[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে “গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী এবং হানাফী মাযহাব-এর অনুসরণে প্রকাশিত একমাত্র দলীল ভিত্তিক যামানার তাজদীদী মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে- ১. টুপির ফতওয়া (২য় সংখ্যা) ২. অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান (৩য় সংখ্যা) ৩. নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা (৪র্থ সংখ্যা) ৪. ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া (৫ম-৭ম সংখ্যা) ৫. জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (৮ম-১০ম সংখ্যা) ৬. মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া (১১তম সংখ্যা) ৭. কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১২তম সংখ্যা) ৮. তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩তম সংখ্যা) ৯. ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪-২০তম সংখ্যা) ১০. ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২১-২২তম সংখ্যা) ১১. তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৩-২৪তম সংখ্যা) ১২. তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (২৫-২৯তম সংখ্যা) ১৩. দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩০-৩৪তম সংখ্যা) ১৪. প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩৫-৪৬তম সংখ্যা) ১৫. আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৪৭-৫০তম সংখ্যা) ১৬. দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫১-৫২তম সংখ্যা) ১৭. খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৫৩-৫৯তম সংখ্যা) ১৮. নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬০-৮২তম সংখ্যা) ১৯. ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া (৮৩-৯৬তম সংখ্যা) ২০. শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৯৭-১০০তম সংখ্যা) ২১. জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১০১-১১১তম সংখ্যা) এবং ২২. হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১১২-১৩১তম সংখ্যা) ২৩. খাছ সুন্নতী ক্বমীছ বা কোর্তা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৪০তম সংখ্যা) ২৪. হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামাযে কুনূত বা কুনূতে নাযেলা পাঠ করা নাজায়িয ও নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৩২-১৫২তম সংখ্যা) ২৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্বকাপ ফুটবল বা খেলাধুলা’র শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া (১৫৫তম সংখ্যা) ২৬. হানাফী মাযহাব মতে পুরুষের জন্য লাল রংয়ের পোশাক তথা রুমাল, পাগড়ী, কোর্তা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি পরিধান বা ব্যবহার করা হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৫৩-১৬০তম সংখ্যা) ২৭. ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (১৬১-১৭৫তম সংখ্যা) পেশ করার পর ১৬৮তম সংখ্যা থেকে-
২৮তম ফতওয়া হিসেবে
“কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া” পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবার শরীফে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরক ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক তাজদীদী মুখপত্র- “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় এ যাবৎ যত লেখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ এমন সব লেখাই পত্রস্থ হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ ও হিফাযতকরণে বিশেষ সহায়ক।
বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলমানদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যানেলে, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদী ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
স্মরনীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কায্যাব তথা উলামায়ে ‘ছূ’রা প্রচার করছে “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই” (নাউযুবিল্লাহ)। সম্প্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, “নির্বাচন কমিশনার বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার ভোটার আই.ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে, মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে। আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই ছবি তোলা জায়িয।” (নাঊযুবিল্লাহ)। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়।
অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ্আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
কারণ, তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমানহারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী। কেননা কিতাবে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,
استحلال المعصية كفر.
অর্থাৎ, “গুণাহের কাজ বা হারামকে হালাল মনে করা কুফরী।” (শরহে আক্বাইদে নাসাফী।)
অতএব, বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ।
অনুরূপ “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধ নেই বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সকলের জন্যে ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ কুফরীমূলক বক্তব্য মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও বিশেষ ক্ষতির কারণ। কেননা যারা তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে (যদিও হারাম জেনেই তুলুক না কেন) তারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুণাহের কারণ। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থঃ হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইয়-এর ঘরে ছিলাম, তিনি তাঁর ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)
উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীতে” উল্লেখ আছে,
وفى التوضيح قال اصحابنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد االتحريم وهم من الكبائر.
অর্থঃ ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হযরত উলামায়ে কিরামগণ প্রত্যেকেই বলেন, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম, বরং শক্ত হারাম এবং এটা কবীরাহ গুণাহর অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
কাজেই, যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী তারা ও হক্ব সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে অর্থাৎ মূর্তি বা ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-এর রিযামন্দী হাছিল করতে পারে সে জন্যেই “কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি” পূণরায় প্রকাশ করা হলো।
পূর্ব প্রকাশিতের পর
সি সি টিভি বা ক্লোজ সার্কিট টিভির
শরয়ী ফায়ছালা
শরীয়তের দৃষ্টিতে সি.সি. টিভি বা ক্লোজ সার্কিট টিভিও টেলিভিশনের ন্যায় সম্পূর্ণ হারাম। কারণ টেলিভিশনে প্রদর্শিত দৃশ্যাবলী যেরূপ ছবির অন্তর্ভূক্ত, তদ্রুপ সি.সি টিভি বা ক্লোজ সার্কিট টিভিতে প্রদর্শিত দৃশ্যাবলীও ছবির অন্তর্ভূক্ত। সি.সি. টিভি বা ক্লোজ সার্কিট টিভির মাধ্যমে ধারণকৃত বা প্রদর্শিত দৃশ্যাবলী যে ছবি নিম্নোক্ত বর্ণনা দ্বারা তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
T.V/Closed Circuit T.V/Video Cassette Recorder/Video Cassette player ইত্যাদির কার্যাবলীকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
যথাঃ ১. Transmission বা প্রেরণ। ২. Medium বা মাধ্যম। ৩. Reception বা গ্রহণ T.V এবং V.C.R বা V.C.P এর ক্ষেত্রে প্রথমে কোন বস্তুর ছবি তুলে সেই ছবির বিভিন্ন অংশের, আর Closed Circuit T.V এর ক্ষেত্রে কোন বস্তুর সরাসরি বিভিন্ন অংশের প্রতিফলিত ফোটনের Frequency অনুযায়ী এক ধরনের Electrical Signal তৈরী হয়। সেই Signal কে আরও Processing এরপর Transmit করা হয়। T.V এর ক্ষেত্রে Transmit করা হয় বাতাসে। আর V.C.R এবং Closed Circuit T.V.এর ক্ষেত্রে তারের মধ্যে। মাধ্যম বাতাসই হোক আর তারই হোক সেটা Receiver (অর্থাৎ T.V) এ যখন আসে তখন সেটা Receive করার পর কিছু Processing করা হয়, এই Signal গুলো T.V তে অবস্থিত একটি Electronic Gun কে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে এই Gun টি T.V এর পর্দার যে অংশে যতটুকু Electron ছাড়লে হুবহু Transmit করা ছবির মত হবে সে অংশে ততটুকু ইলেক্ট্রন ছাড়ে। এই ঊ Electron গুলো রাসায়নিক প্রলেপ পতিত হয়ে উজ্জ্বল ও অনুজ্জ্বল বিন্দুর সমন্বয়ে ছবি তৈরী করে। এই ছবি T.V এর পর্দায় দেখা যায়। অর্থাৎ T.V/V.C.R/V.C.P/Closed Circuit T.V. সবক্ষেত্রেই পর্দায় যা আসছে সেটা সুস্পষ্ট এবং বিশেষভাবে অঙ্কিত ছবি।
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সি.সি টিভি বা ক্লোজ সার্কিট টিভিতে প্রদর্শিত ও ধারণকৃত দৃশ্যাবলী অবশ্যই ছবির অন্তর্ভূক্ত। আর শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা, রাখা ইত্যাদি সবই হারাম ও নাজায়িয।
এ সম্পর্কে মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ২০১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عن ابى معاوية رضى الله تعالى عنه ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.
অর্থঃ হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, “নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।”
‘মিশকাত শরীফ’ এর ৩৮৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ পাক ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।
উমদাতুল ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ৩৭৮ পৃষ্ঠা ও আয্ জাওয়াযির ২য় জিঃ ৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وفى التوضيح قال اصحبنا وغيرهم صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهم من الكبائر سواء صنعه لما يمتهن او لغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله وسواء كان فى ثوب او بساط او دينار اودرهم او فلس او اناء او حائط.
অর্থঃ ‘তাওদ্বীহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা হারাম, বরং শক্ত হারাম। এটা কবীরাহ গুনাহ। চাই ওটাকে যতœ বা সম্মান প্রদর্শন করুক বা না করুক কিংবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই বানিয়ে থাকুক। কেননা এরূপ কাজে আল্লাহ পাক-এর সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়। ওটা বস্ত্রে, বিছানায়, মোহরে, মুদ্রায়, পয়সায়, পাত্রে কিংবা প্রাচীর গাত্রে যে কোন স্থানে আঁকা বা নির্মাণ করা হারাম।
‘শরহে মুসলিম’ ও ‘ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়াহ’ কিতাবের ৩৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وهذه الاحاديث صريحة فى تحريم تصوير الحيوان وانه غليظة التحريم ايضا فيه وما من لم يقصد بها العبادة ولمضاهاة فهو فاسق صاحب ذنب كبير.
অর্থঃ উক্ত হাদীছ শরীফসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্মন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে। এটা তৈরী বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে। উক্ত কিতাবে আরও আছে, যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানিয়ে থাকে তবুও সে ফাসিক হবে এবং কবীরাহ গুণাহে গুণাহগার হবে।
ফখরুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ বুখারী শরীফের শরাহ “উমদাতুল ক্বারী”-এর ২২ খণ্ড ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেন,
صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهو من الكبائر وسواء صنعه لما يمتهن او بغيره فحرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله.
অর্থঃ “প্রাণীর ছবি তৈরী করা শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ। সম্মানের জন্য তৈরী করুক অথবা অন্য কারণে, সবটার একই হুকুম। অর্থাৎ প্রত্যেক অবস্থাতেই তা হারাম। কেননা, ছবি ও মূর্তি তৈরীর মধ্যে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে।
রঈসুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “শরহে নববী” ৭ম জিঃ ৮১ পৃষ্ঠায় লিখেন,
تصوير صورة الحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور فى الاحاديث وسواء صنعه بما يمتهن او بغيره فصنعته حرام بكل حال لان فيه مضاهاة لخلق الله تعالى.
অর্থঃ “প্রাণীর ছবি তৈরী করা শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। কেননা হাদীছ শরীফসমূহে এ ব্যাপারে কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাণীর ছবি সম্মানের জন্য তৈরী করুক অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে তার একই হুকুম। অর্থাৎ সর্বাবস্থায়ই প্রাণীর ছবি উঠানো হারাম। কেননা এতে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা প্রকাশ পায়।”
উক্ত কিতাবের উক্ত খ-ের ৮৪ পৃষ্ঠায় এ সম্পর্কে আরো উল্লেখ আছে যে,
قال العلماء سبب امتناعهم من بيت فيه صورة كونها معصية فاحشة وفيها مضاهاة لخلق الله تعالى …
অর্থঃ “উলামায়ে কিরামগণ বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি রয়েছে সে ঘরে ফেরেশ্তা প্রবেশ না করার কারণ হলো, ছবি তৈরী করা গুণাহ ও ফাহেশা কাজ এবং এতে স্রষ্টার সাদৃশ্যতা রয়েছে…।”
সুতরাং শরীয়তে যেহেতু ছবি তোলা আঁকা, রাখা সম্পূর্ণই হারাম সেহেতু সি.সি টিভি বা ক্লোজ সার্কিট টিভি ব্যবহার করাও শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। এটাই ইসলামী শরীয়তের ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।
নিরাপত্তার অজুহাতে সি. সি টিভি
লাগানো শরীয়তে জায়িয কি?
কেউ কেউ সি.সি টিভি বা ক্লোজ সার্কিট টিভিকে জায়িয করতে গিয়ে বলে থাকে যে সি.সি টিভিতে ফায়দা রয়েছে। কারণ সি.সি টিভি মানুষের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ।
তাদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, কোন কিছুর মধ্যে ফায়দা থাকলেই যে তা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য ও বৈধ হবে তা নয়। বরং শরীয়তের ফায়ছালা হলো যা হারাম তার মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতে যতই ফায়দা থাকুক না কেন তা সুস্পষ্ট হারাম। মহান আল্লাহ পাক নিজেই কালামুল্লাহ শরীফে এর ফায়ছালা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيْهِمَاۤ اِثْمٌ كَبِيْرٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثْمُهُمَاۤ اَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا.
