কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৫

সংখ্যা: ১৯৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-উনার জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি। আল্লাহ পাক-উনার অশেষ রহমতে “ফতওয়া ও গবেষণা বিভাগ মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. ক্বদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গেঁাফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা)

১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা), ২৮. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি অঁাকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬৮-চলমান), ২৯. জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৯২-১৯৩তম সংখ্যা) পেশ করার পর-

৩০তম ফতওয়া হিসেবে

১৯৫তম সংখ্যা থেকে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান শবে বরাত-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-উনার দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফর, শিরক ও বিদয়াতের মুলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয় যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা বলে ও প্রচার করে থাকে যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও  নেই, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম। নাঊযুবিল্লাহ!

তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছে। কেননা হাদীছ শরীফে শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلتا العيدين

অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الامن مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)

এ ধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, যাতে শবে বরাত-এর ফযীলতের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ যারা শবে বরাত পালন করবে তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের উভয়েরই খাছ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি লাভ করবে।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ‘শবে বরাত’ পালন থেকে বিরত থেকে অশেষ ফযীলত থেকে মাহরূম হবে। যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ শবে বরাতসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-উনার রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত’-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।

কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই ‘শবে বরাত’ প্রমাণিত

শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ সূরা ‘আদ দোখান’ এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে ليلة مباركة (বরকত পূর্ণ রাত) হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم

অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা আদ দোখান-৩-৪)

উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারকাহ’ দ্বারা অনুসরণীয় মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেন

পূর্ব প্রকাশিতের পর

“তাফসীরে গারায়িব হাশিয়া জামিউল বয়ান” কিতাবের ২৫তম খণ্ডের ৮১-৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৩৮-৪০)

زعم بعضهم كعكرمة وغيره انها ليلة النصف من شعبان … قالوا وسمى ليلة البراءة ايضا وليلة الصك لان الله تعالى يكتب لعباده المؤمنين البراءة من النار فى هذه الليلة وروى أن النبى صلى الله عليه وسلم قال من صلى فى هذه الليلة مائة ركعة ارسل الله تعالى اليه مائة ملك ثلاثون يبشرونه بالجنة وثلاثون يؤمنونه من عذاب النار وثلاثون يدفعون عنه افات الدنيا وعشرا يدفعون عنه مكايد الشيطان وقال ان الله يرحم امتى فى هذه الليلة بعدد شعر اغنام بنى كلب. وقال ان الله يغفر لجميع المسلمين فى تلك الليلة الا لكاهن اوساحر او ساخر او مد من خمر او عاق للوالدين او مصر  على الزنا. ومما اعطى فيها رسول الله صلى الله عليه وسلم تمام الشفاعة ذلك انه سأل ليلة الثالث عشر من شعبان فى امته فأعطى الثالث منها ثم سأل ليلة الرابع عشر منها فأعطى الثلثين ثم سأل ليلة الخامس عشر فأعطى الجميع الا من شرد على الله فقال ابتدئ بانتساخ القران من اللوح المحفوظ ليلة البراءة ووقع الفراغ فى ليلة القدر.

অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণ উনাদের মধ্য থেকে অনেকেই উল্লেখ করেছেন, অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। যেমন, প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও অন্যান্য আরো অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বর্ণনা করেছেন যে, লাইলাতুম মুবারকাই হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। তারা আরো বলেন, লাইলাতুম মুবারাকাকে লাইলাতুল বরাতও বলা হয়। এবং লাইলাতুছ ছক তথা চেক বা রসিদ কাটার রাত তথা ভাগ্য নির্ধারণের রাতও বলা হয়।

কেননা মহান আল্লাহ পাক এই শবে বরাতে উনার মু’মিন বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফায়ছালা করে থাকেন এবং হাদীছ শরীফেও বর্ণিত আছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এই শবে বরাতে একশত রাকায়াত নামায আদায় করবে মহান আল্লাহ পাক তাঁর কাছে একশত জন ফেরেশতা প্রেরণ করবেন। তন্মধ্যে ত্রিশ জন ফেরেশতা তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিতে থাকেন। ত্রিশ জন জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তির জন্য দোয়ায় নিয়োজিত থাকেন। ত্রিশ জন তার থেকে দুনিয়ার বালা-মুছিবত মিটিয়ে দেয়ার জন্য নিয়োজিত থাকেন। আর বাকী দশ জন ফেরেশতা তার থেকে সকল শয়তানের ধেঁাকাগুলো তাড়িয়ে দেয়ার জন্য নিয়োজিত থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক আমার উম্মতের উপর এই শবে বরাতে বনী কলব গোত্রের ছাগলসমূহের পশমের সমপরিমাণ রহমত নাযিল করেন। সুবহানাল্লাহ!

এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ওই শবে বরাতে সমস্ত মুসলমানদেরকে ক্ষমা করে দেন। তবে ওই সমস্ত লোকদেরকে ক্ষমা করেন না যারা গণক, জাদুকর, উপহাসকারী, শরাব পানকারী, পিতামাতার অবাধ্যচারী, ব্যভিচারে অভ্যস্ত ব্যক্তি। অতঃপর ওই রাত্রিতে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সকল সুপারিশই মহান আল্লাহ পাক কবুল করেন।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, যখন শা’বান মাসের ১৩ তারিখের রাত্রি সমাগত হতো তখন সেই রাত্রিতে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের জন্য আল্লাহ পাক উনার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। মহান আল্লাহ পাক ওই রাতে উনার সমস্ত উম্মত থেকে এক তৃতীয়াংশ উম্মতকে ক্ষমা করে দেন।

অতঃপর ১৪ই শাবানের রাত যখন সমাগত হয় সেই রাতেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ উনার উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তখন মহান আল্লাহ পাক উনার সমস্ত উম্মত থেকে দুই তৃতীয়াংশ উম্মতকে ক্ষমা করে দেন। অতঃপর যখন ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাত সমাগত হয় সেই রাতেও আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তখন মহান আল্লাহ পাক সেই শবে বরাতে আল্লাহ পাক উনার ব্যাপারে বিভ্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া সকলকেই ক্ষমা করে দেন। (সুবহানাল্লাহ)

…. অতঃপর তিনি বলেন, পবিত্র কুরআন শরীফ লাওহে মাহফুয থেকে নাযিল হওয়া শুরু হয় শবে বরাতে। আর পরিশেষে তা বাস্তবায়ন করা হয় শবে ক্বদরে। (তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৩ খণ্ড, ১১২ পৃষ্ঠা)

“তাফসীরে যাদুল মাসীর”-এর ৭ম খণ্ডের ১১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৪১)

انها ليلة النصف من شعبان قاله عكرمة .. وروى عن عكرمة ان ذلك فى ليلة النصف من شعبان.

অর্থ: “লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে বুঝানো হয়েছে। যা হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই ফায়ছালার রাত্রি হচ্ছে ১৫ই শা’বানের রাত অর্থাৎ শবে বরাত।

“তাফসীরে আল মুহার্রারুল ওয়াজিয” কিতাবের ৫ম খণ্ডের ৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৪২)

وقال عكرمة وغيره الليلة المباركة هى النصف من شعبان.

অর্থ: “হযরত ইকরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরামগণ উনাদের থেকে বর্ণিত আছে যে, লাইলাতুম মুবারাকা হচ্ছে ১৫ই শাবানের রাত তথা শবে বরাত।

উক্ত কিতাবের ৬৮ পৃষ্ঠায়-

(৪৩)

فيها يفرق كل امر حكيم

“ওই রাত্রিতে সকল হিক্বমতপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়।” এই আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে উল্লেখ আছে-

(৪৪-৪৫)

وروى عن عكرمة فى تفسير هذه الاية ان الله تعالى يفصل للملئكة فى ليلة النصف من شعبان.

অর্থ: “প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে এই আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ১৫ই শা’বানের রাত্রে তথা শবে বরাতে ফেরেশতাদের দায়িত্বও বণ্টন করে থাকেন।” (তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন, নূরুল ইরফান)

“তাফসীরে হাশিয়ায়ে শিহাব”-এর ৮ম খণ্ডের ২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৪৬-৪৭)

او البراءة معطوف على القدر اى ليلة البراءة وهى ليلة النصف من شعبان فانها تسمى الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الصك وليلة الرحمة وتسميتها بليلة البراءة والصك لانه تعالى يكتب لعبادة المؤمنين براءة فى هذه الليلة كذا فى الكشاف.

অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে বরাতের রাত। যা ক্বদরের তথা মর্যাদাপূর্ণ রাতের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ বরাতের রাত্রিই হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা ১৫ই শাবানের রাতকেই লাইলাতুল মুবারাকা, লাইলাতুল বরাত, লাইলাতুছ ছক তথা ভাগ্য নির্ধারণের রাত এবং লাইলাতুর রহমত নামে নামকরণ করা হয়েছে।”

আর লাইলাতুল বরাত এবং লাইলাতুল ছক বা ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসেবে এজন্যই নামকরণ হয়েছে। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মু’মিন বান্দাদের ব্যাপারে এই রাত্রিতে মুক্তির ফায়ছালা করে থাকেন। এরূপভাবে তাফসীরে কাশশাফেও বর্ণিত আছে।

“তাফসীরে বায়যাবী শরীফ”-এর ৩য় খণ্ডের ২৮৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৪৮)

او البراءة ابتدأ فيها انزاله او انزل فيها جملة الى السماء الدنيا من اللوح.

অর্থ: “অথবা লাইলাতুল মুবারাকা উদ্দেশ্য হচ্ছে বরাতের রাত তথা শবে বরাত। এই রাতেই লাওহে মাহফুয থেকে কুরআন শরীফ নাযিল হওয়া শুরু হয়। অথবা এই শবে বরাতে লাওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আকাশে এক সাথে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ নাযিল হয়।”

এই লাইলাতুল বরাতের ব্যাখ্যায় উক্ত তাফসীরে ২৮৭ পৃষ্ঠার ৭নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

(৪৯)

ليلة البراءة اى ليلة النصف من شعبان وقبل فى تسميتها ليلة البراءة ان البندار اذا استوفى الخراج من اهله كتب لهم البراءة كذالك الله تعالى يكتب لعباده المؤمنين البراءة فى هذه الليلة.

অর্থ: “লাইলাতুল বরাত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান মাসের রাত তথা ১৫ই শা’বান মাসের রাত্রি। আর কেউ কেউ বলেন, লাইলাতুল বরাত নামে এই জন্য নামকরণ করা হয়। যেমন যাকাত বা খাজনা আদায়কারী খাজনা বা যাকাত আদায় করার পর যাকাতদাতা বা খাজনাদাতাকে এক প্রকার রসিদ বা সিদ্ধান্তের সনদ দিয়ে থাকে। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ পাক এই শবে বরাতে মু’মিন বান্দাদেরকে মুক্তির সনদ দিয়ে থাকেন।

“তাফসীরে জালালাইন শরীফ”-এর ৪১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৫০)

او ليلة نصف من شعبان

অর্থ: “অথবা লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শাবানের তথা ১৫ই শাবানের রাত।”

এই উক্তির সমর্থনে উক্ত তাফসীরের ৪১০ পৃষ্ঠার ২৪ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

(৫১)

قوله ليلة النصف من شعبان هو قول عكرمة وطائفة ومنها ان ليلة النصف من شعبان لها اربعة اسماء الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الرحمة وليلة الصك.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক-উনার বাণী লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এটা হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য একদল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মতে। আর এই ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের ৪টি নাম রয়েছে। যেমন, লাইলাতুম মুবারাকা তথা বরকতের রাত, লাইলাতুল বরাত তথা বরাতের রাত, লাইলাতুর রহমত এবং লাইলাতুছ ছক তথা ভাগ্য নির্ধারনের রাত।

এই বর্ণনা তাফসীরে ছবী ও তাফসীরে কামালাইন এবং তাফসীরে মাওয়াহিবে উল্লেখ আছে।

“তাফসীরে দুররে মানছূর”-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৫২-৫৫)

اخرج ابن جرير وابن المنذر وابن ابى حاتم من طريق محمد بن سوقة عن عكرمة رضى الله تعالى عنه فيها يفرق من كل امر حكيم قال فى ليلة النصف من شعبان يبرم امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم ولاينقص منهم احد. واخرج ابن زنجويه والديلمى عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال تقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويولد له وقد خرج اسمه فى الموتى واخرج ابو يعلى عن عائشة عليها السلام ان النبى صلى الله عليه وسلم كان يصوم شعبان كله فسالته قال ان الله تعالى يكتب فيه كل نفس ميتة تلك السنة.

واخرج الدينورى فى المحجالسة عن راشد بن سعد ان النبى صلى الله عليه وسلم قال فى ليلة النصف من شعبان يوحى الله الى ملك الموت بقبض كل نفس يريد قبضها فى تلك السنة.

অর্থ: “হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুহম্মদ ইবনে সাওক্বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবার হযরত ইক্রামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মহান আল্লাহ পাক-উনার বাণী-

فيها يفرق كل امر حكيم

অর্থাৎ, “ওই মুবারক রাত্রে প্রত্যেক হিক্বমতপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়ে থাকে।” তিনি এই ফায়ছালার রাত দ্বারা অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে উল্লেখ করেছেন। আর এই শবে বরাতে আগামী এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়ে থাকে এবং ওই রাতেই মৃত ও জীবিতদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। সেই রাতেই হাজীদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। ওই তালিকা থেকে কোনরূপ কমবেশী করা হয়না। অর্থাৎ শবে বরাতে যা ফয়ছালা করা হয় ওই নির্ধারিত ফায়ছালার কোন পরিবর্তন করা হয়না। হযরত ইমাম ইবনে যানজুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এক শা’বান মাসে মৃত্যুদের যে তালিকা প্রস্তুত করা হয় তা পরবতীর্ শা’বান মাস পর্যন্ত বহাল থাকে। অর্থাৎ এক শবে বরাত থেকে পরবতীর্ শবে বরাত পর্যন্ত মৃত্যুদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এমনকি লোকদের বিবাহের তালিকাও প্রস্তুত করা হয় সেই রাতে। এবং তার থেকে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে সেই সন্তান ওই বৎসর কখন মৃত্যুবরণ করবে তার তালিকাও লেখা হয় শবে বরাতে।

এবং হযরত আবু ইয়ালা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো শা’বান মাসেই রোযা থাকতেন অতঃপর আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি জবাবে বললেন, শা’বান মাসেই (শবে বরাতে) এ বৎসরে যারা মৃত্যুবরণ করবে তাদের প্রত্যেকেই মৃত্যুর তালিকা প্রস্তুত করা হয়।

হযরত দাইনুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মাজালিসাহ” কিতাবে হযরত রশিদ ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক ১৫ই শা’বানের রাত্রি তথা শবে বরাতে মালাকুল মউত তথা হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে নির্দেশবার্তা দিয়ে থাকেন, তিনি ওই বৎসর যতগুলোর জীবন কবয করবেন (তার তালিকা)।

উক্ত কিতাবের ২৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

(৫৬-৫৯)

واخرج ابن أبى الدنيا عن عطاء بن يسار قال اذا كان ليلة النصف من شعبان دفع الى ملك الموت صحيفة فيقال اقبض من فى هذه الصحيفة فان العبد ليفرش الفراش وينكح الازواج ويبنى البنيان وان اسمه قد نسخ فى الموتى واخرج الخطيب فى رواية مالك عن عائشة عليها السلام سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول يفتح الله الخير فى اربع ليال ليلة الاضحى والفطر وليلة النصف من شعبان ينسخ فيها الاجال الارزاق ويكتب فيها الحاج وفى ليلة عرفة الى الاذان ……… وعن على بن أبى طالب رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها فان الله ينزل فيها لغروب الشمس الى سماء الدنيا فيقول الا مستغفر فاغفر له الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا سائل فاعطيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.

واخرج ابن ابى شيبة والترمذى وابن ماجه والبيهقى عن عائشة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فخرجت اطلب فاذا هو بالبقيع رافعا رأسه الى السماء فقال يا عائشة عليها السلام اكنت تخفين ان يحيف الله عليك ورسله قلت مابى من ذلك ولكنى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله عز وجل ينزل ليلة النصف من شعبان الى سماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب.

অর্থ: “হযরত ইবনি আবিদ দুনইয়া হযরত আতা ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আতা ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যখন ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাত সমাগত হয় সেই রাতেই হযরত মালাকুল মউত উনাকে ছহীফা তথা মৃত্যু তালিকা প্রদান করা হয়। অতঃপর উনাকে বলা হয়, এই ছহীফায় যাদের নাম আছে তাদের জান কবয করবেন। আর এই অবস্থায় জান কবয করা হবে লোকেরা তখন কেউ বিছানায় বিছানারত, কেউ বিবাহ অবস্থায় তথা বিবাহ অনুষ্ঠানে, কেউ ঘরবাড়ী নির্মাণ কাজে রত থাকবে অথচ তার নাম মৃত্যুর তালিকাভুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ এমতাবস্থায় তাদের জীবন কবয করা হবে।

হযরত খতীব হযরত মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে বর্ণনা করেন। তিনি আবার উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ পাক চারটি রাত্রিতে স্বীয় কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। একটি হচ্ছে ঈদুল আদ্বহা-এর রাত। দ্বিতীয়টি হচ্ছে ঈদুল ফিতরের রাত। তৃতীয়টি হচ্ছে ১৫ই শা’বানের রাত। তথা শবে বরাতের রাত। আর এই শবে বরাতে সমস্ত মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা এবং বান্দাদের রিযিকের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। আরো তালিকা প্রস্তুত করা হয় হাজীদের। চতুর্থ রাত হচ্ছে, আরাফার রাত্রি। প্রত্যেক রাত্রির এই মহান কল্যাণ উন্মুক্ত থাকে ফজরের আযান পর্যন্ত।

হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম বায়হাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘ফী শুয়াবিল ঈমানে’ হযরত আলী ইবনে আবু তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আলী ইবনে আবী তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত অর্থাৎ শবে বরাত সমাগত হয় তখন তোমরা ওই শবে বরাতে (ইবাদত-বন্দিগীর মাধ্যমে) জাগ্রত থাকবে এবং দিনের বলোয় রোযা থাকবে। কেননা, ওই শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। অতঃপর বলতে থাকেন, কোন ক্ষমা প্রার্থী আছো কি? আমার কাছে ক্ষমা চাও। আজ আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কে রিযিক তালাশি আছে? আমার কাছে রিযিক চাও। আমি আজ পর্যাপ্ত রিযিক দিয়ে দিব। কে আছে রোগী? আমার কাছে রোগ মুক্তি চাও। আমি তাকে রোগ থেকে মুক্তি দিয়ে দিব। কে আছে অন্য কোন যাচনাকারী? আমার কাছে চাও। আমি তার সমস্ত যাচনা পুরো করে দিব। সাবধান! সাবধান! এইভাবে মহান আল্লাহ পাক ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।

হযরত ইমাম ইবনে আবী শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তারা সকলেই উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম বলেন, আমি এক রাত্রিতে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অতঃপর উনাকে খেঁাজার জন্য বের হলাম। অতঃপর দেখতে পেলাম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতুল বাক্বী নামক স্থানে মাথা মুবারক আকাশের দিকে করে রয়েছেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি  কি মনে করছেন যে, আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার আমানত খিয়ানত করেন? উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করছিলাম যে, আপনি হয়তো আপনার অপর কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। তখন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক এই অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাতে অর্থাৎ শবে বরাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন (অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন) অতঃপর বনী কলব গোত্রের ছাগলের পশমের অধিকসংখ্যক গুনাহগার লোকদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। আজ সেই রাত্রি।

‘শবে বরাত’-এর প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে দুররুল মানছূর”-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৬০-৬৩)

واخرج البيهقى عن القاسم بن محمد بن ابى بكر عن ابيه او عن عمه اوجده ابى بكرن الصديق عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ينزل الله الى السماء الدنيا ليلة النصف من شعبان فيغفر لكل شئ الا لرجل مشرك او فى قلبه شحناء.

