পূর্ব প্রকাশিতের পর
বলার অপেক্ষা রাখে না উনার মর্যাদা-মর্তবা উনার খুছূছিয়ত। কারণ, যারা আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিষয়টা কুরআন শরীফ-এ আমভাবে বর্ণিত রয়েছে-
رضى الله عنهم ورضوا عنه
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট উনারাও মহান আল্লাহ পাক যিনি খালিক্ব মালিক রব উনার প্রতি সন্তুষ্ট। সুবহানাল্লাহ!
এখন এই যে, রিযামন্দী সন্তুষ্টি এটাতো উনাদের রয়েছেই। ছাহাবিয়াতের মাক্বাম যেটা, সেটাতো উনাদের হাছিল রয়েছেই। এই মাক্বামটা তো উনাদের হাছিল রয়েছেই। সাথে সাথে আহলে বাইত শরীফ হিসেবে যে মাক্বাম সেই মাক্বামটা উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি অতিরিক্ত হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ! যার জন্য আমরা দেখতে পাই তাছাউফের কিতাবের মধ্যে রয়েছে যে, আহলে বাইত শরীফ উনাদের যে ১২ ইমাম উনাদের কথা। যেটা আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত মেনে থাকি, শীআরাও সেটা মেনে থাকে। অন্যান্য ক্বওম বা ফিরক্বা রয়েছে তারাও কিন্তু সেটা মেনে থাকে যে, আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের যে ১২ জন ইমাম উনাদের খুছূছিয়ত, উনাদের যে বৈশিষ্ট্য তা মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে আলাদাভাবে দিয়েছেন। যেটা অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। যেটা উনাদের জন্য খাছ। একদিক থেকে উনারা হচ্ছেন ছাহাবী। ছাহাবিয়াতের যে মর্যাদা-মর্তবা, ফযীলত মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে দিয়েছেন। আরেকদিক থেকে উনাদের যে খুছূছিয়ত আহলে বাইত শরীফ হিসেবে তা উনাদেরকে আলাদাভাবে দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! সাধারণভাবে এই মাক্বাম হাছিল করা কখনো সম্ভব নয়। এটা হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মনোনীত।
الله يجتبى اليه من يشاء
মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে ইচ্ছা তাকেই মনোনীত করেন, পছন্দ করেন।
এখন উনাদেরকে আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম হিসেবে মনোনীত করেছেন, পছন্দ করেছেন। কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই ইরশাদ করেন-
انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
انما يريد الله
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান। এখন আল্লাহ পাক তিনি যেটা চাবেন সেটাই তো হবে।
ليذهب عنكم الرجس اهل البيت
হে আহলে বাইত শরীফ! আপনাদের থেকে আল্লাহ পাক তিনি চান যত প্রকার অপবিত্রতা অপছন্দনীয় বিষয় সেটা দূর করে দেয়ার জন্য। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই বলেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূর করে দেয়ার জন্য।
ويطهركم تطهيرا
এবং আপনাদেরকে পবিত্র করার মত পবিত্র করতে চান। সুবহানাল্লাহ! তাহলে এর অর্থটা কি হলো?
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূর করে দিয়ে পবিত্র করার মত পবিত্র করে আপনাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
এখন নবী এবং রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা মা’ছূম। ইছমতে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম যেটা বলা হয়। উনাদের কোন গুনাহখতা নেই। যারা আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সরাসরি মা’ছূম না বললেও মাহফূয তো অবশ্যই। চূড়ান্ত পর্যায়ের মাহফূয উনারা। উনাদের প্রতিটি আমলেই যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পছন্দ করেছেন এবং উনাদের প্রত্যেকটা আমলেই তিনি সন্তুষ্ট। এবং স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও উনাদের প্রত্যেকটা আমলেই সন্তুষ্ট। সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যে আমলগুলি প্রত্যেকটা আমলের পিছনে কিন্তু রেযামন্দী-সন্তুষ্টি রয়েছে। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবসময় বলেছেন তিনি হচ্ছেন-
بضعة منى
