কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম-নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৩৩

সংখ্যা: ২০০তম সংখ্যা | বিভাগ:

প্রাণীর মূর্তি, ভাস্কর্য তৈরি করা-করানো, ছবি তোলা-তোলানো, আঁকা-আঁকানো, রাখা-রাখানো হারাম ও নাজায়িয হওয়ার অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল প্রমাণ

 

 

স্মর্তব্য যে, নির্ভরযোগ্য ও সর্বজনমান্য প্রায় হাদীছ শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিক্বাহ-ফতওয়ার কিতাবেই “প্রাণীর মূর্তি, ভাস্কর্য তৈরি করা-করানো, ছবি তোলা-তোলানো, আঁকা-আঁকানো, রাখা-রাখানো হারাম ও নাজায়িয” বলে উল্লেখ আছে। নিম্নে সেসকল কিতাবসমূহ থেকে ধারাবাহিকভাবে এ সম্পর্কিত দলীল প্রমাণ তুলে ধরা হলো-

 

 

উমদাতুল ক্বারী শরহু ছহীহিল বুখারী

 

কিতাবখানা লিখেছেন শাইখ ইমাম হযরত আল্লামা বদরুদ্দীন আবূ মুহম্মদ মাহমূদ বিন আহমদ আইনী হানাফী মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি। ওফাত মুবারক: ৮৫৫ হিজরী। অত্র কিতাবে প্রাণীর ছবি সম্পর্কে যা উল্লেখ আছে তা হলো-

(৫৩২)

وقال الخطابى المراد من الصور التى فيها الروح مما لم يقطع راسه (كتاب اللباس باب التصاوير الجلد ۲۲  الصفحة ۶۹ مكتبة رشيدية كوئته باكستان)

অর্থ: হযরত ইমাম খত্তাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হারাম ছবি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো প্রাণীর ছবি, যার মাথা কাটা হয়নি। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: ছবি মূর্তি, ভাস্কর্য এর বিধান ২২তম খ- ৬৯ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: মাকতাবায়ে রশীদিয়াহ কুয়েতা পাকিস্তান)

(৫৩৩-৫৩৪)

فان قلت قال الله تعالى عند ذكر سليمان (يعلمون له ما يشاء من محاريب وتماثيل) قال مجاهد كانت صورا ممن نحاس اخرجه الطبرانى وقال قتادة كانت من خشب ومن زجاج اخرجه عبد الرزاق، قلت كان ذلك جائزا فى تلك الشريعة وكانوا يعلمون اشكال الانبياء والصالحين منهم على هيئتهم فى عبادتهم ليتعبدوا كعبادتهم ثم جاء شرعنا بالنهى عن ذلك. (كتاب اللباس باب التصاوير الجلد ۲۲  الصفحة ۶۹ مكتبة رشيدية كوئته باكستان)

অর্থ: তুমি যদি বলো- আল্লাহ তায়ালা হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম-উনার সম্পর্কে বলেছেন (তারা জ্বিনরা হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম-এর ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, মূর্তি-ভাস্কর্য-ছবি নির্মাণ করত। সূরা সাবা: আয়াত শরীফ-১৩) হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ওই মূর্তিগুলো ছিলো তামার তৈরি। যা হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন। হযরত ক্বাতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ওইগুলো ছিলো কাঠের তৈরি এবং কাচের তৈরি, যা হযরত ইমাম আব্দুর রযযাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উল্লিখিত আয়াত শরীফ ও তাফসীরের প্রেক্ষিতে আমি বলবো: উক্ত মূর্তি-ভাস্কর্য- প্রাণীর ছবি তৈরি করা উনার শরীয়তে জায়িয ছিল। এমনকি তারা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং নেককারগণের মূর্তি-ছবি তৈরি করত।

আর আমাদের শরীয়তে তা নিষেধ তথা হারাম করে দেয়া হয়। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য এর বিধান ২২তম খ- ৬৯ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: মাকতাবায়ে রশীদিয়া, কুয়েতা পাকিস্তান)

(৫৩৫-৫৩৬)

