কাদিয়ানী রদ!
বাহরুল উলূম, ফখরুল ফুক্বাহা, রইসুল মুহাদ্দিছীন, তাজুল মুফাসসিরীন, হাফিযে হাদীছ, মুফতীয়ে আ’যম, মুনাযিরে আ’যম, পীর কামিল, মুর্শিদে মুকাম্মিল হযরত মাওলানা, আল্লামা শাহ ছূফী মুহম্মদ রুহুল আমীন রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত ‘কাদিয়ানী রদ’ কিতাবখানা (৬ষ্ঠ খন্ডে সমাপ্ত)। আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকায় ইতিপূর্বে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছি। পাঠকদের অনুরোধে তা পূনরায় প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত বাতিল ফিরক্বা থেকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনুসারীদের ঈমান আক্বীদার হিফাযত হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের প্রচেষ্টার কামিয়াবী দান করুন। আমীন!
যদিও তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে ভাষার কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্যণীয়।
(মির্জার মাহদী দাবি খণ্ডন)
মির্জা গোলাম আহমদ মাহদী হতে পারে কিনা, তার সমালোচনা করা হয়েছে। মির্জার বাড়ি পাঞ্জাবের গরুদাসপুর জেলার অন্তর্গত কাদিয়ান নামক গ্রামে, সে যেমন মাহদী হওয়ার দাবি করেছে, সেরূপ তার পূর্বে প্রায় ২০ জন উক্ত দাবি করেছিলো। নাউযুবিল্লাহ!
১। জৈনপুরের সৈয়দ মুহম্মদ নামক একটি লোক দশম শতাব্দীতে মাহদী হওয়ার দাবি করে, এখনও হায়দারাবাদে তাহার অনুসরণকারী দল বর্তমান রয়েছে।
২। মুহম্মদ ইবনে তুমারত, মাগরীবের শেষ সীমায় ছুছ নামক একটি পর্বত আছে, সে তথাকার অধিবাসী ছিলো। সে বড় আলিম ফক্বীহ, হাদীছ শরীফ উনার হাফিয, উছুলে ফিক্বাহ ও আক্বাইদ তত্ত্ববিদ, আরবী সাহিত্যিক পরহেযগার ও দরবেশ ছিলো। সব সময় সে আদেশ নিষেধ কাজে রত থাকতো। যখন সে ‘মাহূদিয়া’ নামক স্থানে উপস্থিত হয়েছিলো, তখন তার নিকট একটি ছাগল ও লাঠি ব্যতীত আর কিছুই ছিলো না। অনেকেই তার আনুগত্য স্বীকার করলো। সৎকাজের প্রচার ও অসৎ কাজ বন্ধ করতে এরূপ প্রসিদ্ধ হয়ে পড়লো যে, বাদশাহ পর্যন্ত এই সংবাদ পৌছে গেলো। সেখানকার বাদশাহ ইবনে তামিম তাকে আলিমগণের সভায় আহ্বান করে তার জ্ঞানগরিমা অবগত হয়ে অনেক সম্মান করলো। তারপর সে মরক্কোর বাদশাহী দরবারে আলিমদের সাথে তর্কে জয়ী হলো। বাদশাহ তার উপদেশ ও বক্তৃতা শ্রবণে বিমোহিত হলো, কিন্তু উজিরের বারম্বার প্রস্তাবে তাকে দেশ হতে বের করে দিলো। তারপর সে হিজরী ৫১৪ সনে নিজের দেশে উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা শক্তি দ্বারা লোকদিগকে বিমুগ্ধ করে ফেললো এবং মুজাদ্দিদ ও মাহদী হওয়ার দাবী করে বললো, সম্মানিত শরীয়ত উনার অমুক অমুক আহকাম পরিবর্তিত হয়েছে এবং দ্বীন ইসলামে এই সমস্ত অনিষ্ট প্রবেশ করেছে। এক বৎসর পর সমস্ত লোক তার বাধ্য হয়ে পড়ে। এক সময় সে মাহদী লক্ষণ প্রকাশ করতে করতে বলে ফেলে যে, মাহদী মাগরীবের শেষ সীমা হতে প্রকাশিত হবেন। একদিন তার বক্তৃতাকালে দশ ব্যক্তি দ-ায়মান হয়ে বললেন, এই সমস্ত চিহ্ন আপনার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে, কাজেই আপনি মাহদী, আপনার নিকট আমরা বাইয়াত গ্রহণ করবো। তখন মুহম্মদ ইবনে তুমারাত তাদেরকে মুরিদ করলো। এদের মধ্যে আব্দুল মু’মিন নামক এক ব্যক্তি ছিল, তারপর দলে দলে লোক তার অনুসরণ করতে লাগলো। নাউযুবিল্লাহ!
সেই সময়ের বাদশাহ এ সংবাদ পেয়ে তার বিরুদ্ধে জিহাদ করতে সৈন্যদল প্রেরণ করলো, যখন সৈন্যদল নিকটে উপস্থিত হলো, তখন মুহম্মদ ইবনে তুমারাত নিজের ভক্তদিগকে বললো, আমি গোপনে এস্থান থেকে প্রস্থান করছি তাহলে তোমরা নিরাপদে থাকবে। বাদশাহ আমার প্রস্থান করার কথা শুনলে প্রত্যাবর্তন করবেন। তার মুরীদদের মধ্যে একজন দরবেশ ছিলো, সে বললো, আপনি কেন চলে যাবেন? আসমানের দিক হতে কি আশঙ্কা আছে? তুমারাত বললো, না, আসমানের দিক হতে সাহায্য হবে। তখন সে ব্যক্তি বললো, এক্ষণে যদি দুনিয়ার সমস্ত লোক আমাদের উপর আক্রমণ করে তবে কোনো ভয় নেই। তার অন্যান্য সমস্ত শিষ্য এ কথার উপর একমত হলো। সে সময় ইবনে তুমারাত এই ভবিষ্যদ্বানী করলো যে, আমি তোমাদেরকে জয়ী হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করছি। তোমাদের অল্প সংখ্যক দল বিরুদ্ধ দলের মূলোৎপাটন করে ফেলবে এবং আমরা এ রাজ্যের অধিপতি হবো। তারপর তারা পাহাড় হতে নেমে এসে যুদ্ধ করে বাদশাহী সৈন্যদিগকে পরাজিত করলো। এতে তার মুরীদদের ভক্তি দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হলো। এ সংবাদ শ্রবণে চতুর্দিক হতে বহুলোক তার নিকট মুরীদ হতে লাগলো। এ মর্যাদার উন্নতি তার লোকের উপর সন্দিহান হয়ে এদেরকে হত্যা করে ফেললো, এমনকি (১২) বার কিংবা (৭০) সত্তর হাজার লোককে হত্যা করে ফেললো। তার একটি ভবিষ্যদ্বানী ঘটনাক্রমে প্রতিফলিত হওয়ায় এইরূপ অবস্থা হয়েছিলো। (চলবে)