কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১৯

সংখ্যা: ১৮৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-এর জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীলভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহর আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) পেশ করার পর ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-

২৮তম ফতওয়া হিসেবে

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

স্মরণীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই”। (নাউযুবিল্লাহ) সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই.ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে, মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই ছবি তোলা জায়িয।” (নাঊযুবিল্লাহ) শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

استحلال المعصية كفر.

অর্থাৎ, “গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী।)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্যে ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুনাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি হযরত মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইর-এর ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.

অর্থঃ ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরা গুাহর অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই, যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-এর রিযামন্দি হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পুনরায় প্রকাশ করা হলো।

পূর্ব প্রকাশিতের পর

প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্যসমূহের খন্ডনমূলক জবাব

বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর

ও প্রতারণামূলক বক্তব্য-১

প্রাণীর ছবি সম্পর্কে ছিহাহ্ সিত্তাহ্সহ হাদীছ শরীফ-এর কিতাবসমূহে শত শত হাদীছ শরীফ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও বাতিলপন্থীরা নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যে সেগুলোকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিম্নোক্ত দুখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করে থাকে এবং তার মনগড়া অনুবাদ করে থাকে।

নিম্নে হাদীছ শরীফ দু’খানা তাদের কৃত অনুবাদসহ হুবহু উল্লেখ করা হলো-

(১)

 لاتدخل الملئكة بيتا فيه كلب ولاصورة.

অর্থাৎ- রহমতের ফেরেশ্তারা ঐ সব ঘরে প্রবেশ করেন না যাতে কুকুর ও ছবি থাকে।” (ছহীহ বুখারী ও মুসলিম)

(২)

عن زيد بن خالد عن ابى طلحة صاحب رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الملائكة لا تدخل بيتا فيه صورة قال بسر ثم اشتكى زيد فعدناه فاذا على بابه ستر فيه صورة قال فقلت لعبيد الله الخولانى ربيب ميمونة زوج النبى صلى الله عليه وسلم الم يخبرنا زيد عن الصور يوم الاول فقال عبيد الله الم تسمعه حين قال الا رقما فى ثوب.

অর্থাৎ, “হযরত যায়িদ ইবনে খালিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুনা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবী হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, সাইয়্যিদুনা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ছবি থাকে তাতে ফেরেশ্তা প্রবেশ করেননা। (বর্ণনাকারী বলেন) বুসর বলেছেন- হযরত যায়েদ অসুস্থ হলে আমরা উনাকে দেখতে গেলাম, তখন উনার ঘরের দরজায় ছবি ওয়ালা পর্দা দেখতে পাই। আমি উবাইদুল্লাহ খাওলানী (যিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত মায়মূনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ছেলে) কে জিজ্ঞাসা করলাম, যায়েদ আমাদেরকে কি পূর্বে ছবি থেকে নিষেধ করতেন না? হযরত উবাইদুল্লাহ বল্লেন-তুমি কি শুননি যে, তিনি কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে পূর্বের হুকুম থেকে পৃথক করে থাকেন।” (ছহীহ বুখারী শরীফ ১ম খন্ড ৪৫৮পৃঃ, ২য় খন্ড ৮৮১পৃঃ)

খণ্ডনমূলক জবাব:

এ প্রেক্ষিতে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, হাদীছ শরীফ-এ সুস্পষ্টভাবে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো নিষিদ্ধ থাকার পরও উল্লিখিত হাদীছ শরীফগুলো গোপন রেখে “ঘরে ফেরেশ্তা প্রবেশ করা” সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ উল্লেখ করে তারা মূলতঃ সরলমনা মুসলমানদের সাথে চরম প্রতারণা করছে। তারা তো উক্ত দু’খানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ না করে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ দু’খানাও উল্লেখ করতে পারতো! যেখানে স্পষ্টভাবে “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানোকে কঠিন আযাবের কারণ বলা হয়েছে।” যেমন হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে,

عن معاوية رضى الله تعالى عنه ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذبا المصورون.

অর্থঃ “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু  হতে বর্ণিত, “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم من سفر وقد سترت بقرام على سهوة لى فيه تصاوير فنزعه وقال اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يضاهون بخلق الله.

অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক সফর থেকে ঘরে আসলেন, আর আমি আমার ঘরের আঙ্গিনায় প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ঝুলিয়েছিলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওটা দেখে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, “মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তির ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি হবে, যে আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত- ছবি তৈরী করে।”(মুসলিম ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠা, নাসাঈ ২য় জিঃ ৩০০ পৃষ্ঠা, ইবনে মাজাহ্ ২৬৮ পৃষ্ঠা ইত্যাদি।)

দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, তারা মূলতঃ চরম জাহিল ও মুর্খ; তাই তারা তাদের উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দুখানার বাইরেও যে, প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে তার কোনই খবর রাখেনা।

বাতিলপন্থীরা ছবিকে হালাল করার হীন উদ্দেশ্যে ছবি হারাম সম্পর্কিত অসংখ্য সুস্পষ্ট হাদীছ শরীফসমূহকে বাদ দিয়ে এরূপ দু’খানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেছে যাতে স্পষ্টভাবে ‘ছবির’ প্রতি কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তন্মধ্যে একখানা হাদীছ শরীফ-এর সম্পূর্ণ মনগড়া অর্থ করেছে। হাক্বীক্বত .. তাদের উল্লিখিত দু’খানা হাদীছ শরীফ দ্বারাও ‘ছবি’ সম্পূর্ণরূপে হারাম প্রমাণিত হয়। যেমন, তারা প্রথমে যে হাদীছ শরীফ খানা উল্লেখ করেছে তা হলো,

لاتدخل الملئكة بينا فيه كلب ولاصورة.

অর্থাৎ- “যে ঘরে প্রাণীর ছবি ও কুকুর থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করে না।” (বুখারী, মুসলিম)

উল্লেখ্য, বাতিলপন্থীদের উল্লিখিত উক্ত হাদীছ শরীফখানা যদিও ‘ছবি তোলা’ সম্পর্কে নয় বরং ছবি রাখা সম্পর্কে তথাপিও উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা ছবি তোলা হারাম প্রমাণিত হয়। কারণ যে প্রাণীর ছবি ঘরে থাকার কারণে ফেরেশ্তা প্রবেশ করেননা সেই প্রাণীর ছবি তোলা জায়িয হয় কি করে? অবশ্যই তা হারাম। অতএব, ফেরেশ্তারা প্রাণীর ছবি যুক্ত ঘরে প্রবেশ না করাই প্রমাণ করে  যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানোও হারাম।

এবার দেখা যাক, অনুসরণীয় মুহাদ্দিছগণ উনাদের প্রখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহে হাদীছ শরীফ-এ উল্লিখিত

  ولاصورة -এর ব্যাখ্যায় কি লিখেছেন।         প্রখ্যাত হাদীছ বিশারদ ও ব্যাখ্যাকার হাফিযুল হাদীছ ইমাম আহমদ ইবনে আলী ইবনে হাজর আসকালানী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্ব-রচিত বুখারী শরীফ-এর মশহুর ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ফতহুল বারী” ১ম খন্ডের ৩৮২ পৃষ্ঠায় “ولاصورة” -এর ব্যাখ্যায় লিখেন,

 فيه صورة قال الخطابى والصورة التى لايدخل الملئكة البيت الذى هى فيه ما يحرم افتناؤه وهو ما يكون من الصور التبى فيها الروح.

অর্থঃ- (যে ঘরে ছবি থাকে) আল্লামা খাত্তাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ছবি ঘরে রাখা হারাম বলা হয়েছে সে ছবির কারণেই ফেরেশ্তারা ঘরে প্রবেশ করেননা আর তা হলো, রূহযুক্ত বা প্রাণীর ছবি।” অনুরূপ শাইখুল আল্লাম ইমাম বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “উমদাতুল ক্বারী”তে উল্লেখ করেছেন।

ইমামুল মুহাদ্দিসীন শায়খ আবুল আব্বাস শিহাবুদ্দীন আহমদ ইবনে মুহম্মদ কুস্তলানী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মশহুর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ইরশাদুস্ সারী শরহে বুখারীর” ৮ম জিঃ ৪০০ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(ولاصورة) قال العلماء سبب امتناعهم من بيت فيه صورة كونها معصية فاحشة وفيها مضاهاة لخلق الله تعالى.

অর্থঃ “ …. উলামায়ে কিরামগণ বলেন, প্রাণীর ছবি থাকার কারণেই ফেরেশ্তাগণ ঘরে প্রবেশ করেননা। কেননা, ছবি  তৈরী করা গুনাহ্ ও ফাহিশা কাজ। তদুপরি ছবি তৈরীর দ্বারা স্রষ্টার সাদৃশ্যতা দাবী করা হয়।” অনুরূপ ‘মুসলিম শরহে নববীতেও” উল্লেখ আছে।

প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম নববী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ “মুসলিম শরহে নববী”-এর ১৪তম খন্ডের ৮১ পৃষ্ঠায় লিখেন,

وقال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصويرة الحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور فى الاحاديث…..هذا حكم نفس التصوير واما اتخاذ المصور فيه صورة حيوان.. فهو حرام.

অর্থঃ- “আমাদের আছহাব ও অন্যান্য আলিমগণ বলেন, প্রাণীর ছবি তোলা বা তোলানো শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ্র অন্তর্ভুক্ত। কেননা, হাদীছ শরীফসমূহে এ ব্যাপারে শক্ত আযাবের কথা বলা হয়েছে। … এটা মূলতঃ প্রাণীর ছবি তোলা বা তোলানোর হুকুম। আর ঘরে প্রাণীর ছবি রাখা … তাও হারাম।”

মুসলিম শরীফ-এর অন্যতম ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহুল উবাই ওয়া সিনূসী আলা ছহীহ মুসলিম”-এর ৭ম জিঃ ২৫২ পৃষ্ঠায়-এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে,

تصوير ذى الروح وكبيرة للتوعد عليه بالنار واما تصوير غير ذى الروح كالشجر فليس بحرام.

অর্থঃ “প্রাণীর ছবি বানানো হারাম ও কবীরা গুনাহ্। কেননা, এ ব্যাপারে শক্ত আযাবের কথা ব্যক্ত হয়েছে। আর রূহহীন বস্তু যেমন, গাছপালা ইত্যাদির ছবি বানানো হারাম নয়।”

মুসলিম শরীফ-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফতহুল মুলহিম”-এর ৪র্থ জিঃ, ১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ্য আছে,

 قوله لا يدخل الملائكة بيتا فيه كلب ولاصورة هذا الحديث يدل على ان تصوير ذوى الارواح واتخاذ الصور فى البيوت ممنوع شرعا واتفق عليه جمهور الفقهاء.

অর্থঃ- “(ঐ ঘরে ফেরেশ্তা প্রবেশ করেন না যে ঘরে কুকুর ও প্রাণীর ছবি থাকে) এ হাদীছ শরীফ প্রমাণ করে যে, প্রাণীর ছবি তোলা বা তোলানো এবং তা ঘরে রাখা শরীয়তে হারাম। জমহুর ফক্বীহ্গণ এ ব্যাপারে একমত।

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, বাতিলপন্থীরা ছবিকে জায়িয করার উদ্দেশ্যে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করা সম্পর্কিত যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করেছে তাদের উল্লিখিত উক্ত হাদীছ শরীফ-এর দ্বারাই প্রমাণিত হলো যে, “প্রাণীর ছবি তোলা বা তোলানো সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কবীরা গুনাহ্; হালাল মনে করা কুফরী।”

বাতিলপন্থীরা প্রাণীর ছবিকে জায়িয করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় যে হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করে থাকে তাহলো-

عن زيد بن خالد عن ابى طلحة صاحب رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الملائكة لا تدخل بيتا فيه صورة قال بسر ثم اشتكى زيد فعدناه فاذا على بابه ستر فيه صورة قال فقلت لعبيد الله الخولانى ربيب ميمونة زوج النبى صلى الله عليه وسلم الم يخبرنا زيد عن الصور يوم الاول فقال عبيد الله الم تسمعه حين قال الا رقما فى ثوب.

আর তারা উক্ত হাদীছ শরীফ-এর অর্থ করে থাকে এরূপভাবে, “অর্থাৎ- যায়েদ ইবনে খালেদ বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবী হযরত আবূ তাল্হা (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেছেন, হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, যে ঘরে ছবি থাকে তাতে ফিরিশ্তা প্রবেশ করেননা। (বর্ণনাকারী বলেন) রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- হযরত যায়েদ অসুস্থ হলে আমরা উনাকে দেখতে গেলাম, তখন উনার ঘরের দরজায় ছবিওয়ালা পর্দা দেখতে পাই। আমি উবাইদুল্লাহ্ খাওলানী (যিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত মাইমুনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ছেলে)কে জিজ্ঞাসা করলাম, যায়েদ আমাদেরকে কি পূর্বে ছবি থেকে নিষেধ করতেন না? হযরত উবাইদুল্লাহ্ বললো, তুমি কি শুননি যে, তিনি কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে পূর্বের হুকুম থেকে পৃথক করে থাকেন।”

মূলতঃ বাতিলপন্থীরা উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ভুল অর্থ ও অশুদ্ধ ব্যাখ্যা করে প্রমাণ করতে চায় যে, কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবি জায়িয।

আমরা তাদের ভুল অর্থ ও  ব্যাখ্যা খন্ডন করার এবং কাপড়ের উপর কোন্ ধরণের ছবি অঙ্কন করা জায়িয তা প্রমাণ করার পূর্বে এটাই প্রমাণ করবো যে, হাদীছ শরীফ-এ স্পষ্টভাবেই প্রাণীর ছবিযুক্ত পর্দা ঘরে ঝুলানোর প্রতি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যেমন, হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم من سفر وقد سترت بقرام على سهوة لى فيه تصاوير فنزعه وقال اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يضاهون بخلق الله.

অর্থঃ “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক সফর থেকে ঘরে আসলেন, আর আমি আমার ঘরের আঙ্গিনায় প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ঝুলিয়েছিলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওটা দেখে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তির ক্বিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি হবে, যে আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত-ছবি তৈরী করে।”(নাসাঈ ৮ম জিঃ ২১৪ পৃষ্ঠা, মু’য়জামুল মুফহারিস ৩য় জিঃ ৪৪০ পৃষ্ঠা, নাসাঈ ২য় জিঃ ৩০০ পৃষ্ঠা, ইবনে মাজাহ্ ২৬৮ পৃষ্ঠা, মুসলিম ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠা ইত্যাদি।)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت دخل على رسول الله صلى الله عليه وسلم وانا مسترة بقرام فيه صورة فتلون وجهه ثم تناول الستر فهتكه ثم قال ان من اشد الناس عذابا يوم القيامة الذين يشبهون بخلق الله.

অর্থঃ “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নিকট আসলেন, আর আমি (প্রাণীর ছবিযুক্ত) একটি চাদর গায়ে দেয়া ছিলাম। (ওটা দেখে) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক রঙ্গীন হয়ে গেল। অতঃপর তিনি ওটা টেনে নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন, নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে আল্লাহ্ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত-ছবি তৈরী করবে।” (মুসনদে আহমদ ২য় জিঃ ২১৭ পৃষ্ঠা, তাহাবী ২য় জিঃ ৩৬৩ পৃষ্ঠা)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كان لنا ستر فيه تمثال طائر وكان الداخل اذا دخل استقبله فقال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم حولى هذا فانى كلما دخلت فرأيته ذكرت الدنيا.

অর্থঃ “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের পাখির ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ছিলো। প্রত্যেক লোক প্রবেশ করতেই সেটা তাদের নজরে পড়তো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, পর্দাটি সরিয়ে ফেলুন। কেননা, আমি যতবার ঘরে প্রবেশ করি ততবারই ওটা দেখে আমার দুনিয়ার স্মরণ হয়।” (মুসলিম ২য় জিঃ, ২০০ পৃষ্ঠা)

উল্লিখিত তিনখানা হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্টতঃ প্রমাণিত হলো যে, পর্দা, চাদর ইত্যাদি কাপড়ে অঙ্কিত প্রাণীর ছবিও হারাম। অর্থাৎ কাপড়ে প্রাণীর ছবি তৈরী করা এবং তা ঘরে প্রকাশ্যে রাখাও হারাম। কেননা, স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্দা, চাদর ইত্যাদি কাপড়ে অঙ্কিত প্রাণীর ছবিকে অপছন্দ করতেন। তাই তিনি তা ছিঁড়ে ফেলেছেন এবং সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।

অতএব, কাপড়ে প্রাণীর ছবি  অঙ্কন করার নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত স্পষ্ট হাদীছ শরীফসমূহ বাদ দিয়ে একখানা অস্পষ্ট হাদীছ শরীফ-এর মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করে তা দ্বারা কাপড়ে প্রাণীর ছবি জায়িয প্রমাণ করার অপচেষ্টা করা সুস্পষ্ট গোমরাহী ও জালিয়াতী নয় কি? এটা শুধু গোমরাহী ও জালিয়াতীই নয় বরং সুস্পষ্ট কুফরীও বটে।

বাতিলপন্থীরা এখানেই ক্ষ্যান্ত হয়নি, তারা নিজেদের বাতিল মতকে ছাবিত করার লক্ষে উল্লিখিত হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত,

الا رقما فى ثوب

বাক্যের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য   অর্থ বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ মনগড়া অর্থ করেছে। যেমন, তারা উক্ত বাক্যের অর্থ করেছে এভাবে, “তিনি কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে পূর্বের হুকুম থেকে পৃথক করে থাকেন।”

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত উক্ত বাক্যের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য অর্থ হলো, “তিনি কাপড়ের উপর অঙ্কিত গাছপালা, তরুলতা অর্থাৎ প্রাণহীন বস্তুর ছবিকে পূর্বের হুকুম থেকে পৃথক করে থাকেন।” অর্থাৎ উক্ত হাদীছ শরীফ-এর মূল মাফহুম হলো, হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রাণীর ছবি তৈরী করা ও ঘরে রাখাকে নাজায়িয মনে করেন। আর প্রাণহীন বস্তুর ছবি তৈরী করা ও তা ঘরে রাখাকে জায়িয মনে করেন। এখন তা যেখানেই হোকনা কেন। হোক কাপড়ে, হোক কাগজে, হোক পাথরে, হোক দেয়ালে, যেখানেই হোক না কেন প্রাণীর ছবি হলে তা অঙ্কন করা ও রাখা উভয়টাই হারাম ও নাজায়িয। আর প্রাণহীন বস্তু যেমন গাছপালা, তরুলতা, পাহাড়পর্বত ইত্যাদি তা তৈরী করা ও ঘরে রাখা জায়িয। নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারাও এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। যেমন, ইরশাদ হয়েছে,

عن سعيد رضى الله تعالى عنه قال جاء رجل الى ابن عباس رضى الله تعالى عنه فقال انى رجل اصور هذه لاصور فافتني فيها فقال له ادن منى فدنا منه ثم قال ادن منى فدنا حتى وضع يده على راسه وقال انبئك بما سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل مصور فى النار يجعل له بكل صورة صورها نفسا فتعذبه فى جهنم وقال ان كنت لابد فاعلا فاصنع الشجر ومالا نفس له.

অর্থঃ- “হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট এসে বললো, “আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অংকন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন।” হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বললেন, “তুমি আমার নিকটবর্তী হও।” সে ব্যক্তি উনার নিকটবর্তী হলো। পুনরায় বললেন, “তুমি আরো নিকটবর্তী হও।” সে আরো নিকটবর্তী হলে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মাথায় হাত রেখে বললেন, “আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলবো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে এবং আল্লাহ্ পাক প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবিগুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।” ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয়, তবে গাছপালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁক।” (মুসলিম ২য় জিঃ, ২০২ পৃষ্ঠা)

 سعيد ابن ابى الحسن قال كنت عند ابن عباس اذ جاءه رجل فقال يا ابن عباس انى رجل انما معيشتى من صنعة يدى وانى اصنع هذه التصاوير فقال ابن عباس لا احدثك الا ما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم سمعته يقول من  صور صورة فان الله معذبه حتى ينفخ فيه الروح وليس بنافخ فيها ابدا فربا الرجل ربوة شديدة واصفر وجهه فقال ويحك ان ابيت الا ان تصنع فعليك بهذا الشجر وكل شىء ليس فيه روح.

অর্থঃ “হযরত সাঈদ ইবনে আবুল হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট ছিলাম। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি উনার নিকট আসল এবং বললো, “হে ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আমি এমন এক ব্যক্তি যে, আমার হাতের কাজের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করি এবং আমি এরকম প্রাণীর ছবি তৈরী করি। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট যা শুনেছি তা কি তোমাকে বলবনা? আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, আল্লাহ্ পাক তাকে ঐ ছবির মধ্যে প্রাণ না দেয়া পর্যন্ত শাস্তি দিতে থাকবেন। কিন্তু সে কখনো ওটার মধ্যে প্রাণ দিতে সক্ষম হবে না।” সুতরাং সে ব্যক্তি খুব লজ্জিত হল এবং তার চেহারা হলুদ হয়ে গেল। অতঃপর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তোমার যদি ছবি তৈরী করতেই হয়, তবে গাছ-পালা ইত্যাদি অথবা প্রাণহীন বস্তুর ছবি তৈরী করতে পার।” (মিশকাত)

বর্ণিত হাদীছ শরীফদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর ছবি অঙ্কন করা ও ঘরে রাখা জায়িয। এটাকে কেউ নাজায়িয বলেনি। আর বলার প্রশ্নই উঠেনা।

সুতরাং হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত,

الا رقما فى ثوب

এর অর্থ হলো, “কাপড়ে গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর ছবি ব্যতীত অর্থাৎ এগুলো জায়িয।”

অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিছীন-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণও হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত উক্ত বাক্যের এরূপ অর্থ করেছেন।

নিম্নে বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিছগণের নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহ হতে কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো-

বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফিযে হাদীছ, ইমাম আহমদ ইবনে আলী ইবনে হাজর আসকালানী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মশহুর ও নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফাতহুল বারী শরহে বুখারী”-এর ১০ জিঃ ৩৯০ পৃষ্ঠা  “الا رقما فى ثوب” এর ব্যাখ্যায় লিখেন,

الا رقما فى ثوب قال النووى يجمع بين الاحاديث بان  المراد باستثناء الرقم فى الثوب ما كانت الصورة فيه من غير ذوات الارواح كصورة الشجر ونحوها.

অর্থঃ “(“কাপড়ের ছবি ব্যতীত)….  ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উক্ত হাদীছ শরীফ-এ যে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে বাদ দেয়া হয়েছে অর্থাৎ জায়িয বলা হয়েছে তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রাণহীন বস্তুর ছবি যেমন, গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি।”

শাইখুল ইসলাম, তাজুল মুহাদ্দিছীন, ইমাম আল্লামা বদরুদ্দীন আবূ মুহম্মদ মাহমূদ ইবনে আইনী হানাফী রহতুল্লাহি আলাইহি উনার জগতখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী”-এর ২২ জিঃ ৭৪ পৃষ্ঠায় الا رقما এর ব্যাখ্যায় লিখেন,

الا رقما بفتح الراء وسكون القاف وفتحها النقش والكتابة وقال الخطابى المصور هو الذى يصور اشكال الحيوان والنقاش الذى ينقش اشكال الشجر ونحوها.

অর্থঃ “الا رقم ‘রা’-এর উপর যবর, ‘ক্বাফ’-এর সাকিন বা যবর দ্বারা رقم শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘নকশা’ বা লিখা। ইমাম খাত্তাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর আকৃতি তৈরী করে তাকে বলে مصور মুছাব্বির। আর যে ব্যক্তি গাছপালা ইত্যাদির আকৃতি বানায় তাকে বলে نقاش নক্কাশ। অর্থাৎ رقم শব্দের অর্থ হচ্ছে গাছপালা বা প্রাণহীন বস্তুর আকৃতি। অনুরূপ “শরহে কিরমানী”তে উল্লেখ আছে।”

ইমামুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা আবুল আব্বাস শিহাবুদ্দীন আহমদ ইবনে মুহম্মদ কুস্তলানী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুপ্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ইরশাদুস সারী শরহে বুখারী”-এর ৮ম জিঃ ৪৮৩ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(الا رقما) اى نقشا (فى ثوب) …قال النووى … بان المراد باستثناء الرقم فى الثوب ما كانت الصورة فيه من غير ذوات الارواح كصورة الشجر ونحوها.

অর্থঃ “কাপড়ের অঙ্কিত ছবি অর্থাৎ কাপড়ে অঙ্কিত গাছপালার নকশা ব্যতীত.. ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

الا رقما فى الثوب

এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রাণহীন বস্তুর ছবি। যেমন, গাছপালা ইত্যাদি।”

ছহীহ্ ‘মুসলিম শরীফ-এর’ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহুল উবাই ওয়া সিনূসী”এর ৭ম জিঃ ২৫৬ পৃষ্ঠায় الا رقما فى ثوب -এর অর্থে উল্লেখ আছে,

يحتج به من يجيز الرقم مطلقا وجوابنا وجواب  الجمهور انه محمول على رقم مالا روح فيه

অর্থঃ “যারা সাধারণভাবে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে জায়িয বলে তারা এ হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে। কিন্তু আমাদের এবং জমহুর উলামাদের ফতওয়া হলো উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা মূলতঃ প্রাণহীন বস্তুর ছবিকেই বুঝানো হয়েছে”

রঈসুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা ইমাম নববী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি “শরহে মুসলিম”-এর ১৪ জিঃ ৮৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(الا رقما فى ثوب) هذا يحتج به من يدل باباحة ماكان رقما مطلقا كما سبق وجوابنا وجواب الجمهور عنه انه محمول على رقم على صورة الشجر وغيره ماليس بحيوان وقد قدمنا ان هذا جائز عندنا.

অর্থঃ “যারা মতলক বা সাধারণভাবে কাপড়ে অঙ্কিত ছবিকে জায়িয বলেছে তারা এ হাদীছ শরীফ-এর উপর ভিত্তি করেই বলেছে। আর আমাদের ও জমহুর আলিমগণের ফতওয়া হলো হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত رقم দ্বারা গাছপালার অনুরূপ প্রাণহীন বস্তুর আকৃতিকেই বুঝানো হয়েছে। আর পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এরূপ গাছপালার ছবি আমাদের নিকট জায়িয।”

মুসলিম শরীফ-এর ব্যাখ্যগ্রন্থ “ফাতহুল মুলহিম”-এর ৪র্থ জিঃ ১৫০ পৃষ্ঠায় الا رقما فى ثوب এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে,

واجاب عنه الجمهور بان المراد من الرقم فى الثوب هو ما كان فيه من نقش الشجر ونحوه مما لا روح له.

অর্থঃ ‘হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত الا رقما فى ثوب শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গাছপালার নকশা, অনুরূপ প্রাণহীন বস্তুর আকৃতি।”

অনুসরনীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ব্যাখ্যাগ্রন্থ সমূহের বক্তব্য দ্বারা এটাই সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত الا رقما فى ثوب এর অর্থ হলো, “কাপড়ে গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর ছবি ব্যতীত।”

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, বাতিলপন্থীরা নিজেদের ভ্রান্তমত প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এবং নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার কু উদ্দেশ্য “পর্দা, চাদর বা কোন কাপড়ে যে, প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা ও তা ঘরে রাখা নিষেধ” এ সম্পর্কিত ছহীহ্ হাদীছ শরীফ সমূহ সম্পূর্ণরূপে গোপন রেখে নিজেদেরকে হাদীছ শরীফ কারচুপিকারী হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

দ্বিতীয়তঃ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত “الارقما فى ثوب এর সম্পূর্ণ মনগড়া অর্থ করে নিজেদেরকে হাদীছ শরীফ অপব্যাখ্যাকারী হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

তৃতীয়তঃ উক্ত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে পেশ করে নিজেদেরকে চরম জাহিল ও প্রতারক হিসেবেই প্রমাণ করেছে।

 বাতিলপন্থীদের আপত্তিকর ও

প্রতারণামূলক বক্তব্য-২

বাতিলপন্থীরা ছবিকে জায়িয করতে গিয়ে ইমাম নববীর বরাতে মুসলিম শরীফ-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘শরহে নববীর’ নিম্নোক্ত ইবারত উল্লেখ করে থাকে-

هذا يحتج به من يدل باباحة ما كان رقما مطلقا.

অর্থাৎ, যারা মাতলাক বা সাধারণভাবে অঙ্কিত ছবির বৈধতা স্বীকার করে থাকেন তারা এ হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে পেশ করেন। (শরহে ছহীহ্ মুসলিম ২য় খন্ড ৬০০ পৃষ্ঠা)

খণ্ডনমূলক জবাব

বাতিলপন্থীদের উক্ত দলীলের জবাবে বলতে হয় যে, “শরহে নববী” কিতাবখানা জালিয়াতী করার সাহস পেয়েছে। তারা সুকৌশলে উক্ত বক্তব্যকে ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বক্তব্য হিসেবে চালিয়ে দিতে চেয়েছে।

অথচ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত “الارقما فى ثوب” এর ব্যাখ্যায় প্রদত্ত উল্লিখিত বক্তব্যখানা ইমাম নববীর মূল বক্তব্য নয়। বরং উক্ত ইবারতের পরপরই ইমাম নববী-এর মূল বক্তব্য উল্লেখ রয়েছে। যা বাতিলপন্থীদের কাছে মৃত্যুতুল্য বিধায় তারা তা কারচুপি করে গোপন রেখেছে।

তাই পাঠকদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা শরহে নববী-এর উক্ত খন্ড খুলে দেখুন তাতে কি লিখা রয়েছে? আর তাতে মূলতঃ উল্লেখ আছে-

هذا يحتج به من يدل باباحة ما كان رقما مطلقا كما سبق وجوابنا وجواب الجمهور عنه انه محمول على رقم صورة الشجر وغيره ما ليس بحيوان وقد قدمنا ان هذا جائز عندنا.

অর্থঃ “যারা মুতলাক বা সাধারণভাবে কাপড়ে অঙ্কিত ছবিকে জায়িয বলেছে তারা এ হাদীছ শরীফ-এর উপর ভিত্তি করেই বলেছে। আর আমাদের ও জমহুর আলিমগণের ফতওয়া হলো- হাদীছ শরীফে বর্ণিত رقم দ্বারা গাছপালার অনুরূপ প্রাণহীন বস্তুর আকৃতিকেই বুঝানো হয়েছে। আর পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এরূপ গাছপালার ছবি আমাদের নিকট জায়িয।”

উল্লিখিত ইবারত দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইমাম নববী-এর মতে ও  জমহুর আলিমগণের মতে হাদীছ শরীফে বর্ণিত

الا رقما فى ثوب”

এর অর্থ হলো গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি।

শুধু শরহে নববীতেই নয়, হাদীছ শরীফের অন্যান্য ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহেও ইমাম নববী ও জমহুর আলিমগণের উক্ত মত উল্লেখ রয়েছে। যেমন-

يحتج به من يجيز الرقم مطلقا وجوابنا وجواب الجمهور انه محمول على رقم ما لا روح فيه.

অর্থঃ “যারা সাধারণভাবে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে জায়িয বলে তারা এ হাদীছ শরীফকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে। কিন্তু আমাদের এবং জমহুর উলামাদের ফতওয়া হলো, উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা মূলতঃ প্রাণহীন বস্তুর ছবিকেই বুঝানো হয়েছে।”

 (শরহুল উবাই ওয়া সিনূসী-এর ৭ম জিঃ ২৫৬পৃ:)

قال النووى يجمع بين الاحاديث بان المراد باستثناء لا رقم لى لا ثوب ما كانت الصورة فيه من غير ذوات الارواح كصورة الشجر ونحوها.

অর্থঃ “(কাপড়ের ছবি ব্যতীত) … ইমাম নববী রহতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উক্ত হাদীছ শরীফে যে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে বাদ দেয়া হয়েছে অর্থাৎ জায়িয বলা হয়েছে তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রাণহীন বস্তুর ছবি। যেমন, গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি। (ফতহুল বারী শরহে বুখারী-এর ১০ জিঃ ৩৯০ পৃঃ)

..قال النورى … بان المراد استثناء الرقم فى الثوب ما كانت الصورة فيه من غير ذوات الارواح كصورة الشجر ونحوها.

অর্থঃ “(কাপড়ের অঙ্কিত ছবি অর্থাৎ কাপড়ে অঙ্কিত গাছপালার নক্শা ব্যতীত) ..। ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

“الا رقما فى ثوب”এর দ্বারা উদ্দেশ্যে হলো, প্রাণহীন বস্তুর ছবি। যেমন, গাছপালা ইত্যাদি। (ইরশাদুস সারী শরহে বুখারী”-এর ৮ম জিঃ, ৪৮৩ পৃঃ)

واجبا عنه الجمهور بان المراد من الرقم فى الثوب هو ما كان فيه من نقش الشجر ونحوه مما لا روح له.

অর্থঃ হাদীছ শরীফে বর্ণিত “الا رقما فى ثوب”-এর ব্যাখ্যায় জমহুর উলামাগণ বলেন, হাদীছ শরীফে বর্ণিত رقم শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গাছপালার নকশা, অনুরূপ প্রাণহীন বস্তুর আকৃতি।” (ফতহুল মুলহিম-৪র্থ জিঃ, ১৫০ পৃঃ)

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, বাতিলপন্থীরা “কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে বৈধ করার উদ্দেশ্যে “শরহে নববী” থেকে যে ইবারত উল্লেখ করেছে তা এক্ষেত্রে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বরং সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য। কেননা তাদের উল্লিখিত মতটি ইমাম নববী ও জমহুর আলিমগণের মত নয়। ইমাম নববী ও জমহুর আলিমগণের মত হলো- কাপড়ের উপরও প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা হারাম। উক্ত হাদীছ শরীফ কাপড়ের উপর যে ছবি অঙ্কন করা বৈধ বুঝা যায় তা হলো প্রাণহীন বস্তুর ছবি যেমন গাছ-পালা, তরুলতা, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি।

বাতিলপন্থীরা ‘শরহে নববী’-এর পরবর্তী অংশ গোপন রেখে নিজেদেরকে চরম জালিয়াত, প্রতারক, ইবারত চোর হিসেবেই সাব্যস্ত করেছে।

(৩)

বাতিলপন্থীরা ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করতে গিয়ে বুখারী শরীফ-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফতহুল বারীর” নিম্নোক্ত ইবারত দলীল হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। যেমন, উল্লেখ আছে-

وقال القرطبى ظاهر الحديث زيد بن خالد عن ابى طلحة الماضى قيل ان الملئكة لا تمتنع من دخول البيت الذى فيه صورة ان كانت رقما فى الثوب وظاهر حديث عائشة المنع ويجمع بينهما بان يحمل حديث عائشة على الكراهة وحديث ابى طلحة على مطلق الجواز وهو لا ينافى الكراهة.

বাতিলপন্থীরা উক্ত ইবারতের অর্থ করে থাকে এভাবে- অর্থাৎ আল্লামা কুরতুবী বলেন, হযরত যায়েদ ইবনে খালেদের হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, ফেরেশতাগণ ঐসব ঘরে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকেন, যাতে পর্দায় অঙ্কিত ছবি থাকে। আর হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর বর্ণনা দ্বারা ফেরেশ্তা না আসাটা বোধগম্য হয়। এ উভয় হাদীছ-এর মধ্যে সমাধান হলো এই যে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা- এর হাদীছ দ্বারা মাকরূহ হওয়া বুঝায়। আর হযরত আবূ তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হাদীছ শরীফ দ্বারা সাধারণভাবে বৈধ হওয়াকে বুঝায়। বৈধ হওয়াটা মাকরূহ হওয়াকে নিষেধ করে না।” (ফতহুল বারী ইবনে হাজর আসকালানী, ১০ খ- ৩৯২ পৃষ্ট)

খ-নমূলক জবাব

বাতিলপন্থীরা “ফাতহুল বারী” থেকে যে ইবারত উল্লেখ করে তার দুটি অংশের অর্থ তারা ভুল করে থাকে, তম্মধ্যে একটি হলো-

ان الملائكة لا تمتنع من دخول البيت

বাতিলপন্থীরা এর অর্থ করে থাকে…….. ফিরিশতাগণ ঐ ঘরে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকেন, ……….”

অথচ উক্ত বাক্যের সঠিক ও ছহীহ অর্থ হলো- “ফেরেশ্তাগণ ঐসব ঘরে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকেন না।” অর্থাৎ ঐ সব ঘরে প্রবেশ করেন।

দ্বিতীয়টি হলো-

ان كانت رقما فى الثوب

বাতিলপন্থীরা এর অর্থ করে থাকে……… যাতে পর্দায় অঙ্কিত ছবি থাকে।

অথচ উক্ত বাক্যের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য অর্থ হলো- “যদি পর্দায় বা কাপড়ে গাছ-পালা, তরু-লতা, পাহাড়- পর্বত ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর ছবি থাকে।”

কেননা অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ   رقما শব্দের অনুরূপ অর্থই করেছেন।

যেমন, বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, হাফিযে হাদীছ, ইমাম আহমদ ইবনে আলী ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মশহুর ও নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফাতহুল বারী শরহে বুখারী”-এর ১০ জিঃ ৩৯০ পৃষ্ঠার رقما এর অর্থ করেন এভাবে-

الا رقما فى ثوب … المراد باستثناء الرقم فى الثوب ما كانت الصورة فيه من غير ذوات الارواح كصورة الشجر ونحوها.

অর্থঃ “(“কাপড়ের ছবি ব্যতীত)…. উক্ত হাদীছ শরীফ-এ যে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবিকে বাদ দেয়া হয়েছে অর্থাৎ জায়িয বলা হয়েছে তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রাণহীন বস্তুর ছবি যেমন, গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি।”

শাইখুল ইসলাম, তাজুল মুহাদ্দিছীন, ইমাম আল্লামা বদরুদ্দীন আবূ মুহম্মদ মাহমূদ ইবনে আইনী রহতুল্লাহি আলাইহি তাঁর জগতখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী”-এর ২২ জিঃ ৭৪ পৃষ্ঠায় رقما এর অর্থ করেন এভাবে-

الا رقما بفتح الراء وسكون القاف وفتحها النقش والكتابة وقال الخطابى المصور هو الذى يصور اشكال الحيوان والنقاش الذى ينقش اشكال الشجر ونحوها.

অর্থঃ- “الا رقم ‘রা’-এর উপর যবর, ‘ক্বাফ’-এর সাকিন বা যবর দ্বারা رقم শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘নকশা’ বা লিখা। ইমাম খাত্তাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর আকৃতি তৈরী করে তাকে বলে مصور মুছাওয়ির। আর যে ব্যক্তি গাছপালা ইত্যাদির আকৃতি বানায় তাকে বলে نقاش নক্কাশ। অর্থাৎ رقم শব্দের অর্থ হচ্ছে গাছপালা বা প্রাণহীন বস্তুর আকৃতি। আনুরূপ “শরহে কিরমানী”তে উল্লেখ আছে।”

ইমামুল মুহদ্দিছীন, আল্লামা আবুল আব্বাস শিহাবুদ্দীন আহমদ ইবনে মুহম্মদ কুস্তলানী রহমুল্লাহি আলাইহি তাঁর সুপ্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ইরশাদুস সারী শরহে বুখারী”-এর ৮ম জিঃ ৪৮৩ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(الا رقما) اى نقشا (فى ثوب) … المراد باستثناء الرقم فى الثوب ما كانت الصورة فيه من غير ذوات الارواح كصورة الشجر ونحوها.

অর্থঃ- “(কাপড়ে অঙ্কিত ছবি অর্থাৎ কাপড়ে অঙ্কিত (গাছপালার) নকশা ব্যতীত) ….. এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রাণহীন বস্তুর ছবি। যেমন, গাছপালা ইত্যাদি।”

ছহীহ্ ‘মুসলিম শরীফ-এর’ ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহুল উবাই ওয়া সিনূসী”-এর ৭ম জিঃ ২৫৬ পৃষ্ঠায় الا رقما فى ثوب -এর অর্থে উল্লেখ আছে,

انه محمول على رقم ما لا روح فيه

অর্থঃ “উক্ত হাদীছ শরীফ বর্ণিত رقم শব্দ দ্বারা মূলতঃ প্রাণহীন বস্তুর ছবিকেই বুজানো হয়েছ্”ে

রঈসুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লহি আলাইহি “শরহে মুসলিম”-এর ১৪ জিঃ ৮৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,

انه محمول على رقم على صورة الشجر وغيره ما ليس بحيوان.

অর্থঃ “হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত رقم দ্বারা গাছপালার অনুরূপ প্রণহীন বস্তুর আকৃতিকেই বুঝানো হয়েছে।”

মুসলিম শরীফ-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফাতহুল মুলহিম”-এর ৪র্থ জিঃ ১৫০ পৃষ্ঠায় الا رقما فى ثوب এর অর্থে উল্লেখ আছে,

المراد من الرقم فى الثوب هو ما كان فيه من نقش الشجر ونحوه مما لا روح له.

অর্থঃ ‘হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত رقم শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো গাছপালার নকশা, অনুরূপ প্রাণহীন বস্তুর আকৃতি।”

অনুসরনীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও তাঁদের ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহের বক্তব্য দ্বারা এটাই সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত رقما এর অর্থ হলো, “কাপড়ে গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি প্রাণহীন বস্তুর ছবি।”

প্রমাণিত হলো যে, বাতিলপন্থীরা প্রথমতঃ তাদের বাতিল মতকে ছাবিত করার লক্ষ্যে এবং হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে  তাদের প্রদত্ত “ফতহুল বারী’ এর উক্ত ইবারতের ভুল ও মনগড়া অর্থ করেছে।

দ্বিতীয়তঃ তাদের উল্লিখিত ইবারত দ্বারাই প্রাণীর ছবি হারাম প্রমাণিত হয়।

অর্থাৎ বাতিলপন্থীরা প্রাণীর ছবি তোলাকে জায়িয করার কুউদ্দেশ্যে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফতহুল বারী” থেকে যে ইবারতটি উল্লেখ করেছে মূলতঃ তাদের উল্লিখিত ইবারতের দ্বারাও প্রাণীর ছবি হারাম প্রমাণিত হয়। কেননা উক্ত ইবারতে সুস্পষ্টভাবেই একথা উল্লেখ আছে যে,

ان الملئكة لا تمتنع من دخول البيت الذى فيه صورة ان كانت رقما فى الثوب.

অর্থাৎ নিশ্চয়ই রহমতের ফেরেশ্তাগণ ঐ ঘরে প্রবেশ করেন যে ঘরে কাপড় বা ইত্যাদিতে প্রাণহীন বস্তুর ছবি থাকে।”

মূলতঃ উক্ত ইবারত এটাই প্রমাণ করে যে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করে না। তাই প্রাণীর ছবি ঘরে রাখা মাকরূহ বা হারাম।

এখন প্রশ্ন হলো, ‘যেখানে প্রাণীর ছবি ঘরে থাকলে ফের্শেতা প্রবেশ করে না সেখানে সকলের মতেই প্রাণীর ছবি তোলা বৈধ বা জায়িয হয় কি করে?’ বাতিলপন্থীরা কি প্রমাণ করতে পারবে যে, তাদের উল্লিখিত ইবারতের কোথাও প্রাণীর ছবি তোলাকে বৈধ বলা হয়েছে?

বস্তুতঃ উল্লিখিত ইবারতের কোথাও প্রাণীর ছবিকে বৈধ বলা হয়নি বরং সূক্ষ্মভাবে ফিকির করলে উক্ত ইবারতের দ্বারা প্রাণীর ছবি তোলা হারাম হওয়াই প্রমাণিত হয়। বাতিলপন্থীরা তাদের জিহালতীর কারণেই উক্ত ইবারতের সঠিক মর্ম অনুধাবনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

তৃতীয়তঃ বাতিলপন্থীরা প্রাণীর ছবি তোলা জায়িয প্রমাণ করার ক্ষেত্রে উক্ত ইবারত উল্লেখ করে চরম জালিয়াতী ও প্রতারণার পরিচয় দিয়েছে।

কেননা উক্ত ইবারত দ্বারা কস্মিনকালেও প্রাণীর ছবি তোলা জায়িয প্রমাণিত হয় না। বরং উক্ত ইবারতে মূলতঃ ঘরে ছবি রাখার বিষয়টিই ব্যক্ত হয়েছে।

অর্থাৎ ‘কোন্ ধরণের ছবি থাকলে ঘরে ফেরেশ্তা প্রবেশ করে আর কোন্ ধরণের ছবি থাকলে ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা’ সে বিষয়টিই এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ বিষয়ে সকলেই একমত যে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশ্তা প্রবেশ করেনা। আর যে ঘরে প্রাণহীন বস্তুর ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশ্তা প্রবেশ করে।

মূলকথা হলো, বাতিলপন্থীরা প্রাণীর ছবিকে জায়িয করার উদ্দেশ্যে ‘ফতহুল বারী’ থেকে যে ইবারতটি দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে তা এক্ষেত্রে মোটেও দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ইবারতের কোথাও বলা হয়নি যে, “প্রাণীর ছবি তোলা জায়িয। বরং উক্ত ইবারত দ্বারা এর বিপরীতটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

(৪)

বাতিলপন্থীরা ছবিকে জায়িয করতে গিয়ে দলীল হিসেবে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘ফাতহুল বারীর” নিম্নোক্ত ইবারতখানা উল্লেখ করে থাকে-

ان مذهب الحنابلة جواز الصورة فى الثواب ولو كان معلقا على ما فى خبر ابى طلحة لكن ان الستر به الجدار منع عندهم فقال النورى وذهب بعض السلف الى ان الممنوع ما كان له ظل له وما ما لا ظل له فلا بأس باتخاذه مطلقا.

অর্থাৎ, হাম্বলী মাযহাব মতে সাধারণভাবে কাপড়ের উপর অঙ্কিত ছবি বৈধ। যা আবু তালহার হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়। অবশ্যই যদি ঐ ছবি দিয়ে দেয়ালে পর্দা দেয়া হয় তবে তা তাঁরা নিষেধ করেন। আল্লামা নববী বলেন- পূর্ববর্তী কতেকের মাযহাব এ ছিল যে, যে সব ছবির ছায়া নেই তা বানানো সাধারণভাবে বৈধ। আর যেসব ছবির ছায়া আছে তা নিষিদ্ধ।”

খ-নমূলক জবাব

বাতিলপন্থীদের উল্লিখিত দলীলের খন্ডনমূলক জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “ফাতহুল বারীর” উক্ত ইবারত হানাফীদের নিকট দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তা হাম্বলী মাযহাবের বক্তব্য বা মত।

দ্বিতীয়তঃ “ফাতহুল বারীর” উল্লিখিত ইবারত মূলতঃ প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকা সম্পর্কিত নয়, বরং উল্লিখিত ইবারতে “ঘরে ছবি রাখার” বিষয়টিই উল্লেখ রয়েছে। কাজেই বাতিলপন্থীরা “ছবি তোলা বা আঁকার” ক্ষেত্রে “ঘরে ছবি রাখা” সংক্রান্ত ইবারত দলীল হিসেবে উল্লেখ করে চরম জালিয়াতী ও প্রতারণার পরিচয় দিয়েছে।

তাছাড়া “ঘরে ছবি রাখা” সংক্রান্ত বিষয়ে উক্ত ইবারতে যা উল্লেখ করা হয়েছে তাও শুদ্ধ ও গ্রহণ যোগ্য নয়। বরং “ঘরে ছবি রাখা” সংক্রান্ত বিষয়ের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফায়সালা সম্পর্কে উক্ত ‘ফাতহুল বারীর’ ১০ম জিঃ ৩৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وقال ابن العربى حاصل ما فى اتخاذ الصور انها ان كانت ذات اجسام حرم بالاجماع وان كانت رقما فاربعة اقوال. الاول يجوز مطلقا على ظاهر قوله فى حديث الباب الا رقما فى ثوب الثانى المنع مطلقا حتى الرقم الثالث ان كانت الصورت باقية الهيئة قائمة الشكل حرم وان قطعت الرأس او تفرقت الاجزاء جاز قال وهذا هو الاصح الرابع ان كان بـما يمتهن جاز وان كان معلقا لم يجز.

অর্থঃ “ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “ঘরে ছবি রাখা” সংক্রান্ত বিষয়ে মূল কথা হলো, যদি তা শরীর বিশিষ্ট অর্থাৎ মূর্তি হয় তবে তা ঘরে রাখা সকলের মতেই হারাম। আর যদি (কাগজ বা কাপড়ের উপর) অঙ্কিত ছবি হয়, তবে এ ব্যাপারে চারটি মত রয়েছে- প্রথমতঃ হাদীছ শরীফে বর্ণিত

الا رقما فى ثوب

এর  ভিত্তিতে সাধারণভাবে তা জায়িয। দ্বিতীয়তঃ সাধারণভাবে না জায়িয এমনকি নকশা। তৃতীয়তঃ যদি প্রাণীর ছবির ছূরত বা আকার- আকৃতি অবশিষ্ট থাকে তবে তা ঘরে রাখা হারাম। আর যদি মাথা কাটা বা অঙ্গসমূহ ছিন্ন ভিন্ন হয়। অর্থাৎ ছবি বুঝা না যায় তবে জায়িয। তিনি বলেন, এ মতটিই অধিক ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য। চতুর্থতঃ যদি তা অসম্মানের সাথে রাখা হয় তবে জায়িয, আর যদি ঝুলিয়ে রাখে তবে নাজায়িয।” (অনুরূপ ইরশাদুস্ সারী-এর ৮ম জিঃ ৪৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)

এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহে নববী”-এর ৭ম জিঃ ৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واما اتخاذ المصور فيه صورة حيوان فان كان معلقا على حائط او ثوبا ملبوسا او عمامة و نحو ذالك مما لا يعدم ممتهنا فهو حرام.

অর্থঃ “আর ঘরে প্রাণীর ছবি রাখার বিধান হলো, যদি তা দেয়ালে ঝুলন্ত থাকে অথবা পরিধেয় বস্ত্রে থাকে অথবা পাগড়ী ও অনুরূপ সম্মানিত কোন কিছুতে প্রাণীর ছবি থাকে তবে তা হারাম।”

অনুরূপ ‘শরহুল উবাই’-এর ৭ম জিঃ ২৫৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।

উল্লিখিত নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহের ইবারতে বর্ণিত বক্তব্য দ্বারা মূলতঃ এটাই প্রমাণিত হলো যে, প্রাণীর ছবি প্রকাশ্যে ঘরে রাখা নাজায়িয, এখন তা দেয়ালেই হোক অথবা কাপড় বা অন্য কোথাও হোক।

কাজেই বাতিলপন্থীরা প্রাণীর ছবিকে প্রতারণামূলকভাবে জায়িয করার লক্ষ্যে ‘ফতহুল বারী’ থেকে যে ইবারতখানা উল্লেখ করে থাকে তা দ্বারা যেরূপ প্রাণীর ছবি তোলা বা আঁকা জায়িয প্রমাণিত হয় না তদ্রুপ তা প্রাণীর ছবি ঘরে রাখার ক্ষেত্রেও দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উল্লিখিত ইবারতে ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বরাতে যে বিষয়টা উল্লেখ রয়েছে তাও সম্পূর্ণ অশুদ্ধ, বাতিল ও পরিত্যাজ্য। যেমন, উক্ত ইবারতে উল্লেখ আছে,

..فقال النووى وذهب بعض السلف الى ان الممنوع ماكان له ظل له  وما ما لا ظل له فلا بأس باتخاذه مطلقا.

