মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لعنة الله على الكاذبين
অর্থ: “মিথ্যাবাদীদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬১)
ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরোধিতাকারীরা সকলে মিথ্যাবাদী। হিংসার বশবর্তী হয়ে তারা উনার প্রতি মিথ্যা তোহমত দিয়ে থাকে। তাদের প্রতিহিংসার আগুন এতো দূর গড়েছিলো যে, তারা উনার বিরোধিতায় মিথ্যা হাদীছ শরীফ বর্ণনা করাও জায়িয বলেছে। নাউযুবিল্লাহ!
নুয়ায়িম ইবনে হাম্মাদ খুজায়ী বিরোধিতাকারীদের অন্যতম। সে বলতো যে, ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ফিক্বাহকে ভুল প্রমাণের জন্য জাল বা মিথ্যা হাদীছ শরীফ রচনা করাও বৈধ। নাউযুবিল্লাহ! সে নিজেও উনার সম্পর্কে মিথ্যা হাদীছ শরীফ বর্ণনা করতো। তারই বর্ণিত মিথ্যা বা জাল হাদীছ শরীফ সমাজের বুকে ছড়িয়ে পড়ে। উনার বিরোধিতাকারীরাই তার প্রচার প্রসারকারী। তার দ্বারা অনেক লোকই প্রতারিত হয়ে লা’নতের রাস্তায় বিচরণ করছে। নাউযুবিল্লাহ! যার ফলে নুয়ায়িম ইবনে হাম্মাদ সে লা’নতগ্রস্ত হয়েছে। সে হজ্জে গিয়ে তালবিয়া পাঠের পরিবর্তে গালি-গালাজ করতো। সে মারা গেলে তার জানাযার নামাযও নছীব হয়নি। সাবিহ ইবনে আবু দাউদের নির্দেশে তাকে টেনে-হেঁচড়ে একটি গর্তে নিক্ষেপ করে মাটি চাপা দিয়ে পুতে রাখা হয়। তার কপালে কাফনও নছীব হয়নি। (ইমাম আবু হানীফা স্মারকগ্রন্থ-৫৬৬, তারিখে আহলে হাদীছ-৭০, দাউদ গযনবী-৩৭৮, তারীখে বাগদাদ-৩১৪)।
ইমাম মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম সবাই উনার বিরোধিতাকারীদেরকে লা’নত দিয়ে থাকেন। জনৈক ব্যক্তি বর্ণনা করেন-একবার আমরা কাদেসিয়ায় গেলাম। সেখানে আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফে হাজির হলাম। এমন সময় কুফা হতে এক ব্যক্তি আসলো। সে ইমামুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক শানের খিলাফ কথা-বার্তা বলতে লাগলো। আমীরুল মু’মিনীন ফিল হাদীছ, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন-
ويحك তোমার ধ্বংস হোক। তোমার উপর লা’নত বর্ষিত হোক। তুমি এমন একজন মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে এরূপ কথা বলছো; যিনি সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর একই অজু দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেছেন। যিনি দু’রাকায়াত নামাযে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করেছেন। ৫৫ বার হজ্জ করেছেন। উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুল মুসলিমীন বলে সম্বোধন করেছেন। আর ইলমে ফিক্বাহ যা আমাদের কাছে বিদ্যমান তা ইমামুল মুহাদ্দিসীন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট থেকেই শিখেছি।
অনুসরণ-অনুকরণের দিক দিয়ে ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেয়ে অধিক যোগ্য কেউই নেই। কারণ, তিনিই সর্বাপেক্ষা অধিক তাক্বওয়ার অধিকারী-মুত্তাক্বী, সর্বাধিক পরিচ্ছন্ন ও কলুষমুক্ত অন্তর মুবারকের অধিকারী। তিনি সকল প্রকার ইলিমকে অন্তর্দৃষ্টি, বিচক্ষনতা, প্রজ্ঞা ও মহান আল্লাহভীতি দ্বারা যেভাবে উত্তমরূপে ও বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন সেভাবে আর কেউ বর্ণনা করতে পারেননি। (স্মারক গ্রন্থ-৫৬৫)
বিশিষ্ট বুযূর্গ হযরতুল আল্লামা মাওলানা সাইয়্যিদ তাজাম্মুল হুসাইন বিহারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, একদা গইরে মুকাল্লিদ মৌলভী ইবরাহীম ছাহিব বলেন, আমি স্বপ্নযোগে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মজলিসে উপস্থিত হলাম। উক্ত মুবারক মজলিসে ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উপস্থিত ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, “তুমি উনার (ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি) প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করে থাকো। কাজেই, উনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও। তখন আমি ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, ইমামুল মুহাদ্দিসীন ওয়াল ফুক্বাহা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পা মুবারকে পড়ে গেলাম। অতি আদবের সাথে কাকুতি-মিনতি করে ক্ষমা চাইলাম। তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (কামালাত-১৭)
অমৃতসরে সর্বপ্রথম আহলে হাদীছ মতবাদ চালুকারী সে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সহযোগী ও সমর্থক হয়ে যায়। ইহাও ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরোধিতার কারনে হয়েছে। (ইশায়াতুস সুন্নাহ-২১/১১৪) এভাবে আরো কত বিরোধীতাকারী যে গোমরাহ, পথভ্রষ্ট হয়েছে, লা’নতগ্রস্থ হয়েছে তা বর্ণনাতীত।
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি