রিয়াদ্বত মাশাক্কাত এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পূর্বে ও পরে পবিত্র হাদীছ শরীফ সংরক্ষণের মাধ্যম ছিল মুখস্থকরণ। পবিত্র কুরআন শরীফ যেমন সবার মুখস্থ ছিল তেমনি তা পরিপূর্ণভাবে লিপিবদ্ধও ছিল। কিন্তু পবিত্র হাদীছ শরীফ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তেমন ছিল না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র যামানায় কিছু কিছু পবিত্র হাদীছ শরীফ লিপিবদ্ধ থাকলেও তা ছিল একেবারে সীমিত। তিনি কাউকে কাউকে কিছু কিছু লিপিবদ্ধ করার অনুমতি মুবারক দিয়েছেন। তা ছিল খাছ। আমভাবে লিখে রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি। ফলে মুখস্থ করে রাখাই ছিল পবিত্র হাদীছ শরীফ সংরক্ষণের প্রধান মাধ্যম। আর সে কারণেই এসব যুগের হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী মুহাদ্দিছগণকে যাচাই বাছাই করার এক স্বীকৃত মাপকাঠি হচ্ছে উনাদের স্মরণশক্তি ও আমানতদারী। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ মেহেরবানী যে, তিনি সে যুগের মুহাদ্দিসীনে কিরমাগণ উনাদেরকে এত অস্বাভাবিক স্মরণ শক্তি দান করেছেন যা আমাদের এ যামানায় অবিশ্বাস্য ও অচিন্তনিয় ব্যাপার মনে হয়। আর সে নিয়ামত তথা শক্তিমত্তার কারণে উনারা লক্ষ লক্ষ হাদীছ শরীফ এবং তার রাবী বা বর্ণনাকারীদের সনদ মুখস্থ রাখতে পারতেন। সুবহানাল্লাহ!
ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই রীতিতেই পবিত্র হাদীছ শরীফ মুখস্থ বা সংরক্ষণ করেছেন। তিনি এতো অধিক সংখ্যক পবিত্র হাদীছ শরীফ মুখস্থ করেছেন যে, সমকালীন সকল ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে অতিক্রম করে গেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সর্বকালের স্বীকৃত ইমাম সাইয়্যিদুনা হযরত মিসওয়ার ইবনে কিদাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন-
طَلَبْتُ مَعَ اَبِـىْ حَنِيْفَةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ الْـحَدِيْثَ فَغَلَبَنَا وَاَخَذْنَا فِـى الزُّهْدِ فَبَـرِعَ عَلَيْنَا وَطَلَبْنَا مَعَهُ الْفِقْهَ فَجَاءَ مِنْهُ مَا تَرَوْنَ
অর্থ: আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে পবিত্র ইলমে হাদীছ শরীফ অন্বেষণ করেছি। সেক্ষেত্রে তিনি আমাদেরকে অতিক্রম করে গেছেন। উনার সাথে যুহদ বা দুনিয়া বিমুখতা গ্রহণ করেছি। তখনও তিনি আমাদের উপর প্রাধান্য লাভ করেছেন। উনার সাথে ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করেছি। এক্ষেত্রে তিনি যে কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তা আপনারা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! (মানাকিবু আবী হানিফা-৪৩, ইমাম আ’যম আবু হানীফা উনার জীবন ও কর্ম-১০৫)
শুধু তাই নয় তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করা বা রাবীর জন্য অনেকগুলো শর্তারোপ করেছেন, যার মধ্যে মুখস্থ রাখার বিষয়টি অন্যতম। এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম হাকিম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “মাদখাল ফী উলূমিল হাদীছ ১৭ পৃ.” কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
قَالَ اَبُوْ حَنِيْفَةَ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ لَا يَـحِلُّ لِلرَّجُلِ اَنْ يَّرْوِىَ الْـحَدِيْثَ الشَّرِيْفَ اِلَّا اِذَا سَـمِعَهٗ مِنْ فَمِ الْـمُحَدِّثِ فَيَحْفِظُهٗ ثُـمَّ يُـحَدِّثُ بِهٖ.
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কোন ব্যক্তির জন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করা কেবল তখনই জায়িয হবে, যখন সেই হাদীছ শরীফখানা কোন মুহাদ্দিছীনে কিরামের মুখে শুনবে। অতঃপর সে তা সংরক্ষণ করবে অতঃপর তা বর্ণনা করবে। সুবহানাল্লাহ!
দুনিয়ার শোভা বর্ধণকারী বা সৌন্দর্য- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে যীনাতুদ দুনিয়া তথা দুনিয়ার সৌন্দর্য বা শোভা বর্ধনকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
تُرْفَعُ زِيْنَةُ الدُّنْيَا سَنَةَ خَـمْسِيْنَ وَمِأَةٍ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দুনিয়ার সৌন্দর্য ১৫০ (একশত পঞ্চাশ) হিজরীতে উঠিয়ে নেয়া হবে। (তাযকিরাতুন নুমান- ৭৬, ইমাম আ’যম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এর জীবন ও কর্ম-৬১৩, জাওয়াহিরুল মুদ্বীয়াহ ফী তবাকাতিল হানাফিয়া-৫৭৭)
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি