-মুহম্মদ সাদী
পূর্ব প্রকাশিতের পর
তিনি বলতে থাকেন: “তুমি বড়ো আশা করে আমার কাছে দুআ’র জন্য আরজু করেছো। কেউ দুআ’ চাইলে ফিরিয়ে দিতে হয় না। তা না হলে এর কোন প্রয়োজনই ছিলো না। মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর নেক দুআ’ই তোমার সমস্যার সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ। তোমাকে আমি এক ধরণের মুহব্বত করি। আমিও তোমার জন্য দুআ’ করবো। তুমি চিন্তা করো না।” আমার মতো অযোগ্য, অবাধ্য ও অমনোযোগী মানুষকে কেন তিনি এতো আদর, স্নেহ ও মুহব্বত করেছেন, তা উনার মুবারক জীবদ্দশায় এবং উনার বিছাল শরীফ-এর দীর্ঘ এতো বছর পরও আমি বুঝিনি। আমার আপেক্ষিক ফিকিরের যতো গভীরে আমি যাই, ততোই আমি হতবাক হই, বিস্মিত হই। দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে নিবিড় ভাবনার মুহূর্তগুলো আমার অন্তরকে আন্দোলিত করে। আমার অনুভূতিকে স্পর্শ করে। অনাবিল ভক্তি-শ্রদ্ধায় আমার মাথা অবনত হয়। কতো কথা ভেবে অজান্তেই কখনো কখনো আমার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু নামে।
ওলীয়ে মাদারজাদ, মুসতাজাবুদ্ দা’ওয়াত, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরতুল আল্লামা সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলিছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি অনুগ্রহবশত আমার জন্য দুআ’ করবেন জেনে আমার পেরেশানি প্রশমিত হয়েছে। আমি ইত্মিনান লাভ করেছি। দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কাছে দুআ’ চাওয়ার বিষয়টি আমি মুজাদ্দিদে আ’যম, ছাহিবে সুলত্বানিন্ নাছীর, আওলাদে রসূল মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর কদম মুবারকে অনুপুঙ্খ পেশ করেছি। সঙ্গতকারণেই আমি অপেক্ষায় রয়েছি। প্রতিদিনই দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মুবারক ছোহ্বতে বসি। কতো কথা জানতে চাই! কতো মুবারক নছীহত শুনি! উনার জালালিয়ত ও রোব-এর কারণে এবং বেয়াদবী হয়ে যায়, এই ভয়ে দুআ’ চাওয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া থেকে আমি বিরত থাকি। অস্থিরমতি মানুষ হিসেবে জানার অবিরাম ইচ্ছা সত্ত্বেও সাহসের অভাবে কিছু বলতে পারি না। এভাবে চার-পাঁচ দিন কেটে যায়।
ওলীকুল শিরোমণি হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জবান মুবারক থেকে আমার সমস্যার ফায়সালা সম্পর্কে জানতে আমি উৎসুক হয়ে রয়েছি। এ লক্ষ্যে একদিন উনার মুবারক ছোহ্বতে বসতে দেখেই তিনি অত্যন্ত জালালীভাবে আমাকে বলেন: “তুমি কেন আমার কাছে দুআ’ চাইলে? আমিতো আগেই বলেছি দুআ’ ও কোশেশ কেবল আত্মশুদ্ধির জন্য, যা আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, মাশুকে মাওলা, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত, মা’রিফাত ও সন্তুষ্টির নিকটবর্তী করে দেয়। দুনিয়া হাছিলের জন্য এত দুআ’ চাওয়া কেন? তোমার জন্য দুআ’ করতে গিয়ে আমার অনেক কথা শুনতে হয়েছে। তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছো।” এসব শুনে আমি যুগপৎ বিস্মিত ও শঙ্কিত হই। মাদারজাদ ওলী, আওলাদে রসূল, হযরত দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জালালিয়ত ও রোব আমার অজানা নয়। এমন মুহূর্তে কিছু নিবেদনের কারণে চরম বেয়াদবীর ভয়ে আমি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকি।
সর্বতোভাবে গায়রুল্লাহ পরিহারের লক্ষ্যে একান্তভাবে আত্মশুদ্ধির জন্য দুআ’ চাইতে হবে এবং কোশেশ করতে হবে, একথা বুঝতে আমার কষ্ট হয়না, যদিও কাজটি অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু দুআ’ চেয়ে দাদা হুযূর ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহিকে আমি কষ্ট দিয়েছি এবং আমার কারণে তিনি কারো কথা শুনে দুঃখ পেয়েছেন। এজন্য আমি মর্মাহত হই, বিপন্নবোধ করি। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল এবং আমার কাছে দুর্বোধ্য। তিনি কষ্ট পাওয়ায় আমার প্রতিকূল পরিণতির কথা ভেবে আমি আতঙ্কিত হই। আল্লাহ পাক এবং উনার প্রিয়তম হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রউফুর রহীম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ লক্ষ্যস্থল ওলী, যিনি মুসতাজাবুদ্ দা’ওয়াত, উনার কাছে দুআ’ ও উনার নেক দৃষ্টি প্রার্থনা করায় দোষ কোথায়? কে উনাকে কথা শুনিয়েছেন? কেন শুনিয়েছেন? কখন শুনিয়েছেন? কে দুঃখ দিয়েছেন? ইত্যাকার নানা কথা ভেবে আমার অন্তরে বেদনার নিদারুণ তোলপাড়। (অসমাপ্ত)
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি