কেউ যদি বলে অমুক মাওলানা এটা বলেছে, তমুক মাওলানা ওটা বলেছে সেজন্য সে করেছে এটাতে কিন্তু সে উদ্ধার হবে না। এখন মাওলানার কথা শুনে সে হারাম, খারাপ কাজটা করলো, কিন্তু ব্যবসা চাকরি যখন করে, পয়সা কামাই করে তখন কিন্তু সে কারো কথা শুনে না, যেখানে লাভ বেশি দেখে সেখানে কিন্তু সে যায়। তুমি টাকা চিনলে, পয়সা চিনলে, গাড়ি চিনলে, বাড়ী চিনলে, সব চিনলে তুমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ও উনার হাবীব নূরে মুজসাসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে চিনতে পারলে না। সেখানে উলামায়ে সূদের দোহাই দাও। তোমার নফসের তাড়নায় তুমি উলামায়ে সূ এদের সাথে একমত হয়েছিলে। নাঊযুবিল্লাহ! কাজেই এ বিষয়টা খুব ফিকির করতে হবে। আক্বীদা বিশুদ্ধ করা ফরযে আইন, এটা মনে রাখতে হবে। এজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলেছেন, কুফরী যে বিষয়টা এটা কতটুকু মারাত্মক। মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক করেন-
واذا رايت الذين يخوضون فى ايتنا فاعرض عنهم حتى يخوضوا فى حديث غيره واما ينسينك الشيطان فلا تقعد بعد الذكرى مع القوم الظلمين.
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন। কি বলেন?
واذا رايت الذين يخوضون فى ايتنا فاعرض عنهم
মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই বলতেছেন, তোমরা যদি দেখো, কোন ব্যক্তিকে কোন লোককে কোন মানুষকে, জিন ইনসানকে, কি দেখো? মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শন মুবারক নিয়ে, মহান আল্লাহ পাক উনাকে নিয়ে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে, পবিত্র কুরআন শরীফ নিয়ে, পবিত্র হাদীছ শরীফ নিয়ে, পবিত্র ইজমা শরীফ নিয়ে, পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ নিয়ে, পবিত্র শরীয়ত নিয়ে, কেউ যদি ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে, খারাপ কথা বলে, এতো শরীয়ত লাগে না, পাগড়ী লাগে না, লম্বা কোর্তা প্রয়োজন নেই, এতো ইসলাম উনার এই বিষয়গুলো প্রয়োজন নেই। নাউযুবিল্লাহ! এসমস্ত কথা যদি কেউ বলে তোমরা যদি শুনো, মহান আল্লাহ পাক তিনি কি বলেন-
فاعرض عنهم
তার থেকে সরে যাও। তার কাছেও যেওনা।
حتى يخوضوا فى حديث غيره
যতক্ষণ পর্যন্ত সে এর থেকে সরে না আসবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে এর থেকে তাওবা ইস্তিগফার করে ফিরে না আসবে, তার কাছেও তোমরা যেও না। তার সাথে তোমরা কোন সম্পর্ক রেখোনা। নিছবত রেখো না। যে সমস্ত উলামায়ে সূরা বলে, এখন ছবির দরকার। নাউযুবিল্লাহ! এদের সাথে সম্পর্ক রেখোনা। যারা বলে, এতো পর্দার দরকার নেই, এদের সাথে সম্পর্ক রেখোনা। যারা বলে, খেলাধুলা জায়িয রয়েছে; এদের সাথে সম্পর্ক রেখোনা। যারা বলে থাকে, বর্তমানে টিভি চ্যানেল দেখা জায়িয রয়েছে; এদের সাথে কোন সম্পর্ক রেখোনা।
فاعرض عنهم حتى يخوضوا فى حديث غيره
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, এরা যতক্ষণ পর্যন্ত এর থেকে তওবা না করবে, ইস্তিগফার না করবে, এদের থেকে সরে যাও, এদের কাছে যেওনা।
واما ينسينك الشيطان فلا تقعد بعد الذكرى مع القوم الظلمين.
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এরপর যদি শয়তান তোমাদেরকে ধোঁকা দিয়ে ভুলিয়ে, তাদের কাছে নিয়ে যায়, যখন স্মরণ হবে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে চলে আসবে। সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্ট বলে দিলেন।
واما ينسينك الشيطان
শয়তান যদি তোমাদেরকে ধোঁকা দিয়ে প্রতারণা করে, মিথ্যা বলে তাদের কাছে নিয়ে যায়, ওখানে যাওয়ার পরে যখন তোমাদের এ কথাটা স্মরণ হবে এই লোকটা মহান আল্লাহ পাক উনার বিরোধিতা করে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করে এটা স্মরণ হওয়া মাত্রই
فلا تقعد بعد الذكرى مع القوم الظلمين.
