সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি। আল্লাহ পাক-উনার অশেষ রহমতে “ফতওয়া ও গবেষণা বিভাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. ক্বদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লّীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা)
১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা), ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) পেশ করার পর-
৩০তম ফতওয়া হিসেবে
১৯৫তম সংখ্যা থেকে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফর, শিরক ও বিদয়াতের মুলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয় যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা বলে ও প্রচার করে থাকে যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও নেই, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম। নাঊযুবিল্লাহ!
তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছে। কেননা হাদীছ শরীফে শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلتا العيدين
অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الامن مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر
অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)
এ ধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, যাতে শবে বরাত-এর ফযীলতের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ যারা শবে বরাত পালন করবে তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের উভয়েরই খাছ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি লাভ করবে।
অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ‘শবে বরাত’ পালন থেকে বিরত থেকে অশেষ ফযীলত থেকে মাহরূম হবে। যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
কাজেই যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ শবে বরাতসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-উনার রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত’-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।
অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাও শবে বরাত প্রমাণিত
অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাত সম্পর্কে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন তা সর্বজনমান্য ও বিশ্বখ্যাত হাদীছগ্রন্থে রয়েছে কিতাবের নামসহ তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
বিশ্ববিখ্যাত হাদীছগ্রন্থ “মিশকাত শরীফ”-এর ১১৪ পৃষ্ঠায় বাবু ক্বিয়ামি শাহ্রি রমাদ্বান-এ উল্লেখ আছে-
(৮৪-৮৬)
عن ام المؤمنين حضرت عائشة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب. رواه الترمذى وابن ماجه
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা রাত্রিতে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অতঃপর তালাশ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জান্নাতুল বাক্বী নামক স্থানে দেখতে পেলাম। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি মনে করেন যে, আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার খিয়ানত করছেন? জবাবে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি মনে করেছিলাম যে, হয়তোবা আপনি আপনার অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন উনাদের হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর তখন উনাকে লক্ষ্য করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক অর্ধ শাবান তথা শবে বরাতে দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ হন (অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন) এবং ক্বালব গোত্রের মেষপালের পশম পরিমাণের চেয়েও অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। (আজ সেই রাত।)” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
“মিশকাত শরীফ”-এর ১১৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
(৮৭-৮৯)
عن ام المؤمنين حضرت عائشة عليها السلام عن النبى صلى الله عليه وسلم قال هل تدرين ما فى هذه الليلة يعنى ليلة النصف من شعبان قالت ما فيها يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال فيها ان يكتب كل مولود من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ترفع اعمالهم وفيها تنزل ارزاقهم فقالت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من احد يدخل الجنة الا برحمة الله تعالى فقال ما من احد يدخل الجنة الا برحمة الله تعالى ثلثا قلت ولا انت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فوضع يده على هامته فقال ولا انا الا ان يتغمدنى الله منه برحمته يقولها ثلث مرات. رواه البيهقى
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত আছে। একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি জানেন, এ রাত্রিতে অর্থাৎ শবে বরাতের রাতে কি ঘটে থাকে? জবাবে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শবে বরাতে কি কি ঘটে থাকে? তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ওই শবে বরাতে নির্ধারণ করা হয় এই বৎসরে কতগুলো আদম সন্তান জন্মগ্রহণ করবে। অতঃপর এই শবে বরাতের রাতে আরো নির্ধারণ করা হয় কতগুলো আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করবে। ওই রাতে লিপিবদ্ধ করা হয় মানুষের কর্মসমূহ এবং মানুষের রিযিকসমূহ। অতঃপর উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক-উনার রহমত ব্যতীত কোন ব্যক্তি (আমল দ্বারা) কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে? জবাবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন বার বললেন যে, আল্লাহ পাক-উনার রহমত ব্যতীত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, তখন আমি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনিও কি নন! ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন মাথা মুবারক-এর উপর হাত মুবারক রেখে বললেন, আমিও না। তবে মহান আল্লাহ পাক আমাকে স্বীয় রহমত দ্বারা আচ্ছাদিত করে নিয়েছেন। এরূপভাবে তিন বার বললেন।” (বাইহাক্বী, দাওয়াতে কবীরে)
