কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১৭

সংখ্যা: ১৮৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) পেশ করার পর ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-

২৮তম ফতওয়া হিসেবে

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

স্মরনীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই” (নাউযুবিল্লাহ)। সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই.ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে, মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই ছবি তোলা জায়িয।” (নাঊযুবিল্লাহ)। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

استحلال المعصية كفر.

অর্থাৎ, “গুণাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী।)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্যে ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুণাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইয়-এর ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.

অর্থঃ ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম, বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরাহ গুণাহর অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই, যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-এর রিযামন্দী হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পূণরায় প্রকাশ করা হলো।

পূর্ব প্রকাশিতের পর

ছবি তোলাকে হারাম ফতওয়া দিয়েও যারা ছবি তোলে শরীয়তের  দৃষ্টিতে তাদের ফায়ছালা

যারা ছবি তোলাকে হারাম ফতওয়া দিয়েও অহরহ ছবি তুলছে তাদের ফায়ছালা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসেই রয়েছে। এদের প্রসঙ্গেই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

لم تقولون ما لا تفعلون.

অর্থ: তোমরা সে কথা কেন বল যা তোমরা আমল করোনা। (সূরা ছফ-২)

শরীয়তের দৃষ্টিতে এদের প্রথম ফায়সালা হলো- এরা হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কায্যাব ও উলামায়ে ‘ছূ’। অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর যমীনে সর্ব নিকৃষ্ট প্রাণী।  এদের সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن انس رضى الله تعالى عنه  قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ويل لامتى من علماء السوء يتخذون هذا العلم تجارة يبيعونها من امراء زمانهم ربحا لانفسهم لااربع الله تجارتهم.

অর্থঃ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যে যারা উলামায়ে “ছূ” তাদের জন্য আফ্সুস অর্থাৎ তারা জাহান্নামী হবে। তারা ইলমকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতঃ তাদের যুগের শাসকদের নিকট থেকে অর্থ ও পদ লাভের প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসকল উলামায়ে ছু’দের বিরুদ্ধে এই বলে বদদোয়া করেন যে, “আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের ইলম দ্বারা দুনিয়াবী সরকারের সাথে ব্যবসা করতে চায় তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না। (কানযুল উম্মাল)

এ সকল উলামায়ে ছূ’ বা দুনিয়াদার তথা ধর্মব্যবসায়ী মৌলবীদেরকে হাদীছ শরীফে দাজ্জালে কাযযাব বা মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বলে এদের থেকে উম্মতদেরকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون ياتونكم من الاحاديث بمالم تسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.

অর্থঃ হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখবে, তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ)

শরীয়তের দৃষ্টিতে এদের দ্বিতীয় ফায়সালা হলো- তারা যদি ছবি তোলাকে হারাম জেনে ছবি তুলে থাকে তবে তারা চরম ফাসিক, কারণ ছবি তোলা শক্ত হারাম ও চরম ফাসিকী কাজ। যেমন এ প্রসঙ্গে উমদাতুল ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ৩৭৮ পৃষ্ঠা ও আজ জাওয়াজির ২য় জিঃ ৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة  الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر

অর্থঃ ‘তাওজীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম, বরং কঠোর হারামও কবীরাহ গুনাহ।

 শরহে মুসলিম লিন নববী ও ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়াহ কিতাবের ৩৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وهذه الاحاديث صريحة فى تحريم تصوير الحيوان وانه  غليظة  التحريم ايضا فيه  وما من لم يقصد بها العبادة ولمضاهاة  فهو فاسق  صاحب  ذنب كبير.

অর্থঃ উক্ত হাদীছ শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরী বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে। উক্ত কিতাবে আরও আছে, যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানিয়ে থাকে তবুও সে ফাসিক হবে এবং কবীরাহ গুণাহে গুণাহগার হবে।

মিরকাত শরহে মিশকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়াহ ৩৭৯ পৃষ্ঠা, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ ১০৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة للحيوان حرام   شديد التحريم وهو من الكبائر

অর্থঃ আমাদের মাশায়িখগণ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম ও কবীরাহ গুণাহ।

ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১ম জিঃ ৭৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

تصویر کھینچنا اور کھنچوانا جدید طریق فوٹو گرافی سے ایساہی حرام ہے جیسا کہ دستی تصویر کھینچنا اور کھینچوانا ممنوع اور حرام ہے اور رکھنا اسکا  ایسا ہی حرام ہے جیسا کہ دستی تصویر کا رکھنا ایسے فعل کا فاسق ہے اور امام بنانا اسکا حرام ہے اور  نماز اسکے پیچھے مکروہ تحریمی ہے.