তিনি হচ্ছেন উনার গোশত মুবারকসমূহের একখানা টুকরা মুবারকের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, উনাদের ফযীলতগুলি উনাদের মর্যাদা-মর্তবাগুলি খুব ফিকির করতে হবে। আমি যে গত সপ্তাহগুলোতে বলেছি উনাদেরকে আলাইহিস সালাম, আলাইহাস সালাম বা আলাইহিন্নাস সালাম বলার বিষয়টা। আসলে এটাতো আমাদের মীলাদ শরীফ-এর বইয়েও রয়েছে। পূর্ববর্তী নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা আহলিয়া হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম হযরত র্সারাহ আলাইহাস সালাম, হযরত রহীমা আলাইহাস সালাম এছাড়াও হযরত আছিয়া আলাইহাস সালাম- বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হওয়ার কারণে এবং নবী আলাইহিস সালাম উনার মাতা হওয়ার কারণে হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম। এই যে খুছূছিয়ত উনাদের বর্ণনা করা হয়েছে। এখন এই খুছূছিয়ত ও মর্যাদার অধিকারী যদি উনারা হন তাহলে যারা উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম রয়েছেন, আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম যারা রয়েছেন তাহলে উনাদের মর্যাদা কতটুকু হবে। যেখানে সরাসরি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবতযুক্ত। যেটা আমি বলেছি অনেকবার যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্পর্শ মুবারকের কারণে একটা সাধারণ মাটির মর্যাদা আরশে মুয়াল্লা ও কুরসী থেকে লক্ষ কোটিগুণ বেশি হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! তাহলে উনাদের মর্যাদা, ফযীলত কত বেশি। এটা কোন জিন-ইনসান, কায়িনাতের কারো পক্ষে পরিমাপ করা কখনো সম্ভব নয়।
কারণ মহান আল্লাহ পাক যিনি খালিক্ব মালিক রব তিনি উনাদের সম্মান-ইজ্জত দিয়েছেন, লক্বব দিয়েছেন। সেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের লক্বব দিয়েছেন। উনাদের সন্তুষ্টিতে উনারা সন্তুষ্ট, উনাদের অসন্তুষ্টিতে উনারা অসন্তুষ্ট। কাজেই, বিষয়টা খুব সূক্ষ্ম বিষয়, খুব ফিকিরের বিষয়। উনাদের তা’যীম-তাকরীম, উনাদের ইজ্জত-সম্মানের ব্যাপারে বিশেষ করে যেটা আমি গত সপ্তাহতেও বলেছি, গত রবীউল আউয়াল শরীফ মাহফিলের বেশ কয়েকটি বিষয় ছিল, মহিলা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না, যারা উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম এবং যারা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে আলোচনার। এখন কিন্তু শুধু পুরুষদের আলোচনা করা হয়ে থাকে। কুরআন শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة
তোমাদের জন্য আদর্শ কে? যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি আদর্শ। উনার মধ্যে সবকিছুই অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয়। এখন মহান আল্লাহ পাক তিনি মূল কথাটা বলে দিয়েছেন। উনার মধ্যেই তো সব থাকবে। আর তিনি সেটা ভাগ করে দিবেন। তিনি তো বণ্টনকারী।
انما انا قاسم والله يعطى
মহান আল্লাহ পাক তিনি হাদিয়া দিয়েছেন আর আমি হলাম বণ্টনকারী। এখন তিনি মেয়েদের জন্য বণ্টন করলেন। যারা উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, যারা আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তোমরা যারা মহিলা রয়েছো তারা উনাদের থেকে মাসয়ালা শিক্ষা করো। যেটা হাদীছ শরীফ-এ সরাসরি এসেছে-
خذوا نصف دينكم من هذه الحميراء
তোমরা দ্বীন শিক্ষা করবে যারা উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের কাছ থেকে, আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে।
এখন কিছু মেয়েদের আলাদা মাসয়ালা-মাসায়িল রয়েছে, কিছু খুছূছিয়ত রয়েছে সেটা উনাদের কাছ থেকেই শিখতে হবে। উনারাই সেটা বণ্টন করবেন সরাসরি। এখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সব বণ্টন করেছেন পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য। তবে মেয়েদের জন্য আলাদা মর্যাদা দেয়া হয়েছে, বৈশিষ্ট্য দেয়া হয়েছে, খুছূছিয়ত দেয়া হয়েছে। উনাদের থেকে সেটা জেনে নিতে হবে। উনারা সেটা বলবেন। এখন সমাজে মেয়েদের ব্যাপারে তাদের মাসয়ালা-মাসায়িল তাদের অনুসরণীয় অনুকরণীয় কারা সে বিষয় কিন্তু আলোচনা হয় না। যারজন্য দেখা যায় এখন মহিলারা বিধর্মী, কাফির মুশরিক এদের মহিলাদেরকে অনুসরণ করে। বিশেষ করে এদের একটা মহিলা তেরেসা রয়েছে এই বিভ্রান্ত,গোমরাহ বদচরিত্রা মহিলা এদের আদর্শ স্থাপন করতে চায়। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ যাঁরা অনুসরণীয় অনুকরণীয় উনাদের তারা আলোচনা না করে কাফির, মুশরিক, বেদ্বীন, বদদ্বীনদের আলোচনা করে। মুসলমানদের উচিত উনাদের সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করা। পড়া-শুনা করা, লেখা-লেখি করা তাহলে মুসলমান মহিলা যারা রয়েছেন তাদের জন্য জানা, বুঝা, শুনা, আমল করা সহজ এবং সম্ভব। এটা খুব ফিকির করতে হবে।
(অসমাপ্ত)