কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১৬

সংখ্যা: ১৮৩তম স | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) পেশ করার পর ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-

২৮তম ফতওয়া হিসেবে

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

স্মরনীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই” (নাউযুবিল্লাহ)। সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই.ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে, মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই ছবি তোলা জায়িয।” (নাঊযুবিল্লাহ)। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

استحلال المعصية كفر.

অর্থাৎ, “গুণাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী।)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্যে ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুণাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইয়-এর ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.

অর্থঃ ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম, বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরাহ গুণাহর অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই, যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-এর রিযামন্দী হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পূণরায় প্রকাশ করা হলো।

পূর্ব প্রকাশিতের পর

উলামায়ে “ছূ”রা কেন ছবি তোলে ও ছবি তোলাকে জায়িয বলে

উলামায়ে ছূরা কেন ছবি তোলে এবং ছবি তোলাকে জায়িয বলে ফতওয়া দেয় তা জানতে ও বুঝতে হলে প্রথমে জানতে হবে উলামায়ে “ছূ” কারা এবং তাদের পরিচয় কি?

মূলতঃ যে সকল মাওলানা, মুহাদ্দিছ, মুফাস্সির, মুফতী, পীর, দরবেশ, খতীব, আমীর দ্বীন বিক্রি করে দুনিয়া কামাই করে অর্থাৎ দুনিয়াবী নাম-ধাম, প্রভাব, প্রতিপত্তি, টাকা-পয়সা, পদ ও ক্ষমতার লোভে প্রকাশ্যে হারাম কাজ করে হারামকে হালাল বানায় ও হালালকে হারাম বানায় তারাই মূলতঃ উলামায়ে ছূ বা ধর্মব্যবসায়ী। এদের পরিচয় হাদীছ শরীফেই রয়েছে। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে

عن زياد بن حدير رحمة الله عليه قال قال لى عمر رضى الله تعالى عنه هل تعرف ما يهدم الاسلام؟ قلت لا قال يهدمه زلة العالم وجدال المنافق بالكتاب وحكم الائمة المضلين.

অর্থঃ “হযরত যিয়াদ ইবনে হুদাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাকে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তুমি বলতে পার কি, কোন জিনিস ইসলামকে ধ্বংস করবে? আমি বললাম না (আমি জানিনা)। তখন তিনি বললেন, আলিমদের পদস্খলন, মুনাফিকদের আল্লাহ পাক-এর কিতাব নিয়ে তর্ক-বাহাছে লিপ্ত হওয়া এবং গোমরাহ শাসকদের গোমরাহীমূলক হুকুম বা আদেশ-নিষেধ। (ইসলামকে ধ্বংস করবে)।” (দারিমী শরীফ)

মূলতঃ বর্তমানে তাই দেখা যাচ্ছে, কিছু সংখ্যক তথাকথিত আলিমদের পদস্খলনের কারণে মুসলমানদের ঈমান ও আমল হুমকির সম্মুখীন। তাদের কারণে সাধারণ লোক মনে করে গণতন্ত্র ইসলামেরই অংশ, ছবি তোলা শরীয়তে জায়িয, হরতাল করা শরীয়তে নিষিদ্ধ নয়, টেলিভিশন দেখা ও  টেলিভিশনে প্রোগ্রাম করা জায়িয।’ (নাউযুবিল্লাহ)

অথচ শরীয়তের ফায়সালা হলো- হারামকে হালাল জানা আর হালালকে হারাম জানা কুফরী। অনুরূপ বিজাতীয় ও বেদ্বীনি মতবাদকে ইসলামের অংশ মনে করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তবে কি প্রমাণিত হয় না যে, তাদের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ কুফরী করে ঈমানকে ধ্বংস করছে? আর তাই তো হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

صنفان من امتى اذا صلحوا صلح الناس واذا فسدوا فسد الناس الامراء والفقهاء

অর্থঃ “আমার উম্মতের দুই সম্প্রদায়, তারা যখন ইছলাহ বা সংশোধন হবে, তখন সকল মানুষ (মুসলমান) সংশোধন হবে। আর তারা যখন পথভ্রষ্ট হবে, তখন সকল মানুষ (মুসলমান) পথভ্রষ্ট হবে, তারা হলো- ১. রাজা-বাদশা, ২. আলিম-উলামা।

বস্তুতঃ হাদীছ শরীফে এরূপ দুনিয়াদার বা পথভ্রষ্ট আলিমদের ভয়াবহ পরিণাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال ان من اشر الناس عند الله منزلة يوم القيامة عالم لاينتفع بعلمه.

অর্থঃ “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি মর্যাদার দিক থেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হবে যে তার ইলমের দ্বারা উপকৃত হয়নি।” (দারিমী শরীফ)

অতএব, যারা ইল্ম্ অনুযায়ী আমল করবে না অর্থাৎ যারা জানে ছবি তোলা ও টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করা হারাম, তারপরও ছবি তোলে ও টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে, যারা জানে গণতন্ত্র-হরতাল ইত্যাদি হারাম বা বিজাতীয় পন্থা, তারপরও তারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র চর্চা করে ও হরতাল করে। মূলতঃ উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মিছদাক তারাই অর্থাৎ তারা উলামায়ে “ছূ” বা দুনিয়াদার ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা, আর তারাই উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট।

নিম্নোক্ত ঘটনা দ্বারা আরো সুস্পষ্টভাবে উলামায়ে ‘ছূ’ বা দুনিয়াদার আলিমের পরিচয় ফুটে উঠবে।

