-মুহম্মদ সাদী
পূর্ব প্রকাশিতের পর
সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ছিল উঁচু স্তরের ইলমে লাদুন্নী। তিনি বদ আক্বীদা পোষণকারী এবং বদ আমলকারী মানুষদের চিনতেন এবং তাদের পরিণামফল জানতেন। উনার মুবারক ক্বওল শরীফ অনুযায়ী তাদের হয়েছে চরম ক্ষতিসাধন
পবিত্র এই হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় হযরত ইমাম-মুজতাহিদ উনারা বলেন, হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইলমে লাদুন্নী হাদিয়া করে থাকেন। সম্মানিত এই গায়েবী ইলম উনার অধিকারী ছিলেন ওলীয়ে মাদারযাদ, আওলাদে রসূল, ছাহিবে ইসমে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা কা’বা হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা কা’বা আলাইহিস সালাম তিনি বদ আক্বীদা পোষণকারী, বদ মানসিকতাসম্পন্ন এবং বদ আমলকারী কোনো মানুষের প্রতি অসন্তুষ্ট হলে তার যে বিনাশসাধন হবে, এটিইতো সঙ্গত ও স্বাভাবিক। সূক্ষ্মদর্শী মাহবুব ওলীআল্লাহ উনাদের সম্পর্কে বদ আক্বীদা পোষণ এবং উনাদের বিরুদ্ধাচরণের কারণে উনাদের কোপানলগ্রস্ত হওয়ার কঠিন পরিণামফল সম্পর্কে কিতাবে বহু ঘটনা বর্ণিত রয়েছে।
যেমন: হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একজন সূক্ষ্মদর্শী মাহবূব ওলী-আল্লাহ ছিলেন। উনার ছিলেন অসংখ্য মুরীদ-মু’তাক্বিদ-খলীফা। উনার একজন বিশিষ্ট খলীফা ছিলো। সকলে তাকে ভালোই জানতো। কেউ কেউ তাকে সমঝদার ও সূক্ষ্মদর্শীও মনে করতো। ওই ব্যক্তি একবার অসুস্থ হলো। এক পর্যায়ে সে মুমূর্ষু অবস্থায় উপনীত হলো। পবিত্র খানকা শরীফ উনার অদূরে বসবাসরত ওই অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে এবং তাকে তা’লীম, তালক্বীন দিতে হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি সেখানে গেলেন।
মুমূর্ষু মুরীদকে দেখে হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে তওবা- ইস্তিগফার করতে এবং পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করতে মুবারক নির্দেশনাদান করেন। ওই মুরীদ বলে: “আমার তওবা ইস্তিগফার করার দরকার নেই। কালিমা শরীফ পাঠ করারো কোনো প্রয়োজন নেই।” হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে তার অন্তিম মুহূর্তে বার বার ইস্তিগফার করতে এবং কালিমা শরীফ পাঠ করতে বলেন। কিন্তু সে দৃঢ়ভাবে অনীহা প্রকাশ করে। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একান্ত দুঃখিত মনে সেখান থেকে আপন হুজরা শরীফে ফিরে আসেন। অবশেষে ওই মুরীদের কথা বলার শক্তি রহিত হয়ে যায়। এমন অবস্থায় ঈমান হারা হয়ে তার মৃত্যু হয়। নাউযুবিল্লাহ!
একজন মুরীদ, শায়েখ উনার রূহানী সন্তান। শায়েখ তিনি তা’লীম-তরবিয়ত, ইলম, সম্মানিত সুন্নতপালনের উপযোগী মানসিকতা, সূক্ষ্ম সমঝ, ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ, ইখলাছ হাদিয়াদানে উনার মুরীদগণকে কামিয়াবীর শীর্ষ সোপানে উপনীত করে থাকেন। জাহির ও বাতিনের হাক্বীক্বী পরিশুদ্ধিতে মুরীদের কামিয়াবীতেই শায়েখ উনার ইতমিনান। জাহান্নামী মানুষকে জান্নাতী করা, মূলত তায়াল্লুক মায়াল্লাহ এবং তায়াল্লুক মায়ার রসূল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়াতেই শায়েখ উনার পরম প্রশান্তি। কিন্তু দীর্ঘকাল আপন শায়েখ উনার মুবারক ছোহবতে থেকেও বদ আক্বীদার কারণে শায়েখ উনার প্রতি সুধারণার অভাবে কোনো মুরীদের যখন লা’নতগ্রস্ত অবস্থায় বেঈমান হয়ে মৃত্যু হয়, তখন শায়েখ তিনি দুঃখ পান। এ দুঃখের পরিমাণ সীমাহীন।
একজন হক্কানী শায়েখ উনার মূল কাজই হলো মুরীদকে রিযামন্দি-সন্তুষ্টি, তায়াল্লুক-নিসবত, মুহব্বত-মা’রিফাত-সমৃদ্ধ করা। মুরীদের বদ আক্বীদা, বদ আমল ও বদ আখলাক্বের কারণে যখন তা’ ব্যর্থ হয়, তখন শায়েখ উনার কষ্ট পাওয়াই স্বাভাবিক। প্রেক্ষিত কারণে মৃত্যুর পূর্বে তওবা-ইস্তিগফার করতে এবং পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করতে অস্বীকারকারী মুরীদ নামের সংশ্লিষ্ট লা’নতগ্রস্ত ব্যক্তির কঠিন পরিণতির বিষয়টি ভেবে হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যন্ত্রণাকাতর হন।
দুর্দশাগ্রস্ত মুরীদ কেন্দ্রীক মনঃকষ্টে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়। ইতোমধ্যে হযরত ফুযাইল বিন আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বপ্নে ওই ব্যক্তিকে দেখেন। তিনি দেখেন: ওই ব্যক্তি দাউ দাউ করে জাহান্নামের আগুনে জ্বলছে। তিনি জানতে চান: “তোমার এই দুর্গতি কেনো? মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্বে তোমার অবস্থাতেই স্পষ্ট হয়েছে যে, তুমি জাহান্নামের স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু তুমি তো দীর্ঘসময় আমার মুবারক ছোহবতে ছিলে। তোমার অবস্থা এমন হলো কেনো? (চলবে)
একজন কুতুবুয যামান উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-১১৬ -মুহম্মদ সাদী