শবে বরাত প্রসঙ্গে উক্ত কিতাবের ১১৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
(৯০-৯১)
عن حضرت ابى موسى الاشعرى رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن رواه ابن ماجه ورواه احمد. عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضى الله تعالى عنه وفى رواية الا اثنين مشاحن وقاتل نفس
অর্থ: “হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, অর্ধ শা’বানের রাত্রি তথা শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং নাযিল হন এবং উনার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন তবে মুশরিক এবং বিদ্বেষভাবাপন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করেন না। (ইবনে মাজাহ) কিন্তু হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এটাকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আর উনার অপর এক রেওওয়ায়েত রয়েছে, দু’ব্যক্তি ব্যতীত। যথা- বিদ্বেষভাবাপন্ন ব্যক্তি এবং মানুষ হত্যাকারী ব্যতীত সকলকেই ক্ষমা করা হয়।”
“মিশকাত শরীফ”-এর ১১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(৯২-৯৭)
عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا من مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر. رواه ابن ماجه
অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতের আগমন ঘটে তখন ওই রাতে তোমরা ইবাদত-বন্দেগী করে জাগ্রত থাকবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে। কেননা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ওই শবে বরাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই নিকটবর্তী আকাশে নাযিল হন এবং বলতে থাকেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি অপরিমিত রিযিক দিয়ে দিব এবং কোন বিপদে বিপন্ন ব্যক্তি আছ কি? যাকে আমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দিব। সাবধান! সাবধান! এভাবেই মহান আল্লাহ পাক ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিরকাত ৩য় খ-, ১৯৫-১৯৬, মিরয়াতুল মানাজিহ ৩য় খ- ২৯৩-২৯৪-২৯৫, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত)
মূলত: অর্ধ শা’বানের রাতেই সমস্ত বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত আলিমে দ্বীন হযরতুল আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্বখ্যাত হাদীছ গ্রন্থ “মিরকাত শরীফ”-এর ১৯৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
(৯৮)
بهذه الليلة (ليلة النصف من شعبان) وفيها ان يكتب كل هالك اى ميت من بنى ادم فى هذه السنة قال الطيبـى هو من قوله تعالى فيها يفرق كل امر حكيم من ارزاق العباد واجالهم امورهم الى الاخرى القابلة وفيها ترفع اعمالهم اى تكتب الاعمل الصالحة
অর্থ: “এই অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে এই বৎসর কতগুলো আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করবে তার সমস্ত তালিকা লেখা হয়ে থাকে। আল্লামা হযরত তীবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন- فيها يفرق كل امر حكيم অর্থাৎ এই শবে বরাতে সমস্ত হিক্বমতপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়। যেমন, বান্দার রিযিক, মৃত্যুর এবং বান্দার যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা করা আগামী অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাত পর্যন্ত এবং ওই ১৫ই শা’বানের রাত্রিতে তথা শবে বরাতে বান্দার আমল তালিকায় উঠানো হয়। অর্থাৎ বান্দাদের নেক আমলসমূহ ওই শবে বরাতে লেখা হয়ে থাকে।”
“মিরকাত শরীফ”-এর ৩য় খ-ের ১৯৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
(৯৯)
ويحتمل ان يقع الفرق فى ليلة النصف ما يصدر الى ليلة القدر ويحتمل ان يكون الفرق فى احدهما اجملا وفى الاخرى تفصيلا
অর্থ: “এই অর্থেরও সম্ভাবনা রাখে যে, অর্ধ শা’বানে তথা শবে বরাতে যা কিছু বণ্টন হয়ে থাকে, লাইলাতুল ক্বদর তথা শবে ক্বদরে তা সবকিছুই প্রকাশ করা হয়।”
দ্বিতীয়ত: বন্টনের রাত দ্বারা এটাও হতে পারে যে, উভয় দু’টি রাতেই বণ্টন করা হয় অর্থাৎ কোন এক রাত্রে সংক্ষিপ্তাকারে মোটামুটিভাবে বণ্টন করা হয় আর অপর কোন রাত্রে বিস্তারিতভাবে বণ্টন করা হয়।
উল্লেখ্য যে, লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বান তথা ভাগ্য বন্টনের রাতকেই বুঝানো হয়েছে। আর পক্ষান্তরে লাইলাতুল ক্বদর তথা মহিমান্বিত ও মর্যাদাবান রাতকে লাইলাতুত্ তানফীয বা উক্ত ভাগ্যগুলোকে কার্যকরী করণের রাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যেমন, এ প্রসঙ্গে মালিকী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ ‘মুয়াত্তা’-এর শরাহ “আল মুনতাক্বা”-এর ৩য় খ-ের ১১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(১০০)
(ليلة القدر)
يحتمل ان تسمى بذلك لعظم قدرها، اى ذات القدر العظيم، ويحتمل ان يسمى بذالك لان البارى تعالى ينفذ فيها ما قدر من قوله تعالى فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “লাইলাতুল ক্বদর নামকরণ করা হয়েছে তার মর্যাদা অনুসারে। অর্থাৎ লাইলাতুল ক্বদরই হচ্ছে মহান ইয্যত ওয়ালা বা মহান মর্যাদাবান রাত। আর তা এ কারণেই যে, যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি এই শবে ক্বদরেই বণ্টিত ভাগ্যসমূহ চালু করে থাকেন যা পূর্বে অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে নির্ধারণ করেছেন। আর এই ভাগ্য নির্ধারণের রাত তথা শবে বরাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থাৎ “বরকতের রাতেই তথা শবে বরাতেই সমস্ত হিক্বমতপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়।”
১৫ই শা’বানের রাতে তথা বরাতের রাতে ইবাদত-বন্দিগী করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা হাদীছ শরীফ অনুযায়ী। এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এর অন্যতম বিশুদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ “ইবনে মাজাহ শরীফ”-এর মধ্যে অর্ধ শা’বানের তথা শবে বরাত সম্পর্কে একটি বাবও আনা হয়েছে। যেমন, “ইবনে মাজাহ শরীফ”-এর ১০০ পৃষ্ঠায়