কিতাবে উল্লেখ আছে যে, বাদশাহ শাহজাহান একবার তার দরবারী আলিমদের নিকট ফতওয়া তলব করে বললেন, আমি অসুস্থ, অসুস্থতার কারণে আমার জন্যে রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয হবে কি? দরবারী আলিমরা বাদশাহর মনোতুষ্টির জন্যেই হোক বা দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্যেই হোক, তারা ফতওয়া দিল, বাদশাহ নামদার! যেহেতু আপনি অসুস্থ আর আপনি অসুস্থ হয়ে পরলে রাজ্য অচল হয়ে পরবে। কাজেই রাজ্য ও প্রজাদের বৃহত্তর স্বার্থে আপনার জন্যে এ অবস্থায় রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয হবে। বাদশা তার দরবারী আলিমদের মৌখিক ফতওয়ায় আশ্বস্ত না হতে পেরে লিখিত ফতওয়ার নির্দেশ দিলেন। দরবারী আলিমরা বাদশাহকে এ ব্যাপারে লিখিত ফতওয়া দিল। বাদশাহ তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারলেন না। তাই তিনি বললেন, এ ফতওয়াতেও অন্যান্য আরো আলিমদের দস্তখত লাগবে। দরবারী আলিমরা তখন তাদের সমগোত্রীয় তিনশত আলিমের দস্তখত সংগ্রহ করে ফতওয়াটি বাদশাহর নিকট পেশ করলো। বাদশাহ ফতওয়াটি আদ্যপান্ত ভালরূপে পাঠ করে দেখলেন এবং বললেন যে, সেখানে তার শাহী মসজিদের যিনি খতীব, নুরুল আনোয়ার ও তাফসীরে আহমদীর ন্যায় বিশ্ববিখ্যাত কিতাবের মুছান্নিফ, তৎকালীন যামানার শ্রেষ্ঠতম আলিম, হযরতুল আল্লামা, মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দস্তখত ব্যতীত এ ফতওয়া গ্রহণযোগ্য হবে না।

তখন দরবারী আলিমরা উক্ত ফতওয়াটি হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফে নিয়ে যায় উনার দস্তখত বা সমর্থন নেয়ার জন্য। হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আমি আজ এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবো না, বরং বাদশাহ আমার মসজিদে জুমুয়ার নামায পড়তে আসেন। তাই আমি বাদশাহ ও মুছল্লীগণের সম্মুখে এ ব্যাপারে ফতওয়া দিব। অতঃপর জুমুয়ার দিন বাদশাহ তাঁর উযীর-নাযীরসহ জুমুয়ার নামায পড়ার জন্য মসজিদে গেলেন । অনেক মুছল্লীও উপস্থিত হলেন এবং দরবারী আলিমরাও উপস্থিত। সকলেই অপেক্ষা করছে হযরত মোল্লাযিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ফতওয়া শোনার জন্য। ইতোমধ্যে হযরত মোল্লা যিয়ূন রহমতুল্লাহি আলাইহি মিম্বরে উঠে বসলেন নছীহত করলেন এবং শেষ পর্যায় সমবেত সকল মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমার নিকট তিনশত আলিমের দস্তখত সম্বলিত একটি ফতওয়া এসেছে। যাতে বলা হয়েছে যে, বৃহত্তর স্বার্থে, বাদশার অসুস্থতার কারণে, বাদশার জন্যে রেশমী কাপড় পরিধান করা জায়িয।  আর এ ব্যাপারে আমার ফতওয়া হলো-

مفتی  اور مستفتی ہردو کافراند

অর্থঃ- “যারা এ ফতওয়া দিয়েছে এবং যে ফতওয়া চেয়েছে উভয়েই কাফির হয়ে গেছে।”

কারণ, ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। হারাম হারাম হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে গেছে এবং হালাল হালাল হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে গেছে। তাই শরীয়তের দৃষ্টিতে হারামকে হালাল আর হালালকে হারাম বলা কাট্টা কুফরী। যারা বলবে তারা কাট্টা কাফির হবে।

উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা উলামায়ে ‘ছূ’ তথা দুনিয়াদার বা ধর্মব্যবসায়ী মাওলানাদের মুখোশ সুস্পষ্টভাবেই উন্মোচিত হলো।

অর্থাৎ, যারা দুনিয়াবী ফায়দা লাভের জন্য মনগড়া ফতওয়া দেয়, নফসের অনুসরণ করে, শরীয়তের খিলাফ কাজ করে, এককথায় না হক্ব বা হারামের উপর দৃঢ়চিত্ত, তারাই উলামায়ে ‘ছূ’ বা দুনিয়াদার তথা ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা। আর তারাই উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক। আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه  قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ويل لامتى من علماء السوء يتخذون هذا العلم تجارة يبيعونها من امراء زمانهم ربحا لانفسهم لااربع الله تجارتهم.

অর্থঃ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যে যারা উলামায়ে “ছূ” তাদের জন্য আফ্সুস অর্থাৎ তারা জাহান্নামী হবে। তারা ইলমকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতঃ তাদের যুগের শাসকদের নিকট থেকে অর্থ ও পদ লাভের প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসকল উলামায়ে ছু’দের বিরুদ্ধে এই বলে বদদোয়া করেন যে, “আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের ইলম দ্বারা দুনিয়াবী সরকারের সাথে ব্যবসা করতে চায় তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না। (কানযুল উম্মাল)

এ সকল উলামায়ে ছূ’ বা দুনিয়াদার তথা ধর্মব্যবসায়ী মৌলবীদেরকে হাদীছ শরীফে দাজ্জালে কাযযাব বা মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বলে এদের থেকে উম্মতদেরকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।  যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجلون كذابون ياتونكم من الاحاديث بمالم تسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.

অর্থঃ হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, উলামায়ে ছূ বা ধর্মব্যবসায়ী মৌলবীরা মূলতঃ দুনিয়ার মোহ বা লোভে অর্থাৎ টাকা-পয়সা, পদ ও ক্ষমতার লোভেই তারা আজ ছবি তোলাকে জায়িয বলছে এবং নিজেরা  ছবি তুলছে। অর্থাৎ তারা দ্বীন বিক্রি করে দুনিয়া কামাই করছে। কাজেই এসকল উলামায়ে ছূ বা ধর্মব্যবসায়ীদের ধোঁকা থেকে আমাদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করতে হবে। এদের থেকে দূরে থাকতে হবে।

অতীতে এবং বর্তমানে যে সকল মাওলানারা ছবি তুলেছে এবং তুলছে তাদের তালিকা

ইসলাম বা শরীয়তের দৃষ্টিতে ছবি তোলা সম্পূর্ণরূপে হারাম হওয়ার পরও আমাদের দেশের ও দেশের বাইরের অনেক মাওলানা, মুফাসসির, মুফতি, মুহাদ্দিছ, ফক্বীহ, খতীব, আমীর, পীর, দরবেশ, দাবীকারীরা ছবি তুলেছে এবং তুলছে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো- নিজেদেরকে হক্কানী বলে দাবীদার দেওবন্দী জামাত, মওদুদী জামাত ও রেযাখানী জামাত-এর প্রায় প্রত্যেকেই ছবি তুলে থাকে। অথচ তাদের মুরুব্বী ও তাদের ফতওয়া হচ্ছে ছবি তোলা হারাম। অর্থাৎ তাদের মুরুব্বীরা এবং তারা নিজেরা ছবি তোলাকে হারাম ফতওয়া দেয়ার পরও তারা ছবি তুলছে। অবশ্য তাদের মধ্যে কেউ কেউ কুরআন-সুন্নাহ-এর অপব্যাখ্যা করে ছবি তোলাকে জায়িয করারও চেষ্টা করছে।

ছবি সম্পর্কে দেওবন্দী মুরুব্বীদের ফতওয়া

تصویر کھینچنا اور کھنچوانا جدید طریق فوٹو گرافی سے ایساہی حرام ہے جیسا کہ دستی تصویر کھینچنا اور کھینچوانا ممنوع اور حرام ہے اور ر کھنا اسکا  ایسا ہی حرام ہے جیسا کہ دستی تصویر کا رکھنا ایسے فعل کاعامل فاسق ہے اور امام بنانا اسکا حرام ہے اور  نماز   اسکے پیچھے مکروہ تحریمی ہے.

অর্থঃ আধুনিক যেকোন পদ্ধতিতে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো, হাতে তৈরী করা বা তৈরী করানোর মতোই হারাম ও নাজায়িয এবং প্রাণীর ছবি রাখাও তদ্রুপ হারাম। উক্ত আমলকারী ব্যক্তি ফাসিক এবং ইমাম নিযুক্ত করা হারাম। এবং তার পিছনে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১ম জিঃ ৭৪২ পৃষ্ঠা)

جاندار کی تصویر بنانا اور بنوانا ناجائز  اور حرام ہے خواہ دستی  ہو یا عکسی ہو دونو  تصویر ہیں اور تصویر کا حکم رکتھی ہیں.

অর্থঃ প্রাণীর ছবি তৈরী করা এবং তৈরী করানো নাজায়িয এবং হারাম, চাই হাতে হোক অথবা অন্য কোন পদ্ধতিতে হোক উভয়ের একই হুকুম অর্থাৎ উভয়ই ছবি। (কিফায়াতুল মুফতী ৯ম জিঃ ২২৮ পৃষ্ঠা)

فوٹو  گرافی کے ذریعہ سے جانداروں کی    تصویر یں بنانا یا بنوانا اسکا پیشا کرنا  ناجائز  ہے کیونکہ فوٹو گرافی کی تصویر بھی تصویر ہے بلکہ اعلی درجہ کی کامل تصویر ہے.

অর্থঃ ক্যামেরার দ্বারা প্রাণীর ছবি তোলা, বানানো, আঁকা বা করানো এবং ওটার পেশাও নাজায়িয। কেননা ক্যামেরার ছবিও উচ্চমানের পরিপূর্ণ ছবি। তাই ছবির হুকুমসমূহ ওটার উপর বর্তাবে। (কিফায়াতুল মুফতী ৯ম জিঃ ২৩৪ পৃষ্ঠা)

بعض لوگ سمجھتے ہیں کہ حدیث میں جس تصویر کشتی کی ممانعت ہے وہ ہاتھو سے جو تصویر  بنانے کے متعلق ہے اور کیمرہ سے جو تصویر  اتاری جاتی ہے یہ خیال غلط اور فاسد ہے اصل مقصد تصویر  بنانے کی حرمت ہے خواہ کسی آلہ سے بنائی جائے.

অর্থঃ কিছু লোকের ধারণা, হাদীছ শরীফে হাত দ্বারা প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম করা হয়েছে; ক্যামেরার দ্বারা নয়। এটা তাদের ভুল এবং ভ্রান্ত ধারণা। মূলতঃ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রাণীর ছবি হারাম হওয়াই মূল উদ্দেশ্য ওটা যে পদ্ধতিতেই হোক না কেন। (তোহফায়ে খাওয়াতীন ৯১২ পৃষ্ঠা)

جیسے قلم سے تصویر کھینچنا ناجائز ہے ایسے ہے فوٹو سے تصویر بنانا پریس پرچھاپنا یا سانچھہ اور مشین وغیرہ میں دھالنا بھی ناجائز ہے.

অর্থঃ কলম দ্বারা যেরূপ প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয (ও হারাম) তদ্রুপ ক্যামেরা, প্রেস, ছাঁচ, মেশিন ইত্যাদির দ্বারাও প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয (ও হারাম) (জাদীদ মাসায়িল কে শরয়ী আহকাম ৪৪ পৃষ্ঠা)

ছবি সম্পর্কে জামাতী মুরুব্বীদের ফতওয়া

প্রশ্ন: আমার এক ফটোগ্রাফার বন্ধুর ধারণা, ইসলামে ‘তসবীর’ (চিত্র) সংক্রান্ত যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা ফটোর ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়, বিশেষ করে অশ্লীল দৃশ্যের ফটো যদি তোলা না হয়। এ সীমারেখার প্রতি দৃষ্টি রেখে ফটোগ্রাফীকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে কি? জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং সভা সমিতির ফটো তোলাতে কোনা দোষ আছে কি?

মওদুদীর জবাবঃ ফটো সম্পর্কে এই নীতিগত কথাটা বুঝে নেয়া দরকার যে, সাধারণভাবে ইসলাম প্রাণসম্পন্ন জীবের ছবি চিত্র সংরক্ষণকে প্রতিরোধ করতে চায়। কেননা মানব ইতিহাসের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, এই ছবি চিত্রই অধিকাংশ ফিতনা ও বিপর্যয়ের কারণ হয়েছে। যেহেতু সেটা সংরক্ষণ করাটাই ফিতনার মূল কারণ। সেহেতু সেটা কোন পন্থায় সংরক্ষণ করা হবে সে বিষয়ে আলোচনার কোন প্রশ্নই ওঠেন্ াপদ্ধতি যেটাই হোক, সর্বাবস্থায় তা নাজায়েযই থাকবে।

কেননা সবগুলো পন্থাই মূল ফিতনা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সমভাবে কার্যকর। এ ব্যাপারে ফটোগ্রাফি এবং চিত্রাঙ্কনের মধ্যে কোনা পার্থক্য করা যেতে পারেনা। আর নিষেধাজ্ঞা যেহেতু প্রাণীর ছবি চিত্রের ক্ষেত্রে, এ জন্যে সর্বপ্রকার ছবি চিত্রই হারাম। চাই তা অশ্লীল হোক কিংবা না হোক। অবশ্য অশ্লীল ছবি চিত্র হারাম হওয়ার একটি অতিরিক্ত কারণ রয়েছে। …….

….. নেতৃবৃন্দ ও সভা মিছিলের ছবি চিত্র কোনো অবস্থাতেই ‘বৈধ’ এবং ‘প্রকৃত প্রয়োজনের‘ সংজ্ঞায় পড়েনা। বিশেষ করে নেতৃবৃন্দের ছবি তো খোদার বান্দাদের সেই মহাবিপদের নিকটবর্তী করে দেয়,  যে কারণে ছবি চিত্রকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

এই যে কংগ্রেসের সভায় গান্ধীর বায়ান্ন ফুট লম্বা ছবি স্থাপন, রাশিয়া কর্র্তৃক পোল্যান্ড দখল করার পর পোল্যান্ডের প্রতিটি জনপথে স্টালিনের চিত্র স্থাপন, রাশিয়ার প্রতিটি স্থানে লোকদের মাথার উপর স্টালিন এবং পলিট ব্যুরোর সদস্যদের ছবি স্থাপন, জার্মান সৈনিকদের বুকে হিটলারের ছবি লাগিয়ে রাখা এবং হাসপাতালে মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত সেই ছবি চোখে লাগিয়ে জীবন উৎসর্গ করা, সিনেমা হলে ব্রিটিশ রাজ্যের ছবি উদিত হওয়া এবং সাথে সাথে লোকদের দাঁড়িয়ে যাওয়া, শাসন কর্তৃত্বের নিদর্শন স্বরূপ মুদ্রার গায়ে সম্রাটের চিত্র অংকন করা, এসবই কী মূর্তি পূজার উৎসমূল নয়? ইসলাম এজন্যেই ছবি চিত্র হারাম করেছে. যাতে করে লোকদের মন মগজে আল্লাহ ছাড়া আর কারো শ্রেষ্ঠত্বের চিত্র অঙ্কিত না হতে পারে।

আমি (মওদুদী) তো এজন্যে ছোট বাচ্চাদের ছবি তোলাও অবৈধ মনে করি যে, ভবিষ্যতে হয়তো এদের কাউকে খোদা বানিয়ে নেয়া হবে এবং এসব ছবিই ফিতনার কারণ হয়ে বসবে। আজ পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণের বাল্যচিত্রের পূজা চলছে।

সুতরাং আপনি আপনার বন্ধুকে জানিয়ে দিন যে, শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে তার পেশা বৈধ নয়। তিনি যদি খোদাকে ভয় করেন তবে যেনো ক্রমান্বয়ে এ পেশা ত্যাগ করে অন্য কোনা উপর্জন মাধ্যম গ্রহণ করেন। আর তিনি যদি এ কাজেই করতে চান, তবে যেনো এটাকে হালাল আখ্যায়িত করার চেষ্টা না করেন।

অনৈতিক অধঃপতনের নিকৃষ্ট পর্যায় হলো, মানুষ যে গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে, মিথ্যা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দ্বারা সেটাকে সঠিক ও বৈধ আখ্যায়িত করে। এই গর্তে নিমজ্জিত হবার পর কোনো ব্যক্তির সেখান থেকে উঠে আসার সম্ভাবনা থাকেনা।

বিজ্ঞাপনের ছবিঃ

প্রশ্নঃ আজকাল বিজ্ঞাপনের ক্যালে-ার প্রভৃতিতে নারীদের ছবি ব্যবহারের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়েছে। এছাড়া খ্যাতিমান ব্যক্তি এবং জাতীয় নেতাদের ছবিও অনুরূপভাবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া বাণিজ্যিক জিনিসপত্রের ডিব্বা, বোতল এবং প্যাকেটের উপরও অনুরূপ ছবি ব্যবহার করা হয়। এরূপ বিভিন্ন প্রকার ছবির দাপট থেকে একজন মুসলমান ব্যবসায়ী কিভাবে নিজেকে রক্ষা করতে পারে?

মওদুদীর জবাবঃ আপনি নিজে যদি কোনো বিজ্ঞাপন কিংবা ক্যালেন্ডার ছাপেন তবে তা ছবি মুক্ত রাখবেন।

আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যদি ক্যালেন্ডার প্রভৃতি ব্যবহার করতে হয তবে প্রথমত ছবি বিহীন ব্যবহার করবেন , নতুবা ছবি ঢেকে রাখবেন কিংবা মুছে ফেলবেন। কিন্তু ডিব্বা, বোতল এবং প্যাকেটের ছবি তো সব আর আপনি মুছে ফেলতে পারবেন না। বর্তমান ছবিপূজারী বিশ্ব তো কোনো জিনিসকে ছবি মুক্ত না রাখার ব্যাপারে কসম খেয়ে বসেছে। ডাক টিকেট এবং মুদ্রার উপর পর্যন্ত ছবি ব্যবহার করা হয়। এ সর্বগ্রাসী তাগুতী জীবন ব্যবস্থা নিজের অপবিত্রতা ও নোংরামীকে শিকড় থেকে শাখা প্রশাখা এমনকি পত্র পল্লব পর্যন্ত  ছড়িয়ে দিচ্ছে। বাস, নিজের সাধ্যের সীমা পর্যন্ত নিজে আত্মরক্ষা করুন।” (মওদুদী লিখিত রাসায়েল ও মাসায়েল ২৩৩ পৃষ্ঠা)

ছবি সম্পর্কে রেযাখানী মুরুব্বীর ফতওয়া

রেজভিয়া কিতাবের ১০ম খণ্ডের ৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

دستی باشد یا عکسی در زمان برکت نشان سید الانس والجن صلی اللہ علیہ وسلم ہر دوگانہ تصویر می ساختند بم بجسم وبم مسطح ودر احادیث از مطلق صورتگری نہی اکید  وبر صنعت او وعید شدید بے تحصیص وتقیید  ورود  یافت بس جمیع  اقسام او زیر منع در امد تصویر بے سایہ را روا داشتن مذ ہب بعض روافض است.

অর্থঃ সাধারণভাবে প্রাণীর ছবি তৈরী করা হরাম ‘ছায়াযুক্ত’ হোক অথবা ‘ছায়াহীন’, হাতে হোক অথবা ক্যামেরায়। সাইয়্যিদুল ইন্স ওয়াল জিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় যামানায় ছায়াযুক্ত অর্থাৎ মুজাস্সাম এবং ছায়াহীন অর্থাৎ গায়রে মুজাস্সাম উভয় প্রকার ছবিরই প্রচলন ছিলো। আর হাদীছ শরীফে আমভাবে (সকল) ছবির ব্যাপারেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে এবং তা তৈরী করার কারণে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সকল প্রকার ছবিই নিষেধের আওতায় আসবে। রাফিযী বা শিয়াদের কোন একটি দল ‘ছায়াহীন’ বা ‘শরীরবিহীন’ ছবিকে জায়িয বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

রেজভিয়া কিতাবের ১০ম খণ্ডে উল্লেখ আছে,

“علامہ شامی در  ردالمحتار فرماید  فعل التصویر غیر جائز مطلقا  لانہ مضاہاۃ لخلق اللہ تعالی  بمدراں از  “بحر الرائق است صنعہ حرام بکل حال لان فیہ مضاہاۃ لخلق اللہ تعالی…وچوں علت تحریر مشابہت بخلق الہی ست  تفاوت نمی کند…”

অর্থঃ আল্লামা শামী “রদ্দুল মুহতারে” উল্লেখ করেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয। কেননা এটা স্রষ্টার সাদৃশ্যতা দাবী করার নামান্তর। অনুরূপ “বাহরুর রায়িকে” উল্লেখ আছে যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা প্রত্যেক অবস্থাতেই হারাম। কেননা এতে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে।… যেহেতু ছবি হারাম হওয়ার কারণ হলো স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যতা। তাই পার্থক্য করা যাবেনা (বরং সব ধরণের ছবিই হারাম)…।

ছবি সম্পর্কে হাটহাজারীর ফতওয়া

‘মাসিক মুইনুল ইসলাম’-এর মে-২০০৮ ঈসায়ীর ‘শীর্ষ প্রতিবেদনঃ কথিত ছবি তোলার শরয়ী বিধান’ শীর্ষক নিবন্ধটি তুলে ধরা হলো-

সমস্যাঃ  আমরা দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে শুনে আসছি, মুফতী সাহেবগণ ও বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম ছবি তোলাকে নাজায়েয, হারাম ও কবীরা গুনাহ বলে আসছেন। … কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন মাদ্রাসার বার্ষিক সম্মেলনে, ওয়াজ মাহফিলে, জনসমাবেশে আলোচক ও শ্রোতাম-লীর ছবি তোলা হচ্ছে।

যেমন, গত ১৪২৬ হিজরী সনে এদেশের একটি নামকরা দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক সম্মেলনে পবিত্র জুমার দিনে আল্লাহ্র ঘর মসজিদে জুমার নামাজের উদ্দেশ্যে সমবেত মুসল্লিদের ভিডিও করা হয়। উপস্থিত সবাই দেখা সত্ত্বেও কেউ তাতে বাধা দেয়নি। তবে দ্বীনদার শ্রেণীর মধ্যে যারা ছবি তোলা জায়েয বলে থাকেন তারা ব্যতীত অন্যান্য উলামায়ে কেরাম পরবর্তীতে নিন্দা জানান। গত ১৪২৭ হিজরী সনে এদেশের এক প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতবার্ষিকী মহাসম্মেলন ও দস্তারবন্দী মাহফিলে ছবি তোলা হয়। … এমনিভাবে গত কয়েক বছর আগে এদেশের একটি বড় মাদ্রাসায় বাংলা ও ইংরেজী বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে ছবি তোলা হয়। এতে উপস্থিত কোন কোন মুফতী ছাহেব নিজেদের ছবি তুলতে দেন। আর আকাবিরগণ এতে বাধা প্রদান করেন এবং যে ছাত্ররা এতে জড়িত ছিল তাদের কাছ থেকে তাওবানামা নেন এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ করান। এছাড়া এ বছর অনুষ্ঠিত এদেশের এক বড় মাদ্রাসার অর্ধশত বার্ষিকী মহাসম্মেলন ও দস্তারবন্দী মাহফিলে ছবি তোলা হয় এবং ভিডিও করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় কেউই তাতে বাধা দেয়নি। এসব ঘটনাবলী দেখে আমাদের মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে, যার জবাব পেতে চাই।

প্রশ্নঃ মানুষের ছবি তোলা কি জায়েয? যদি জায়েয হয় তাহলে সর্বঐক্যমতো সবার স্বাক্ষরসহ জায়েয হওয়ার ফতোয়া চাই। আর যদি নাজায়েয বলে ফতোয়া দেয়া হয়, তাহলে জানতে চাই প্রকাশ্যে, জনসম্মুখে উলামায়ে কেরামের সামনে কেন নাজায়েয আমল হয়? বিশেষ করে মাদ্রাসা সমূহের মুফতীবৃন্দ ও মুহতামিম সাহেবদের অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য যে, তারা হয়তো এ মাসআলার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিবেন, তা না হলে এ মাসআলার উপর আমল করতে নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করবেন। যেন দেশী-বিদেশী মুসলমানদের মধ্যে এ ভুল ধারণা না জন্মে যে, এদেশের উলামায়ে কেরাম ছবি তোলাকে জায়েয মনে করেন।

মুফতী সাহেবের নিকট বিনীত নিবেদন, উক্ত সমস্যার সমাধান দলীল সহকারে এবং দ্রুত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।

বিনীত চট্টগ্রাম শহরের কয়েকজন

ধর্মপ্রাণ মুসলমান

সমাধানঃ ছবি আঁকা, ছবি তোলা বা ফটোগ্রাফিতে যেহেতু আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিগুণের সাদৃশ্য অবলম্বনের চেষ্টা ও ধৃষ্টতা প্রকাশ পায়, তাই ইসলামী শরীয়তে এগুলোকে নাজায়েয বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ছবি হাতে আঁকা হোক বা ক্যামেরার মাধ্যমে তোলা হোক, তা শরীয়তে নিষিদ্ধ ‘তাছবীর’ বলেই গণ্য হবে। পদ্ধতির ভিন্নতা তার প্রকৃতি বা হুকুমের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না। তবে এখানে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছবির দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, জীবের ছবি। সেটা মানুষেরই হোক বা অন্য কোনো প্রাণীর। অর্থাৎ পশু পাখি, জীব জানোয়ার, সব ধরণের প্রাণীর ছবিই নিষিদ্ধ ও হারাম। … প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করতে হয়, কোনো কোনো মিসরী আলেম ক্যামেরায় তোলা ছবিকে জায়িয বলেছেন। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ দেহের অর্ধাংশের ছবিকে জায়েয বলেছেন। কিন্তু সেখানকার অন্যান্য উলামায়ে কেরাম ও মুফতীবৃন্দ ছবি আঁকা ও ছবি তোলাকে নাজায়েয বলে দৃঢ় মত ব্যক্ত করেছেন। এবং প্রথম দু’পক্ষের মতকে অগ্রহণযোগ্য ও ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখান করেছেন। আর পাক ভারত উপমহাদেশের মুফতীবৃন্দ ও বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম ছবি আঁকা ও ছবি তোলা শরীয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ ও হারাম বলে ফতওয়া দিয়েছেন।

… কিন্তু মাদ্রাসার বার্ষিক সম্মেলন ও তাফসীর মাহফিলে আলোচক ও শ্রোতাদের এবং মসজিদের মুসল্লিদের ছবি তোলা শরয়ী প্রয়োজনের আওতায় পড়েন

এমনভিাবে বিভিন্ন মাদ্রাসার হেফজখানা ও এতিমখানার ছাত্র-শিক্ষকদের যে ছবি তোলা হয় এবং ভিডিও করা হয় সে ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কারণ, এসব ক্ষেত্রে ছবি তোলা হয় বা ভিডিও করা হয় কোনো শরয়ী প্রয়োজন ছাড়াই, হয়তো ফ্যাশনের জন্য, নয়তো চাঁদা আদায়ের লক্ষ্যে, তাই তা নাজায়েয ও হারাম। যে সকল উলামায়ে কেরামের সামনে ছবি তোলা হয় বা ভিডিও করা হয় তাদের মধ্যে অধিকাংশ আলেমই এর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ ও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন। এরা তো তাদের ঈমানী দায়িত্ব পালন করে দায়মুক্ত হয়ে যান। এমনকি তাদের অজ্ঞাতসারে কিংবা অসম্মতি সত্ত্বেও যদি ছবি তোলা হয়ে থাকে তাহলে তারা গুনাহগার হবে না। বরং যে ব্যক্তি ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে বা যারা নিজেদের ছবি তোলার কারণে খুশি হয়েছে কিংবা তাতে সম্মতি প্রকাশ করেছে তারা গুনাগার হবে।

আর যে সকল উলামায়ে কেরামের সামনে ছবি তোলা সত্ত্বেও তারা এর বিরোধিতা করেন না, তারা মোটামুটি তিন শ্রেণীর। (১) যারা কাজটিকে ভাল মনে করেন না, জায়েযও মনে করেন না। কিন্তু অন্যায়কে অন্যায় বলার সৎ সাহসটুকু না থাকায় তারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও এ নাজায়েয কাজটিকে নীরবে মেনে নিচ্ছেন। এ শ্রেণীর উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব হচ্ছে, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানের অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্বটি পালন করা।

মুসলিম শরীফের ঈমান অধ্যায়ে আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখে, সে যেন তাতে হাতের দ্বারা বাধা প্রদান করে। যদি তাতে সক্ষম না হয়, তাহলে যেন যবান দ্বারা বাধা দেয়। আর যদি তাও না পারে তাহলে সে যেন অন্তত সেই কাজকে ঘৃণা করে। আর এটাই হচ্ছে ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর। এ হাদীছের ব্যাখ্যায় মুসলিম শরীফের ভাষ্যকার আল্লামা নববী (রাহ.) বলেছেন, কেউ যদি অন্যায় কাজ হতে দেখার পরও এ ধারণা করে তাতে বাধা না দেয় যে, বাধা দিয়ে লাভ নেই, অন্যায়কারী তার অন্যায় কাজ চালিয়েই যাবে, তারপরও সে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধা প্রদানের অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব থেকে দায়মুক্ত হতে পারবে না। বরং এক্ষেত্রে তার কর্তব্য হচ্ছে, অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করা, অন্যায়কারী তার অন্যায় কাজ থেকে ফিরে আসুক বা না আসুক। (মুসলিম শরীফ- ১/৬৯)

(২) এ শ্রেণীর উলামায়ে কেরামের মতে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে দিলে কিংবা টিভি সাংবাদিকদের ছবি তুলতে দিলে কিংবা টিভি সাংবাদিকদের ভিডিও করতে দিলে দ্বীনি সভা সম্মেলন ও ওয়াজ মাহফিল ব্যাপক প্রচারণা পাবে। এতে দ্বীনের দাওয়াতের কাজটি ব্যাপকভাবে গতিশীল হবে। তাই ছবি তোলা নাজায়েয ও হারাম হলেও দ্বীনি জরুরতের খাতিরে এসব ক্ষেত্রে জায়েয বলে গণ্য হবে।

এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় এ শ্রেণীর আলেমগণ হয়তো দ্বীনের মৌলিক নীতিমালা সম্পর্কে অজ্ঞ। নয়তো তাদের এ কর্মকা- দ্বীনের প্রতি শৈথিল্য প্রদর্শনের নামান্তর। ছবি তোলার মাসআলার ক্ষেত্রে তাদের কথা বা কাজ দলীল হতে পারে না। তাদের কর্তব্য হচ্ছে, ভালভাবে উসূলে ফেক্বহ দেখা, নয়তো ফেক্বাহ ও উসূলে ফেক্বাহ শাস্ত্রের বিজ্ঞ ফক্বীহগণের কাছ থেকে মাসআলা বুঝে নেয়া। অন্যথায় তারা গুনাহ থেকে বাঁচতে পারবেন না।

(৩) আরেক শ্রেণীর উলামায়ে কেরাম বেপরোয়াভাবে ছবি তোলাকে জায়েয বলেন। তাদের যুক্তি হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে ক্যামেরা ছিল না। আর তিনি ক্যামেরার ছবিকে নিষিদ্ধও করেননি। তাই দ্বীনি সভা-সম্মেলন ও ওয়াজ-মাহফিলে ছবি তোলা ও ভিডিও করা নাজায়িয নয়।

এ শ্রেণীর উলামায়ে কেরামের প্রতি অনুরোধ রইল, তারা যেন নিজেদের মন ও প্রবৃত্তিকে মুফতী না বানিয়ে সমকালীন বিজ্ঞ ফক্বীহ ও মুফতীগণের কাছ থেকে মাসআলা ভালভাবে বুঝে নিয়ে আমল করেন। আর যেন আল্লাহ পাককে ভয় করেন। জনগণের মাঝে বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে নিজেও গোমরাহ না হন, অন্যদেরকেও গোমরাহ করার চেষ্টা না করেন। নয় তো হাদীছ শরীফে ‘তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয়েছে, অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করেছে’ বলে যে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে, তার শিকার হবেন।

মোটকথা, কুরআন-হাদীছের আলোকে সাহাবায়ে কেরাম,তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, চার মাজহাবের ইমামগণ ও হক্কানী উলামায়ে কেরাম ছবি তোলাকে নাজায়েয, হারাম ও কবীরাহ গুনাহ বলেছেন। বিশেষ করে হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে কঠোর মনোভাব পোষণ করেন। উপমহাদেশের বড় বড় মাদ্রাসা ও ফতোয়া বিভাগের মুফতীবৃন্দ ছবি তোলাকে নাজায়েয বলেই ফতেয়া দিয়েছেন। আমাদের আকাবিরগণের মতও এটাই। তাই আমরাও এ মাসআলার একই সমাধান দিচ্ছি।” (সূত্রঃ মাসিক মুহীনুল ইসলাম, মে/২০০৮)

ছবি সম্পর্কে মাওলানা আজীজুল হকের ফতওয়া

৪৫ বাংলাবাজার হাছানিয়া লাইব্রেরী থেকে ১৯৯৯ সালে আগস্ট মাসে প্রকাশিত তথাকথিত শাইখুল হাদীছ মাওলানা আজিজুল হক রচিত “কোরআন হতে বিজ্ঞান” নামক কিতাবের ২৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, “কারো কারো একথা বলা নিশ্চয়ই ভ্রান্ত যে, ফটো চিত্র নয় বরং ছায়া ও প্রতিবিম্ব, যেমন, আয়না ও পানি ইত্যাদিতে দেখা যায়। সুতরাং আয়নাতে নিজেকে দেখা যেমন জায়িয, ফটোও ঠিক তেমনি জায়েয। এর সুস্পষ্ট জাওয়াব হলো, প্রতিবিম্ব ততক্ষণ পর্যন্ত থাকে, যে কোন উপায়ে বদ্ধমূল ও স্থায়ী করে নেওয়া না হয়। যেমন পানি বা আয়নাতে যে প্রতিবিম্ব দেখা দেয়, বিপরীত দিকে থেকে সরে গেলে তা আর থাকে না। কিন্তু কোন ঔষধ বা পাউডারের সাহায্যে যদি সেই প্রতিবিম্বকে স্থায়ী করে দেওয়া হয়, তবে একেই চিত্র বলা হবে, এরই নিষেধাজ্ঞা মুতাওয়াতির হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে। পাখির আকৃতি বানানো প্রকৃতপক্ষে চিত্রই এবং তা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের শরীয়তে জায়েয ছিল, আমাদের শরীয়তে এর বৈধতা রহিত করা হয়েছে।

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান শাইখুল হদছ মাওলানা আজিজুল হকের মুখোমুখি হই ২৪ আগস্ট/৯৭। তার আজিমপুরের বাসায় সকাল ৭.৩০ মিনিটে। সাক্ষাতকারের শুরুতে আজীজুল হক্বের ছবি তুলতে চাইলে তিনি নিষেধ করেন। বলেন, ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থী হারাম। কিন্তু ইত্তেফাকে তো ২২ আগস্টের সমাবেশে আপনার ছবি ছাপা হয়েছে বলে তিনি জানালেন, ছবি কখন তুলেছে আমি দেখিনি। দেখলে তুলতে দিতাম না। (সাপ্তাহিক মুক্তিবার্তা ৩ সেপ্টেম্বর/৯৭)

ছবি সম্পর্কে চর্মনাইয়ের পীরের ফতওয়া

গত ২৪শে নভেম্বর/২০০৪ ঈসায়ী তারিখে চর্মনাই পীরের বরাতে এরূপ কথা দৈনিক ইত্তেফাকেও এসেছে। তাতে বলা হয়েছে,  ……… “জোহরের নামাযের পর বয়ানের মাধ্যমে মাহফিলের সুচনা করে চরমোনাইর পীর সাহেব ………। এ সময় তিনি ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, ইসলামে ছবি তোলা জায়িয নেই। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের অনুরোধে ছবি তুলতে বাধ্য হতে হয়।” (দৈনিক ইত্তেফাক ২৪ নভেম্বর/২০০৪) কিন্তু একই দিনে দৈনিক ভোরের কাগজের রিপোর্টে তার হাক্বীক্বত ফাঁস হয়েছে। ভোরের কাগজে ‘অল্পকথা শীর্ষক’ রিপোর্ট হয়, বরিশাল প্রতিনিধিঃ গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া চরমোনাই দরবার শরীফের তিন দিনব্যাপী মাহফিলের ছবি তুলতে গিয়ে তাড়া খেয়েছেন দৈনিক যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরোর ফটো সাংবাদিক কাজী মিরাজ। গতকাল আসরের আগে মাহফিলে বয়ান করার সময় চরমোনাইর পীর …….. ইসলামে ফটো তোলা সম্পূর্ণ নাজায়িয বলে ফতওয়া দেন। এরপর পীরের অনুসারী মুজাহিদ বাহিনীর ক্যাডাররা ঐ ফটো সাংবাদিককে ধাওয়া করলে পীর-পুত্রদের সহযোগিতায় তিনি রক্ষা পান।

ছবি সম্পর্কে মুফতী ফযলুল হক্ব আমিনীর ফতওয়া

একইভাবে, একই পত্রিকার রিপোর্টার ছবি সম্পর্কে প্রশ্ন করেন মুফতে আমিনীকেও। নিচে তা তুলে ধরা হলো-

প্রশ্নঃ তা হলে ছবি তোলা বা প্রতিকৃতি সৃষ্টি করাও কি শরীয়তসম্মত?

আমিনীঃ না, ছবি তোলা হারাম।

প্রশ্নঃ আমি তো এই ক্যামেরা দিয়ে আপনার বেশ কয়েকটি ছবি তুললাম।

আমিনীঃ ছবি তোলা হারাম তা ঠিক। ছবি তোলা প্রয়োজন মনে করি বলেই তা করতে দিলাম। তবে ছবি তোলা হলে আমি তওবা করে নেই। প্রচারের জন্য ছবি তুলতে দিলেও আমি তওবা করে নেই।

প্রশ্নঃ প্রতিদিন তাহলে আপনাকে অনেকবার তওবা করতে হয়। দিনে কতবার তওবা করেন?

আমিনীঃ তা একশ’ বারতো হবে। (হাসতে হাসতে) তওবা করা জায়িয। তওবা দোষের কিছু নয়।”.. (সাপ্তাহিক মুক্তিবার্তা, ৩ সেপ্টেম্বর, ‘৯৭)

উল্লেখ্য, হদছ ও মুফতে কমিনীর এসব কথা যে নিকৃষ্ট প্রতারণা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, অতীতে ও বর্তমানে হক্বের দাবীদার অনেক মাওলানা, মুফতী, মুফাসসির, মুহাদ্দিছ, পীর, দরবেশ, আমীর, খতীব, ছবিকে হারাম বলে ফতওয়া দেয়ার পরও শুধুমাত্র দুনিয়াবী স্বার্থে নিজেরা ছবি তুলেছে ও তুলছে। তাহলে তাদেরকে কি করে হক্ব বলা যেতে পারে? মূলতঃ তাদের নিজেদের ফতওয়া মতেই তারা না হক্ব। কারণ যারা শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধানকে অমান্য করে তারা কস্মিনকালেও হক্ব হতে পারে না।

(অসমাপ্ত)

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা লুঙ্গি চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৭

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৮

ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া— (১)

ফতওয়া বিভাগ-গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (২)

ফতওয়া বিভাগ- গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-(৩)