অর্থঃ হে হাবীব! আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, মদ ও জুয়া সম্পর্কে। আপনি বলে দিন, এ দু’টির মধ্যে রয়েছে কবীরাহ গুনাহ। এবং মানুষের জন্য ফায়দাও রয়েছে। তবে ফায়দার চেয়ে গুনাহই বড়। (সূরা বাক্বারা-২১৯)
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, আল্লাহ পাক নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মদ ও জুয়ার মধ্যে দুনিয়াবী ফায়দা রয়েছে। মদ পান করলে স্বাস্থ্য ভাল হয়, জুয়া খেললে রাতারাতি অনেক টাকা পাওয়া যায়। তথাপি এগুলোর মধ্যে ফায়দার চেয়ে গুণাহ বেশী বলে এগুলোকে হারাম করা হয়েছে। সুতরাং মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারিতা থাকা সত্বেও এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়, এগুলো হারাম। মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারিতার জন্য কেউ যদি এটাকে জায়িয মনে করে, তবে সে কুফরী করলো। তদ্রুপ ছবির মাধ্যমে নিরাপত্তার বিষয়কে কেউ যদি জায়িয মনে করে তবে সেও কুফরী করলো।
সুতরাং ক্লোজ সার্কিট টিভির মধ্যে যতই ফায়দা থাকুক না কেন, যেহেতু তার মূলই হলো ছবি যা স্পষ্টতই হারাম ও নাজায়িয। তাই সমস্ত মুসলমানদের জন্য ক্লোজ সার্কিট টিভিও সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, সি.সি টিভি নিরাপত্তা দান করে একথা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। কারণ কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা বস্তু কাউকে নিরাপত্তা দিতে পারেনা বা হিফাজতও করতে পারে না। বরং নিরাপত্তা দেয়ার ও হিফাযত করার মালিক হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
فَاللهُ خَيْرٌ حَافِظًا وَّهُوَ اَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ
অর্থাৎ, “মহান আল্লাহ পাকই হচ্ছেন উত্তম হিফাযতকারী। নিরাপত্তা দানকারী এবং দয়ালু ও করুনাময়।”
যেমন- মহান আল্লাহ পাক মক্কা শরীফকে ধ্বংস করতে আসা হস্তিবাহিনীকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়ে নিজেই নিজের ঘর কা’বা শরীফকে হিফাযত করেছেন। অনুরূপ বাদশা নূরুদ্দীনের সময় শিয়ারা যখন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জিস্ম মুবারক চুরি করতে আসে, তখন আল্লাহ পাকই তাদেরকে কুদরতীভাবে ধরিয়ে জিস্ম মুবারক হিফাযত করেন।
পক্ষান্তরে সি.সি. টিভির নিরাপত্তা দান করার বা হিফাযত করার কোনই ক্ষমতা নেই। কারণ একটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরিত হলে এরূপ হাজার হাজার সি.সি. টিভি নিমিষেই উড়ে যাবে। এমনটি নয় যে, সি.সি. টিভি বোমা বিস্ফোরণ ঠেকাতে পারবে। তাহলে সি.সি. টিভি যে নিজেই নিজের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সে অন্যের নিরাপত্তা দিবে কিভাবে?
কাজেই, সি.সি. টিভি হিফাযত করে বা নিরাপত্তা প্রদান করে একথা বলে তারা সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদাকে বিনষ্ট করছে। অর্থাৎ আল্লাহ পাকই যে প্রকৃত হিফাযতকারী বা নিরাপত্তা প্রদানকারী এ আক্বীদা-বিশ্বাস থেকে মানুষকে সুকৌশলে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, হাক্বীক্বতেও সি.সি. টিভি কোন প্রকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এবং কোন প্রকার নিরাপত্তাও দিতে পারে না। নিম্নোক্ত তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা থেকে তা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়।
“বর্তমানে অনেক মানুষ মনে করে সিসিটিভি একটি শক্তিশালী অপরাধ নিয়ন্ত্রক। কিন্তু সিসিটিভির উপর অনেক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যে, অপরাধের মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে এর কোন প্রভাব নেই। উদাহরণতঃ ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার অপরাধ দমন বিভাগ এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অপরাধ দমনের অস্ত্র হিসেবে সিসিটিভি কোন গুরুত্ব বহন করে না। আরো দেখা গেছে যে, যেখানে সিসিটিভি রয়েছে সেই জায়গা থেকে যেখানে সিসিটিভি নেই সেখানে অপরাধের মাত্রা কম। আবার যেখানে সিসিটিভি নেই সেখানে সিসিটিভি স্থাপন করার পর অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এটা সুস্পষ্ট যে, সিসিটিভি ক্যামেরা কখনই অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারে না।
শুধু তাই নয়, “সিসিটিভি ক্যামেরা বোমার বিষ্ফোরণ প্রতিরোধেও অক্ষম। বরং সমস্ত ক্যামেরাগুলিই বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায়। সিসিটিভিগুলির নিজেরই যেখানে কোন নিরাপত্তা নেই সেখানে কি করে মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে?
সম্প্রতি ‘প্রাইভেসী ইন্টারন্যাশনাল ওয়েব সাইট’ (www.privacyinternational.org) এর মাধ্যমে পাওয়া ৩টি সন্ত্রাস সম্পর্কিত রিপোর্টে সিসিটিভির কার্য্যকারীতা নিয়ে প্রচলিত চিন্তাধারার সমালোচনা করা হয়েছে। ‘দি স্কটিশ সেন্টার ফর ক্রিমিনোলজি’-র পরিচালক যুক্তি দিয়ে বলে যে, সিসিটিভির মাধ্যমে অপরাধ দমনের দাবি ফ্যান্টাসি ছাড়া আর কিছুই নয়। অদক্ষ এবং স্বপ্রণোদিত আইনজীবি দ্বারা স্ট্রেথক্লাইড ইউনিভার্সিটি ‘দি ব্রিটিশ জার্নাল অব ক্রিমিনোলজি’ হেডিংএ এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। যাতে বলা হয়েছে, সিসিটিভি খুব সামান্যই অপরাধকে দমন করতে পারে। এখানে প্রমাণ করা হয়েছে যে, রাস্তার বাতির আলো সিসিটিভি থেকেও অনেক বেশী অপরাধের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
২০০৫ সালের জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জন স্টেনহোপ বলেছিলেন, “শহরে আরও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের চেয়ে আরও পুলিশ নিয়োগ দেয়া আমি বেশী পছন্দ করি।”
২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব ক্রিমিনোলজির রিপোর্টে বলা হয়, সিসিটিভি পদ্ধতি স্থাপন করা, নিয়ন্ত্রণ করা ও তা পরিচালনা করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
সিসিটিভি স্থাপনের খরচ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে কিন্তু পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করা আরও বেশি ব্যয়বহুল। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ক্যামেরা স্থাপনের সার্বিক খরচের শতকরা ৭০ ভাগ খরচ হয় পর্যবেক্ষণকারী ব্যক্তিদের জন্য। ২০০৪ সালে হজ্জের সময় হজ্জের প্রশাসনিক সুবিধাদি বৃদ্ধি করতে গিয়ে মোট খরচ হয়েছিলো ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে অনেক টাকাই খরচ হয়েছে হজ্জের সময় সিসিটিভি স্থাপন এবং তা পরিচালনা করতে।
সিসিটিভির ফুটেজে অনুমতিহীনভাবে যা সংরক্ষণ করা হয় তার জন্য খুব কমই আইন রয়েছে। গত বছর একটি মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ধরা পড়ে যে, তথ্য সংরক্ষণ আইন (উধঃধ চৎড়ঃবপঃরড়হ অপঃ) সিসিটিভির উপর প্রয়োগ করা যায় না যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে না হয়। সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৯০ ভাগ সিসিটিভি তথ্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ব্যবহৃত হচ্ছে না।
বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি স্থাপনের ফলে মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা কমে যাচ্ছে। বর্তমানে ইংল্যান্ডের হিথ্রু বিমানবন্দরের ৪ নং টার্মিনালে এমন একটি স্ক্যানিং মেশিন দিয়ে বিমান যাত্রীদের পরীক্ষা করা হয় যা দ্বারা একজন মানুষের পরিহিত কাপড়ের ভিতরের শরীরকে স্পষ্টভাবে দেখা যায় নাউযুবিল্লাহ। এই ধরণের পরীক্ষা কি মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়ে তাদের অবাঞ্চিত প্রবেশ নয়? বর্তমান সৌদি সরকারও সীমালঙ্ঘন করে মুসলমানদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় অবৈধ হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছে। এটা সুস্পষ্টভাবে অন্যায় চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে, প্রকৃত উদ্দেশ্যকে গোপন করে ছবি তোলার বিষয়টি এমনই হয়ে গেছে যে সৌদি সরকার যখন যা চায় তাই করে যাচ্ছে। আজকে অনেক মুসলমান তাদের সাজানো এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে তাদের কার্যক্রমকে মেনে নিচ্ছে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, যারা দাবী করে থাকে যে, সি.সি টিভি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে বা নিরাপত্তা প্রদান করে তাদের এ দাবী সম্পূর্ণই মিথ্যা ও অবান্তর।
কাজেই, নিরাপত্তার ফায়দার অজুহাতে সি.সি. টি.ভি ব্যবহার অর্থের অপচয় অপরের ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর অবৈধ হস্তক্ষেপ ও পাপ বা হারাম কাজের বিস্তার বৈ কিছুই নয়। তাছাড়া যেখানে নিরাপত্তার বৈধ ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে হারাম পদ্ধতিতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা কি করে শরীয়তসম্মত হতে পারে?
মূলকথা হলো- নিরাপত্তার অজুহাতে হোক আর সাধারণভাবে হোক সর্বাবস্থায় মুসলমাদের জন্য সি.সি. টিভি ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয।
কা’বা শরীফ, মক্কা শরীফ-এর হিফাযতকারী আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই। সিসিটিভি বা কোন ব্যক্তি বা কোন গোষ্ঠী এর হিফাযতকারী নয়।
নিরাপত্তা বা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে পবিত্র স্থানসমূহে ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি শুধু শরীয়তেই হারাম নয়, মুসলমানদের কাছে তা একটি অবান্তর এবং বিবেক বর্জিত বিষয়।
সাধারণভাবে যা ধারণা করা হয় তার চেয়েও অনেক বেশি ক্যামেরার সাহায্যে হাজীদের পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং তাদের ছবি রেকর্ড করা হয়। ২০০৫ সালে মক্কার পবিত্র স্থানসমূহে স্থাপিত ৯০০০ এরও বেশী সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে হজ্জের মৌসুমে হাজীদের নিরাপত্তার নামে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিলো। মসজিদুল হারাম, মিনা, আরাফা এবং অন্যান্য পবিত্র স্থানগুলোকে সৌদি আরবের সিভিল ডিফেন্স পরিদপ্তর নিরীক্ষণের জন্য সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে চাচ্ছে। জামারাত ব্রিজের চারিদিকে (যে যায়গায় অতীতে অনেকগুলো দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল) প্রায় ১০০০টি সিসিটিভি স্থাপিত রয়েছে। জামারাত এবং অন্যান্য জায়গায় গৃহীত সকল ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল শুধু ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যেন এই সতর্কতামূলক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা অপ্রীতিকর ঘটনাকে প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে অপরাধ এবং অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সিসিটিভি দ্বারা নিরীক্ষণের কার্যকারীতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ এবং বিতর্ক রয়েছে। যা আপনারা ইতিপূর্বের বর্ণনা দ্বারা অবগত হয়েছেন।
নিরীক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত সি.সি. টিভি ক্যামেরাগুলো যখন চালু থাকে তখন এগুলো প্রতি সেকেন্ডে ৪০০টি ছবি তুলতে সক্ষম। প্রশ্ন হলো- কেন মুসলমানরা নিরাপত্তা বা পর্যবেক্ষণের নামে তাদের ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় বিষয়ে অন্য কারও অবৈধ হস্তক্ষেপ মেনে নিবে? তাছাড়া পবিত্র মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফের হিফাযতের দায়িত্ব কি কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সি.সি. টিভির উপর ন্যাস্ত করা হয়েছে? হয় নাই। বরং পবিত্র মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এর নিরাপত্তা ও হিফাযতের জিম্মাদারী হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক।
যেমন যমীনের বুকে বাইতুল্লাহ বা কা’বা শরীফই হচ্ছে প্রথম ঘর। যা মানবজাতির ইবাদতের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম ফেরেশতাদের মাধ্যমে এই সম্মানিত ঘর তৈরি করেন। আর এ ঘরের হিফাযতকারী তিনি নিজেই।
হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম-এর যামানায় সারা বিশ্বব্যাপী যখন প্লাবন হয়েছিলো তখন আল্লাহ পাক এ পবিত্র ঘরকে আসমানে তুলে নিয়ে হিফাযত করেন।
কালামুল্লাহ শরীফ-এর ‘সূরা ফীল’-এ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
الم تر كيف فعل ربك باصحاب الفيل. الم يجعل كيد هم فى تضليل. وارسل عليهم طيرا ابابيل. ترميهم بحجارة من سجيل. فجعلهم كعصف مأكول.