এই জালিমদের সাথে আর বসো না, এখান থেকে সরে চলে আসো, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন। এটা হচ্ছে মুসলমান ঈমানদারের একটা সংজ্ঞা। ঈমানদার কাকে বলে? ঈমানদার ঐ ব্যক্তি; মহান আল্লাহ পাক উনার বিরুদ্ধে বললে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে বললে, সে সেটা পছন্দ করবে না। সেটা সে পছন্দ করবেনা। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من احب شيا اكثر ذكره
যে যাকে মুহব্বত করে সে তার কথা বেশি বলে। অর্থাৎ তুমি যদি মহান আল্লাহ পাক উনাকে বেশি মুহব্বত করো, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করো, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কথা তোমাকে মানতে হবে। আর যদি কেউ কাফির হয় তাহলে সেতো কাফিরদেরকে মুহব্বত করবে সেতো মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করতে পারবে না। মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক নির্দেশ মুবারক সে পালন করতে পারবে না। এটা খুব স্ক্ষ্মূ বিষয়। স্মরণ রাখতে হবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজে এখানে বলে দিয়েছেন। আর ঠিক একইভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কি ইরশাদ মুবারক করেন-
عن حضرت ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من رأى منكم منكرا فليغير بيده فان لـم يستطع فبلسانه فان لـم يستطع فبقلبه وذلك اضعف الايمان.
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من رأى منكم منكرا
তোমরা যদি কখনও দেখো কোন কাজ শরীয়তের খিলাফ এটা মুসলমানদেরকে বলা হচ্ছে, ঈমানদারদেরকে বলা হচ্ছে, হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি দেখো কোথাও শরীয়তের খিলাফ কাজ
فليغير بيده
প্রথমতঃ তোমার দায়িত্ব হচ্ছে যদি তোমার ক্ষমতা থাকে তবে সরাসরি হাত দিয়ে সেটা বাধা দাও।
فان لـم يستطع
যদি হাত দিয়ে বাধা দেয়ার ক্ষমতা না থাকে, হারাম কাজ হচ্ছে সেখানে হয়তো অনেক কাফির মুশরিক, বেদ্বীন বদদ্বীন রয়েছে, জালিম রয়েছে, সেখানে হাতে বাধা দেয়া যাবে না তখন
فبلسانه
তাহলে সেখানে যবানে বা মুখ দিয়ে বলে দিতে হবে এই কাজগুলো হারাম। তোমরা এগুলো করবেনা। ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, গান-বাজনা করা, টিভি চ্যানেল দেখা, খেলাধুলা, হরতাল, লংমার্চ, ইসলামের নামে তন্ত্র মন্ত্র সব করা হারাম। এটা বলে দাও। আর যদি এমন হয় সেখানে মুখে বলা সম্ভব নয়
فان لـم يستطع فبقلبه وذالك اضعف الايمان.
যদি যবানেও বলা সম্ভব না হয় এমন পরিস্থিতি হয়ে যায় তাহলে তুমি অন্তরে সেটাকে খারাপ জেনে সেখান থেকে সরে যাও। এর ব্যাখ্যায় আবার অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, এটাও মুসলিম শরীফ উনার হাদীছ শরীফ।
আরেকখানা পবিত্র মুসলিম শরীফ উনার হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে-
عن حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ليس وراء ذلك من الايـمان حبة خردل
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এই যে অন্তরে খারাপ জেনে সরে যাওয়া এরপর ঈমানের কোন স্তর নেই, এটাই শেষ।
ঈমানের তিনটি স্তর বলা বলা হয়েছে। ঈমানদারদের ঈমান রক্ষা করার জন্য তিনটি স্তর। প্রথম স্তর হচ্ছে সে হাতে বাধা দিবে, এক নম্বর। যদি সম্ভব না হয় তাহলে মুখে বাধা দিবে, বলে দিবে। এটাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে কি করবে অন্তরে সেটা খারাপ জেনে সেখান থেকে সরে যাবে। এরপরে ঈমানের কোন স্তর নেই। এটা ফিকির করতে হবে। এখন হারাম কাজ হচ্ছে হাতে বাধা না দিক মুখে বলুক। আর যদি মুখে তুমি বলতে নাই পারো তুমি সরে যাও। তুমি কি করে সেটাকে সমর্থন করো। এখন যত প্রকার হারাম কাজ রয়েছে, পবিত্র শরীয়ত উনার যত খিলাফ, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনার খিলাফ যত কাজ রয়েছে সবগুলি বলতে হবে, বাধা দিতে হবে। অন্যথায় খারাপ জেনে সরে যেতে হবে। সেই মজলিসে থাকা যাবে না। (অসমাপ্ত)