কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১৩

সংখ্যা: ১৮০তম সংখ্যা | বিভাগ:

[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা)  ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং  ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা)   ২৭.  ইসলামের  নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) পেশ করার পর ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-

২৮তম ফতওয়া হিসেবে

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা, করানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” দেয়ার কারণ

সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।

বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)

স্মরনীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই” (নাউযুবিল্লাহ)। সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই.ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে, মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই ছবি তোলা জায়িয।” (নাঊযুবিল্লাহ)। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।

অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

استحلال المعصية كفر.

অর্থাৎ, “গুণাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী।)

অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।

অনুরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্যে ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুণাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইয়-এর ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)

উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,

وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.

অর্থঃ ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম, বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরাহ গুণাহর অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কাজেই, যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-এর রিযামন্দী হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পূণরায় প্রকাশ করা হলো।

পূর্ব প্রকাশিতের পর

সউদীসহ মুসলিম জাহানের অধিকাংশ

রাজা-বাদশাহই ইহুদীদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে তাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে

قال النبى صلى الله عليه وسلم صنفان من امتى اذا صلحوا صلح الناس واذا فسدوا فسد الناس الامراء والفقهاء.

অর্থঃ “নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের দুই প্রকার লোক তারা যদি ইছলাহপ্রাপ্ত হয় তবে সকল মানুষই ইছলাহপ্রাপ্ত হবে। আর তারা যদি বিভ্রান্ত বা গুমরাহ হয় তবে অনেকেই বিভ্রান্ত বা গোমরাহ হবে।”

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن زياد بن حدير قال قال  لى عمربن  الخطاب  رضى الله تعالى عنه هل تعرف ما يهدم الاسلام قلت لا قال يهدمه زلة العالم وجدال المنافق بالكتاب وحكم الائمة المضلين.

অর্থঃ “হযরত যিয়াদ ইবনে হুদাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামের ক্ষতি হয় কাদের মাধ্যমে আপনি কি জানেন? জবাবে আমি বললাম না। তখন তিনি বলেন, ১. আলিমদের পদস্খলন, ২. মুনাফিকদের কিতাব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, ৩. গুমরাহ শাসকদের গুমরাহীমূলক আদেশ নির্দেশ। এই তিন প্রকার লোক ইসলামের ক্ষতি করে থাকে।”

উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা এটাই বুঝা যাচ্ছে যে, দুই প্রকার লোক অর্থাৎ রাজা-বাদশা, আমীর-উমারা ও আলিম-উলামা আল্লাহ পাক না করুন এরা যদি গুমরাহ বা বিভ্রান্ত হয়ে যায় তবে এদের দ্বারাই ইসলামের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইহুদীরা এটাকেই ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতিসাধনে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। তারা টাকা আর ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে মুসলিম দেশগুলোর রাজা-বাদশা বা প্রেসিডেন্ট প্রধান মন্ত্রীদেরকে তাদের অনুগত করে নেয়। অথবা সুকৌশলে বা গণতন্ত্রের মাধ্যমে তাদের পছন্দের লোককে ক্ষমতায় বসাচ্ছে। আর তাদের মাধ্যমে একটার পর একটা কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আইন বা আমল মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। সাথে সাথে মুসলমানদেরকে ইসলাম ও আমল থেকে সরিয়ে দিচ্ছে।

অতএব বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, বর্তমান সউদী সরকারসহ মুসলিম দেশগুলোর সকল সরকারই ইহুদীদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে তাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে বা ইহুদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। তার একটি বাস্তব প্রমাণ হচ্ছে সউদী সরকার কর্তৃক চাঁদের তারিখ ঘোষণা করা। সউদী সরকার কখনোই সঠিকভাবে সঠিক সময়ে চাঁদ দেখে তারিখ ঘোষণা করে না। বরং মনগড়াভাবে ইচ্ছাকৃত তাঁরিখ ঘোষণা করে। উদ্দেশ্য হলো মুসলমানের যে আমলগুলো চাঁদের তারিখের সাথে সংশ্লিষ্ট সে আমলগুলো সঠিক তারিখে যাতে না হয়। যেমন হজ্জ, রোযা, ঈদ, শবে বরাত, শবে ক্বদর ইত্যাদি।

দেখা গেছে যে, ২৯শে জিলক্বদ চাঁদ দেখা গেল না। কিন্তু সউদি সরকার ঠিকই পরের দিন ১লা জিলহজ্জ ঘোষণা করলো, তাতে করে মুসলমানদের হজ্জ সঠিক তারিখে না হওয়ার কারণে মুসলমানদের হজ্জের সবগুলো আমলই বরবাদ হয়ে গেল। অর্থাৎ ইহুদীদের এজেন্ট সউদী সরকার ইহুদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থাৎ মুসলমানদের একটি অন্যতম ফরয ইবাদত হজ্জকে নষ্ট করে দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে প্রতিমাসে চাঁদের তারিখ ঘোষণা করে আসছে।

অথচ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن ابى هريرة  رضى الله  تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صوموا لرؤيته وافطروا لرؤيته فان غم عليكم فاكملوا عدة  شعبان  ثلا ثين.

অর্থঃ “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোযা শুরু কর এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর। আর যদি ২৯শে শা’বান চাঁদ দেখা না যায় তবে শা’বান মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ কর।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

সউদি ওহাবী সরকার হাদীছ শরীফ-এর উপরোক্ত নির্দেশের কোনই তোয়াক্কা না করে ইহুদী এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে মনগড়াভাবে চাঁদের ঘোষণা দিয়ে মুসলমানদের হজ্জ, রোযা, ঈদ, শবে বরাত, শবে ক্বদর, আশুরা, শবে মি’রাজ, লাইলাতুর রগায়িব ও ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ বহু মুবারক রাত ও দিনের আমলসমূহ বরবাদ করে দিচ্ছে।

ঠিক অনুরূপভাবেই সউদী ওহাবী সরকার ইহুদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফসহ অনেক পবিত্র স্থানসমূহে সি.সি টিভি স্থাপন করেছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানদেরকে হজ্জের সময় হারাম কাজ বা নাফরমানীতে মশগুল করে দিয়ে মুসলমানদের হজ্জ নষ্ট করে দেয়া ও গুনাহগার বানিয়ে জাহান্নামী করে দেয়া।

কেননা হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে-

عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اشد الناس عذابا عند الله المصورون.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, সউদী সরকার মূলতঃ ইহুদীদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে তাদের এজেন্ট হিসেবে তাদের এজেন্ডাসমূহই একের পর এক বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তাই পৃথিবীর প্রায় দু’শ চল্লিশ কোটি মুসলমানের উচিত এর প্রতিবাদে এগিয়ে আসা এবং মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফসহ সকল পবিত্র স্থানসমূহ থেকে সি.সি. টিভি নামিয়ে ফেলতে সউদী সরকারকে বাধ্য করা।

অবিলম্বে সারা বিশ্বের মুসলমানদের পবিত্র স্থান মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ থেকে সি.সি. টিভি সরিয়ে ফেলা হোক

মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ সউদি সরকারের একক সম্পদ নয়। বরং তা সারা বিশ্বের সকল মুসলমানদেরই পবিত্র স্থান। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

 ان اول بيت وضع للناس للذى ببكة مباركا و هدى للعالمين.

অর্থঃ “নিশ্চয়ই বাইতুল্লাহ বা কা’বা শরীফই হচ্ছে সর্বপ্রথম ঘর যা মক্কা শরীফে অবস্থিত। এটি সারা জাহানের মানুষের ইবাদতের জন্য তৈরী করা হয়েছে এবং সারা জাহানের জন্য  হিদায়েত ও বরকতময়। (আলে ইমরান-৯৬)

আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

يايها  الناس ان  الله  وضع  بيت  الله.

অর্থাৎ, “হে মানুষেরা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তোমাদের সকলের জন্য বাইতুল্লাহ শরীফ স্থাপন করেছেন।”

কাজেই, মুসলমানদের পবিত্র স্থানসমূহে মুসলমানদের দাবিক উপেক্ষা করে সি.সি. টিভি স্থাপন করার কোন অধিকার সউদী সরকারের নেই। তাই সউদী সরকারের জন্য ফরয-ওয়াজিব হলো অবিলম্বে মুসলমানদের পবিত্র স্থান মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ থেকে হারাম সি.সি. টিভি সরিয়ে ফেলা। নচেৎ সারাবিশ্বের প্রায় দু’শ চল্লিশ কোটি মুসলমানের ঈমানী বিস্ফোরণ ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব সউদী সরকারকেই বহন করতে হবে।

উল্লেখ্য যে, মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছুল আ’যম, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর তাজদীদের প্রভাব বিলম্বে হলেও সউদী সরকারের উপর পড়েছে। আর সেই তা’ছীরের কারণেই সউদী সরকার আগামী হজ্জে ক্যামেরা ব্যবহার বা ছবি তোলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সউদী সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ ঢাকা রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী যে বিবৃতি প্রদান করেছেন তা যামানার তাজদীদী মুখপত্র, একমাত্র জাতীয় ইসলামী দৈনিক, “দৈনিক আল ইহসানে” ২২শে জুলাই ’০৮ ঈসায়ী

তারিখে ব্যানার নিউজ হিসেবে পত্রস্থ হয়েছে। নিম্নে তা হুবহু উল্লেখ করা হলো-

হজ্জে পবিত্র কাবা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এ ক্যামেরা নিষিদ্ধ করায় সউদী সরকার প্রশংসার অধিকারী হয়েছে।

তবে সউদী সরকারের উচিত অতি সত্ত্বর হারামাইন শরীফাইন থেকে সিসিটিভি নামিয়ে ফেলা এবং ছবিবিহীন হজ্জের ব্যবস্থা করা।

পাশাপাশি হারামাইন শরীফাইন-এর খাদিম হিসেবে সব মুসলিম দেশগুলোকে ইসলামের দিকে তম্বিহ করাও সউদী সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, মুর্শিদে আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেছেন, “হজ্জে পবিত্র কাবা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এ ক্যামেরা নিষিদ্ধ করায় সউদী সরকার প্রশংসার অধিকারী হয়েছে। তবে সউদী সরকারের উচিত অতি সত্ত্বর হারামাইন শরীফাইন থেকে সিসিটিভি নামিয়ে ফেলা এবং ছবিবিহীন হজ্জের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি হারামাইন শরীফাইন-এর খাদিম হিসেবে সব মুসলিম দেশগুলোকে ইসলামের দিকে তম্বিহ করাও সউদী সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য।”