অর্থঃ “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কি দেখেননি অর্থাৎ আপনি তো দেখছেন যে, আপনার রব হস্তিওয়ালাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন এবং তাদের কূটকৌশল কিভাবে ধুলিস্যাত করেছেন, এবং প্রেরণ করেছেন তাদের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি, উহারা তাদের উপর কঙ্করময় পাথর নিক্ষেপ করেছে, অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণের ন্যায় করেছেন।”
‘সূরা ফীল’-এর মধ্যে বাইতুল্লাহ বা কা’বা শরীফের হিফাযতকারী যে স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজেই সে বিষয়টা স্পষ্ট করে সমস্ত দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
‘সূরা ফীল’-এর শানে নূযুল সম্পর্কে ‘তাফসীরে ইবনে জারীর ত্ববারী, কবীর, কুরতুবী, মাদারিক, খাযিন, বাগবী, ইবনে কাছীর, মুনীর, মুয়ালিম, ইবনে আব্বাস, দুররে মানছূর, জালালাইন, মাযহারী, আমীনিয়া, কাশ্শাফ ইত্যাদি তাফসীরগ্রন্থে লিখিত আছে, আবিসিনিয়ার রাজার অনুমতিক্রমে তার প্রতিনিধি হিসেবে আবরাহা নামে এক ব্যক্তি ইয়েমেনের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হয়। আবরাহা লক্ষ্য করলো, হজ্জের সময় লক্ষ লক্ষ লোক প্রচুর মাল-সম্পদ নিয়ে মক্কা শরীফে হজ্জ করতে যায়, তা দেখে সে ঈর্ষান্বিত হয় এবং চিন্তা করে, ইয়েমেনে সানআ’ শহরে একটা সুন্দর গির্জা তৈরি করে মানুষদেরকে হজ্জ করার জন্য আহবান করবে। তার ডাকে লোকজন যদি সাড়া দিয়ে হজ্জ করতে আসে তাহলে সমস্ত পশুপাল ও মাল-সম্পদ দ্বারা সে ফায়দা লাভ করতে পারবে। এ খেয়ালে সে ইয়েমেনের সানআ’ শহরে মূল্যবান পাথর দিয়ে একটা গির্জা তৈরি করে। সে গির্জাকে ‘খলীছা’ নামে নামকরণ করে। গির্জার দেয়ালগুলি স্বর্ণ, মণি-মুক্তা, হীরা-জহরত দিয়ে প্রলেপ দেয় এবং নানা রকম মূর্তি, প্রতিমা স্থাপন করে। অতঃপর সে তার দেশ ও আশেপাশের এলাকায় ঘোষণা করে দেয়, যাতে সকলে মক্কা শরীফ না গিয়ে তার এ ‘খলীছা’ গির্জায় হজ্জ করতে আসে। এতে আরববাসী বিশেষ করে মক্কাবাসী ও তাঁর অধিবাসী কুরাইশগণ অসন্তুষ্ট হন।
ঘটনা প্রবাহে কেনানা গোত্রের এক ব্যক্তি পূর্বোক্ত গির্জায় চাকুরি নেয়। অতঃপর সে সুযোগ বুঝে এক রাত্রিতে সে গির্জায় প্রবেশ করে সেখানে ইস্তিঞ্জা করে অপবিত্র করে সেখান থেকে চলে যায়।
অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, এক ব্যবসায়ী কাফেলা সেখানে রাত্রি যাপন করে। তারা আলো এবং খাবার পাক করার জন্য আগুন জ্বালায় সে আগুনে হঠাৎ গির্জার একটা অংশ পুড়ে যায়। আবরাহার কিছু লোক যারা সেখানে পূজা করতো তারা সে স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। এটা শুনে আবরাহা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয় এবং শপথ করে, কা’বা শরীফ সে ধ্বংস করে দিবে। (নাঊযুবিল্লাহ) কারণস্বরূপ সে বলে, মক্কা শরীফের অধিবাসীরাই তার গির্জা অপবিত্র করেছে ও পুড়িয়ে দিয়েছে। তখন সে আবিসিনিয়ার রাজাকে ব্যাপারটা জানিয়ে মক্কা শরীফের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অনেক সৈন্য-সামন্ত ও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হস্তি মাহমুদসহ ১৩টি হস্তি নিয়ে মক্কা শরীফের দিকে রওয়ানা হয়। আবরাহা চেয়েছিল, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আটটা হস্তি দিয়ে কা’বা শরীফের চারটা ভিতের সাথে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে সজোড়ে টান দিয়ে কা’বা শরীফকে সহজেই ভূপাতিত করবে। রাস্তায় অনেকে বাধা দেয়া সত্বেও সে বাধা উপেক্ষা করে মক্কা শরীফে পৌঁছে। সেখানে মক্কাবাসীদের উটসহ অনেক চতুষ্পদ জন্তু লুটপাট করে নেয়। তারমধ্যে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম-এর দুইশত উটও ছিল। এ সংবাদ শুনে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম আবরাহার সাথে দেখা করেন এবং উনার দুইশত উট ফেরত চান। আবরাহা উনাকে দেখে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত তা’যীম-তাকরীম করে এবং বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, আপনি কা’বা শরীফ হিফাযতের কথা না বলে শুধু আপনার উট চাইলেন, এর কি কারণ?
জবাবে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম বলেন, উটের মালিক আমি সেজন্য উটগুলি হিফাযত করা আমার দায়িত্ব। আর কা’বা শরীফের মালিক আমি নই। কা’বা শরীফের মালিক হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক। আর আমি হচ্ছি কা’বা শরীফের খিদমতগার বা খাদিম। কাজেই, আল্লাহ পাক-এর ঘর কা’বা শরীফ আল্লাহ পাক নিজেই হিফাযত করবেন; তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর তোমাদের সাথে যুদ্ধ করার আদৌ কোন ইচ্ছা আমাদের নেই। এখন তোমার যা ইচ্ছা তুমি তা-ই করতে পারো। আমরা অতিসত্ত্বর স্থান ত্যাগ করে নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয় নিবো।
অতঃপর আবরাহা হযরত মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম-এর উট ফেরত দিলো। হযরত মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম কিছু লোকজনসহ কা’বা শরীফে গিয়ে গিলাফ ধরে আল্লাহ পাক-এর নিকট রোনাজারি করে দুয়া করলেন এবং বললেন, আয় আল্লাহ পাক! আপনি ঘরের মালিক ও হিফাযতকারী। আমি এ ঘরের দেখাশুনার দায়িত্বে ছিলাম তা যথাযথ পালন করার চেষ্টা করেছি। এখন আবরাহা এসেছে কা’বা শরীফের ক্ষতি করার জন্য। সে যে পরিমাণ সৈন্য-সামন্ত ও অস্ত্রপাতি নিয়ে এসেছে তাকে বাধা দেয়ার মত আমাদের ক্ষমতা নেই। কাজেই, আপনার ঘর আপনার হিফাযতে দিয়ে আমরা নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয়ে চলে যাচ্ছি।