واخرج البيهقى عن ابى ثعلبة الخشنى عن النبى صلى الله عليه وسلم قال اذا كان ليلة النصف من شعبان اطلع الله تعالى اى خلقه فيغفر للمؤمنين ويملى للكافرين ويدع اهل الحقد بحقدهم حتى يدعو اخرج البيهقى عن معاذ بن جبل عن النبى صلى الله عليه وسلم قال يطلع الله فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن …

واخرج البيهقى عن عثمان بن ابى العاص عن النبى صلى الله عليه وسلم قال اذا كان ليلة النصف من شعبان ينزل ليلها الى السماء الدنيا نادى مناد هل من مستغفر فاغفر له هل من سائل فا عطيه فلا يسأل احد الا اعطى الا زانية بفرجها او مشرك.

واخرج البيهقى عن على قال رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة النصف من شعبان قام فصلى اربع عشرة ركعة ثم جلس بعد الفراغ فقرأ بام القران اربع عشرة مرة وقل هو الله احد اربع عشر مرة قل اعوذ برب الفلق اربع عشرة وقل اعوذ برب الناس اربع عشرة مرة والاية الكرسى مرة لقد جاءكم رسول من انفسكم الاية فلما فرغ من صلاته سالته عما رايت من صنيعه قال من مثل الذى رأيت كان له ثواب عشرين حجة مبرورة وصيام عشرين سنة مقبولة فاذا اصبح فى ذلك اليوم صائما كان كصيام ستين سنة ماضية وسنة مستقبلة.

অর্থ: “হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম কাসিম ইবনে মুহম্মদ ইবনে আবী বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি উনার স্বীয় পিতা থেকে অথবা চাচা অথবা তার দাদা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি আবার হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ১৫ই শাবান রাতে তথা শবে বরাতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন। অতঃপর সবাইকে ওই শবে বরাতে ক্ষমা করে দেন, তবে যারা মুশরিক এবং হিংসুক রয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করেন না।

হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আবু সালাবা আল খাশানী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে আরো বর্ণনা করেন, তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাত সমাগত হয় তখন সেই রাতেই মহান আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে ক্ষমা করার জন্য নাযিল করেন। অতঃপর মু’মিন বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। এবং কাফিরদের উপর লা’নত করে থাকেন। আর হিংসুকদের হিংসা থেকে তওবা না করা পর্যন্ত হিংসার কারণে তাদেরকে ক্ষমা থেকে বঞ্চিত করেন।

হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহতুল্লাহি আলাইহি প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে আরো বর্ণনা করেন, তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ১৫ই শা’বান তথা শবে বরাতে অবতরণ করেন। অতঃপর সকল বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক ও হিংসুকদের ক্ষমা করেন না।

…. হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত উছমান ইবনে আবুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে আরো বর্ণনা করেন, তিনি হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যখন ১৫ই শা’বান তথা শবে বরাত আসে তখন আল্লাহ পাক দুনিয়ার আকাশে নাযিল হন অতঃপর আহ্বান করতে থাকেন, কে আছে ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কে আছে যাচনাকারী? আমি তার যাচনা কবূল করে দিব। অতঃপর ওই শবে বরাতে সকলের ফরিয়াদ পুরো করা হয় কিন্তু যিনাকারী এবং মুশরিকের ফরিয়াদ কবূল করা হয় না।

হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতে দেখলাম, তিনি দাঁড়ালেন, অতঃপর ১৪ রাকায়াত নামায আদায় করলেন। অতঃপর বসলেন, তারপর সূরা ফাতিহা ১৪ বার, সূরা ইখলাস ১৪ বার, সূরা ফালাক্ব ১৪ বার, সূরা নাস ১৪ বার, আয়াতুল কুরসী ১ বার এবং লাক্বাদ জা’আকুম একবার পাঠ করলেন। অতঃপর যখন তিনি নামায শেষ করলেন তখন আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যা করতে দেখলাম সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। জিজ্ঞাসার জবাবে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, শবে বরাতে যা আমাকে করতে দেখলেন অনুরূপ আমল যে ব্যক্তি করবে তার আমলনামায় বিশটি কবূল হজ্জের এবং বিশ বছরের কবূল রোযার ছওয়াব দেয়া হবে। এবং পরবর্তী দিনে যদি রোযা রাখে তাহলে তাকে পূর্বের ৬০ বছরের এবং পরের ৬০ বছরের মোট ১২০ বছরের ছওয়াব দেয়া হবে।

“তাফসীরে রহুল বয়ান” কিতাবের ৮ম খণ্ডের ২৫তম জুযের ৪০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৬৪)

قال بعض المفسرين المراد من الليلة المباركة ليلة النصف من شعبان ولها اربعة اسماء الاول الليلة المباركة لكثرة خير وبركتها على العاملين … الثانى ليلة الرحمة والثالث ليلة البراءة والرابع ليلة الصك.

অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণের মধ্যে অনেকেই লাইলাতুল মুবারক দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন অর্ধ শা’বান তথা ১৫ শা’বানের রাতকে। এবং ইহার তথা শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে। প্রথমত: লাইলাতুল মুবারকা তথা বরকতের রাত্রি। কেননা এই বরকতের রাত্রিতে যারা আমল করে থাকেন তথা ইবাদত-বন্দিগী করে থাকেন তাদের জন্য অনেক খায়ের বরকত রয়েছে।

দ্বিতীয়ত: লাইলাতুর রহমত তথা রহমতের রাত্রি।

তৃতীয়ত: লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত্রি।

চতুর্থত: লাইলাতুছ ছক তথা চেক প্রদানের রাত।

এই শবে বরাতের রাত্রির ইবাদতের ফযীলত প্রসঙ্গে বিশ্বখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে রহুল বয়ান”-এর ৮ম খণ্ডের ৪০৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

(৬৫-৬৮)

فضيلة العبادة فيها وحديث من صلى فى هذه الليلة مائة ركعة ارسل الله تعالى اليه مائة مالك ثلاثون يبشرونه بالجنة وثلاثون يؤمنونه من عذاب النار وثلاثون يدفعون عنه افات الدنيا وعشرة يدفعون عنه مكائد الشيطان قال فى الاحياء يصلى فى الليلة الخامسة عشرة من شعبان مائة ركعة كل ركعتين بتسليمة يقرأ فى كل ركعة بعد الفاتحة قل هو الله احد عشر مرات وان شاء صلى عشر ركعات يقرأ فى كل ركعة بعد الفاتحة مائة مرة قل هو الله احد (روى) عن الحسن البصرى رحمة الله عليه انه قال حدثنى ثلاثون من اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم ان من صل هذه الصلاة فى هذه الليلة نظر الله اليه سبعين نظرة وقضى الله له بكل نظرة سبعين حاجة ادناها المغفرة.

(وروى) مجاهد عن على رضى الله تعالى عنه انه عليه السلام قال يا على من صلى مائة ركعة فى ليلة النصف من شعبان فقرأ فى كل ركعة بفاتحة الكتاب مرة وقل هو الله احد عشر مرات قال عليه السلام يا على رضى الله تعالى عنه ما من عبد يصلى هذه الصلاة الا قضى الله له كل حاجة طلبها تلك الليلة ويبعث الله سبعين ألف ملك يكتبون له الحسنات ويمحون عنه السيئات ويرفعون له الدرجات الى رأس السنة ويبعث الله فى جنات عدن سبعين ألف ملك وسبع مائة الف يبنون له المدائن والقصور ويغرسون له من الاشجار ما لا عين رأيت ولا اذن سمعت ولا خطر على قلب المخلوقين وان مات من ليلته ان يحول الحول مات شهيدا ويعطيه الله بكل احرف من قل هو الله احد.

অর্থ: “শবে বরাতের ইবাদতের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে যে, যে ব্যক্তি এই শবে বরাতে একশত রাকায়াত নামায আদায় করবে মহান আল্লাহ পাক তার জন্য একশত জন ফেরেশতা প্রেরণ করবেন। তন্মধ্যে ত্রিশজন ফেরেশতা জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করবেন। আর ত্রিশজন ফেরেশতা জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপদের জন্য দোয়া করবেন এবং ত্রিশজন ফেরেশতা তার থেকে দুনিয়ার অনিষ্টতা মিটিয়ে দেয়ার জন্য নিয়োজিত থাকবেন। আর বাকি দশ জন ফেরেশ্তা শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে নিরাপদে রাখবেন।

“ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন” কিতাবে হাদীছ শরীফ-এর বরাতে হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি ১৫ই শা’বান তথা শবে বরাতে একশত রাকায়াত নামায আদায় করবে তাহলে তাকে প্রত্যেক দু’রাকায়াতের পর সালাম ফিরাতে হবে এবং  প্রত্যেক রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাছ দশবার পাঠ করবে এবং যদি সে চায় দশ রাকায়াতেও শবে বরাতের নামায পড়তে তাহলে প্রত্যেক রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর একশতবার সূরা ইখলাছ পাঠ করবে।

অপর এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত ইমাম হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমার কাছে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ত্রিশ জন প্রখ্যাত ছাহাবী এই হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি এই ১৫ই শা’বানের রাত্রিতে শবে বরাতের নামায আদায় করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই নামাযীর প্রতি সত্তরবার কুদরতি দৃষ্টিতে তাকাবেন। প্রতিটি দৃষ্টিতে তার সত্তরটি হাজত পুরো করে দিবেন। ওই হাজতের সর্ব নিম্নটি হচ্ছে তাকে ক্ষমা করে দিবেন।