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم تصوير صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهو من الكبائر وسواء صنعه لما يمتهن او لغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله وسواء كان فى ثوب اوبساط اودينار او درهم او فلس او اناء او حائط. واما ما ليس فيه صورة حيوان كالشجر ونحوه فليس بحرام وسواء كان فى هذا كله ماله ظل وما لا ظل له وبمعناه قال جماعة العلماء مالك والثورى وابو حنيفة وغيرهم. (كتاب اللباس باب عذاب المصورين يوم القيامة الجلد ۲۲  الصفحة ۷۰)

অর্থ: ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে আছে, আমাদের ইমাম মুজতাহিদগণ এবং অন্যান্যরা বলেন, প্রাণীর ছূরত (ছবি, আকৃতি, মূর্তি, ভাস্কর্য) তৈরি করা হারাম শক্ত হারাম। উহা চর্চা করা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। তা লাঞ্ছনার জন্য তৈরি করুক অথবা লাঞ্ছনার জন্য না করুক, তা সর্বাবস্থায় হারাম। কেননা, এতে আল্লাহ তায়ালা উনার সৃষ্টির সাদৃশ্যতা দাবি করা হয়। কাপড়, বিছানা, দিনার (স্বর্ণ মুদ্রা) দিরহাম  (রৌপ্য মুদ্রা) টাকা-পয়সা, পাত্র, দেয়াল ইত্যাদি সবকিছুতেই ছবি আঁকা বা তোলা সমানভাবে হারাম।

আর ছবি যদি প্রাণীর না হয় যেমন গাছ-পালা ও অন্যান্য জড় বস্তু তাহলে তা হারাম নয়। অনুরূপ প্রাণীর ছূরত  মুজাসসিমা  (দেহবিশিষ্ট মূর্তি) হোক অথবা গাইরে মুজাসসিমা (দেহহীন প্রাণীর ছবি) হোক উভয়টির চর্চাও সমানভাবে হারাম। উল্লিখিত ব্যাখ্যা বা মতামত পেশ করেছেন উলামায়ে কিরামের একটি দল হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও অন্যান্যগণ। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: ক্বিয়ামতের দিন প্রাণীর ছবি অঙ্কনকারীদের উপর শাস্তি প্রসঙ্গে ২২তম খ- ৭০ পৃষ্ঠা)

(৫৩৭)

وقال الطحاوى ذهب ذاهبون الى كراهة اتخاذ ما فيه الصور من الثياب وماكان يتوطا من لك ويمتهن وما كان ملبوسا وكرهوا كونه فى البيوت (كتاب اللباس باب من كره القعود على الصور الجلد ۲۲ الصفحة ۷۳)

অর্থ: হযরত ইমাম ত্বাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উলামায়ে কিরামগণ কাপড়ের উপর প্রাণীর ছবি অঙ্কনকে মাকরূহ তাহরীমী বলেছেন। তা অপমানের জন্য তৈরি করুক অথবা অপমানের জন্য না করুক পোশাকে তা নিষিদ্ধ। আর ঘরের ভিতরে তা রাখাও মাকরূহ তাহরীমী। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবির উপর বসা মাকরূহ তাহরীমী প্রসঙ্গে ২২তম খ- ৭৩ পৃষ্ঠা)

(৫৩৮)

وقد دل حديث الباب علي انه لا فرق فى تحريم التصوير بين ان تكون الصورة لها ظل او لا ولا بين ان تكون مدهونة او منقوشة او منقورة او منسوجة (كتاب اللباس باب من كره القعود على الصور الجلد ۲۲ الصفحة ۷۳)

অর্থ: অত্র পরিচ্ছেদের হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দেহধারী মূর্তি এবং দেহহীন প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন পার্থক্য নেই। তা তেল দিয়ে তৈরি করা হোক, তুলি দিয়ে আঁকা হোক, কোন উপকরণ দ্বারা তৈরি করা হোক অথবা সুতা দিয়ে বুনানো হোক সর্বাবস্থায় উহা হারাম হওয়ার ব্যপারে কোন তফাৎ নেই। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবির উপর বসা মাকরূহ তাহরীমী প্রসঙ্গে ২২তম খ- ৭৩ পৃষ্ঠা)

(৫৩৯)

وادعى الداودى ان هذا الحديث ناسخ لجميع الاحاديث الدالة على الرخصة (كتاب اللباس باب من كره القعود على الصور الجلد ۲۲ الصفحة ۷۳)

অর্থ: হযরত ইমাম দাউদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, প্রাণীর ছবি ও মূর্তি হারাম প্রমাণকারী অত্র হাদীছ শরীফ প্রাণীর ছবি জায়িয হাদীছ শরীফগুলোকে মানসূখ বা রহিত করেছে। অর্থাৎ মূলত প্রাণীর ছবি হারাম। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবির উপর বসা মাকরূহ তাহরীমী প্রসঙ্গে ২২তম খ- ৭৩ পৃষ্ঠা)

(৫৪০)

وقال الخطاوى المصور هو الذى يصور اشكال الحيوان والنقاش الذى ينقش اشكال الشجر ونحوها فانى ارجو ان لا يدخل فى هذا الوعيد وان كان جملة هذا الباب مكروها (كتاب اللباس باب من كره القعود على الصور الجلد ۲۲ الصفحة ۷۴)

অর্থ: হযরত ইমাম খত্তাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে প্রাণীর ছবি বা মূর্তি তৈরি করে তাকে মুছাব্বির বলে। আর যে গাছ পালা ও প্রাণহীন অন্যান্য জিনিসের ছবি আঁকে তাকে নককাশ বলে। আমি মনে করি, এই নককাশ ব্যক্তি শাস্তির আওতাভুক্ত নয়। যদিও এ পরিচ্ছেদে প্রাণীর ছবির চর্চাকে মাকরূহ তাহরীমী বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রাণীর ছবি বা মূর্তি হারাম আর প্রাণহীন বস্তুর ছবি জায়িয। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবির উপর বসা মাকরূহ তারীমী প্রসঙ্গে ২২তম খ- ৭৪ পৃষ্ঠা)

(৫৪১)

وبه قال مالك والثورى وابو حنيفة والشافعى وانما نهى الشارع اولا عن الصور كلها وان كانت رقما (كتاب اللباس باب من كره القعود على الصور الجلد ۲۲ الصفحة ۷۴)

অর্থ: হযরত ইমাম আবূ হানীফাহ মালিক সুফিয়ান ছাওরী ও হযরত শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, শরীয়ত প্রণেতা প্রথমত সকল প্রকার প্রাণীর ছবিকে নিষেধ তথা হারাম করেছেন। কিন্তু যদি প্রাণহীন বস্তুর নকশা হয় তাহলে হারাম নয়। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবির উপর বসা মাকরূহ তাহরীমী প্রসঙ্গে ২২তম খ- ৭৪ পৃষ্ঠা)

(৫৪২)

اى هذا باب فى بيان كراهية الصلوة فى البيت الذى فيه الثياب التى فيها التصاوير (كتاب اللباس باب كراهية الصلوة فى التصاوير الجلد ۲۲ الصفحة ۷۴)

অর্থ: প্রাণীর ছবি বিশিষ্ট কাপড় যে ঘরে থাকে সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী প্রসঙ্গে অত্র পরিচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ যে ঘরে প্রাণীর ছবি মূর্তি থাকে সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি বিশিষ্ট ঘরে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী প্রসঙ্গে ২২তম খ- ৭৪ পৃষ্ঠা)

 

শরহু ইবনি বাত্তাল আলা ছহীহিল বুখারী

 

কিতাবখানা লিখেছেন হযরত ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ মুহম্মদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ আল বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। ইন্তিকাল মুবারক: ২৫৬ হিজরী। অত্র কিতাবে প্রাণীর ছবি সম্পর্কে যা বর্ণিত আছে-

(৫৪৩)

وقد روى الاعمش عن عمارة بن عمير قال: كنت جالسا عند رجل من اصحاب ابن مسعود فمثلت فى الارض مثال عصفور فضرب يدى (كتاب اللباس باب عذاب المصورين يوم القيامة الجلد ۹ الصفحة ۱۸۷ دار الكتب العلمية بيروت لبنان)

অর্থ: হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আম্মারাহ বিন উমাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একদা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার সঙ্গীদের মধ্যে একজনের সাথে বসা ছিলাম। সেখানে এক ব্যক্তি মাটির উপর চড়ুই পাখির আকৃতি অঙ্কন করছিল। তা দেখে তিনি তার দুহাত দ্বারা তা মিশিয়ে দিলেন। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: ক্বিয়ামতের দিন প্রাণীর ছবি অঙ্কনকারীদের উপর শাস্তি প্রসঙ্গে ৯ম খ- ১৮৭ পৃষ্ঠা প্রকাশনা: দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ বইরূত লিবানন)

