-মুহম্মদ সাদী
পূর্ব প্রকাশিতের পর
দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকা একজন ছেলের
সুস্থ অবস্থায় সন্ধান লাভ
সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি স¯েœহে মুহম্মদ আব্দুর রশীদকে বলেন : “তোমার ছেলে হারিয়ে যাওয়ায় তুমি নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছো। বিষয়টি তুমি আগে বলোনি কেন?” এর কোন জবাব দিতে পারেন না তিনি। কারণ বিষয়টি তো এতদিন সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে অবহিত করার কথা তার মনেই হয়নি। মূল কথা, দীর্ঘকাল মুবারক সান্নিধ্যে থেকেও তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে চিনতে পারেননি, বুঝতে পারেননি। মাহবূব ওলীআল্লাহ উনাদের একান্ত কাছে থেকেও উনাদের বুযুর্গী, কারামত, মর্যাদা, মর্তবা, মাক্বাম বুঝতে না পারার অসংখ্য-অগণিত দৃষ্টান্ত রয়েছে পৃথিবীতে। এমন ঘটনা বুযুর্গ পিতা-মাতা-সন্তানের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
ইমামে আ’যম, ইমামুল মুসলিমীন, ইমামুল আইম্মাহ, সাইয়্যিদুল উলামা, হাকীমুল হাদীছ হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিতা আম্মা রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি একদিন হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলেন : “বাবা! আমার এই মাসয়ালাটির জবাব অমুক বিজ্ঞ আলিম উনার নিকট থেকে জেনে এসে আমাকে জানাবেন।” ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট জানতে না চেয়ে অন্য আলিম (যিনি হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছাত্র) উনার নিকট মাসয়ালার জবাব জানতে চাওয়ার দুটি কারণ থাকতে পারে- ১. আম্মা তিনি হয়তো আপন সন্তানের ইলিম-এর পরিধি ও বুযুর্গী সম্পর্কে পুরোপুরি জানতেন না, অথবা ২. জানলেও কোন কোন বিষয়ে সন্তানের চেয়ে সংশ্লিষ্ট আলিম উনার প্রতি আস্থা বেশি ছিল।
ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি মাসয়ালাটির জবাব আদ্যোপান্ত জানা সত্ত্বেও তিনি উনার আম্মা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার আদেশমতে বিনা বাক্য ব্যয়ে উদ্দিষ্ট আলিম উনার নিকট গিয়ে মাসয়ালাটি সম্পর্কে জানতে চান। তিনি বলেন : “হে ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি! এ মাসয়ালার জবাব তো আমার জানা নেই।” তখন তিনি বলেন : “মাসয়ালার জবাব আমি আপনাকে বলে দিই। আমার কাছ থেকে জেনে অতঃপর আপনি আমাকে বলুন। তাতেই হবে। আমি আমার আম্মাজান উনাকে গিয়ে বলবো, এ মাসয়ালার জবাব আপনিই বলেছেন।” তিনি ফিরে এসে মূল ঘটনা না জানিয়ে উদ্দিষ্ট আলিম উনার বলে দেয়া জবাব উনার আম্মাকে জানালেন। সুবহানাল্লাহ!
এতে বুঝা গেলো, একান্ত কাছে থেকেও একজন অন্যজনের অবস্থা জানতে পারে না। বিশেষ করে, মাহবূব ওলীআল্লাহ উনাদের কামিয়াবীর স্তর উপলব্ধি করা সাধারণ মানুষের পক্ষে তো বটেই, সমঝদারদের পক্ষেও অত্যন্ত দুরূহ। এ প্রেক্ষিতে অত্যন্ত সাদাসিধে স্বভাবের মানুষ মুহম্মদ আব্দুর রশীদ তিনি ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থেকেও যে সূক্ষ্মদর্শী ওলীআল্লাহ, ওলীয়ে মাদারজাদ, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে আদৌ বুঝতে পারবেনা, এটিই স্বাভাবিক ও সঙ্গত।
অনেকগুলো বছর ধরে মুহম্মদ আব্দুর রশীদ খাদিম হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। তার আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। আন্তরিক খিদমতের যে আঞ্জাম তিনি দিয়ে এসেছেন, তার তুলনা নেই। অবশ্য এজন্য সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি আর্থিক সহায়তা, থাকা-খাওয়াসহ সার্বিক বিষয়ে যে আনুকূল্য এবং স্নেহ মমতা ও দয়া, দান, ইহসানে তাকে সিক্ত করেছেন, তা বর্ণনার ভাষা সৃষ্টি হয়নি। বিশ্বস্ত মুহম্মদ আব্দুর রশীদের প্রতি সবসময় তিনি অত্যন্ত দয়া-মায়া-স্নেহপ্রবণ। উনার অপরিসীম আদর, সোহাগ, সাহায্য, সহযোগিতায় মুহম্মদ আব্দুর রশীদের এতগুলো বছর অনাবিল আনন্দে কেটে যাচ্ছে। আজ সেই বিশ্বস্ত খাদিমের ছেলে নিখোঁজ হওয়ার কথা শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি কষ্ট পেয়েছেন, দুঃখ পেয়েছেন।
মমতাময় কণ্ঠে তিনি মুহম্মদ আব্দুর রশীদকে কাছে ডাকেন। একান্ত কাছে টেনে নেন। আবার বলেন : “তোমার ছেলে হারিয়েছে আমাকে আগে বলোনি কেন?” এবারেও মুহম্মদ আব্দুর রশীদ নিরুত্তর। তিনি বলতে থাকেন : “আব্দুর রশীদ তুমি চিন্তা কর না। আল্লাহ পাক উনার রহমতে তোমার ছেলে তোমার কাছে ফিরে আসবে। অচিরেই ফিরে আসবে।” একথা শুনে মুহম্মদ আব্দুর রশীদ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। এত দিন ধরে কাছে থাকেন। কোনদিনও তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে চিনতে পারেননি। চেনার চেষ্টা করেননি। সে যোগ্যতাও তার নেই। আজ এই প্রথম তিনি নিজের মতো করে উনাকে নতুনভাবে উপলব্ধি করলেন। মানুষের অনুভব ও বিশ্বাস কখন কোন্ বিষয়ে যে পোক্ত হয়, তা কে জানে! মুহম্মদ আব্দুর রশীদের আজ প্রত্যয়ী বিশ্বাস যে, সাইয়্যিদুনা হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ওসীলায় ছেলেকে তিনি সহসাই ফিরে পাবেন। (চলবে)