“সব উমরাহ পালনকারী ও হজ্জ যাত্রীদের মক্কা শরীফ-এর মসজিদুল হারাম ও মদীনা শরীফ-এ মসজিদুন্ নববী শরীফ-এর ভিতরে-বাইরে যে কোন ধরনের ক্যামেরা (মোবাইলসহ) নিয়ে প্রবেশ ও ছবি তোলা নিষিদ্ধ”-এর প্রতিক্রিয়ায় গতকাল রাজারবাগ শরীফ-এ তিনি এসব কথা বলেন।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, হজ্জ করা যেমন আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ তদ্রুপ পর্দা করা এবং ছবি তোলা থেকে বিরত থাকাও আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, মুসলমানের মধ্যে ‘পর্দাহীনতা ও ছবির প্রচলন’ এটা ইহুদী-নাছারাদের একটা সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। বিশেষ করে হজ্জের অনুমতি নিতে পুরুষ-মহিলা সবাইকে জমা দিতে হয় প্রায় দেড় ডজন ছবি। এছাড়া তাদেরকে ঘাটে ঘাটে ছবিও দেখাতে হয়। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো- ইহুদী-নাছারারা সউদী সরকারকে ভুল বুঝিয়ে ও ধোঁকা দিয়ে বাইতুল্লাহ শরীফ, সাফা-মারওয়া, মীনা, মুজদালিফা, আরাফার মতো পবিত্র স্থানে স্থাপন করেছে দশ হাজার একশত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা এবং রওজা শরীফসহ মসজিদে নববী শরীফ-এ স্থাপন করেছে প্রায় এক হাজার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন,  সউদী মাওলানারা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়ে আবার তারাই সে ফতওয়া অমান্য করে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তথ্য উপস্থাপন করে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, “১৯৭১ সালের ২৯শে আগস্ট (হিজরী ১৩৯১ সাল) সউদী সরকারের ১৩৭/১ নম্বর রয়াল ডিক্রি অনুযায়ী সউদী আরবে একটি কাউন্সিল গঠিত হয় তাদের উচ্চ পর্যায়ের মাওলানাদের নিয়ে। ডিক্রির চার নম্বর সেকশনে উল্লেখ করা হয়, ‘একটি চিরস্থায়ী কমিটি রাখা হলো, যে কমিটি মাওলানাদের এই কাউন্সিল থেকে সদস্য নির্বাচন করবে রয়াল ডিক্রির সাথে সামঞ্জস্য রেখে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, কাউন্সিলে আলোচনা করার জন্য গবেষণা পত্র তৈরি করা এবং প্রতিটি আলাদা আলাদা বিষয়ে ফতওয়া প্রদান করা।’ এই কমিটির নামকরণ করা হয় ‘আল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ লিল-বুহুছ আল ইলমিয়া ওয়াল ইফতা’ ইংরেজিতে “The Permanent Committee for Islamic Research and Fataawa” এবং বাংলায় ‘ইসলামী গবেষণা এবং ফতওয়ার চিরস্থায়ী কমিটি।’

এই রয়াল ডিক্রির ৮ নম্বর সেকশনে পুনরায় বলা হয়, চিরস্থায়ী কমিটির বেশিরভাগ সদস্য কোন বিষয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্যে না পৌঁছা পর্যন্ত কোন ফতওয়া প্রদান করা হবে না। এরূপভাবে তিনজন সদস্যের কমে কোন ফতওয়ায় সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে না। আর কোন মতের পক্ষে এবং বিপক্ষে সমান সংখ্যক রায় পাওয়া গেলে কমিটির প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

সউদী আরবের এই ফতওয়া কমিটিকে “ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা কি হারাম অথবা না?” সে প্রশ্ন করলে তারা উত্তর দেয়, “সকল মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী যাদের জীবন আছে তাদের ক্যামেরা বা অন্য কিছু দিয়ে ছবি তোলা হারাম। এবং যারা এরকম ছবি তুলে তাদের অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ পাক-এর কাছে তওবা করা উচিত। তার দ্বারা যা হয়ে গেছে তাতে যেন সে আর ফিরে না যায়।”

ডিক্রির ধারা অনুযায়ী এই ফতওয়ায় স্বাক্ষর করে কমিটির প্রধান- শায়খ আব্দুল আজিজ ইবনে আব্দুল্লাহ বিন বা’য। উপপ্রধান- শায়খ আব্দুর রাজ্জাক আফিফি। সদস্য- শায়খ আব্দুল্লাহ বিন জুদাইয়ান। সদস্য- শায়খ আব্দুল্লাহ বিন কুউদ।

এই ফতওয়ার নম্বর হচ্ছে ৩৫৯২ যা ফতওয়া কমিটির ভলিউম-১ এর ৬৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে। এই ফতওয়া থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হলো তা হচ্ছে, সউদী সরকার কর্তৃক ওহাবী মাওলানাদের নিয়ে গঠিত সর্বোচ্চ ফতওয়া কমিটির ফতওয়া অনুযায়ী ক্যামেরার সাহায্যে যে কোন প্রাণীর ছবি তোলা হারাম।

কিন্তু বাস্তবে আমরা তার বিপরীত অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। যিনি সমস্ত কিছুর মালিক, খালিক্ব রব্বুল আলামীন আল্লাহ পাক-এর পবিত্র ঘর বাইতুল্লাহ শরীফ সংলগ্ন মসজিদুল হারামসহ সকল হজ্জ পালনের স্থানসমূহে স্থাপিত ক্যামেরার সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এ সকল ক্যামেরা দিয়ে হজ্জের প্রতিটি এলাকার দৃশ্য ধারণ করে সম্প্রচার করা হয়।

অপরাধের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সিসিটিভির প্রভাব সম্পর্কে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেন। বর্তমানে অনেক মানুষ মনে করে সিসিটিভি একটি শক্তিশালী অপরাধ নিয়ন্ত্রক। কিন্তু সিসিটিভির উপর অনেক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যে, অপরাধের মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে এর কোন প্রভাব নেই। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার অপরাধ দমন বিভাগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অপরাধ দমনের অস্ত্র হিসেবে সিসিটিভি কোন গুরুত্ব বহন করে না। আরো দেখা গেছে যে,   যেখানে সিসিটিভি রয়েছে সেই জায়গা থেকে যেখানে সিসিটিভি নেই সেখানে অপরাধের মাত্রা কম। আবার যেখানে সিসিটিভি নেই সেখানে সিসিটিভি স্থাপন করার পর অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এটা সুস্পষ্ট যে, সিসিটিভি ক্যামেরা কখনই অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারে না।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, সউদী সরকারের জন্য ফরয-ওয়াজিব মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ থেকে সকল প্রকার সিসিটিভি নামিয়ে ফেলে আল্লাহ পাক এবং তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশের অনুগত হওয়া। তখনই কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এ বর্ষিত সকল নিয়ামত, রহমতের হিস্যা সউদী সরকারসহ সকল মুসলমানগণ লাভ করবে। নতুবা বিপরীতে নেমে আসবে শুধু আযাব-গযব আর লাঞ্ছনা।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, পৃথিবীর ২২৫ কোটিরও অধিক মুসলমানের প্রাণের চেয়েও পবিত্র স্থান মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ তথা হারামাইন শরীফাইন। আর সউদী সরকার নিজেকে হারামাইন শরীফাইন-এর খাদিম বলে গর্ববোধও করে থাকেন। এটা সত্যিই শুকরিয়ার বিষয়। তবে তার সাথে সাথে দায়িত্বও এসে যায়। খাদিমুল হারামাইন শরীফাইন হিসেবে সউদী সরকারেরই উচিত নিজের দেশে সিসিটিভিসহ সব ছবি তো নিষিদ্ধ করা পাশাপাশি ছবিসহ পাসপোর্ট নিষিদ্ধ করার জন্যও অপরাপর মুসলিম দেশগুলোকেও নির্দেশ ও উৎসাহ দেয়া এবং ছবিসহ অনৈসলামী কাজ বন্ধ করা ও ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেয়া।

মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, সউদী সরকার যদি সেরূপ করতে পারেন তাহলে অবশ্যই তা তার জন্য বিরাট মর্যাদা ও কামিয়াবীর কারণ। অন্যথায় তার জন্য দুঃখ ও আফসুস ছাড়া কিছুই থাকবে না।”

মূলকথা হলো, সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা যেরূপ হারাম বা নিষিদ্ধ তদ্রুপ সি.সি. টিভির মাধ্যমেও ছবি তোলা শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম ও নিষিদ্ধ। কাজেই হজ্জের সময় যদি সাধারণ ক্যামেরা নিষেধ হতে পারে তবে যেসকল ক্যামেরা অর্থাৎ সি.সি. ক্যামেরা আরো অধিক পরিমানে ছবি তুলতে সক্ষম তা নিষিদ্ধ হবে না কেন। তাই সউদি সরকারের জন্য ফরয-ওয়াজিব হলো অনতিবিলম্বে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ থেকে সি.সি. ক্যামেরাগুলোও নামিয়ে ফেলা বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।

সউদী আরবসহ সারা বিশ্বের উলামায়ে ‘ছূ’দের প্রতি রাজারবাগ শরীফ-এর পক্ষ হতে প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে

عن  ابى  الدرداء رضى الله  تعالى عنه  قال سمعت رسول الله صلى الله عليه  وسلم يقول ان العلماء ورثة الانبياء

অর্থাৎ, “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই আলিমগণ হচ্ছেন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ।” (আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারিমী, মিশকাত-৩৪)

তাই রাজা-বাদশাহসহ সকল মানুষকে হেদায়েত করার দায়িত্বও হক্কানী-রব্বানী আলিম-উলামাদের উপরই বর্তায়।

অথচ, সেই আলিম-উলামা নামধারী ব্যক্তিরা রাজা-বাদশাহদেরকে হিদায়েত করবে তো দূরের কথা বরং তারা রাজা-বাদশাহদেরকে তোয়াজ করে দুনিয়াবী ফায়দা হাছিল করার জন্য রাজা-বাদশাহদের গোলাম হয়ে তাদের কথা মত ফতওয়া দিচ্ছে এবং তাদের সমস্ত হারাম কাজগুলোর ব্যাপারে থাকছে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ।

সউদী সরকার যখন মক্কা শরীফ এবং মদীনা শরীফ-এ সি.সি টিভি স্থাপন করলো সউদী আরবসহ বিশ্বের কোন মাওলানা মুফতী এর প্রতিবাদ করেনি এবং এখনও করছে না। এর দ্বারা কি এটাই প্রমাণিত হয় না যে, সউদী আরবসহ বিশ্বের সকল মাওলানারা সি.সি. টিভি ব্যবহারকে জায়িয মনে করে। নাউযুবিল্লাহ্ । প্রশ্ন হলো যদি তারা সি.সি. টিভি ব্যবহার করাকে জায়িয বলেই থাকে তবে তার দলীল কোথায়? কোন দলীলের ভিত্তিতে তারা এটাকে জায়িয মনে করে? তার দলীল তাদেরকে অবশ্যই পেশ করতে হবে। কেননা আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

هاتو برهانكم ان كنتم صادقين.