(৫৪৪)

قال المؤلف: فى حديث عائشة حجة لمن كره الصور فى كل شىء (كتاب اللباس باب نقض الصور الجلد ۹ الصفحة ۱۸۸)

অর্থ: গ্রন্থকার বলেন, প্রত্যেক বস্তুতে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার পক্ষে যারা তারা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হাদীছ শরীফ দ্বারা দলীল দেন। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি মূর্তি অপসারণ প্রসঙ্গে ৯ম খ- ১৮৮ পৃষ্ঠা) (৫৪৫)

وفى حديث ابى هريرة دليل على أن نهيه عليه السلام عن الصور مجمل، معناه عندهم على العموم ايضا فى الحيطان والثياب وغيرها. (كتاب اللباس باب نقض الصور الجلد ۹ الصفحة ۱۸۸)

অর্থ: হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ প্রমাণ করে যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংক্ষেপে উক্ত হাদীছ শরীফ প্রাণীর ছবির চর্চা নিষেধ তথা হারাম করেছেন। হযরত মুহাদ্দিছূন কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিকট আমভাবে দেয়ালে, কাপড়ে এবং এছাড়া অন্যান্য সকল কিছুতে প্রাণীর ছবি আঁকতে বা রাখতে হারাম ফতওয়া দিয়েছেন। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি অপসারণ প্রসঙ্গে ৯ম খ- ১৮৮ পৃষ্ঠা)

(৫৪৬)

وقوله عليه السلام (من اظلم ممن ذهب يخلق كخلقى) هو فى معنى حديثه عليه السلام: انه لعن المصور لانه وصف المصور باشد الظلم وقد قال تعالى الا لعنة الله على الظالمين، فعمت اللعنة كل من وقع عليه  اسم ظالم من مصور وغيره. (كتاب اللباس باب نقض الصور الجلد ۹ الصفحة ۱۸۸)

অর্থ: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাণী (ওই ব্যক্তি বড় অত্যাচারী যে আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য তৈরি করে।) এর ব্যাখ্যায় অন্য একখানা হাদীছ শরীফ “নিশ্চয়ই তিনি প্রাণীর ছবি অঙ্কনকারীকে লা’নত দিয়েছেন।” কেননা প্রাণীর ছবি অঙ্কনকারী বা মূর্তি তৈরিকারীর কাজটি বড় জুলুম। যেমনটি আল্লাহ তায়ালা বলেন, “জেনে রাখো! জালিমদের উপর আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” সুতরাং সাধারণভাবে লা’নত বা অভিসম্পাত সর্বপ্রকার জালিমদের উপর। তন্মধ্যে প্রাণীর ছবি অঙ্কনকারী- মূর্তি-ভাস্কর্য তৈরিকারী এবং অন্যান্য জালিমদের উপরও লা’নত বা অভিসম্পাত। আর লা’নতী কাজগুলো শরীয়তে হারাম। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি অপসারণ প্রসঙ্গে ৯ম খ- ১৮৮ পৃষ্ঠা)

(৫৪৭)

ويدل ان الوعيد الشديد انما جاء لمن صور صورة مضاهاة لخلق الله. (كتاب اللباس باب مانهى عنه من التصاوير الجلد ۹ الصفحة ۱۹۰)

অর্থ: নিশ্চয়ই কঠিন শাস্তির ওয়াদা তাদের জন্য, যারা কোন মূর্তি বা প্রাণীর ছবি তৈরি করে, যা আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য হয়। আর শরীয়তের উছূল হলো- যে সমস্ত কাজের জন্য জাহান্নামের শাস্তির ওয়াদা আছে, সে সমস্ত কাজ হারাম। তাই প্রাণীর ছবি মূর্তি হারাম। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি-মূর্তি চর্চা নিষেধ প্রসঙ্গে ৯ম খ- ১৯০ পৃষ্ঠা।)

(৫৪৮)

اختلاف العلماء فى الصور: فكره ابن شهاب (كتاب اللباس باب من كره القعود على الصور الجلد ۹ الصفحة ۱۹۱)

অর্থ: হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ছবির ব্যাপারে ইখতিলাফ করেছেন। হযরত ইবনু শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি একে মাকরূহ তাহরীমী বা হারাম বলতেন। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি বিশিষ্ট স্থানে বসা মাকরূহ তাহরীমী প্রসঙ্গে ৯ম খ- ১৯১ পৃষ্ঠা)

(৫৪৯)

وقالت طائفة: انما يكره من التصاوير ماكان فى حيطان البيوت، واما ماكان رقما فى ثوب فهو جائز. (كتاب اللباس باب من كره القعود على الصور الجلد ۹ الصفحة ۱۹۱)

অর্থ: উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের একটি বৃহৎ দল বলেন, ঘরের দেওয়ালে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা বা মূর্তি তৈরি করা মাকরূহ তাহরীমী বা হারাম। কিন্তু যদি কাপড়ে প্রাণহীন বস্তুর নকশা করা হয় তাহলে তা জায়িয আছে। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি বিশিষ্ট স্থানে বসা মাকরূহ তাহরীমী প্রসঙ্গে ৯ম খ- ১৯১ পৃষ্ঠা)

(৫৫০)

وقال اخرون: لا يجوز لباس ثوب فيه صورة ولا بصبه. (كتاب اللباس باب من كره القعود على الصور الجلد ۹ الصفحة ۱۹۱)

অর্থ: অপরাপর উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, প্রাণীর ছবি বিশিষ্ট কাপড়ের পোশাক পরিধান করা জায়িয নেই। এমনকি কাপড়ে প্রাণীর ছবির ছাপ দেয়াও জায়িয নেই। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি বিশিষ্ট স্থানে বসা মাকরূহ তাহরীমী প্রসঙ্গে ৯ম খ- ১৯১ পৃষ্ঠা)

(৫৫১)

قال الطبرى: ان قال قائل: افحرام دخول البيت الذى فيه التماثيل والصور؟ قيل: لا ولكنه مكروه اعنى ماكان من ذلك من ذوات الارواح. (كتاب اللباس باب لا تدخل الملائكة بيتا فيه صورة الجلد ۹ الصفحة ۱۹۳)

অর্থ: হযরত ইমাম ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যদি কোন প্রশ্নকারী জিজ্ঞাসা করে যে, মূর্তি ভাস্কর্য ও প্রাণীর ছবি বিশিষ্ট ঘরে প্রবেশ করা কি হারাম? তার উত্তরে বলা হবে না। বরং মাকরূহ তাহরীমী। অর্থাৎ প্রাণবিশিষ্ট প্রাণীর মূর্তি ভাস্কর্য ও ছবির ব্যাপারে এ ফায়সালা। (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি মূর্তি-ভাস্কর্য বিশিষ্ট ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না ৯ম খ- ১৯৩ পৃষ্ঠা)

(৫৫২)

قال الطبرى: وفى قوله عليه السلام: من صور صورة كلف ان ينفخ فيها الروح دليل بين ان الوعيد انما جاء فى تصوير ماله روح من الحيوان، وما تصوير الشجر والجمادات فليس بداخل فى معنى الحديث. (كتاب اللباس باب من لعن المصور الجلد ۹ الصفحة ۱۹۴)

অর্থ: হযরত ইমাম ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাণী- “যে ব্যক্তি প্রাণীর আকৃতি তৈরি করবে ক্বিয়ামতের দিন তাকে তাতে প্রাণ দিতে চাপ প্রয়োগ করা হবে।” দ্বারা আযাবের ভীতি তাদেরকে দেয়া হয়েছে, যারা প্রাণ বিশিষ্ট প্রাণীর ছবি-মূর্তি তৈরি করে। তবে গাছ-গাছালি ও জড় বস্তুর ছবির হুকুম অত্র হাদীছ শরীফ-এর ভীতির আওতাভুক্ত হবে না। অর্থাৎ মূর্তি ভাস্কর্য ও প্রাণীর ছবি তৈরি করা আঁকা দেখা হারাম। আর গাছ-গাছালি ও জড় বস্তুর ছবি জায়িয । (অধ্যায়: পোশাক, পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি মূতি ভাস্কর্য তৈরীকারীদের জন্য লা’নত বা অভিসম্পাত প্রসঙ্গে ৯ম খ- ১৯৪ পৃষ্ঠা)

 

 

(অসমাপ্ত)

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১২

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক (৩০তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিন মুবারক উনাদের সম্মানিত আমল মুবারকসমূহ উনাদের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৭তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-৩১)