অর্থঃ আধুনিক যেকোন পদ্ধতিতে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো, হাতে তৈরী করা বা তৈরী করানোর মতোই হারাম ও নাজায়িয এবং প্রাণীর ছবি রাখাও তদ্রুপ হারাম। উক্ত আমলকারী ব্যক্তি ফাসিক এবং তাকে ইমাম নিযুক্ত করা হারাম এবং তার পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো, যে ব্যক্তি ছবি তোলে বা তোলায় সে চরম পর্যায়ের ফাসিক। আর ফাসিকের পিছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী। উক্ত নামায দোহরায়ে পড়া ওয়াজিব।

আর যে সকল মাওলানা মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির খতীব পীর দরবেশ আমীর ছবি তোলাকে জায়িয বলে বা জায়িয মনে করে ছবি তোলে তারা মুরতাদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম বলা ও জানা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন এ প্রসঙ্গে আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ আছে।

استحلا المعصية كفر

অর্থাৎ, “কোন গুনাহের কাজ বা হারামকে হালাল করা বা বলা কুফরী।” (শরহে আক্বাঈদে নাসাফী)

আর যে কুফরী করে সে ঈমানদার থাকতে পারে না বরং সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তে মুরতাদের ফায়ছালা হলো- তার স্ত্রী তালাক হবে যদি বিয়ে করে থাকে এবং এক্ষেত্রে পুনরায় তওবা না করে বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবে না। আর এ অবস্থায় সন্তান হলে সে সন্তানও অবৈধ হবে। হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে যদি হজ্জ করে থাকে। সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তার ওয়ারিশ সত্ত্ব বাতিল হবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড।

কেননা হাদীছ শরীফে রয়েছে, তিন কারণে মৃত্যুদন্ড দেয়া জায়িয। যথা- ১. ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। ২. ঐ ব্যভিচারী বা ব্যভিচারীনি যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। ৩. যে অন্যায়ভাবে কাউকে ক্বতল করে তাকে।

আর মুরতাদ মারা যাবার পর যারা জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।

শরীয়তের দৃষ্টিতে এদের তৃতীয় ফায়ছালা হলো- এরা চরম মুনাফিক, ধোঁকাবাজ ও প্রতারক। কারণ এরা মুখে যা বলছে আমলে তার সম্পূর্ণ উল্টো। যা মূলতঃ সুস্পষ্ট মুনাফিকী, ধোঁকাবাজী ও প্রতারণা।  মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন-

ان المنافقين فى الدرك الاسفل من النار

অর্থাৎ “নিশ্চয়ই মুনাফিকের স্থান হবে জাহান্নামের নি¤œস্তরে।” (সূরা নিসা-১৪৫ )

আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

من غش فليس منا

অর্থাৎ, যে ধোঁকা দেয় বা প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।”

শরীয়তের দৃষ্টিতে এদের চতুর্থ ফায়ছালা হলো- পরকালে তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখিন হবে। কেননা অসংখ্য হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, যারা প্রাণীর ছবি তুলবে, তোলাবে, আঁকবে, আঁকাবে তাদের সবচেয়ে বেশী এবং কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইর-এর ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, যে ছবিগুলো তোমরা তৈরী করেছো, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দাও।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, ৮৮০পৃষ্ঠা, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ২১০ পৃষ্ঠা)

এ সম্পর্কে মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن ابى معاوية رضى الله تعالى عنه ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.

অর্থঃ হযরত আবূ মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।”

عن سعيد رضى الله تعالى عنه قال جاء رجل الى ابن عباس فقال انى رجل اصور هذه الصور فافتنى فيها فقال له ادن منى فدنا منه ثم قال ادن منى فدنا حتى وضع يده على راسه وقال انبئك بما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل مصور فى  النار يجعل له بكل  صورة صورها نفسا فيعذبه فى جهنم وقال ان كنت لا بد فاعلا فاصنع الشجر وما لا نفس له.

অর্থঃ হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট এসে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অঙ্কন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও। সে ব্যক্তি তাঁর নিকটবর্তী হল। পুনরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও। সে আরো নিকটবর্তী হলে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে এবং আল্লাহ পাক প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবিগুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে। অতঃপর ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয় তবে, গাছ-পালা বা প্রাণহীণ বস্তুর ছবি আঁক। (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ان اشد الناس عذابا يوم القيمة الذين يضاهون  بخلق الله.

অর্থঃ হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত তৈরী করবে।” (মিশকাত পৃঃ ৩৮৫)

মিশকাত শরীফ এর ৩৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।

হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মি’রাজ শরীফে যান তখন এক স্থানে দেখলেন কিছু মাওলানা মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির খতীব, পীর, দরবেশ, আমীর তাদের নাড়ি ভূড়ি বের হয়ে মাটিতে পরে আছে আর তারা তার চার দিকে চক্কর খাচ্ছে। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে  জিবরীল আলাইহিস্ সালাম! এরা কারা? এদের এ অবস্থা কেন? জবাবে হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম বলেন- ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এরা ঐ সমস্ত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, খতীব, পীর, দরবেশ, আমীর যারা মানুষকে উপদেশ দিত অর্থাৎ ওয়াজ করতো কিন্তু নিজেরা তা আ’মল করতো না, তাই তাদেরকে এ শাস্তি দেয়া হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ্

কাজেই যারা ছবি তোলাকে হারাম ফতওয়া দিয়েও নিজেরা ছবি তুলছে পরকালে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবির

ব্যবসা ও চাকরী করার হুকুম

শরীয়তের ফতওয়া হলো- হারাম জিনিষের ব্যবসা ও চাকুরী করাও হারাম, মাকরূহ জিনিষের ব্যবসা ও  চাকুরী করাও মাকরূহ। শরীয়তের দৃষ্টিতে ছবির ব্যপারে সঠিক ফায়ছালা হলো- ছবি তোলা, আকা, রাখা দেখা সবই হারাম। যেমন

শরহে মুসলিম লিন নববী ও ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্¡িয়াহ কিতাবের ৩৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

وهذه الاحاديث صريحة فى تحريم تصوير الحيوان وانه  غليظة  التحريم.

অর্থঃ উক্ত হাদীছ শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্মন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরী বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে।

قال اصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة للحيوان حرام   شديد التحريم وهو من الكبائر.

অর্থঃ আমাদের মাশায়িখগণ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম। এটা কবীরাহ গুণাহ। (মিরকাত শরহে মিশকাত, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়াহ ৩৭৯ পৃষ্ঠা, নাইলুল আওতার ২য় জিঃ ১০৫ পৃষ্ঠা)

تصویر کھینچنا اور کھنچوانا جدید طریق فوٹو گرافی سے ایساہی حرام ہے جیسا کہ دستی تصویر کھینچنا اور کھینچوانا ممنوع اور حرام ہے.

অর্থঃ আধুনিক যেকোন পদ্ধতিতে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো, হাতে তৈরী করা বা তৈরী করানোর মতোই হারাম ও নাজায়িয। (ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১ম জিঃ ৭৪২ পৃষ্ঠা)

এ প্রসঙ্গে ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ আছে,

تصاویر بنانے کا نوکری کرنا جائز نھیں.

অর্থঃ প্রাণীর ছবি তৈরী করার চাকুরী করা জায়িয নেই। (ইমদাদুল ফতওয়া ৪র্থ জিঃ, পৃঃ ১৩৮)

فوٹو گرافی کے ذریعۃ سے جانداروں کی تصویریں بنانا یا بنوانا, اسکا پیشا کرنا ناجائز ھے. کیونکہ فوٹو گراف کی تصویر بھی تصویر ہے بلکہ اعلی درجہ کی کامل تصویر ہے.

অর্থঃ ক্যামেরার দ্বারা প্রাণীর ছবি আঁকা বা করানো এবং ওটার পেশাও নাজায়িয। কেননা ক্যামেরার ছবিও উচ্চমানের পরিপূর্ণ ছবি। তাই ছবির হুকুমসমূহ ওটার উপর বর্তাবে। (কিফায়াতুল মুফতী ৯ম জিঃ, পৃঃ ২৩৪)

অতএব, ছবি তোলা যেহেতু হারাম ও নাজায়িয তাই বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, ছবির ব্যবসা ও চাকরী করাও হারাম ও নাজায়িয। কাজেই ছবির ব্যবসা ও চাকরী করার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ কখনোই হালাল হবে না। বরং তা হারাম। অথচ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,

كلوا مما فى الارض حلالا طيبا

অর্থাৎ তোমরা যমীনে যা হালাল ও পবিত্র তা ভক্ষণ কর।

আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

كل لحم نبت من السحت كانت النار اولى به

অর্থাৎ শরীরের যে গোশতের টুকরাটি হারাম খাদ্য দ্বারা পয়দা হয়েছে তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উপযুক্ত।

কাজেই যেহেতু হালাল কামাই করা ফরয। তাই যারা ছবির ব্যবসা ও চাকরীতে জড়িত তাদের প্রত্যেকের জন্যই তওবা করে এর থেকে ফিরে এসে হালাল ব্যবসা  ও চাকরী করা ফরয।

প্রাণীর ছবিযুক্ত আসবাব পত্র বই-কিতাব, পত্র-পত্রিকা, ক্রয়-বিক্রয় করার শরয়ী হুকুম

শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবিযুক্ত আসবাব পত্র,বই-কিতাব, পত্র-পত্রিকা ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করাও হারাম ও নাজায়িয।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

تعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان.

অর্থাৎ, “তোমরা নেকী ও পরহিযগারীতে সাহায্য করো। গুনাহ ও নাফরমানীতে সাহায্য করো না।” (সূরা মায়িদা-২)

تصویر یروں کا خریدنا   بیچنا ناجائز ہے خواہ وہ چھوٹی ہو یا بڑی  اور بچوں کا کھیلنی کی ہوں یا کسی غرض کے لئے. البتہ ایسی اشیاء جن میں تصویر بیچنا ا خریدنا مقصود نہ ہو جیسے دیا سلائی کے بکس کہ ان پر تصویر  بنی ہوئی ہے مگر  تصویر کی بیع و شراع مقصود نہیں ہے. تو ایسی چیزوں کی بیچنا ناجائز نہیں.

   অর্থঃ ছোট হোক বড় হোক প্রাণীর ছবি ক্রয়-বিক্রয় নাজায়িয হারাম। বাচ্চাদের খেলার জন্য অথবা যে কোন উদ্দেশ্যই হোক না কেন তা নাজায়িয। কিন্তু প্রাণীর ছবিযুক্ত এমন কোন জিনিস যার ছবি ক্রয়-বিক্রয় মাকছুদ নয়, তা ক্রয় করা নাজায়িয নয়। যেমন দিয়াশলাই যা ছবি যুক্ত কিন্তু ছবি ক্রয় করা মাকছুদ নয়, দিয়াশলাই ক্রয় মাকছুদ। (কেফায়াতুল মুফতী-৯ম জি:, পৃ:২২৩)

স্মর্তব্য যে, যেহেতু প্রাণীর ছবি ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম সেহেতু হারাম থেকে বাঁচার জন্যে নিত্য প্রয়োজনীয়  আসবাব পত্র, খবরের কাগজ, বই-পুস্তক ইত্যাদি ক্রয়ের পূর্বে যার মধ্যে প্রাণীর ছবি নেই তা ক্রয় করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টার পরও যদি ছবিবিহীন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া না যায় তখন ক্রয় কারাটা মাজূর হিসাবে গন্য হবে। কেননা জরুরত হারামকে মুবাহ্ করে দেয়।

তবে অবশ্যই ক্রয় করার পর উক্ত বস্তুর ছবিটি নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে বা ঢেকে রাখতে হবে। নচেৎ গুনাহ হবে এবং রহমতের ফেরেশতা ঘরে প্রবেশ করবে না।

প্রাণীর ছবি প্রকাশ্যে ঘরে রাখা

বা টাঙ্গানোর হুকুম

প্রাণীর ছবি প্রকাশ্যে ঘরে রাখা বা টাঙ্গানোও শরীয়তে হারাম ও নাজায়িয। কারণ নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাণীর ছবি ঘরে রাখতে নিষেধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থঃ “আমার হাবীব যা আদেশ করেন তা পালন কর, আর যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো, আল্লাহ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর-৭)

কাজেই নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতিটি আদেশ-নির্দেশ পালন করা হচ্ছে ফরয আর তার খেলাফ করাই হচ্ছে হারাম। সুতরাং প্রাণীর ছবি প্রকাশ্যে ঘরে রাখাও হারাম যেহেতু হাদীছ শরীফে তা নিষেধ করা হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে

عن ابى طلحة رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم لاتدخل الملائكة بيتا فيه كلب ولا تصاوير.

অর্থঃ হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ঐ ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করে না, যে ঘরে প্রাণীর ছবি বা কুকুর থাকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ ৮৮০ পৃষ্ঠা)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها حدثنا ان النبى صلى الله عليه وسلم لم يكن يترك فى بيته شيئا فيه تصاليب الا نقضه.

অর্থঃ হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত সকল জিনিস (থাকলে) ধ্বংস করে ফেলতেন। (বুখারী ২য় জিঃ পৃঃ৮৮০, মিশকাত পৃঃ ৩৮৫)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم من سفر وقد سترت بقرام لى على سهوة لى فيه تماثيل فلما رأه رسول الله صلى الله عليه وسلم هتكه وقال اشد الناس عذابا يوم القيمة الذين يضاهون بخلق الله. قالت فجعلناه وسادة او وسادتين. وفى رواية اخرى قالت قدم النبى صلى الله عليه وسلم من سفر وعلقت درنوكا فيه تماثيل فامرنى ان انزعه فنزعته.

 অর্থঃ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক সফর থেকে ঘরে তাশরীফ আনলেন, এবং আমি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা লাগিয়েছিলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওটা দেখে ছিঁড়ে ফেললেন, এবং বললেন, “ক্বিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত মানুষের কঠিন আযাব হবে যারা আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত সৃষ্টি করে।” অতঃপর আমি ওটা দ্বারা একটা অথবা দুইটা বালিশ বানালাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর থেকে বাড়ী ফিরলেন, এবং আমি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা পর্দা ঝুলিয়েছিলাম, হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ওটা সরিয়ে ফেলার আদেশ দিলেন, অতঃপর আমি ওটা সরিয়ে ফেললাম। (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ,পৃঃ ২০১)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كان لنا ستر فيه تمثال طائر وكان الداخل اذا دخل استقبله فقال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم حولى هذا فانى كلما دخلت فرايته ذكرت الدنيا.

 অর্থঃ হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাদের পাখীর ছবি যুক্ত একখানা পর্দা ছিল। প্রত্যেক লোক প্রবেশ করতেই উহা তাদের নজরে পড়ত। হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে পর্দাটি সরিয়ে ফেলতে বললেন। কেননা, আমি যতবার ঘরে প্রবেশ করি ততবারই ওটা দেখে আমার দুনিয়ার স্মরণ হয়। (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০০)

عن زيد بن اسلم رضى الله تعالى عنه قال حدثنى ابى انه بنى على اخيه فدخل ابن عمر. فرأى صورة فى البيت فمحاها اوحكها ثم قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول لا تدخل الملائكة بيتا فيه صورة ولا كلب.

 অর্থঃ হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন তার পিতা তার ভাই-এর জন্য একখানা ঘর নির্মান করেন। অতঃপর হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঘরে প্রবেশ করে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর তিনি ওটাকে ধ্বংস করে ফেললেন অথবা নিশ্চিহ্ন করে ফেললেন এবং বললেন আমি হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “ঐ ঘরে রহমতের ফেরেস্তা প্রবেশ করেনা, যে ঘরে প্রাণীর ছবি বা কুকুর থাকে। (মুছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা ৮ম জিঃ পৃঃ ২৯২)

عن جابر رضى الله تعالى عنه قال نهى رسول الله صلى الله وسلم عن الصورة فى البيت ونهى ان يصنع ذلك.

অর্থঃ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি রাখতে নিষেধ করেছেন এবং ওটা তৈরী করতেও নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী শরীফ ১ম জিঃ পৃঃ ২০৭)

عن عيسى بن حميد رحمة الله عليه قال عقبة الحسن قال ان فى مسجدنا ساحة فيها تصاوير قال انحروها.

অর্থঃ হযরত ঈসা বিন হুমাউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত উকবাতুল হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমাদের মসজিদে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা কাপড় রয়েছে। তখন হযরত ঈসা বিন হুমাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তুমি (মসজিদ থেকে) ওটা সরিয়ে ফেল। (মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬)

عن اسامة رضى الله تعالى عنه قال دخلت مع النبى صلى الله عليه وسلم الكعبة. فرايت فى البيت صورة فامرنى فاتيته بدلو من الماء. فجعل يضرب تلك الصورة. ويقول قاتل الله قوما يصورون ما لا يخلقون.

অর্থঃ হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে পবিত্র কা’বা ঘরে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি কা’বা ঘরের ভিতরে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলাম। অতঃপর হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুকুমে আমি পাত্রে করে পানি নিয়ে আসলাম।

হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐ ছবিগুলিতে পানি নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, “আল্লাহ্ পাক ঐ গোত্রের সাথে জ্বিহাদ ঘোষণা করেছেন, যে গোত্র এরূপ প্রাণীর ছুরত তৈরী করে। যা সে তৈরী করতে অক্ষম অর্থাৎ জীবন দিতে পারেনা।” (মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বা ৮ম জিঃ পৃঃ২৯৬, তাহাবী ২য় জিঃ পৃঃ৩৬৩)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قدم النبى صلى الله عليه وسلم من سفر وعلقت درنوكا فيه تماثيل وامرنى ان انزعه فنزعته.

অর্থঃ হযরত আয়িশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর থেকে ফিরে আসলেন। আমি প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি পর্দা টাঙ্গিয়েছিলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ওটা সরিয়ে ফেলার আদেশ দিলেন, অতঃপর আমি ওটা সরিয়ে ফেললাম। (ফাত্হুল বারী ১ম জিঃ পৃঃ ৩৮৭, উমদাতুল ক্বারী ২২তম জিঃ পৃঃ ৭২, নাসাঈ ২য় জিঃ পৃঃ ৩০০, ইবনে মাজা পৃঃ ২৬৮)

فٹو  اور تصویریں قصدا مکان میں رکھنا حرام ہیں. بلا قصد کسی اخبار یا کتاب میں رہ جائے تو یہ حرام نہیں  مگر یہ بھی مکروہ ہے.

অর্থঃ ইচ্ছাকৃতভাবে  ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি রাখা হারাম। এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি প্রাণীর ছবি কোন খবরের কাগজ অথবা বই পুস্তকে থেকে যায় তবে তা হারাম নয়, বরং তা মাকরূহ তাহরিমী। (যদি ঢেকে রাখা হয় তবে মাকরূহ হবে না) (কিফায়াতুল মুফতী ৯ম জিঃ, ২২ পৃষ্ঠা)

অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, প্রাণীর ছবি প্রকাশ্যে ঘরে রাখতে স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই নিষেধ করেছেন। কেননা যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। অর্থাৎ সে ঘর রহমত শুন্য থাকে। আর শরীয়তের নির্দেশ পালন না করার গুনাহ তো রয়েছেই।

যে ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি রয়েছে

সে ঘরে প্রবেশ করার হুকুম

নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালামসহ সকল রহমতের ফেরেশতাগণ যে ঘরে প্রাণীর ছবি ও মূর্তি থাকতো সে ঘরে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রবেশ করতেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত তা সরিয়ে ফেলা না হতো। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن عائشة رضى الله تعالى عنها انها قالت وعد رسول الله صلى الله عليه وسلم جبرائيل عليه السلام فى ساعة ياتيه فيها فجاءت تلك الساعة ولم ياته وفى يده عصا فالقاها من يده وقال من يخلف الله وعده ولارسله ثم التفت فاذا جرو كلب تحت سرير فقال يا عاشة رضى الله تعالى عنه متى دخل هذا الكلب ههنا فقالت والله ما دريت فامره به فاخرج. فجاء جبراءيل عليه السلام فقال رسول الله صلى الله  وعدتنى  فجلس  لك  فلم  تات  فقال منعنى الكلب الذى كان فى بيتك. انا لا ندخل بيتا فيه كلب ولا صورة.

অর্থঃ হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম নির্দিষ্ট সময়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ওয়াদা করলেন, কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম আসলেন না। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাতে একখানা লাঠি ছিল, তিনি ওটা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, “আল্লাহ পাক এবং তার রাসুলগণ ওয়াদা খেলাফ করেন না।” অতঃপর লক্ষ্য করলেন চৌকির নীচে একটি কুকুরের বাচ্চা। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন “হে আয়িশা ছিদ্দীক্বা এই কুকুরটি এখানে কখন প্রবেশ করল?” তিনি বললেন, আল্লাহ পাক-এর কছম আমি জানিনা। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুকুমে কুকুরটি বের করে দেয়া হলো। অতঃপর জিব্রাইল আলাইহিস্ সালাম আল্লাহ পাক-এর রাসুলের নিকট আসলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম! আপনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করার ওয়াদা করেও সাক্ষাৎ করলেন না অথচ আমি আপনার অপেক্ষায় বসে আছি। হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম বললেন, আপনার ঘরের কুকুরটি আমার প্রবেশে বাধা দিয়েছে। কেননা আমরা রহমতের ফেরেশ্তারা ঐ ঘরে প্রবেশ করিনা, যে ঘরে কুকুর বা প্রাণীর ছবি থাকে। (মুসলিম শরীফ কিতাবুল লিবাছ বাবুত তাহরীমুত তাছাবীর ২য় জিঃ পৃঃ ১৯৯)

عن على رضى الله تعالى عنه قال صنعت طعاما فدعوت النبى صلى الله عليه وسلم فجاء فدخل فراى سترا فيه تصاوير فخرج وقال ان الملكئة لا تدخلو بيتا فيه تصاوير.

অর্থঃ হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খাদ্য তৈরী করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাওয়াত দিলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে, ঘরে প্রবেশ করে প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি পর্দা দেখে, ঘর হতে বের হয়ে গেলেন। এবং বললেন, “নিশ্চয়ই ফেরেশ্তারা ঐ ঘরে প্রবেশ করেননা, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে।” (নাসাঈ শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ৩০০)।

عن خالد ابن سعيد رضى الله تعالى عنه قال دعانى ابو مسعود الى طعام فرأى فى البيت صورة فلم يدخل حتى كسرت.

