-মুহম্মদ সাদী
পূর্ব প্রকাশিতের পর
রাতের গভীরে অদৃশ্য স্থান থেকে গায়িবী
আওয়াজে দুআ কবুলের স্বীকৃতি
হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম এখন কোথায়? দয়া করে যদি জানাতেন”। ফেরেশ্তাগণের রসূল স্বয়ং হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর এমন প্রশ্নের জবাবে আফদ্বালুন নাস, বাদাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চোখ মুবারক বন্ধ করে নিমিষেই আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, লওহো, কলম, জান্নাত, জাহান্নামসহ কুল-কায়িনাত বিচরণ ও প্রত্যক্ষ করে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর হাত ধরে বলেন: æআমি আফদ্বালুন নাস বাদাল আম্বিয়া হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আর আপনি হলেন, হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম”। (সুবহানাল্লাহ)!
উপরের সূক্ষ্ম বিষয়ের নাতিদীর্ঘ আলোচনার মর্মার্থ হলো: জানা, অজানা, দৃশ্য, অদৃশ্য, সহজ, দুর্বোধ্য ও অবোধ্যসহ গুপ্তভেদের নানাবিধ বিষয়গুলো মাহবুব ওলীগণের আপেক্ষিক যোগ্যতায় উনাদের অন্তরে, ধ্যানে, জ্ঞানে, মনোযোগে, মনে ও মননে প্রতিবিম্বিত হয়ে যায়। একে কখনোই স্বাভাবিক কাশফ্ (আত্মিক বিকাশ) নাম দেয়া সমীচীন নয়। এমন অবস্থা ও ব্যবস্থায় ওলীয়ে মাদারজাদ, মুস্তাজাবুদ্ দা’ওয়াত, আফদ্বালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ্ ওয়া কারামত, ফখ্রুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আ’যম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি যে আমার সবিনয় প্রার্থনার প্রেক্ষিতে আগাম সংবাদ দান করলেন, তা’তো উনার অতুলনীয় মর্যাদা, লব্ধ নৈকট্য এবং মুবারক বৈশিষ্ট্যম-িত মাক্বামতের তুলনায় একটি অতি নগণ্য বিষয়। যদিও বিষয়টি আমার কাছে এবং আমার মতো অন্য সকলের কাছেই দুর্বোধ্য এবং অতিশয় দুরূহ।
ওলীয়ে মাদারজাদ, মুস্তাজাবুদ্ দা’ওয়াত, আফ্দ্বালুল ইবাদ, ছাহিবে কাশফ্ ওয়া কারামত, ফখ্রুল আউলিয়া, ছূফীয়ে বাতিন, ছাহিবে ইস্মে আ’যম, লিসানুল হক্ব, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন একজন সূক্ষ্মদর্শী এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ওলীআল্লাহ। সমঝ্দারদের জানা যে, প্রকৃত বিচক্ষণতা বা অন্তর্দৃষ্টি অন্তর ও অনুভবের সঙ্গেই সম্পর্কিত। ওলীআল্লাহগণ আল্লাহ পাক প্রদত্ত নূরের আলোয় অবলোকন করে থাকেন। অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন বান্দাদের প্রশংসায় কুরআন শরীফ-এ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন:
ان فى ذالك لايات للمتوسمين
অর্থ: æনিশ্চয়ই এতে অনুধাবনকারীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।” (সূরা হিজর-৭৫)। রঈসুল মুফাস্সিরীন, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন: æএ আয়াত শরীফ-এ অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বড় বড় নিদর্শন রয়েছে।”
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মু’মিন বান্দাদের অন্তর্দৃষ্টি ও বিচক্ষণতা সম্পর্কে উম্মাহকে সতর্ক করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন:
اتقوا فراسة المؤمن فانه ينظر بنور الله
অর্থ: æমু’মিন-এর ফিরাসাতকে (অন্তর্দৃষ্টি) ভয় কর। কেননা তিনি আল্লাহ পাক উনার নূরের আলোয় দেখে থাকেন।” যিনি আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যতো নিকটবর্তী, তাঁর জন্য সত্যকে জানা, চেনা ও প্রত্যক্ষ করার সকল প্রতিবন্ধকতা অপসারিত হয়ে যায়। নৈকট্যের মর্যাদানুসারে ওলীআল্লাহগণ এমন সব গূঢ় রহস্য প্রত্যক্ষ করেন, যা অন্যদের পক্ষে প্রত্যক্ষ করা তো দূরের কথা, কল্পনা করাও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। অন্তর্দৃষ্টি না থাকায় সাধারণের পক্ষে ঐসব বিচিত্র রহস্যাবলী জানা, অনুভব করা এবং দেখার বিষয় অবরুদ্ধ থাকে। মাহবুব ওলীগণের মন ও মননে হাক্বীক্বতের অবিকল নক্শা হরহামেশা প্রতিবিম্বিত হতে থাকে। প্রয়োজনে পর্দার অন্তরাল ব্যতীত ওলীআল্লাহগণ ফেরেশ্তাগণের সঙ্গেও কথা বলে থাকেন।
(চলবে)