(ষষ্ঠ ভাগ)
(কুতুবুল ইরশাদ, মুবাহিছে আয’ম, বাহরুল উলূম, ফখরুল ফুক্বাহা, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, তাজুল মুফাস্সিরীন, হাফিযুল হাদীছ, মুফতিউল আ’যম, পীরে কামিল, মুর্শিদে মুকাম্মিল হযরতুল আল্লামা মাওলানা শাহ্ ছূফী শায়খ মুহম্মদ রুহুল আমীন রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত “কাদিয়ানী রদ” কিতাবখানা (৬ষ্ঠ খণ্ডে সমাপ্ত) আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছি। যাতে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত বাতিল ফিরক্বা থেকে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের ঈমান-আক্বীদার হিফাযত হয়। আল্লাহ্ পাক আমাদের প্রচেষ্টায় কামিয়াবী দান করুন (আমীন)। এক্ষেত্রে তাঁর কিতাব থেকে হুবহু উদ্ধৃত করা হলো, তবে তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার কিছুটা পার্থক্য লক্ষণীয়)।
(ধারাবাহিক)
আল্লামা এবনো-হাজার আস্কালানী ‘তহজিবোত্তজিব’ কেতাবের ১/৯৭-পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন;
এবনো-হাব্বান বলেন, আবাল, আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হইতে কতকগুলি হাদিছ শ্রবণ করিয়াছিলেন, আর তিনি হাছান বাছারির রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বসিয়া তাঁহার কথা শুনিতেন, যখন তিনি হাদিছ বর্ণনা করিতেন, তখন তিনি অজ্ঞাতসারে হাছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কথাকে আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কতৃর্ক হজরত ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার হাদিছ বলিয়া প্রকাশ করিতেন, তিনি আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হইতে দেড় হাজার হাদিছ রেওয়াএত করিয়াছেন, উহার অধিকাংশের কোন ভিত্তি নাই। ফাল্লাহ, এহইয়া বেনে ছইদ, আব্দুর রহমান, আহমদ বেনে হাম্বল, এবনো-মইন ও অকি তাহাকে পরিত্যক্ত স্থির করিয়াছেন। নাছায়ি, দারকুৎনি, আবু হাতেম, আবু ওয়ালা, আবু দাউদ তাহাকে ঐরূপ বলিতেন। আবু জোরায়া বলিয়াছেন, তিনি আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, শহর ও হাছান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হইতে হাদিছ শুনিতেন, কিন্তু কোন্টী কাহার রেওয়াএত তাহা স্থির করিতে পারিতেন না। শো’বা তাহাকে জাল হাদিছ প্রস্ততকারী বলিতেন। এমাম জাহাবী ‘মিজানের’ ১৬-৮ পৃষ্ঠায় উপরোক্ত কথাগুলি লিখিয়াছেন যে, আলি বেনে মেছহার বলিয়াছেন, আমিও হামজা জাইয়াত আবাল বেনে আবি আইয়াশের রেওয়াএতে প্রায় ৫০০ হাদিছ লিখিয়াছিলাম, তৎপরে আমি নবি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্ন দেখিয়া উক্ত হাদিছগুলি তাঁহার নিকট পেশ করিলাম, ইহাতে হজরত ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৫টী কিম্বা ৬টী ব্যতীত সমস্ত হাদিছ জাল বলিয়া প্রকাশ করিলেন।
পাঠক, মির্জা ছাহেব বড় বড় মোজাদ্দেদ ও মোহাদ্দেছের মতের বিপরীত এবনো-মাজার বাতীল হাদিছকে ছহিহ ও বহু ছহিহ, বরং মোতাওয়াতের হাদিছগুলিকে বাতীল দাবি করিয়াছেন, এটা তাঁহার বাতীল এলহাম নহে কি? মৌলবী আব্দুল, ওয়াহেদ কাদিয়ানী ছাহেব “জ্ঞানাঞ্জন” পুস্তকের ২২-২৪ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন, “মাহদী শব্দের অর্থ হেদাএত প্রাপ্ত, এই অর্থে বহু লোককে মাহদী বলা যাইতে পারে, আবার মাহদীর হাদিছ অনেক প্রকার আসিয়াছে, কোন হাদিছে হজরত ফাতেমা আলাইহাস সালাম-উনার আওলাদ, কোন হাদিছে হযরত আব্বাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার আওলাদ কোন হাদিছে উমাইয়া বংশধর বলিয়া লিখিত আছে। কাজেই উহা এক ব্যক্তি হইবে কিরূপ? এইরূপ যাহার পিতার নাম আব্দুল্লাহ্ ও যাহার নাম আবদুল্লাহ্ এইরূপ কয়েকজন লোক হইয়া গিয়াছেন। যথা নফছে-জকিয়া, ইনি হজরত হাছান আলাইহিস সালাম -উনার আওলাদ। আর একজন আব্বাছিয়া বংশধর মনছুর। মদীনাতে যে মাহদী পয়দা হওয়ার কথা ছিল, তিনি আব্দুল্লাহ্ বেনে জোবাএর। রোম বিজয়ী মাহদী উক্ত মাহদী হইয়া গিয়াছেন তিনি প্রথমে উহা জয় করিয়াছিলেন।”
আমাদের উত্তর;
আল্লামা মোহাম্মদ তাহের মাজমায়াল-বেহারের তাকমেনার ১৭৯ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন;Ñ
“মাহদীর আভিধানিক অর্থ আল্লাহ যাহাকে সত্য প্রদর্শন করিয়াছেন, এই হিসাবে খোলাফায়ে-রাশেদীনকে মাহদী বলা হইয়াছে। আর কখনও উহা ব্যক্তি-বিশেষের নাম হইয়াছে, যেরূপ শেষ জামানার মাহদী, যিনি ঈছা আলাইহিস্ সালাম-উনার সমসাময়িক হইবেন, হজরত ঈছা আলাইহিস্ সালাম উনার সঙ্গে নামায পড়িবেন। কনস্টান্টিনোপল অধিকার করিবেন। আরব ও আজমের বাদশাহী করিবেন। মদীনাতে পয়দা হইবেন, ছুফয়ানির সহিত যুদ্ধ করিবেন।” (অসমাপ্ত)