باب ماجاء فى ليلة النصف من شعبان
এ অনুচ্ছেদ উল্লেখ আছে-
(১০১)
حدثنا حضرت الحسن بن على الخلال ثنا عبد الرزاق انبأ ابن سبرة عن ابراهيم بن محمد عن معاوية ابن عبد الله بن جعفر عن ابيه عن على بن ابى طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها فان الله ينزل فيها لغروب الشمس الى سماء الدنيا فيقول الا من مستغفر لى فاغفرله الا مسترزق فأرزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر
অর্থ: “হযরত হাসান ইবনে আলী খাল্লাল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুর রায্যাক রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত ইবনে সাবুরাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইবরাহীম ইবনে মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আব্দুল্লাহি ইবনে জাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি উনার পিতা থেকে উনার পিতা আবার হযরত আলী ইবনে আবু তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে, হযরত আলী কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের মাঝে ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাত আগমন করে তখন তোমরা এই শবে বরাতে সারারাত দাঁড়িয়ে ইবাদত-বন্দেগী করবে, দিনে রোযা পালন করবে। কেননা সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথেই মহান আল্লাহ পাক নিকটস্থ আকাশে নাযিল হন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী কেউ আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে পর্যাপ্ত রিযিক দিয়ে দিব এবং রোগ থেকে পানাহ তলবকারী আছ কি? আমি তাকে রোগ থেকে মুক্তি দান করবো। সাবধান! সাবধান! এভাবেই মহান আল্লাহ পাক ফজর পর্যন্ত ঘোষণা দিতে থাকেন।”
শবে বরাত সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত হাদীছ গ্রন্থ “ইবনে মাজাহ”-এর ১ম খ-ের ১০০ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
(১০২)
حدثنا حضرت عبدة بن عبد الله الخزاعى ومحمد بن عبد الملك، ابو بكر قالا ثنا يزيد بن هارون انبأ حجاج، عن يحيى بن ابى كثير، عن حضرت عروة رضى الله تعالى عنه عن ام المؤمنين حضرت عائشة عليها السلام قالت فقدت النبى صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فخرجت اطلب فاذا هو بالبقيع رافع رأسه الى السماء فقال يا عائشة عليها السلام؟ اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله؟ قالت قد قلت ومابى ذلك ولكنى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب
অর্থ: “হযরত আব্দাহ ইবনে আব্দুল্লাহ খুযায়য়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত মুহম্মদ ইবনে আব্দুল মালিক আবু বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন ইয়াযীদ ইবনে হারুন রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হাজ্জাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত ইয়াহ্ইয়া ইবনে আবী কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি আবার উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, এক রাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে (আমার ঘরে) না পেয়ে উনার খোঁজে বের হলাম। অতঃপর আমি দেখতে পেলাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জান্নাতুল বাক্বীতে উনার মাথা মুবারক আকাশের দিকে উত্তোলন করে আছেন। তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখে বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি এই আশঙ্কা করছেন যে, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার আমানত খিয়ানত করেছেন?
অতঃপর উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম বললেন, আমি জবাবে বললাম, এটা তো আদৌ আমার পক্ষে সমীচীন নয় ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বরং আমি মনে করেছি, হয়তোবা আপনি আপনার অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। তখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, (আজকের এই শবে বরাতে) মহান আল্লাহ পাক ১৫ই শাবান তথা বরাতের রাতে নিকটস্থ আকাশে নাযিল হন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন এবং কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে ক্ষমা করে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ!
“ইবনে মাজাহ শরীফ”-এর ১০১ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
(১০৩)
حدثنا حضرت راشد بن سعيد ابن راشد الرملى ثنا الواليد. عن ابن لهيعة عن الضحاك بن ايمن عن الضحاك بن عبد الرحمن بن عرزب عن ابى موسى الاشعرى عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله ليطلع فى ليلة النصف من شعبان. فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاهن.
حدثنا حضرت محمد بن اسحاق ثنا ابو الاسود النضر بن عبد الله الجبار ثنا ابن لهيعة عن الزبير بن سليم عن الضحاك بن عبد الرحمن عن ابيه قال سمعت ابا موسى عن النبى صلى الله عليه وسلم نحوه
অর্থ: “হযরত রাশিদ ইবনু সায়ীদ ইবনে রাশিদ রমলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন হযরত ওয়ালীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি হযরত ইবনে লাহীয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত যহহাক ইবনে আয়মান রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত যহহাক ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আরযাব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ১৫ই শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতের দৃষ্টি মুবারক দিয়ে থাকেন। অতঃপর মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সৃষ্টির সবাইকে তিনি মাফ করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!
উল্লিখিত হাদীছ শরীফখানা হযরত মুহম্মদ ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার সূত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হুবহু বর্ণনা করেন।
(অসমাপ্ত)