الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونؤمن به ونتوكل عليه ونعوذ بالله من شرور انفسنا ومن سيات اعمالنا من يهدى الله فلا مضل له ومن يضلله فلا هادى له ونشهد ان لا اله الا الله ونشهد ان سيدنا نبينا حبيبنا شفيعنا مولنا محمدا عبده ورسوله صلى الله عليه وسلم.
اما بعد: فاعوذ بالله من الشيطان الرجيم. بسم الله الرحمن الرحيم. ان الله وملئكته يصلون على النبى. يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
اللهم صل على سيدنا ونبينا وحبيبنا وشفيعنا ومولنا وسيلتى اليك واله وسلم. اللهم صل على سيدنا ونبينا وحبيبنا وشفيعنا ومولنا معدن الجود والكرم واله وسلم. اللهم صل على سيدنا ونبينا وحبيبنا وشفيعنا ومولنا النبى الامى واله وسلم.
সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন-উনার জন্য, যিনি আমাদেরকে এখানে হাযির হয়ে ওয়াজ-নছীহত শোনার তাওফিক দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফে ইরশাদ ফরমান-
وذكر فان الذكر تنفع المؤمنين
“হে আমার হাবীব! আপনি নছীহত করুন। নিশ্চয়ই আপনার নছীহতগুলো মু’মিনদের জন্য ফায়দাদায়ক।”
আর হাদীছ শরীফ-এ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
ما اجتمع قوم فى بيت من بيوت الله يتلون كتب الله ويتدارسونه بينهم الا نزلت عليهم السكينة وغشيتهم الرحمة وحفتهم الملئكة وذكرهم الله فيمن عنده.
“যখন কোন এলাকার লোকজন আল্লাহ পাক-উনার ঘরে অথবা কোন স্থানে একত্রিত হয়ে আল্লাহ পাক-উনার কিতাব তিলাওয়াত করে অথবা পরস্পর দ্বীনী আলোচনা বা দর্স-তাদরীস করে তখন আল্লাহ পাক-উনার তরফ থেকে তাদের উপর সাকীনা বা শান্তি বর্ষিত হয়।
আল্লাহ পাক-উনার রহমত তাদের উপর ছেয়ে যায় বা তাদেরকে আবৃত করে নেয়। আল্লাহ পাক-উনার রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তাদেরকে বেষ্টন করে নেন এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার নিকটবর্তী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সেই মাহফিলের লোকদের ছানা-ছিফত ও তাদের সম্পর্কে আলোচনা করেন।” সুবহানাল্লাহ!
হাদীছ শরীফ-এ আরো রয়েছে, “মাহফিল যখন শেষ হয়ে যায়, তখন সকল মানুষ চলে যায়, ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও চলে যান আল্লাহ পাক-উনার দরবারে।
আল্লাহ পাক-উনার জানা থাকা সত্ত্বেও ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, “হে ফেরেশতারা! তোমরা কোথা হতে আসলে?” ফেরেশতা উনারা বলেন, “আল্লাহ পাক! অমুক স্থানে মাহফিল হয়েছে সেখান থেকে এসেছি।”
তখন আল্লাহ পাক জিজ্ঞাসা করেন, “তারা কি চেয়েছে এবং কি থেকে পানাহ চেয়েছে?” ফেরেশতারা বলেন, “আল্লাহ পাক! তারা আপনার সন্তুষ্টি চেয়েছে, জান্নাত চেয়েছে এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চেয়েছে।”
আল্লাহ পাক পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, “হে ফেরেশতারা! তারা কি আমাকে দেখেছে?” ফেরেশতারা বলেন, “না, তারা দেখেনি।” আল্লাহ পাক বলেন, “তারা কি জান্নাত-জাহান্নাম দেখেছে?”
ফেরেশতারা বলেন, “না, তারা দেখেনি। যদি তারা আপনাকে দেখতো তাহলে আপনার রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য তারা আরো বেশি বেশি কোশেশ করতো। আর জান্নাত ও জাহান্নাম দেখলে, জান্নাত বেশি বেশি তলব করতো এবং জাহান্নাম থেকে বেশি বেশি পানাহ তলব করতো।” ইত্যাদি অনেক কথোপকথনের পর আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
فاشهدوكم انى قد غفرت لهم
“হে ফেরেশতারা! তোমরা সাক্ষী থাকো, এই মাহফিলে যারা এসেছে, আমি তাদের প্রত্যেককে ক্ষমা করে দিলাম।” সুবহানাল্লাহ!
قال ملك من الملائكة فيهم فلان ليس منهم انما جاء لحاجة
তখন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে একজন ফেরেশতা বলেন, “আয় আল্লাহ পাক! এ মাহফিলে এমন একজন লোক ছিল, যে মূলত ওয়াজ-নছীহত শুনার উদ্দেশ্যে আসেনি। সে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তার কাজে। যখন দেখলো যে, এখানে মাহফিল হচ্ছে, সে দেখার জন্য এখানে এসেছিলো ও বসেছিলো। প্রকৃতপক্ষে লোকটা খুব বদকার, গুনাহগার। আপনি কি তাকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন?”
قال هم الجلساء لا يشقى جليسهم
“তখন আল্লাহ পাক তিনি বলেন, এই মাহফিলে যে সমস্ত নেককার লোক এসেছিল, আমি সেই নেককারদের ওসীলায় ওই বদকারের গুনাহখতাও ক্ষমা করে দিয়েছি।” সুবহানাল্লাহ! এবার চিন্তা ফিকির করে দেখুন, ওয়াজ মাহ্ফিলের অর্থাৎ দর্স-তাদরীসের মাহফিলের কত ফযীলত।
প্রকৃতপক্ষে ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে সাকীনা হাছিলের মাহফিল, রহমত, বরকত হাছিলের মাহফিল। সর্বোপরি ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে নিজের গুনাহখতা মাফ করার মাহফিল। অতএব, খুব ধ্যান ও খেয়ালের সাথে শুনতে হবে। আর শুনে মনে রেখে আমল করে খালিছ আল্লাহওয়ালা হতে হবে। তাই আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
كونوا ربانين
“তোমরা সকলেই আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও।” অর্থাৎ মাথার তালু হতে পায়ের তলা এবং হায়াত থেকে মউত পর্যন্ত আল্লাহ পাক-উনার মতে মত ও আল্লাহ পাক-উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পথে পথ হতে হবে।
আজকের খুৎবা সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, লখতে জিগারে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উম্মু আবীহা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা আলাইহাস সালাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান, খুছূছিয়ত-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাদীছ শরীফ-এ উনাদের ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী সম্মান বর্ননা করেছেন। এখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইজ্জত, সম্মান, বুযুর্গী এত বেশি রয়েছে যেটা সাধারণভাবে কোন মানুষের পক্ষে কোন জ্বিন- ইনসান কায়িনাতের পক্ষে বর্ণনা করে শেষ করা তো সম্ভবই নয়; উনাদের হাক্বীক্বী ছানা-ছিফত বিন্দু থেকে বিন্দুতম পর্যন্ত করা সম্ভব নয়। এখানে উনাদের মর্যাদা, মর্তবা, খুছূছিয়তের বিষয়টা যেটা রয়েছে উনাদের ইজ্জত-সম্মান, নাম মুবারক উচ্চারণ করা, খুছূছিয়ত বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা এটা যিনি খালিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব আল্লাহ পাক আর যিনি নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যাঁকে বা যাঁদেরকে তাওফিক দিবেন তাঁদের পক্ষেই সেটা সম্ভব। হাক্বীক্বত অন্যথায় এটা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “আদব হচ্ছে স্বর্ণ চান্দি থেকে উত্তম” হযরত মাওলানা রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মসনবী শরীফ-এর শুরুতে তিনি লিখেছেন-
از خدا جویم توفیق ادب+ بے ادب محروم گشت از لطف رب
তিনি উনার মসনবী শরীফ যেটা তাছাউফের বিখ্যাত কিতাব সেখানে প্রথমে তিনি লিখেছেন যিনি খালিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব আল্লাহ পাক উনার কাছে আমি আদব প্রার্থনা করতেছি, আদব চাচ্ছি।
যে বেয়াদব সে যিনি খালিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে সে বঞ্চিত। এখানে বিশেষ করে একটা বিষয় উল্লেখ্য সেটা হচ্ছে, যাঁরা উম্মুল মু’মিনীন এবং যাঁরা আহলে বাইত উনাদের শানে আসলে প্রকৃতপক্ষে আলাইহিস সালাম বা আলাইহাস সালাম, আলাইহিমুস সালাম, আলাইহিন নাস সালাম এই ছিফতগুলি বর্ণনা করাই সমধিক উপযুক্ত।
(অসমাপ্ত)