শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার
প্রতি আদব প্রদর্শন
ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, সাইয়্যিদুনা ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফক্বীহ, সূফী সকলের জন্য উত্তম আদর্শ রেখে গেছেন। তিনি উনার সম্মানিত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি যেরূপ আদব-ইহতিরাম প্রদর্শন করেছেন তা সর্বকালে সর্বযুগে সকলের জন্য উত্তম আদর্শ।
তিনি উনার সম্মানিত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা সুলতানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জাফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করার পূর্বেই সারা দুনিয়ায় ইমাম আ’যম তথা সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম হিসেবে মাশহূর হয়েছিলেন। সবাই উনাকে মনে করতেন যে, তিনি সব বিষয়েই পূর্ণ অভিজ্ঞ। সুবহানাল্লাহ!
কিন্তু যখন উনার শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ছোহবতে যেতেন তখন তিনি তার কিছুই জাহির (প্রকাশ) করতেন না। অত্যন্ত আদব-ইহতিরামের সাথে শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ছোহবতে বসতেন। নিজেকে একান্ত শূন্য বা রিক্ত হস্ত মনে করতেন। কথা-কাজ, আচার-আচরণে তা স্পষ্ট ফুটে উঠতো। শূন্য বা রিক্ত হাতে হযরত শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা উচিত তিনি সেটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জানিয়ে দিতেন। সুবহানাল্লাহ!
গত সংখ্যায় আমরা আলোচনায় দেখতে পেয়েছি যে, উনার প্রথম শায়েখ ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, শায়খুল মাশায়িখ, সুলতানুল আউলিয়া, আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম তিনি উনার সীমাহীন ইলিম, আক্বল, সমঝের কিরূপ ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। সেই সীমাহীন প্রশংসার অধিকারী ব্যক্তিত্ব তিনি যখন উনার দ্বিতীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার খিদমত মুবারকে গিয়ে কিরূপ বিনয় ও নিম্রতার পরিচয় দিয়েছেন তা নিচের ঘটনা থেকে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
একদিন হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখ সুলতানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ছোহবতে বসা ছিলেন। তিনি উনাকে বললেন, হে ইমামে আ’যম! “বলুন তো জ্ঞানী কে?” ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, যিনি ভাল-মন্দের মাঝে তমীজ (পার্থক্য) করতে পারেন তাকে জ্ঞানী মনে করা হয়।
সুলতানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এই কাজ তো চতুষ্পদ জন্তুও করতে পারে? কারণ, সে তাকে আঘাতকারী এবং পানাহার দানকারীর মধ্যে তমীজ (পার্থক্য) করতে পারে।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিনীতভাবে আরয করলেন- হে আমার শায়েখ আলাইহিস সালাম! তাহলে জ্ঞানী কে? সুলতানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি জ্ঞানী যে দুটি ভাল কাজের মধ্যে তমীজ করতে পারেন যে, কোনটি অধিক ভাল। আর দুটি মন্দ কাজের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন যে, অধিক মন্দ কাজ কোনটি। তখন মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াত্ দ্বীন, হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, সত্যি আপনিই “উস্তাযু বিল্লাহ”। তথা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ নিছবত-তায়াল্লুকপ্রাপ্ত ও প্রদর্শনকারী মহান শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা। (ইক্বতিরাসূল আনওয়ার- ১৪২, কাশফুল মাহযুব-৯৩)
উল্লেখ্য যে, সুলতানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুল মুত্তাক্বীন, ফখরুল আরিফীন, আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লক্ষ্যস্থল। কায়িনাতের সকলেই ছিলেন উনার মুবারক নছীহতের মুহতাজ বা মুখাপেক্ষী। তিনি তদানীন্তন সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে নছীহত মুবারক করতেন। কখনো সম্মিলিতভাবে কখনো বা ব্যক্তিগতভাবে। সবাই উনার সেই অমূল্য নছীহত মুবারক শোনার জন্য উনার দরবার শরীফ-এ যেতেন।