অর্থাৎ যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তবে দলীল পেশ কর। (সূরা নমল-৬৪)

তাই রাজারবাগ শরীফ-এর পক্ষ থেকে সউদী আরবসহ সাড়া বিশ্বের সকল নামধারী আলিম-উলামাদের প্রতি প্রকাশ্য বাহাছের চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করা হলো-

তারা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হবে উক্ত বাহাছের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে জনসম্মুকে এসে প্রমাণ করে দেয়া যে, সি.সি. টিভি ব্যবহার করা জায়িয!

নচেৎ প্রমাণিত হবে যে তারা আসলেই ইহুদী এজেন্ট। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্ম ব্যবসায়ী। যাদের থেকে দূরে থাকতে হাদীছ শরীফ-এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان دجالون كذابون ياتونكم من الاحاديث بما لمتسمعوا انتم ولا ابائكم فاياكم واياهم لايضلونكم ولايفتنونكم.

অর্থঃ হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমনসব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, আর তাদেরকেও তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবে না। (মুসলিম শরীফ)

সউদী আরবসহ সারাবিশ্বের যে সকল মাওলানারা সি.সি. টিভি ব্যবহার করাকে জায়িয বলে তারা উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী। হাদীছ শরীফ-এ তাদের ভয়াবহ পরিণতি বর্ণিত হয়েছে। তাদের বক্তব্য শুনা ও তাদের পিছনে নামায পড়া হারাম। আর অতীতে যত নামাজ পড়েছে সে সমস্ত নামাজ দোহরানো ওয়াজিব। নামাজ না দোহরালে ফরজ তরকের গুনাহ হবে।

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর অকাট্য দলীলের দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রাণীর ছবিভিত্তিক সি.সি টিভি ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম ও নাজায়িয। চাই তা ইসলামের নামে হোক অথবা অনৈসলামিক হোক। কারণ সি.সি টিভির মূলই হচ্ছে ‘ছবি’।

অথচ ছবি তোলা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। যার বহু প্রমাণ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং যে সকল মাওলানারা হারাম ছবিভিত্তিক সি.সি. টিভিকে জায়িয বলে অর্থাৎ হারামকে হালাল বলে তারা কি করে হক্কানী আলিম হতে পারে? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস-এর দৃষ্টিতে তারা কস্মিনকালেও হক্কানী আলিম নয়। বরং তারা হচ্ছে নাহক্ব আলিম তথা উলামায়ে ‘ছূ’ অর্থাৎ ধর্মব্যবসায়ী মৌলবী।

হক্ব আলিম ও নাহক্ব আলিমের সংজ্ঞা ও পরিচিতি তুলে ধরলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عن الاحوص بن حكيم عن ابيه سئل رجل النبى صلى الله عليه وسلم عن الشر فقال لاتسئلونى عن الشر وسلونى عن الخير يقولها ثلاثا ثم قال الا ان شر الشر شرار العلماء وان خير الخير خيار العلماء.

অর্থ: হযরত আহওয়াছ ইবনে হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- এক ব্যক্তি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট নিকৃষ্ট লোক সম্পর্কে জানার জন্যে প্রশ্ন করলেন। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি আমাকে খারাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না বরং ভাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো।” তিনি উহা তিনবার বললেন। অতঃপর বললেন, “সাবধান! নিশ্চয়ই নিকৃষ্টেরও নিকৃষ্ট লোক হলো- উলামায়ে ‘ছূ’ অর্থাৎ দুনিয়ালোভী ধর্মব্যবসায়ী মাওলানারা। আর নিশ্চয়ই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ।” (দারিমী, মিশকাত, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এ মূলতঃ দু’প্রকার আলিমের কথা বলা হয়েছে। যথা- ১. হক্ব আলিম। ২. নাহক্ব আলিম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- হক্ব আলিম আর নাহক্ব আলিমের পরিচয় কি?

মূলতঃ দ্বীনে হক্ব মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্যে হক্ব আলিমের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। মূলতঃ এ দ্বীনকে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন পৃথিবীতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ক্বায়িম রাখবেন হক্কানী আলিমগণের মাধ্যমে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু শেষ নবী, উনার পর আর কোন নবী দুনিয়াতে আগমন করবেন না, সেহেতু ছহীহ্্ দ্বীন তথা শরীয়তের সঠিক আক্বীদা ও আমল মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব ন্যাস্ত করা হয়েছে হক্কানী আলিমগণের উপর। আর তাই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

العلماء  ورثة  الانبياء.

অর্থ: আলিমগণ নবীগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী।” (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারিমী, মিশকাত)

হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى  الله  عليه  وسلم ان الله عز وجل  يبعث لهذه الامة على رأس كل مائة سنة من يجدد لها دينها.

অর্থাৎ, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক আখিরী উম্মতের জন্যে প্রত্যেক শতকের শুরুতে একজন ব্যক্তিকে (মুজাদ্দিদকে) প্রেরণ করবেন, যিনি তাদের দ্বীন তথা আক্বীদা ও আমলের সংস্কার করবেন।” (আবূ দাউদ শরীফ)

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, মানুষের আক্বীদা ও আমলের পরিশুদ্ধতার জন্যে আলিমগণের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু সে কোন আলিম? আর আলিম কে?

প্রসঙ্গতঃ আলিম ঐ ব্যক্তিই যার অন্তরে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি রয়েছে। অর্থাৎ যিনি আল্লাহ পাক-এর ভয়ে হারাম, নাজায়িয কাজ থেকে বিরত থাকেন। কেননা মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম পাকে ইরশাদ করেন-

اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ  مِنْ عِبَادِهِ  الْعُلَمَاءُ

অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই আল্লাহ পাককে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির-২৮)

এ আয়াত শরীফের তাফসীর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল হাম্বলী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, শায়খুল মুহাদ্দিছীন, হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে। তিনি এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, “যাঁর ভিতর যত বেশী আল্লাহভীতি রয়েছে তিনি ততবড় আলিম।”

উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে খোলাছায়” উল্লেখ আছে যে,

“العلماء” سے اصطلاحی عالم یعنی کتابیں پرہ لینے والے مراد  نهى بلکہ کبریائے ذات وعظمت صفات کو نور ایمان شمع عرفان سے دیکھنے والے اسلئے کہ اصحاب رسول صلے اللہ علیہ وسلم وارباب ولایت وقبول سبکے سب علماء کتابی نہ تھی گو اونکا علم نافع اعلی درجے کا تھا.

অর্থঃ- উক্ত আয়াত শরীফে العلماء শব্দ দ্বারা কিতাবসমূহ পাঠকারী তথা (দাওরা বা টাইটেল পাশকারীদেরকে) বুঝানো হয়নি। বরং কুরআন শরীফে বর্ণিত “আলিম” তারাই, যারা মহান আল্লাহ পাক-এর মহিমাময় জাত ও অসীম গৌরবময় ছিফাতসমূহকে ঈমান ও মা‘রিফাতের নুরের আলোকে অবলোকন করেছেন। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয়তম ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও (পরবর্তী) বিলায়েতপ্রাপ্ত ও মকবুল ওলীআল্লাহগণ কিতাবী তথা দাওরা বা টাইটেল পাশ আলিম ছিলেন না। তথাপিও তাঁরা সর্বোচ্চ স্তরের উপকারী ইলমের অধিকারী ছিলেন। অর্থাৎ তাঁরাই কুরআন শরীফে বর্ণিত প্রকৃত আলিম ছিলেন।

উল্লেখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত আলিম, ইমামুল মুফাসসিরীন, হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ “তাফসীরে ইবনে কাছীরে” উল্লেখ করেন-

عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه انه قال ليس العلم عن كثرة الحديث ولكن العلم عن كثرة الخشية وقال احمد بن صالح المصرى عن ابن وهاب عن مالك قال ان العلم ليس لكثرة الرواية وانما العلم نور يجعله الله تعالى فى القلب.

অর্থঃ- “হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি অধিক হাদীছ শরীফ জানে সে ব্যক্তি আলিম নয়। বরং যাঁর মধ্যে আল্লাহভীতি অধিক সে ব্যক্তিই আলিম। আর আহমদ বিন ছালেহ মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অধিক রেওয়ায়েত শিক্ষা করলেই আলিম হওয়া যায়না। মূলতঃ ইলম হচ্ছে নূর বা জ্যোতিস্বরূপ। আল্লাহ পাক তা আলিমের অন্তকরণে দান করেন।’

উক্ত “তাফসীরে ইবনে কাছীরে” উল্লেখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় আরো উল্লেখ আছে যে-

قال سفيان الثورى …. العلماء ثلاثة عالم بالله وعالم بامر الله وعالم بالله ليس بعالم بامرالله  وعالم بامرالله ليس بعالم بالله. فالعالم بالله وبامرالله الذى يخشى الله تعالى ويعلم الحدود والفرائض.

অর্থঃ হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আলিমগণ তিনভাগে বিভক্ত। (১) আলিম বিল্লাহ অর্থাৎ যারা শুধু আল্লাহ পাককেই জানেন। কিন্তু তাঁর হুকুম-আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ। (২) আলিম বিআমরিল্লাহ। অর্থাৎ যারা শুধু হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জানেন। কিন্তু আল্লাহ পাক সম্পর্কে অজ্ঞ বা আল্লাহভীতি নেই। (৩) আলিম বিল্লাহ ওয়া বিআমরিল্লাহ। অর্থাৎ যাঁরা আল্লাহ পাক ও তাঁর শরীয়তের হুকুম-আহকাম ও ফারায়েজ সম্পর্কে পুর্ণ জ্ঞাত এবং আল্লাহ পাককে ভয় করেন। (তাঁরাই হাক্বীক্বী বা প্রকৃত আলিম)।

দ্বিতীয়তঃ ঐ ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম যিনি অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن سفيان  ان عمر بن  الخطاب رضى الله تعالى عنه قال لكعب من ارباب العلم قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء قال الطمع.

অর্থঃ- “হযরত সুফইয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কা’বা ইবনুল আহবার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে (যিনি পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব ও ছহীফা সম্পর্কে ইলম রাখতেন এবং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এরও বিজ্ঞ আলিম ছিলেন) জিজ্ঞাসা করলেন, আলিম বা ইলমের অধিকারী কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পুনরায় জিজ্ঞোসা করলেন, কোন জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।’ (দারিমী, মিশকাত, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুতত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ)

বিশিষ্ট তাবিয়ী, ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলোÑ আলিম কে? তিনি জবাবে বলেন-

انما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب الى الاخرة والبصير بذنبه والمداوم على عبادة ربه والورع الكاف عن اعراض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجمعاعتهم.

অর্থঃ “ফক্বীহ্ বা আলিম হলেন ঐ ব্যক্তি, যিনি দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুনাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ পাক-এর ইবাদতে মশগুল, পরহিজগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং তাঁর অধীনস্থদেরকে নছীহত করেন।” (কিতাবুয্ যুহদ, হাশিয়ায়ে বুখারী শরীফ, হিলইয়াতুল আওলিয়া)

উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মুলতঃ হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তাঁরাই হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী।

পক্ষান্তরে, নাহক্ব আলিম হলো ঐ ব্যক্তি, যে দুনিয়ার সামান্য সম্পদ ও মান-সম্মান হাছিল করার জন্যে ঈমান ও আমল ধ্বংস করে দেয়। যেমন বর্তমানে কেউ কেউ দুনিয়াবী ফায়দা হাছিলের জন্যে বা ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ভিত্তিক আন্দোলন করছে, যে গণতন্ত্র অনুসরণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। কারণ গণতন্ত্র হলো ইহুদী-নাছারা বা মানব রচিত মতবাদ। অথচ এক শ্রেণীর আলিম তাদের নিকট গণতন্ত্র হারাম একথা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও তারা গণতন্ত্র চর্চা করছে। (নাউযুবিল্লাহ) মূলতঃ তাদের গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন করার উদ্দেশ্য হলো দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভ করা।

তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ অহরহ পেপার-পত্রিকায় নিজের ছবি ছাপাচ্ছে এবং ইসলামের নামে টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করছে। (নাউযুবিল্লাহ) অথচ ছবি তোলা, আঁকা, রাখা ইত্যাদি সবই শরীয়তে কাট্যা হারাম। কিন্তু তারা বিনা দ্বিধায় এ হারাম কাজগুলো করে যাচ্ছে। মূলতঃ এরাই হলো উলামায়ে “ছূ” বা ধর্মব্যবসায়ী অর্থাৎ নাহক্ব আলিম। এদের প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن زياد بن حدير رحمة الله عليه قال قال لى عمربن الخطاب رضى الله  تعالى عنه هل تعرف ما يهدم الاسلام قلت لا قال يهدمه زلة العالم وجدال المنافق بالكتاب وحكم الائمة المضلين.

অর্থঃ “হযরত যিয়াদ ইবনে হুদাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাকে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তুমি বলতে পার কি, কোন জিনিস ইসলামকে ধ্বংস করবে? আমি বললাম না (আমি জানিনা)। তখন তিনি বললেন, আলিমদের পদস্খলন, মুনাফিকদের আল্লাহ পাক-এর কিতাব নিয়ে তর্ক-বাহাছে লিপ্ত হওয়া এবং গোমরাহ শাসকদের গোমরাহীমূলক হুকুম বা আদেশ-নিষেধ। (ইসলামকে ধ্বংস করবে)।” (দারিমী, মিশকাত, মাছাবীহুস্ সুনাহ,)

মূলতঃ বর্তমানে তাই দেখা যাচ্ছে, কিছু সংখ্যক তথাকথিত আলিমদের পদস্খলনের কারণে মুসলমানদের ঈমান ও আমল হুমকির সম্মুখীন। তাদের কারণে সাধারণ লোক মনে করে গণতন্ত্র ইসলামেরই অংশ, ছবি তোলা শরীয়তে জায়িয, হরতাল করা শরীয়তে নিষিদ্ধ নয়, টেলিভিশন দেখা ও  টেলিভিশনে প্রোগ্রাম করা জায়িয।’ (নাউযুবিল্লাহ)

অথচ শরীয়তের ফায়সালা হলো- হারামকে হালাল জানা আর হালালকে হারাম জানা কুফরী। অনুরূপ বিজাতীয় ও বেদ্বীনি মতবাদকে ইসলামের অংশ মনে করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। তবে কি প্রমাণিত হয় না যে, তাদের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ কুফরী করে ঈমানকে ধ্বংস করছে? আর তাই তো হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

صنفان من امتى اذا صلحوا صلح الناس واذا فسدوا فسد الناس الامراء والفقهاء

অর্থঃ “আমার উম্মতের দুই সম্প্রদায়, তারা যখন ইছলাহ বা সংশোধন হবে, তখন সকল মানুষ (মুসলমান) সংশোধন হবে। আর তারা যখন পথভ্রষ্ট হবে, তখন সকল মানুষ (মুসলমান) পথভ্রষ্ট হবে, তারা হলো- ১. রাজা-বাদশা, ২. আলিম-উলামা।

বস্তুতঃ হাদীছ শরীফে এরূপ দুনিয়াদার বা পথভ্রষ্ট আলিমদের ভয়াবহ পরিণাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال ان من اشر الناس عند الله منزلة يوم القيامة عالم لا ينتفع بعلمه.

অর্থঃ “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ক্বিয়ামতের ঐ ব্যক্তি মর্যাদার দিক থেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হবে যে তার ইলমের দ্বারা উপকৃত হয়নি।” (দারিমী শরীফ)

অতএব, যারা ইল্ম্ অনুযায়ী আমল করবে না অর্থাৎ যারা জানে ছবি তোলা ও টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করা হারাম, তারপরও ছবি তোলে ও টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে, যারা জানে গণতন্ত্র-হরতাল ইত্যাদি হারাম বা বিজাতীয় পন্থা, তারপরও তারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র চর্চা করে ও হরতাল করে। মূলতঃ উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মিছদাক তারাই অর্থাৎ তারা উলামায়ে “ছূ” বা দুনিয়াদার ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা, আর তারাই উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট।

আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن انس رضى الله تعالى عنه  قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ويل لامتى من علماء السوء يتخدون هذا العلم تجارة يبيعونها من امراء زمانهم ربحا لانفسهم لا اربع الله تجارتهم.

অর্থঃ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যে যারা উলামায়ে “ছূ” তাদের জন্য আফ্সুস অর্থাৎ তারা জাহান্নামী হবে। তারা ইলমকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতঃ তাদের যুগের শাসকদের নিকট থেকে অর্থ ও পদ লাভের প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসকল উলামায়ে ছু’দের বিরুদ্ধে এই বলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন যে, “আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের ইলম দ্বারা দুনিয়াবী সরকারের সাথে ব্যবসা করতে চায় তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না। (কানযুল উম্মাল)

এ সকল উলামায়ে ছূ’ বা দুনিয়াদার তথা ধর্মব্যবাসায়ী মৌলবীদেরকে হাদীছ শরীফে দাজ্জালে কাযযাব বা মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বলে এদের থেকে উম্মতদেরকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি দ্বীন ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয় ও শরীয়ত বিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তাঁরাই হক্কানী আলিম বা নায়িবে নবী।

অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যারা সি.সি. টিভিকে জায়িয বলে, প্রকাশ্যে ছবি তোলে, বেপর্দা হয়, ইসলামের নামে টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করে, দুনিয়ার লোভে হক্বকে নাহক্বের সাথে মিশ্রিত করে তারা কস্মিনকালেও হক্কানী আলিম নয়। বরং তারাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাব তথা উলাময়ে ছূ’। এদের ওয়ায শোনা ও এদেরকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণ হারাম। কেননা আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

ولاتطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هواه وكان امره  فرطا.

অর্থঃ তোমরা ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করো না যার অন্তর আমার যিকির থেকে গাফিল। এবং যে ব্যক্তি নফসের অনুসরণ করে এবং যে ব্যক্তির কাজগুলো শরীয়তের খিলাফ। (সূরা কাহাফ-২৮) অর্থাৎ যাদের আমল শরীয়তের খিলাফ তাদেরকে অনুসরণ করা হারাম।

আর হাদীছ শরীফৈ ইরশাদ হয়েছে,

 عن ابن سيرين رحمة الله عليه  قال فانظروا عمن تاخذون  دينكم.

অর্থাৎ, হযরত ইবনে সিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন বা ইলম গ্রহণ করছো তা লক্ষ্য করো।” (মুসলিম, মিশকাত, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ)

অর্থাৎ সি.সি. টিভিকে যারা জায়িয বলে তাদের ফতওয়া অনুসরণ করা ও তাদের পিছনে নামায পড়া সম্পূর্ণ হারাম। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।

কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

استحلال المعصية كفر.

অর্থাৎ, “গুণাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী।)

আর যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তে মুরতাদের ফায়ছালা হলো-

তার স্ত্রী তালাক হবে যদি বিয়ে করে থাকে এবং এক্ষেত্রে পুনরায় তওবা না করে বিয়ে না দোহরানো ব্যতীত তার স্ত্রীর সাথে বসবাস করা বৈধ হবে না। আর এ অবৈধ অবস্থায় সন্তান হলে সে সন্তানও অবৈধ হবে। হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে যদি হজ্জ করে থাকে। সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তার ওয়ারিশ সত্ত্ব বাতিল হবে। তাকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে, তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

কেননা হাদীছ শরীফে রয়েছে, তিন কারণে মৃত্যুদণ্ড দেয়া জায়িয। যথা- ১. ঈমান আনার পর কুফরী করলে অর্থাৎ মুরতাদ হলে। ২. ঐ যিনাকার বা যিনাকারিণী যারা বিবাহিত বা বিবাহিতা। ৩. যে অন্যায়ভাবে কাউকে ক্বতল করে তাকে।

আর মুরতাদ মারা যাবার পর যারা জানাযার নামায পড়ে বা পড়ায় বা জানাযার নামাযে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদের সকলের উপরই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং এ সকল মুরতাদ মরলে বা নিহত হলে তাকে মুসলমানগণের কবরস্তানে দাফন করা যাবে না। বরং তাকে কুকুরের ন্যায় একটি গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখতে হবে।

(অসমাপ্ত)

পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১১

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মুর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-১২

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মানহানীকারীদের একমাত্র শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আখাছ্ছুল খাছ সম্মানিত বিশেষ ফতওয়া মুবারক (৩০তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র ইসলামী মাস ও বিশেষ বিশেষ রাত ও দিন মুবারক উনাদের সম্মানিত আমল মুবারকসমূহ উনাদের গুরুত্ব, ফযীলত এবং বেদ্বীন-বদদ্বীনদের দিবসসমূহ পালন করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৭তম পর্ব)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ, মহাসম্মানিত ইজমা শরীফ এবং মহাসম্মানিত ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে- মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ মুবারক যারা ভাঙবে, ভাঙ্গার কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করবে বা সমর্থন করবে তাদের প্রত্যেকের শরঈ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া- (পর্ব-৩১)