পূর্ব প্রকাশিতের পর
اولـهما كتاب الله
তারমধ্যে একটা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব ‘কিতাবুল্লাহ’।
فيه الـهدى والنور
সেই কিতাবের মধ্যে হিদায়েত রয়েছে, নূর রয়েছে।
فخذوا بكتاب الله واستمسكوا به
মহান আল্লাহ পাক উনার যে কিতাব- কুরআন শরীফ সেটাকে তোমরা ধারণ করো। দৃঢ়তার সাথে ধারণ করো।
فحث على كتاب الله ورغب فيه
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল তিনি সেই কিতাবকে দৃঢ়তার সাথে ধারণ করার জন্যে, আঁকড়িয়ে ধরার জন্য তিনি তাগিদ করলেন, উৎসাহিত করলেন, উদ্বুদ্ধ করলেন যে, তোমরা অবশ্যই সেই কিতাবকে দৃঢ়তার সাথে ধারণ করবে।
ثم قال واهل بيتى اذكركم الله فى اهل بيتى ثلاثا
এরপর বললেন- তিনি বারবার বললেন, একাধিকবার বললেন, তোমাদেরকে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার কথা মুবারক স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। তোমরা আমার যারা আহলে বাইত শরীফ উনাদের ব্যাপারে সতর্ক থেকো। তোমাদেরকে আমি মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, তোমরা আমার আহলে বাইত শরীফ উনাদের ব্যাপারে সতর্ক থেকো। সুবহানাল্লাহ!
তিনি বারবার বললেন যে, তোমাদেরকে আমি সতর্ক করে দিচ্ছি, আমার আহলে বাইত শরীফ সম্পর্কে। তোমরা এ বিষয় মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো, উনাকে ভয় করো। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্মরণ করো। অর্থাৎ আমার যাঁরা আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিষয় তোমরা সতর্ক থেকো। উনাদের সাথে সৎ ব্যবহার, সৎ আচরণ, মুহব্বত, তায়াল্লুক নিছবতের বিষয় তোমরা খুব সতর্ক থেকো। এটা তিনি বারবার তাগিদ করলেন। বিষয়টা কিন্তু খুব সূক্ষ্ম বিষয়। একজন উম্মতের জন্যে, একজন বান্দা-বান্দীর জন্যে যারা ঈমানদার-মুসলমান দাবি করে- তাদের কিন্তু বিষয়টা খুব ফিকির করতে হবে। খুব সূক্ষ্ম বিষয় এবং ফিকিরের বিষয়।
সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাঁরা, উনাদের তিনি মূল। যেটা কিতাবে এসেছে, সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যে আওলাদ, সন্তান- তিনজন ছেলে ও তিনজন মেয়ে যমীনে আগমন করেছেন। বর্ণিত রয়েছে, উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে যখন নিকাহ মুবারক সম্পন্ন হলো অর্থাৎ সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে যে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি খিদমতের জন্য গ্রহণ করলেন, সে সময় দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উনার বয়স মুবারক আঠারো পার হয়ে গেছে। এটা হচ্ছে বদরের জিহাদের বৎসর অর্থাৎ দ্বিতীয় হিজরী সনে যিলহজ্জ মাসে তিনি উনাকে গ্রহণ করেছেন। হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি তৃতীয় হিজরী শা’বান মাসে যমীনে আগমন করেছেন এরপর চতুর্থ হিজরীতে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি যমীনে আগমন করেছেন।
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, উনারা দু’জনই সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ ছয় মাস করে অবস্থান করেছিলেন। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম, হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম উনারাও কিন্তু উনাদের মা উনাদের রেহেম শরীফ-এ ছয় মাস করে অবস্থান করেছিলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম, হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম, হযরত উম্মে কুলছূম আলাইহাস সালাম, হযরত মুহসিন আলাইহিস সালাম উনারা আগমন করেছেন; তবে হযরত ইমাম মুহসিন আলাইহিস সালাম ও হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনারা একদম অল্প বয়স মুবারকেই বিছাল শরীফ লাভ করেছেন, বিদায় নিয়েছেন।
আর অন্যান্য যাঁরা ছিলেন, উনাদের মধ্য থেকে বিশেষ করে হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম ও হযরত উম্মে কুলছূম আলাইহাস সালাম উনাদের থেকে যাঁরা আওলাদ যমীনে এসেছেন উনাদের আওলাদ যাঁরা, বিশেষ করে হযরত উম্মে কুলছূম আলাইহাস সালাম উনাকে খিদমত করার জন্য গ্রহণ করেন প্রথমত: দ্বিতীয় খলীফা হযরত খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি। আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিসবতের জন্য উনাকে গ্রহণ করেন খিদমত করার জন্য। উনার বিছাল শরীফ-এর পরে পর্যায়ক্রমে উনাদেরকে যাঁরাই খিদমতের জন্য গ্রহণ করেছেন, উনার আওলাদ যাঁরা; উনারা যমীনে আর তেমন কেউই নেই। অর্থাৎ সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার দু’জন সন্তান অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের আওলাদ যাঁরা; উনারাই আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে মাশহূর। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলে গেছেন। অর্থাৎ হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যমীনে অবস্থানকালীন আর কোনো শাদী মুবারক করেননি অর্থাৎ তিনি কাউকে গ্রহণ করেননি।
উনার বিছাল শরীফ-এর পর তিনি যাঁদেরকে গ্রহণ করেছেন উনাদের থেকে যাঁরা সন্তান আগমন করেছেন উনাদেরকে বলা হয় আলূবী। আর সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার অন্য মেয়ে হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম উনাকে যিনি গ্রহণ করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মদীনা শরীফ-এর। তিনি গ্রহণ করেছিলেন। উনার বংশধরগণ উনারাই কিন্তু মিশরে যেয়ে ফাতিমী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন; সেটা প্রায় পাঁচশত বছর ছিলো। এবং এখন যে আল আজহার ইউনিভার্সিটি রয়েছে এই ইউনিভার্সিটি উনার বংশধরগণ উনারা প্রথম সেটা প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সেটা এখন বিরাট বড় আকারের হয়ে গেছে।
বিশেষ করে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতের পরে হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম তিনি কিন্তু কুফাবাসীকে শক্তভাবে শাসিয়েছেন এবং ইয়াযীদকে তিনি অনেক শক্ত কথা বলেছেন। তাতে ইয়াযীদ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সে জিজ্ঞাসা করেছিলো উনি কে? তখন উনার পরিচয় দেয়া হয়েছিলো, তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার আওলাদ। সুবহানাল্লাহ!
এখন উনার আওলাদ যাঁরা যমীনে এসেছেন দু’জন হচ্ছেন খাছ- হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম। উনাদের আওলাদ যাঁরা রয়েছেন উনারাই হচ্ছেন আওলাদে রসূল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদগণ যমীনে ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এটা হচ্ছে উনার একটা বিশেষ খুছূছিয়ত। সমস্ত মানুষ তাদের বংশধারা নসবনামা জারি থাকে ছেলের মাধ্যম দিয়ে। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে নসব মুবারক বা বংশধারা মুবারক সেটা থাকবে উনার লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যম দিয়ে। সুবহানাল্লাহ! এটা উনার একটা বৈশিষ্ট্য খুছূছিয়ত। পৃথিবীতে আর কারো সেই খুছূছিয়ত নেই। সুবহানাল্লাহ! কাজেই উনার যে মর্যাদা-মর্তবা, ফযীলত-বুযুর্গী-সম্মান সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাফসীরে বর্ণিত রয়েছে, উনার বিছাল শরীফ-এর যখন সময় হলো, দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উনার বয়স মুবারক ২৬ (ছাব্বিশ) পার হয়ে ২৭ (সাতাশ) চলতেছিলো, সে সময় তিনি যমীন থেকে বিদায় নেন। উনার বিছাল শরীফ-এর বিষয়টা অত্যন্ত ফিকিরের বিষয় অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতে চলে গেলেন এরপর তিনি প্রায় ছয় মাস ছিলেন। ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ থেকে শুরু করে রমাদ্বান শরীফ পর্যন্ত ছয় মাস, তবে সেটা ছিলো ৩রা রমাদ্বান শরীফ। অর্থাৎ ছয় মাস থেকে মাত্র কয়েকদিন কম তিনি যমীনে অবস্থান করেছেন। অবস্থানকালীন উনার যে অবস্থা সেটা আমরা অনেকবার আলোচনা করেছি। এই ছয়মাস কিন্তু মানুষ স্বাভাবিক যেভাবে সুস্থতার সাথে যমীনে অবস্থান করেন; এই হাল উনার কিন্তু ছিলো না। কারণ, তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এতো ফানা ছিলেন, এতটুকু তিনি মুহব্বত করতেন, যার কারণে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন বিছাল শরীফ লাভ করলেন তখন থেকে প্রায় ছয়মাস সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি এক প্রকার বেহুঁশি হালের মধ্যে সময় কাটিয়েছেন। উনার পরিপূর্ণ খিদমতের আঞ্জাম দিয়েছেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। উনার খাওয়া-পরা, অযূ-গোসল, কাপড় মুবারক ধোয়া অন্যান্য যত খিদমত ছিলো সমস্ত খিদমতের আঞ্জাম তিনি দিয়েছেন। যার কারণে আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কাছে তিনি শুরুতে বাইয়াত গ্রহণ করতে পারেননি। কারণ এক সেকেন্ডের তরেও তিনি হুজরা শরীফ থেকে বের হননি। উনাদের যা কিছু প্রয়োজন ছিলো আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সব সেখানে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যার জন্য তিনি একাধারে খিদমতের আঞ্জাম দিয়েছেন। এখন এর মধ্যে লক্ষ কোটি ইবরত-নছীহত রয়েছে।
(অসমাপ্ত)