অর্থঃ হযরত খালেদ ইবনে সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমাকে হযরত আবু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দাওয়াত করলেন। তিনি আবু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ঘরে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, তিনি ওটা না ভাঙ্গা পর্যন্ত ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেন না। (মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বা ৮ম জিঃ পৃঃ ২৯১)

عن جابر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم امر عمر بن الخطاب رضى الله تعالى زمن الفتح وهو بالبطحاء ان ياتى الكعبة فيمحو كل صورة فيها فلم يدخلها النبى صلى الله عليه وسلم حتى محيت كل صورة فيها.

অর্থঃ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কে হুকুম করলেন, তিনি যেন পাথর দিয়ে কা’বা ঘরের সমস্ত মূর্তিগুলি ধ্বংস করে দেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বা ঘরের মুর্তিগুলো ধ্বংস না করা পর্যন্ত কা’বা ঘরে প্রবেশ করলেন না। (আবু দাউদ ২য় জিঃ পৃঃ ২১৯)

কাজেই, যে ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি রয়েছে সে ঘর থেকে তা সরিয়ে না ফেলা পর্যন্ত সে ঘরে প্রবেশ না করাই শরীয়তের নির্দেশ।

যে ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি রয়েছে

 সে ঘরে নামায পড়ার হুকুম

যে ঘরে প্রাণীর ছবি, মূর্তি রয়েছে সে ঘরে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। অর্থাৎ মুছল্লীর সামনে পিছনে, উপরে, নীচে, ডানে-বায়ে, যেখানেই প্রাণীর ছবি, মূর্তি থাকুক না কেন তাতে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে। উক্ত নামায দোহরায়ে পড়া ওয়াজিব হবে।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه قال كان قرام لعائشة سترت به جانب بيتها, فقال النبى صلى الله عليه وسلم اميطى عنى لا تزال تصاوير. تعرض لى فى صلاتى.

অর্থঃ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর একখানা (প্রাণীর ছবিযুক্ত) পর্দা ছিল, যা তিনি তাঁর ঘরের এক পাশে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, “হে আয়িশা পর্দাটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে নাও। কারণ এর ছবিগুলো নামাজে আমার দৃষ্টি ও মন আকৃষ্ট করে।” (ফাতহুল বারী ১০ম জিঃ পৃঃ৩৯১, উমদাতুল কারী ২২তম জিঃ পৃঃ৭৪, মুজামুল মুফহারিস ৩য় জিঃ পৃঃ৪৪০, বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ৮৮১)

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال لا يصلى فى بيت فيه تماثيل.

অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “ঐ ঘরে নামাজ পড়োনা যে ঘরে প্রাণীর মূর্তি বা ছবি থাকে।” (মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬)

 عن عيسى بن حميد رحمة الله عليه قال سئل عقبة الحسن قال ان فى مسجدنا ساحة فيها تصاوير قال انحروها.

অর্থঃ হযরত ঈসা বিন হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ওকবাতুল হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমাদের মসজিদে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা কাপড় রয়েছে। তখন হযরত ঈসা বিন হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তুমি (মসজিদ থেকে) ওটা সরিয়ে ফেল। (মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬)

عن ابى عثمان رحمة الله عليه قال حدثنى لبابة عن امها وكانت تخدم عثمان بن عفان ان عثمان بن عفان كان يصلى الى تابوت فيه تماثيل فامر به فحك.

অর্থঃ হযরত আবু ওসমান রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লুবাবাহ তার মাতা হতে আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, তার মাতা হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খেদমতে ছিলেন, আর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি সিন্দুকের দিকে নামাজ পড়ছিলেন। অতঃপর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর আদেশে ওটা নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হলো। (মুছান্নিফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬)

ويكره لبس ثوب فيه تمثال روح. وان يكون فوق رأسه او بين يديه او بحذائه ان يمنة او يسرة او محل سجود.

অর্থঃ প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমী এবং নামাযীর মাথার উপর সামনে ডানে, বায়ে এবং জুতোর মধ্যে এবং সিজদার স্থানে প্রাণীর ছবি থাকলে নামায মাকরূহ তাহরিমী হবে। (রদ্দুল মুহতার ১ম জিঃ ৬৪৮ পৃঃ, ইমদাদুল ফতওয়া জাদীদ ১ম জিঃ ৪৪০ পৃঃ, দুররুল মুখতার, ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ ৩৮৬ পৃঃ, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ১ম জিঃ ১১৯ পৃঃ, তুহফাতুল আজম ৩৬ পৃঃ, নুরুদদেরায়া ২য় জিঃ ৬০ পৃঃ, খুলাছাতুল ফতওয়া ১ম জিঃ ৫৮ পৃঃ, মা’দানুল হাক্বায়িক্ব ১ম জিঃ ১৫২ পৃঃ)

ويكره ان يكون فوق رأسه فى السقف او بين يديه او بحذائه تصاوير او صورة معلقة. واشدها كراهة ان تكون امام المصلى ثم من فوق راسه. ثم على يمينه ثم على شماله ثم خلفه.

অর্থঃ নামায মাকরূহ তাহরিমী হবে যদি নামাযীর মাথার উপর, ছাদের মধ্যে অথবা সামনে অথবা জুতোর মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায় প্রাণীর ছবি থাকে এবং নামায শক্ত মাকরূহ তাহরিমী হবে প্রাণীর ছবি নামাযীর সামনে বা মাথার উপরে বা ডানে বা বায়ে বা পেছনে থাকলে। (ফতহুল কাদীর ১ম জিঃ ৩৬২ পৃষ্ঠা, আইনী শরহে হিদায়া ১ম জিঃ ৮০৭ পৃঃ, বাহরুর রায়িক ২য় জিঃ ২৭ পৃঃ, মাবছূত ১ম জিঃ ২১১ পৃঃ, হেদায়া ১ম জিঃ ১৪২ পৃঃ, শরহে বেকায়া, বেকায়া ১ম জিঃ ১২৮ পৃঃ, শরহে নেকায়া ১ম জিঃ ২১৭ পৃঃ, কিতাবুল ফেকাহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া ১ম জিঃ ২৭৮ পৃঃ, মারাকিউল ফালাহ ২৪০ পৃঃ, জামিউছ ছগীর ২৬ পৃঃ, মালাবুদ্দা মিনহু ৬১ পৃঃ, আনোয়ারে মাহমূদাহ ৫৬ পৃঃ)

جس کپڑے پرجاندار کی تصویر  ہو اسے پہن کر نماز پرنا مکروہ تحریمی ہے.     نماز کےعلاوہ بھی ایسا کپڑا پہننا ناجائز ہے. اور تصویر مصلی کی سر پر یعنی چہت میں ہو یا معلق ہو یا محل سجود میں ہو تو  نماز مکروہ تحریمی ہوگی. اور مصلی کے اگے یا داہنے یا بائیں تصویر کا ہونا اور پس پشت ہونا بہی مکروہ ہے.

অর্থঃ প্রানীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমী। নামাযের বাইরেও উক্ত কাপড় পরিধান করা নাজায়িয। এবং প্রাণীর ছবি নামাযীর মাথার উপর ছাদের মধ্যে অথবা ঝুলন্ত অবস্থায়, অথবা সিজদার স্থানে থাকলে নামায মাকরূহ তাহরিমী হবে এবং নামাযীর সামনে, ডানে, বাঁয়ে এবং পেছনে প্রাণীর ছবি থাকলেও নামায মাকরূহ তাহরিমী হবে। (বাহারে শরীয়ত ৩য় জিঃ ১২৩ পৃঃ, ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই ২০৬ পৃঃ, নূরুল হেদায়া ১ম জিঃ ১০৯ পৃঃ, সুন্নী বেহেস্তী জিওর ১ম জিঃ ৮৯ পৃঃ, আহসানুল মাসায়িল ৪২ পৃঃ, রোকনুদ্দীন ৭০ পৃঃ, আইনুল হেদায়া ১ম জিঃ ৫১২ পৃঃ ইত্যাদি)

تصویر  والے مقام میں نماز پڑہنا مکروہ تحریمی ھے. اور اسکا اعادہ واجب ھے

অর্থঃ প্রাণীর ছবিযুক্ত স্থানে নামায পড়া মাকরূহ তাহরিমী এবং উক্ত নামায দোহরানো ওয়াজিব। “কেননা আলমগীরি, ফতহুল কাদীর কিতাবে মাকরুহ-এর বয়ানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নামাযের মধ্যে মাকরূহ তাহরিমী হলে নামায দোহরানো ওয়াজিব, আর মাকরূহ তানযীহী হলে নামায দোহরানো মুস্তাহাব। (আহসানুল ফতওয়া ৩য় জিঃ ৪২৭ পৃঃ, আলমগীরি, ফতহুল ক্বাদীর ইত্যাদি)

(অসমাপ্ত)

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১২

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক (৩০তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিন মুবারক উনাদের সম্মানিত আমল মুবারকসমূহ উনাদের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৭তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-৩১)