সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন সর্বাধিক নামায আদায়কারী
ইমামুল মুহাদ্দিছীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার যুগে সর্বাধিক পবিত্র নামায আদায়কারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! যা স্বাভাবিক ছিলনা।
সাইয়্যিদুনা হযরত সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের যুগে সবচেয়ে বেশী নামায আদায়কারী ছিলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি। (সীরাতে মুস্তাকীম-২৪৩)
সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ আসেম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
كَانَ اَبُوْ حَنِيْفَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ يُسَمَّى الْوَتَدُ لِكَثْرَةِ صَلَاتِهٖ
অর্থ: অধিক পরিমাণে নামায আদায় করার কারণে ইমামে আয’ম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে খঁুটি বলা হতো। (সিয়ারু আলামিন নুবালা-৬/৪০০, আখবারু আবী হানিফা-১/৫৭, তারীখে বাগদাদ-১৩/৩৫৪, মাওসুয়াতু উসূলিল ফিকহ-৩/২৪৭)
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি একাধারে ত্রিশ বছর রোযা রেখেছিলেন
ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিষিদ্ধ দিনগুলি ব্যতীত ধারাবাহিকভাবে ত্রিশ বছর রোযা রেখেছেন। (তারিখে বাগদাদ-১৩/৩৫৪)
তাযকিয়া বা আত্ম পরিশুদ্ধতা
তাযকীয়াহ বা অন্তর পরিশুদ্ধ করা ফরযে আইন। সেই আত্মশুদ্ধির বাস্তবতা হলো নিজের স্বভাব-চরিত্রকে কলুষমুক্ত করা বা পরিচ্ছন্ন করা। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিছবত পয়দা করা। নিজের জীবনকে মহান আল্লাহ পাক উনার ভীতি ও দুনিয়া বিমুখতা দিয়ে সুসজ্জিত করতঃ সর্বপ্রকার বদ খাছলত থেকে নিজেকে পাক-পবিত্র করা। সকল প্রকার ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াদ্বত-মাশাক্কাত প্রিয় হওয়া। আর সর্বপ্রকার অসৎ কার্যাবলীর প্রতি ঘৃণাবোধ সৃষ্টি হওয়া।
আর এই সকল পবিত্র গুণে নিজেকে গুনান্বিত করাকে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ভাষায় ‘ইহসান’ বলা হয়। এ কাজের প্রচলন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র যামানায়ও ছিল। তবে ইলমে তাছাওউফ, আত্মশুদ্ধি কিংবা পীর মুরীদি নামে ছিল না।
কারণ এ সকল কাজের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক নজর মুবারকই যথেষ্ট ছিল। যার নাম হচ্ছে ছাহাবিয়্যত। পরবর্তীতে এই নজর মুবারকের বিনিময় হলো হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে। তখন এই নজর মুবারকের নাম হলো ‘তাবিইয়্যাত’। তারপর এই নজর মুবারক হলো তাবিয়ীগণের সাথে। সেই নজর বিনিময়ের নাম হলো ‘তাবা তাবিইয়্যাত’। তারপর থেকে বিদয়াত ও ফিতনা ফাসাদের সূত্রপাত ঘটতে থাকে। তখন উল্লেখিত কাজগুলোর সাথে যারা জড়িত ছিলেন উনাদের বলা হতো আবিদ, যাহিদ ও মুত্তাক্বী। কিন্তু প্রত্যেক দলই আবিদ, যাহিদ ও মুত্তাক্বী বলে দাবী করতে থাকে। তখন বুযুর্গানে দ্বীন নিজেদেরকে আহলে তাছাওউফ নামে পরিচয় দিতে লাগলেন। আর হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দী শেষ না হতেই এটা প্রসিদ্ধ বা মশহূর হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ!
সর্বপ্রথম তাছাওউফ অর্থাৎ আত্মশুদ্ধি নামকরণটি করেন আবু হাশেম রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার জন্য ১৫০ হিজরীতে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারকে তাছাওউফ বা আত্মশুদ্ধি শব্দটি খুঁজে পাওয়ার আশা করা বৃথা। তবে ইলমে তাছাওউফ বা আত্মশুদ্ধির যে আমলগুলো রয়েছে সেগুলো সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারকে পরিপূর্ণভাবে বিরাজমান। যেমন-
১। অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির করা।
২। মহান আল্লাহ পাক উনার ভীতি-তাক্বওয়া।
৩। দুনিয়া বিমুখতা
৪। আল্লাহওয়ালা বা বুযুর্গানে দ্বীন উনাদের পবিত্র ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা।
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি