-মুহম্মদ সাদী
যিনি আল্লাহ পাক এবং আকরামুল আউয়ালীন, ওয়াল আখিরীন, ছাহিবু মাক্বামিল মাহমূদ, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার রহমত ও ইহসান, অর্থাৎ উনাদের সন্তুষ্টির জন্যই অনুক্ষণ বিভোর থাকেন, কেবল তিনিই বিশেষ নূর, অর্থাৎ আখাছ্ছুল খাছ নিয়ামত লাভে হাক্বীক্বত উপলব্ধি ও অবলোকন করার মাক্বামে অধিষ্টিত হয়ে থাকেন। এমন মাক্বামে অধিষ্ঠানকারী আরিফগণ জাগতিক সকল বিষয়ের কার্যকারণসহ আলমে বরযখের বিষয়াবলী এবং মৃত্যু পরবর্তী পরিণত স্তরের যাবতীয় অবস্থাও অবহিত হয়ে থাকেন। যেনো সকল কিছুই চোখের সম্মুখেই সংঘটিত হচ্ছে। এটি আরিফগণের কামিয়াবীর খাছ স্তর। হাক্বীক্বত সম্পর্কে আরিফগণের দৃঢ় প্রত্যয় ও যোগ্যতা এমন হয় যে, পর্দা উন্মোচন করা হলেও অথবা রহস্যাদির কার্যকারণ পর্দায় ঢেকে দিলেও অনুভব, বিশ্বাস ও নিয়ামত প্রাপ্তির অব্যাহত ধারায় কোন হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে না। অবস্থা যখন এমন হয়, তখন দলীল-প্রমাণের আর কোন প্রয়োজনই থাকে না। ইল্ম ও হিকমত তখন অন্যের কাজে লাগে, নিজের ক্ষেত্রে হিজাব হিসেবে সাব্যস্ত হয়। বিনা সংশয় ও বিনা প্রতিবাদে আত্মসমর্পণ (পরিপূর্ণরূপে আত্মলয় হওয়া) ছাড়া তখন আর কোন পথই অবশিষ্ট থাকে না।
এতোক্ষণ ধরে ওলীআল্লাহগণের, অর্থাৎ আরিফগণের মাক্বাম ছিফত, উপলব্ধি, মর্যাদা ও মর্তবা সম্পর্কে যে নিগূঢ় আলোচনা করা হলো, ওলীয়ে মাদারজাদ, ফখ্রুল আউলিয়া, আরিফ বিল্লাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার মাক্বাম, ছিফত, মর্যাদা ও মর্তবা সে সবেরও ঊর্ধ্বে। ওলীআল্লাহগণ-উনাদের অন্তর্দৃষ্টি, বিচক্ষণতা ও সূক্ষ্মদর্শীতা আল্লাহ পাক-উনার মহান দান এবং সিরাজুম মুনীরা, নবীয়ে আক্বদাস, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সদয় বণ্টন। প্রাসঙ্গিক মশহুর একটি ঘটনা এখানে উল্লেখযোগ্য। তা’ হলো: একদা হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র মসজিদে হারাম শরীফ-এ বসেছিলেন। ইত্যাবকাশে এক অপরিচিত ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হলো। হযরত ইমাম মুহম্মদ ইবনে হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি ঐ আগন্তুককে দেখে বললেন: æমনে হয় লোকটি কাঠমিস্ত্রী।” হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন: æআমার মনে হয় লোকটি কামার।” অবশেষে তাকে জিজ্ঞেস করে উনারা উভয়ে জানতে পেলেন, লোকটি পূর্বে কামার ছিল। কামারের কাজ ছেড়ে বর্তমানে সে কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে। এ ঘটনার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আমাদেরকে পার্থিব একটি বিষয়ের অন্তর্দৃষ্টি ও সূক্ষ্মতা সম্পর্কে সচেতন করে। প্রকৃতপক্ষে মাহবুব ওলীগণের অনুভব ও দৃষ্টির মাঝে ইহকাল ও পরকালের কোন বিষয়ই পর্দায় ঢাকা থাকে না।
দুনিয়া ও আখিরাতের অদৃশ্য বস্তু ও বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার এবং সেসব অবলোকন করার যোগ্যতা লক্ষ্যস্থল বিশেষ শ্রেণীর ওলীআল্লাহগণ ওয়ারিশ সূত্রে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, ছাহিবে কা’বা কাওসাইন, রহমতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার নিকট থেকেই লাভ করে থাকেন। মূলত এ মাক্বাম ওয়ারিশসূত্রে ওলীআল্লাহগণ-উনাদের প্রাপ্ত নিয়ামতের পরিমিত হিস্যা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ছাহিবুল ওহী ওয়াল কুরআন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইল্মে গইবের অধিকারী। তিনি ইরশাদ করেন-
اعطيت بجوامع الكلم
অর্থ: আমি সমুদয় ইল্মসহ প্রেরিত হয়েছি।” এ ইল্মের সঙ্গে ইল্মে গইব অনিবার্যভাবে অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ পাক-উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে ইল্মে গইবসহ সকল প্রকার ইল্ম হাদিয়া করেছেন। তিনি মুত্তালা আলাল গইব।
মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন-
وما اوتيتم من العلم الا قليلا
অর্থ: æআমি তোমাদেরকে সামান্যতম ইল্ম দান করেছি।” (সূরা বনী ইসরাঈল-৮৫)
সাধারণ বান্দাদেরকে আল্লাহ পাক-উনার দানকৃত এই অত্যল্প ইল্ম, ইল্মে গইব-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এবং কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের সঙ্গে, এমনকি হাক্বীক্বী ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া, অর্থাৎ খাছ ওলীআল্লাহ উনাদের সঙ্গেও আদৌ প্রযোজ্য নয়। পূর্ববর্তী সকল নবী-রসুল আলাইহিমুস্ সালাম-উনারা সকলেই ইল্মে গইব জানতেন।
(চলবে)
একজন কুতুবুয যামান উনার দিদারে মাওলার দিকে প্রস্থান-১১৬ -মুহম্মদ সাদী