পরের দিন আবরাহা তার সমস্ত বাহিনী নিয়ে কা’বা শরীফের ক্ষতি করার জন্য অগ্রসর হলো। কিন্তু হস্তিগুলো একটাও সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো না। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেলো, কিছু ক্ষুদ্র আকৃতির পাখি যা আকারে কবুতরের চেয়ে ছোট। কতগুলি সাদা বর্ণের, কতগুলি কালো বর্ণের, কতগুলি নীল বর্ণের। সমুদ্রের দিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে লাগলো। উহাদের মাথা ছিলো হিংস্র জন্তুর মত, ঠোট ছিলো হস্তির শুঁড়ের মত আর নখগুলি ছিলো কুকুরের মত। প্রত্যেকটি পাখি তিনটি কঙ্করময় প্রস্তুর বহন করে এনেছিলো। একটি ঠোটে, দু’টি পায়ে। আবরাহা ও তার বাহিনীর উপরে এসে সে কঙ্করগুলি নিক্ষেপ করতে লাগলো। এর ফলে তৎক্ষণাৎ কিছু ধ্বংস হয়ে গেলো। কিছু আহত অবস্থায় পলায়ন করার পথে ধ্বংস হলো। কঙ্করগুলি উপর দিক থেকে পড়ে নিচ দিয়ে বের হয়ে মাটিতে অদৃশ্য হয়ে যেত। যার কারণে আবরাহার সৈন্য বাহিনী, হস্তিবাহিনী ভক্ষিত তৃণের ন্যায় দলিত-মথিত হয়ে গেলো। কুরাইশগণ দূর থেকে এ ঘটনা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন। আর কঙ্করগুলি ছিলো ডাল অপেক্ষা বড় ও ছোলা বুট থেকে ছোট। আবরাহা ইয়েমেন পর্যন্ত পৌঁছলো। এবং তার উপর দিয়ে পাখিগুলি উড়তে থাকলো। সেখানে পৌঁছার পরে পাখির কঙ্কর নিক্ষেপের কারণে সেও ভক্ষিত তৃণের ন্যায় দলিত মথিত হয়ে গেলো। আর তার মন্ত্রী ইয়াকছুম পালিয়ে আবিসিনিয়ায় রাজার কাছে এ সংবাদ পৌঁছায়। তার উপর দিয়েও একটি পাখি উড়ছিলো। সে সংবাদ পৌঁছানোর পর পাখিটি কঙ্কর নিক্ষেপ করায় সেও ভক্ষিত তৃণের ন্যায় দলিত মথিত হয়ে যায়।
এ সূরায় বর্ণিত ঘটনা থেকে বান্দা ও উম্মতকে এ নছীহত গ্রহণ করতে হবে যে, আল্লাহ পাক তাঁর ঘর কা’বা শরীফকে সবসময়ই কুদরতীভাবে হিফাযত করেছেন, করেন ও করবেন। কাজেই, এই ঘর হিফাযত করার জন্য বান্দাদের কখনও চিন্তিত ও পেরেশান হওয়ার প্রয়োজন নেই। কা’বা শরীফ, মক্কা শরীফ-এর হিফাযতকারী আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই। সিসিটিভি বা কোন ব্যক্তি বা কোন গোষ্ঠী এর হিফাযতকারী নয়।
অথচ দেখা যাচ্ছে, সউদী ওহাবী সরকার ও উলামায়ে ‘ছূ’, যারা ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিক এক কথায় বেদ্বীনদের গোলাম তারা একত্রিত হয়ে কা’বা শরীফ হিফাযতের নাম দিয়ে মক্কা শরীফের হেরেম শরীফের ভিতরে অর্থাৎ কা’বা শরীফ, ছাফা, মারওয়া, মিনা, মুজদালিফা, আরাফা ইত্যাদি স্থানে প্রায় দশ হাজারেরও বেশী সিসিটিভি ফিট করেছে। অনুরূপ মদীনা শরীফেও করেছে। অথচ হাজার হাজার হাদীছ শরীফে রয়েছে, “ছবি তোলা, আঁকা হারাম”। অর্থাৎ সউদি ওহাবী সরকার ইহুদী-নাছারাদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে হজ্জের সময় মুসলমানদের দ্বারা হারাম কাজ করিয়ে মুসলমানদের পবিত্র হজ্জকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাই সউদী সরকারের জন্য ফরয হলো, এই সমস্ত সি.সি. টিভিগুলি খুলে নেয়া। আর যদি না খুলে তাহলে দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানদের জন্য ফরয হলো, এর শক্ত প্রতিবাদ করা।
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফের “সূরা মায়িদা-এর ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
لتجدن اشد الناس عداوة للذين امنوا اليهود والذين اشركوا.
অর্থঃ “তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে। অতঃপর যারা মুশরিক তাদেরকে।”
অর্থাৎ, ইসলাম ও মুসলমানের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো প্রথমতঃ ইহুদীরা, দ্বিতীয়তঃ মুশরিকরা, আর তৃতীয়তঃ হচ্ছে নাছারারা। এক কথায় সকল বিধর্মীরাই ইসলাম ও মুসলমানের শত্রু। তাই বলা হয়-
الكفر ملة واحدة
অর্থঃ “সমস্ত কাফিরেরা মিলে এক ধর্ম।” অর্থাৎ, কোন কোন বিষয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও ইসলাম ও মুসলমানের ক্ষতিসাধনে তারা সবাই একজোট। ইহুদী-খ্রিস্টান, হিন্দু-বৌদ্ধ, মজুসী ও মুশরিক তারা সবাই মিলে সর্বদাই চেষ্টা করে থাকে কি করে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যায় এবং তাদের ঈমান আমল নষ্ট করে কাফিরের পরিনত করা যায়।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক ‘সূরা বাক্বারায়’ ১০৯ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
ود كثير من اهل الكتاب لو يردونكم من بعد ايمانكم كفارا حسدا من عند انفسهم.
অর্থঃ “ইহুদী-নাছারা তথা আহলে কিতাবদের মধ্যে অনেকেই প্রতিহিংসাবশত চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে কোন রকমে কাফির বানিয়ে দিতে।”
কাজেই, বিধর্মীরা যেহেতু ইসলাম ও মুসলমানদের চরম পরম শত্রু তাই তারা হিংসার বশবর্তী হয়েই মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করে কাফির বানানোর লক্ষ্যেই ইসলাম ও মুসলমানের নামে বা ছূরতে প্রথমতঃ বাতিল ফিরক্বাগুলো আবিষ্কার করে। যে বাতিল ফিরক্বা সম্পর্কে ছাহিবে ইলমে গাইব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
ستفترق امتى على ثلاث وسبعين ملة كلهم فى النار الا ملة واحدة قالوا من هى يا رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ما انا عليه واصحابى رواه الترمذى وفى رواية احمد وابى داود عن معاوية ثنتان وسبعون فى النار و واحدة فى الجنة وهى الجماعة.
অর্থঃ “অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত বাহাত্তরটি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যে একটি দল নাযাতপ্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং আমার ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত ও পথের উপর যারা কায়িম থাকেব, (তারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল)।” ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহা বর্ণনা করেন। আর মুসনাদে আহমদ ও আবূ দাউদের বর্ণনায় “হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, ৭২টি দল জাহান্নামে যাবে, আর একটি দল জান্নাতে যাবে। মূলতঃ সে দলটিই হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।”
উল্লেখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা মূলতঃ এটাই বুঝানো হয়েছে যে, “কলেমা গো মুসলমানই” ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে ৭২টি দলই জাহান্নামী, গোমরাহ ও বাতিল। আর একটিমাত্র দল জান্নাতী। সেটা হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব মিশকাত শরীফের শরাহ “মিরকাত শরীফ”-এর ১ম জিঃ ২৪৮ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন যে,
ونقل الابهرى ان المراد بالامة امة الاجابة عند الاكثر (كلهم فى النار) … (الا ملة) بالنصب اى الا اهل ملة (واحدة قالوا من هى) اى تلك الملة اى اهلها الناجية … (قال ما انا عليه واصحابى) … فكذا هنا المرادهم المهتدون المتمسكون بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين من بعدى فلا شك ولا ريب انهم هم اهل السنة والجماعة وقيل التقدير اهلها من كان على ما انا عليه واصحابى من الاعتقاد والقول والفعل فان ذالك يعرف بالاجماع فما اجمع عليه علماء الاسلام فهو حق وما عداه باطل.
অর্থঃ আবহুরী বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই (হাদীছ শরীফে বর্ণিত) উম্মত শব্দ দ্বারা উম্মতে ইজাবত তথা “কলেমাগো”দেরকেই বুঝানো হয়েছে। অধিকাংশ আলিমগণের এটাই অভিমত। (উম্মতের ইজাবতের) প্রত্যেক দল জাহান্নামী .. একদল ব্যতীত। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, সে দল কোনটি অর্থাৎ নাযাতপ্রাপ্ত দল কোনটি? … হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি বলেন, আমি ও আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত ও পথে যারা কায়িম থাকবে (তারাই নাযাতপ্রাপ্ত দল) … মূলতঃ উহার দ্বারা এটাই বুঝিয়েছেন যে, তারা হিদায়েপ্রাপ্ত। আমার এবং আমার পর খুলাফায়ে রাশিদীনগণের সুন্নত ধারণকারী। অতএব, এতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই যে, তারাই আহলে সুন্নত ওয়া জামায়াত। আরো বলা হয়েছে যে, আক্বীদা, ক্বওল ও ফে’লের দিক থেকে তারা আমি ও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসারী হবে। এটা মূলতঃ ইজমা দ্বারা প্রমাণিত, উলামায়ে ইসলাম যার উপর ইজমা করেছেন, সেটাই হক্ব। এছাড়া (অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত ছাড়া) যা রয়েছে, সবই বাতিল।”
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, উম্মতে ইজাবত বা “কলেমাগো” বা কালিমা পাঠকারীদের মধ্যেই আক্বীদা, ক্বওল ও ফে’লের ভিত্তিতে ৭৩টি দল হবে, তন্মধ্যে একটিমাত্র দল নাযাতপ্রাপ্ত, জান্নাতী ও হক্ব। আর ৭২টি দল জাহান্নামী, গোমরাহ ও বাতিল। এ ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসরনীয় সকল ইমাম, মুজতাহিদ, মুহাক্কিক, মুদাক্কিক, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, ফক্বীহ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ একমত।
উক্ত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ‘মিরকাত’ শরীফের উক্ত স্থানে আরো উল্লেখ আছে যে,
واعلم اصول البدع كما نقل فى المواقف ثمانية.
(۱ ) المعتزلة … وهم عشرون فرقة.
(۲ ) والشيعة … وهم اثنان وعشرون فرقة.
(۳ ) والخوارج … وهم عشرون فرقة.
(৪ ) والمرجئة … وهى خمس فرق.
(৫ ) والنجارية … وهم ثلاث فرق.
(৬ ) والجبرية … فرقة واحد.
(৭ ) والمشبهة … فرقة ايضا.
فتلك اثنان وسبعون فرقة كلهم فى النار.
(৮ ) والفرقة الناجية هم اهل السنة البيضاء المحمدية والطريقة النقية.
অর্থঃ জেনে রাখ! (উক্ত ৭৩টি দল) প্রধাণতঃ ৮টি দলে বিভক্ত, যা “মাওয়াক্বিফ” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
১. মু’তাযিলাহ … এর বিশ (২০) দলে বিভক্ত।
২. শিয়া … এরা বাইশ (২২) দলে বিভক্ত।
৩. খারিজী … এরা বিশ (২০) দলে বিভক্ত।
৪. মরজিয়াহ … এরা পাঁচ (৫) দলে বিভক্ত।
৫. নাজ্জারিয়্যাহ … এরা তিন (৩) দলে বিভক্ত।
৬. জাবারিয়্যাহ … এরা এক (১) দলেই রয়েছে।
৭. মুশাব্বিহাহ্ … এরাও এক (১) দলেই রয়েছে।
সুতরাং উল্লেখিত ৭২টি দল, তারা প্রত্যেকেই জাহান্নামী।
৮. আর (ناجية) নাজিয়াহ বা নাযাতপ্রাপ্ত দল, তারা হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্পষ্ট সুন্নত ও উজ্জ্বল তরীক্বতের অনুসারী। অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত।
অতএব, বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, উল্লেখিত ৭২টি দল “কলেমাগো” হওয়া সত্ত্বেও জাহান্নামী, গোমরাহ ও বাতিল তথা অমুসলিম। কারণ তাদের আক্বীদা, ক্বওল ও ফে’ল কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণ খিলাফ। আর যাদের আক্বীদা ও আমল আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসভিত্তিক, একমাত্র তারাই নাযাতপ্রাপ্ত।
এছাড়াও মিশকাত শরীফের শরাহ শরহুত ত্বীবী, আশয়াতুল লুময়াত, তানযীমুল আশতাত, মুযাহিরে হক্ব, তা’লীকুছ ছবীহ, মিরআতুল মানাজীহ ও রদ্দে রাওয়াফেজ, তোহফায়ে ইছনা আশারীয়া, গুনিয়াতুত তালিবীন, তালবীসুল ইবলীস ইত্যাদি আরো অনেক কিতাবেই উল্লেখিত ৭২টি দলকে
كلهم فى النار الا ملة واحدة
এ হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে গোমরাহ, বাতিল ও জাহান্নামী বলা হয়েছে। যেহেতু তারা ইহুদী-নাছারাদের দ্বারা সৃষ্ট ও অসংখ্য কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আক্বীদায় বিশ্বাসী। অর্থাৎ বাহাত্তরটি বাতিল ফিরক্বা সৃষ্টি করে তারা অসংখ্য মুসলমানকে ছহীহ আক্বীদা ও আমল থেকে ফিরায়ে কুফরী আক্বীদা ও শরীয়ত বিরোধী আমলে মশগুল করে জাহান্নামী করে দেয়। (নাউযুবিল্লাহ)
স্মর্তব্য, ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র এখানেই থেমে যায়নি। এর পর তারা সৃষ্টি করলো বাহাই ও কাদিয়ানী ফিরক্বা যার মাধ্যম দিয়ে অসংখ্য মুসলমানকে “খতমে নুবুওওয়াতের” মত একটি গুরুত্বপূর্ণ আক্বীদা থেকে সরিয়ে কাফির ও চির জাহান্নামী বানিয়ে দিয়েছে। কারণ ইসলামী শরীয়তের ফায়ছালা মোতাবেক যারাই খতমে নুবুওওয়তকে অস্বীকার করবে তারাই কাফির ও চির জাহান্নামী হবে।
উল্লেখ্য, মুসলমানদের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে চিরজাহান্নামী করার বিধর্মীয় ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত আছে। ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীরা এখন কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ নিয়ে পড়া-শোনা করে, ইউরোপ আমেরিকায় অনেক ইহুদী-নাছারা রয়েছে যারা কুরআনে হাফিয ও হাফিযে হাদীছ। প্রশ্ন হচ্ছে তারা ইহুদী-নাছারা হয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ পড়ছে কেন? আর তার উপর গবেষণাই বা করছে কেন? কি তাদের উদ্দেশ্য?