বাতিলপন্থীরা উক্ত ইবারতাংশের অর্থ করেছে এভাবে- “আল্লামা নববী বলেন, পূর্ববর্তী কতেকের মাযহাব এ ছিল যে, যেসব ছবির ছায়া নেই তা বানানো সাধারণভাবে বৈধ। আর যেসব ছবির ছায়া আছে তা নিষিদ্ধ।”

এখানে প্রথমেই যে বিষয়টা উল্লেখযোগ্য সেটা হলো, রেযাখানীরা প্রতারণামূলকভাবে নিজেদের মতকে ছাবিত করার লক্ষ্যে উক্ত ইবারতের “মনগড়া ও ভুল অর্থ” করেছে। মূলতঃ উক্ত ইবারতের সঠিক অর্থ হলো, “আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পূর্ববর্তী কারো কারো অভিমত এই যে, যেসব ছবির ছায়া রয়েছে তা ঘরে রাখা নিষেধ। আর যেসব ছবির ছায়া নেই সাধারণভাবে সেসব ছবি ঘরে রাখাতে কোন দোষ নেই।

বাতিলপন্থীরা এখানেও ঘরে ছবি রাখার বিষয়টিকে ছবি বানানো বা তৈরী করার ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে উল্লেখ করার অপচেষ্টা করেছে। যার ফলে ইবারতে “বানানোর” কথা উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও প্রতারণামূলকভাবে নিজ থেকেই অর্থের ভিতর “বানানো” শব্দটি প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে।

এরপর যে বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ্য, তাহলো “ফাতহুল বারীর” উক্ত ইবারতে হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বরাতে “ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন ছবি” সংক্রান্ত যে মতটি উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণই বাতিল মত। বাতিলপন্থীরা উক্ত বাতিল মতটিকে দলীল হিসেবে পেশ করে চরম জালিয়াতি, প্রতারণা ও ঠগবাজীর পরিচয় দিয়েছে। সাথে সাথে উক্ত ইবারতের শেষ অংশ

وهو مذهب باطل

অর্থাৎ “উক্ত মতটি বাতিল” এ অংশটুকু কেটে ফেলে দিয়ে নিজেদেরকে পুনরায় দক্ষ ইবারত চোর হিসেবে প্রমাণ করলো।

মূলতঃ “ফতহুল বারীর” উক্ত ইবারতখানা নিম্নরূপ-

..فقال النووى وذهب بعض السلف الى ان الممنوع ماكان له ظل له  وما ما لا ظل له فلا بأس باتخاذه مطلقا وهو مذهب باطل.

বাতিলপন্থীরা উক্ত ইবারতের وهو مذهب باطل এ   অংশটি কারচুপি করেছে।

ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হলো, “ছায়াযুক্ত” হোক অথবা “ছায়াহীন” হোক উভয় প্রকার ছবির একই হুকুম। অর্থাৎ উক্ত উভয় প্রকার ছবিই তৈরী যেরূপ হারাম তদ্রুপ ঘরে রাখাও নিষিদ্ধ।

যেমন, এ প্রসঙ্গে উক্ত “ফাতহুল বারী” কিতাবের ১০ খণ্ডের ৩৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

ولا فرق فى ذالك بين ما له ظل وما لا ظل له فان كان معلقا على حائط او ملبوس اوعمامة او نحو ذالك مما لا يعد ممتهنا فهو حرام.

অর্থঃ “ছায়াযুক্ত ও ছায়াহীন ছবির’ মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। যদি (উক্ত উভয় প্রকার ছবিই) দেয়ালে টাঙ্গানো থাকে অথবা পরিধেয় বস্ত্রে থাকে অথবা পাগড়ীতে থাকে অথবা অনুরূপ সম্মানিত কোন স্থানে বা বস্তুতে থাকে তবে তা হারাম।”

উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

فان استر التى انكره النبى صلى الله عليه وسلم كانت الصورة فيه بلا ظل بغير شك ومع ذالك فامر بنزعه.

অর্থঃ “নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছবিযুক্ত যে পর্দাটি অপছন্দ করেছেন নিঃসন্দেহে তার ছবিটিও ছায়াহীন ছিলো তা সত্ত্বেও তিনি তা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।”

বুখারী শরীফ-এর বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রস্থ ‘উমদাতুল ক্বারী’ কিতাবের ২২তম জিঃ ৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهو من الكبائر … ولما ما ليس فيه صورة حيوان كالشجر ونحوه فليس حرام وسواء كان فى هذا كله ما له ظل وما لا ظل له.

অর্থঃ প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ। …তবে প্রাণহীন বস্তুর ছবি যেমন, গাছপালা ইত্যাদি হারাম নয়। আর এ ব্যাপারে ছায়াহীন ও ছায়াযুক্ত ছবির একই হুকুম। অর্থাৎ উভয়টাই হারাম।”

“উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ২২তম জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

لا فرق فى تحريم التصوير بين ان تكون الصورة لها ظل او لا.

অর্থঃ “প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন” হওয়ার মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। অর্থাৎ উভয়টার একই হুকুম।”

ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত মুসলিম শরীফ-এ ব্যাখ্যাগ্রন্থ শরহুল মুসলিম কিতাবের ৭ম খ-ের ৮১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-

واذ فرق فى هذا كله بين ما له وما لا ظل له .. وقال بعض السلف انما ينهى عما كان له ظل ولا بأس بالصورة التى ليس لها ظل وهذا مذهب باطل فان الستر الذى انكر النبى صلى الله عليه وسلم الصورة فيه لا يشك احد انه مذموم وليس لصورته ظل.

অর্থঃ “প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে “ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন” হওয়ার মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই।.. সলফগণের কেউ কেউ বলেন, ছায়াযুক্ত ছবি নিষেধ। আর ছায়াহীন ছবি নিষেধ নয়। তবে এমতটি সম্পূর্ণই বাতিল। কেননা, নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছবিযুক্ত পর্দাটি অপছন্দ করেছেন। এতে কারো সন্দেহ নেই যে, এটা গুণাহর কারণ। অথচ উক্ত ছবিটিও ছায়াযুক্ত ছিলো না। অনুরূপ শরহুল উবাই ফতহুল মুলহিম, মিরকাত ও শরহুত ত্বীবীতে উল্লেখ আছে।”

“রেজভীয়া” কিতাবের ১০ম খ-ের ৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

صورت گری جاندار  مطلقا حرام است سایہ دار باشد یا بے سایہ دستی باشد یا عکسی در زمان برکت نشان سید الانس والجن صلی اللہ علیہ وسلم ہر دوگانہ تصویر می ساختند ہم بجسم وہم مسطح ودر احادیث از  مطلق صورت گری نہی اکید وہر صنعت او وعید شدید بے تخصیص وتقیید ورود یافت بس جمیع اقسام او زیر  منع در امد تصویر بے سایہ ر روا داشتن مذہب بعض روافض است.

অর্থঃ “সাধারণভাবে প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম ‘ছায়াযুক্ত’ হোক অথবা ‘ছায়াহীন’, হাতে হোক অথবা ক্যামেরায়। সাইয়্যিদুল ইন্স ওয়াল জিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় যামানায় ছায়াযুক্ত অর্থাৎ মুজাস্সাম এবং ছায়াহীন অর্থাৎ গায়রে মুজাস্সাম উভয় প্রকার ছবিরই প্রচলন ছিলো। আর হাদীছ শরীফে আমভাবে (সকল প্রকার) ছবির ব্যাপারেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে এবং তা তৈরী করার কারণে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সকল প্রকার ছবিই নিষেধের আওতায় আসবে। রাফিযী বা শিয়াদের কোন একটি দল ‘ছায়াহীন’ বা ‘শরীরবিহীন’ ছবিকে জায়িয বলে থাকে।”

উপরোক্ত ইবারতের দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ‘ছায়াহীন’ ছবি জায়িয। এটা আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত নয়। বরং এটা বাতিলপন্থীদের মত। মূলতঃ ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মত হলো ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন উভয় প্রকার ছবিই হারাম। এটাই ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত।

(অসমাপ্ত)

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১২

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক (৩০তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিন মুবারক উনাদের সম্মানিত আমল মুবারকসমূহ উনাদের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৭তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-৩১)