… অপর বর্ণনায় এসেছে, হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! যে ব্যক্তি অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতে একশত রাকায়াত নামায আদায় করবে অতঃপর একবার সূরা ফাতিহা এবং সূরা ইখলাছ এগার বার পাঠ করবে। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, হে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! যদি কোন ব্যক্তি ওই রাত্রিতে নামায আদায় করে এবং তার হাজতের জন্য আল্লাহ পাক-উনার কাছে প্রার্থনা করে, মহান আল্লাহ পাক ওই রাত্রিতে তার সমস্ত হাজত পুরো করে দিবেন এবং আল্লাহ পাক তার কাছে সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করবেন। ওই সত্তর হাজার ফেরেশতা তার আমলনামায় নেকী বা পুণ্য লেখতেই থাকবেন এবং পাপসমূহ মিটিয়ে দিবেন এবং সারা বৎসরে তার মর্যাদা বুলুন্দ করতেই থাকবেন এবং সত্তর হাজার ফেরেশতা আল্লাহ পাক আদন নামক জান্নাতের মধ্যে দাখিল করবেন এবং সাত লক্ষ ইমারত বিশিষ্ট ময়দান ও প্রাসাদ তার জন্য নির্মাণ করবেন এবং অসংখ্য গাছপালা তার জন্য রোপণ করা হবে। এমন সব জিনিস জান্নাতে তার জন্য নিয়োজিত থাকবে সেসব জিনিস চক্ষু কখনোই দেখেনি, কানে শোনেনি, জ্বিন-ইনসান অন্তরে অনুধাবন করেনি।

অতঃপর ওই ব্যক্তি যে শবে বরাত পেল সে যদি সেই বরাতের রাত হতে ওই বছরের যে কোন রাত্রিতে ইন্তিকাল করে তাহলে সে শহীদ হিসেবে ইন্তেকাল করবে। এবং ওই রাত্রিতে কোন ব্যক্তি যদি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে তখন মহান আল্লাহ পাক প্রতিটি হরফের বিনিময়ে তাকে সূরা ইখলাস পাঠের সমতুল্য ছওয়াব দান করবেন।

তাফসীরে রুহুল বয়ান ৮ম খণ্ডের ৪০৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

(৬৯-৭১)

الرابعة حصول المغفرة قال عليه الصلاة والسلام ان الله يغفر لجميع المسلمين فى تلك الليلة الا لكاهن اوساحر او مشاحن او مدمن خمر او عاق للوالدين او مصر على الزنى فقال فى كشف الاسرار فسر اهل العلم المشاحن فى هذا الموضع باهل البدع والاهواء والحقد على اهل الاسلام الخامسة انه أعطى فيها رسول الله صلى الله عليه وسلم تمام الشفاعة وذلك انه سأل ليلة الثالث عشر من شعبان الشفاعة فى امته فاعطى الثلث منها ثم سأل ليلة الرابع عشر فأعطى الثلثين ثم سأل ليلة الخامسة عشر فأعطى الجميع الا من شرد على الله شراد بغير وفى رواية اخرى قالت عائشة عليها السلام رأيت النبى صلى الله عليه وسلم فى ليلة النصف من شعبان ساجدا يدعو فنزل جبريل عليه السلام فقال ان الله قد اعتق من النار الليلة بشفاعتك ثلث امتك فزاد عليه السلام فى الدعاء فنزل جبريل عليه السلام فقال ان الله يقرئك السلام ويقول اعتقت نصف امتك من النار فزاد عليه السلام فى الدعاء فنزل جبريل وقال ان الله اعتق جميع امتك من النار بشفاعتك الا من كان له خصم حتى يرضى خصمه فزاد عليه السلام فى الدعاء فنزل جبريل عند الصبح وقال ان الله قد ضمن لخصماء امتك ان يرضيهم بفضله ورحمته فرضى النبى صلى الله عليه وسلم السادسة: ان من عادة الله فى هذه الليلة ان يزيد ماء زمزم زيادة ظاهرة وفيه اشارة الى حصول مزيد العلوم الالهية لقلوب اهل الحقائق … (فيها يفرق كل امر حكيم) اى يكتب ويفصل كل امر محكم ومتقن من ارزاق العباد واجالهم وجميع امورهم الا السعادة والشقاوة من هذه الليلة الى الاخرى من السنة القابلة وقيل يبدأ فى انتساخ ذلك من اللوح فى ليلة البراءة ويقع الفراغ فى ليلة القدر فتدفع نسخة الا رزاق الى ميكائيل عليه السلام ونسخة الحروب والزلال والصوائق والخسف الى جبرائيل عليه السلام ونسخة الاعمال الى اسمعيل صاحب سماء الدنيا وهو ملك عظيم ونسخة المصائب الى ملك الموت حتى ان الرجل ليمشى فى الاسواق وان الرجل لينكح ويولد له ولقد اخرج اسمه فى الموت.

অর্থ: চতুর্থত: এই শবে বরাতের (ইবাদতের) মাধ্যমে মাগফিরাত অর্জিত হয়। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা ওই শবে বরাতে সমস্ত মুসলমানদেরকে ক্ষমা করে দেন তবে যারা গণক, জাদুকর, হিংসুক, মদ্যপানকারী, পিতামাতাকে কষ্টদানকারী, অথবা যিনাকারী এই সমস্ত ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করেন না। কাশফুল ইসরার গ্রন্থে বলা হয়েছে, ওলামাগণ তথা মুফাসসীরীনে কিরামগণ মুশাহিন শব্দকে হিংসুক শব্দের স্থানে অর্থাৎ বিদয়াতীদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণকারীদের এবং মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে বুঝিয়েছেন।

পঞ্চমত: এই শবে বরাতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত উম্মতের সুপারিশ নিয়ে আসেন। অর্থাৎ উনার সমস্ত সুপারিশ মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করেন।

এ প্রসঙ্গে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শা’বান মাসের ১৩ তারিখ রাত্রে উনার উম্মতের সুপারিশের জন্য আল্লাহ পাক-উনার কাছে প্রার্থনা করেন, তখন আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার এক তৃতীয়াংশ উম্মতের ক্ষমার সুপারিশ কবুল করেন।

অতঃপর ১৪ শা’বানের রাত্রিতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করেন, তখন সেই রাত্রিতে আল্লাহ পাক দুই তৃতীয়াংশ উম্মতকে ক্ষমা করন।

অতঃপর ১৫ শাবান তথা শবে বরাতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম একইভাবে প্রার্থনা করেন, তখন মহান আল্লাহ পাক সমস্ত উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামগণকে ক্ষমা করে দেন। তবে ওই সমস্ত ব্যক্তিকে নয় যারা আল্লাহ পাক উনার থেকে বিতাড়িত।

অপর বর্ণনায় এসেছে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম বলেন, আমি ১৫ শা’বান তথা শবে বরাতে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সিজদা অবস্থায় দোয়া করতে দেখেছি। অতঃপর হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আসলেন এবং বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি আপনার মুবারক সুপারিশের মাধ্যমে আপনার উম্মতের এক তৃতীয়াংশ উম্মতকে এই রাতে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিয়েছেন।

অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো দোয়া বৃদ্ধি করলেন। অতপর হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম আবার অবতরণ করলেন অতপর বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন, আমি আপনার অর্ধেক উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে দিলাম। অতঃপর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া আরো বৃদ্ধি করলেন, হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম  অবতরণ করলেন এবং বললেন, মহান আল্লাহ পাক আপনার সুপারিশের মাধ্যমে আপনার সমস্ত উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তবে যাদের মধ্যে শত্রুতা রয়েছে তাদের শত্রুতায় সন্তুষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে ক্ষমা করেন না। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া আরো বৃদ্ধি করলেন, অতপর হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম ভোর বেলায় উনার নিকট অবতরণ করলেন এবং বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক আপনার উম্মতের প্রতি নিজ অনুগ্রহে এবং স্বীয় করুণায় তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। তারপর হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও সন্তুষ্ট হলেন।

ষষ্ঠত: মহান আল্লাহ পাক সাধারণভাবে এই শবে বরাতে যমযম কূপের পানি প্রকাশ্যরূপে বৃদ্ধি করে থাকেন। এর মধ্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এই রাত্রে সুক্ষ্ম সমঝদারদের অন্তরসমূহ মহান আল্লাহ পাক-উনার পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ইলম অর্জন করে থাকেন।

(এই শবে বরাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়)। অর্থাৎ সকল হিকমতপূর্ণ বিষয় লেখা হয় এবং ফায়ছালা করা হয় এবং আরো যথাযথ ফায়ছালা করা বান্দাদের রিযিক মৃত্যুর ও যাবতীয় বিষয়সমূহের। এমনকি এই রাত্রে আরো লেখা হয় আগামী বৎসর পর্যন্ত কে সৌভাগ্যশালী আর কে হতভাগ্য।

কোন  কোন মুফাস্সীরীনে কিরামগণ বলেন, এই শবে বরাতে লওহে মাহফুয থেকে ভাগ্য লিপিবদ্ধকরণ শুরু হয়। আর এই দায়িত্ব সম্পাদন সংঘটিত হয়ে থাকে লাইলাতুল ক্বদর তথা শবে ক্বদরে। অতঃপর রিযিকের তালিকা দেয়া হয় হযরত মিকাঈল আলাইহিস সালাম উনার হাতে। যুদ্ধের তালিকা, পানির তালিকা, মেঘ পরিচালনার তালিকা এবং মেঘের তালিকা অর্পণ করা হয় হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনার হাতে। এবং আমলের তালিকা অর্পন করা হয় দুনিয়ার আকাশের অধিবাসী হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম-উনার প্রতি, তিনিও একজন বড় ফেরেশতা। আর মুছীবতসমূহ তথা যাবতীয় দুর্ঘটনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয় হযরত মালাকুল মউত আজরাইল আলাইহিস সালাম উনার হাতে। এমনকি লোকেরা বাজারে চলাচল করার সময় যখন বিবাহ করবে এবং তার যে সন্তান জন্মগ্রহণ তার নামও তালিকাভুক্ত করবে এ অবস্থায়ও তার মৃত্যু ঘটবে এ তালিকাও অর্পণ করা হয় হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে।

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১২

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক (৩০তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিন মুবারক উনাদের সম্মানিত আমল মুবারকসমূহ উনাদের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৭তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-৩১)