মূলত এর মধ্যেও রয়েছে তাদের গভীর ষড়যন্ত্র! তারা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ গবেষণ া করে এমন বিষয়গুলো বের করে যে বিষয়গুলো দিয়ে মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করে কাফির ও জাহান্নামী করা যায়। একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি সকলের নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠবে। যেমন হাদীছ শরীফে রয়েছে,
الديوث لا يدخل الجنة
অর্থাৎ, দাইয়ূছ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (নাসায়ী, মুসনাদে আহমদ)
ইহুদী-নাছারারা উক্ত হাদীছ শরীফ গবেষণা করে সিদ্ধান্ত নিল যে, যেকোন মূল্যে মুসলমানদেরকে দাইয়ূছ বানিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ বেপর্দা করে দিতে হবে। এলক্ষে তারা কাজ শুরু করেছে এবং অনেকটা সফলও হয়েছে। আজ সারা বিশ্বের অধিকাংশ মহিলাই চরম বেপর্দা। তারা আজ পুরুষের সাথে একই অফিসে চাকুরী করছে, লেখা-পড়া করছে, সিনেমা করছে, গান গাইছে, রাজনীতি করছে, খেলা-ধূলা করছে। অর্থাৎ নানানভাবে আজকে মহিলাদেরকে বেপর্দা করা হচ্ছ্।
আর এক্ষেত্রে ইহুদী-নাছারারা রয়েছে পরোক্ষভাবে আর প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে, ইহুদীদের আরেক এজেন্ট ‘ওহাবী সম্প্রদায়’। ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে “ছূ”রা ইহুদীদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মুসলমানদের ঈমান-আমল ধ্বংস করার লক্ষে হারাম টিভি চ্যানেল, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে। যেমন- তারা প্রচার করছে- ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদ্য়াত ও হারাম। নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা বিদ্য়াত, শবে বরাত পালন করা বিদ্য়াত, তরাবীহ নামায জরুরী কোন নামায নয়, আট রাকায়াত তারাবীহ পড়লেই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাউযুবিল্লাহ)
অথচ উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ তথা শরীয়তসম্মত এবং তন্মধ্যে কোনটা সুন্নত আবার কোনটা ফরয।
পক্ষান্তরে উলামায়ে ‘ছূ’ তথা দুনিয়াদার মাওলানারা টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, নোবেল, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা, ভোট দেয়া, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, মহিলাদের জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া, মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত ও মুখ খোলা রাখা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র করা, ব্লাসফেমী আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবী করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি নাজায়িয কাজগুলোকে জায়িয বলে প্রচার করছে। (নাউযুবিল্লাহ)
অর্থাৎ, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে সরিয়ে, ইবাদত থেকে সরিয়ে অনৈসলামিক ও হারাম কাজে মশগুল করে দিয়ে বেঈমান করে দেয়া।
ঠিক এরূপ আরেকটি সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র হচ্ছে ছবির বিষয়টি। কারণ তারা হাদীছ শরীফে পেয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ)
عن ابى طلحة رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم لا تدخل الملئكة بيتا فيه كلب ولا تصاوير.
অর্থঃ হযরত আবু তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ঐ ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা প্রবেশ করে না, যে ঘরে প্রাণীর ছবি বা কুকুর থাকে।” (বুখারী শরীফ, কিতাবুললিবাছ, বাবুত তাছবীর, ২য় জিঃ ৮৮০ পৃষ্ঠা)
অর্থাৎ ছবির আমলটা যদি মুসলমানদের মধ্যে জারী করে দেয়া যায় তবে সহজেই তাদেরকে আল্লাহপাক-এর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে লা‘নতগ্রস্থ করে জাহান্নামী করে দেয়া সম্ভব। তাই তারা আজ মুসলমানদের মাঝে ছবির ব্যাপক প্রচলন করার ও প্রতি ক্ষেত্রে ছবিকে বাধ্যতামূলক করার জন্য উঠে পরে লেগেছে।
তাদের দালাল ও গোলাম রাজা-বাদশা ও ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ‘ছূ’দের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে ও ফতওয়া দেয়াচ্ছে যে, “ছবি তোলার ব্যাপারে ধর্মীয় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই এবং পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য ছবি তোলা জায়িয।” (নাউযুবিল্লাহ)
এই ইহুদী-নাছারাদের নির্দেশেই তাদের গোলাম সউদি ওহাবী সরকার মুসলমানদের পবিত্রতম স্থান মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে হাজার হাজার সি. সি টিভি স্থাপন করেছে। উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের সম্পদ নষ্ট করা, মুসলমানদেরকে ২৪ ঘণ্টা হারাম কাজে মশগুল রাখা এবং হজ্জসহ মুসলমানদের যাবতীয় ইবাদতসমূহ নষ্ট করে দেয়া।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটা মূলতঃ ইহুদী-নাছারাদেরই একটি সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। তাই পৃথিবীর সোয়া দু’শ কোটি মুসলমান নর-নারীর উচিত ইহুদী-নাছারাদের উল্লিখিত ষড়যন্ত্রসহ প্রতিটি ষড়যন্ত্র থেকে সাবধান বা সতর্ক থাকা এবং এগুলোর বিরুদ্ধে জোড় প্রতিবাদ করা।
(অসমাপ্ত)
পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকুন