার পর পা মুবারক ভিজা অবস্থায় স্যান্ডেল মুবারকে প্রবেশ করিয়েছেন।”
(অসমাপ্ত)