এটা চিন্তা এবং ফিকিরের বিষয় যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন এবং বিছাল শরীফ প্রতিটি হচ্ছে রহমত, বরকত, সাকীনার কারণ। এজন্য হাদীছ শরীফ-এ আমরা দেখতে পাই আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
الانبياء عليهم السلام احياء فى قبورهم وهم يصلون
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা জীবিত রয়েছেন উনাদের রওজা শরীফ-এর মধ্যে।
وهم يصلون
সেখানে উনারা নামাযও পড়েন। সুবহানাল্লাহ!
আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন মি’রাজ শরীফ-এ যাচ্ছিলেন তখন দেখতে পেলেন, আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনাকে উনার সেই রওজা শরীফ-এ, তিনি নামাযরত রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, উনাকেও উনার রওজা শরীফ-এ নামাযরত অবস্থায় দেখা গিয়েছে। এখন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের রওজা শরীফ-এ জীবিত থাকেন, আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টিজনক কাজে উনারা মশগুল থাকেন।
অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله حرم على الارض ان تأكل اجساد الانبياء فنبى الله حى يرزق.
হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
ان الله حرم على الارض
নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। কি হারাম করে দিয়েছেন-
ان تأكل اجساد الانبياء
হযরত নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যাঁরা রয়েছেন, উনাদের শরীর মুবারক খাওয়া থেকে যমীনের জন্য হারাম ঘোষণা করেছেন। যমীন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জিসিম মুবারক ক্ষতি করে না বা করতে পারে না। একজন মানুষ, আম লোক ইনতিকাল করলে মাটির সাথে মিশে যায়। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম যারা রয়েছেন, উনাদের বেলায় সেটা নয়। উনাদের শরীর মুবারককে খাওয়া আল্লাহ পাক-উনার তরফ থেকে যমীনের জন্য হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে-
فنبى الله حى يرزق
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সেখানে জীবিত থাকেন এবং রিযিকপ্রাপ্ত হন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই এখন ফিকিরের বিষয়, এটা সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যদি এই হুকুম হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কি হুকুম হবে। এখন উনার বিদায়ের কারণে কেউ যদি বলে শোক প্রকাশ করতে হবে তাহলে সেতো আশাদ্দুদ দরজার জাহিল হবে, ইবলিসের ওয়াসওয়াসা সেটা। কারণ আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আগমন এবং বিদায় যেহেতু প্রত্যেকটাই খুশির কারণ, রহমত, বরকত সাকীনার কারণ। কাজেই এতটুকু তারা বলতে পারে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন চলে গেলেন, তখন উনার জুদায়ির কারণে উনার যাঁরা ছোহবত ইখতিয়ার করেছেন, যাঁরা ছাহাবী হয়েছেন উনারা অনেক মর্যাদা লাভ করেছেন। সেই ছোহবতের অভাবে মানুষের যে মর্যাদা লাভ করার কথা ছিলো ছোহবতের কারণে সেটা থেকে তারা মাহরূম থাকবে। কিন্তু আল্লাহ পাক-উনার যে আদেশ নির্দেশ রয়েছে তর্জ-তরীক্বা, হুকুম-আহকাম সবতো তিনি বলে দিয়েছেন। এখন সেই আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী কেউ যদি চলে তবে সে অবশ্যই আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে রহমত, বরকত, সাকীনা লাভ করতে পারবে। আল্লাহ পাক উনার ওলীও সে হতে পারবে।
যেহেতু শোক তিন দিন আমভাবে। আর স্ত্রীর জন্য স্বামীর ব্যাপারে চার মাস দশ দিন। এর পরে শোক করা জায়িয নেই। শোক পালন করা হারাম। তাহলে আল্লাহ পাক উনার হাবীব, যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল উনার আগমন ও বিদায় একইভাবে একই অবস্থা। আগমনটা যেমন বরকতময় বিদায়টাও বরকতময়। তাহলে উনার জন্য কেন শোক প্রকাশ করতে হবে। বরং উনার আগমনের কারণে খুশি প্রকাশ করে উনার যে সাওয়ানেহ উমরী মুবারক রয়েছে সেটা আলোচনা করে সেখান থেকে ইবরত-নছীহত হাছিল করতে হবে। আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة
তোমাদের জন্য তোমাদের রসূল-উনার মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।
সে আদর্শ আলোচনা করে সেটা পালন করতে হবে তাহলে হাক্বীক্বী কামিয়াবী রয়েছে। এখন নানান ওসীলা দিয়ে এলোমেলো বক্তব্য পেশ করে কুফরী শিরকীতে কেউ যদি মশগুল হয়ে যায় তাহলে তার জন্য জাহান্নাম ছাড়া কোন গতি থাকবে না। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাতো জিন্দা রয়েছেনই। শুধু পর্দার আড়াল এতটুকু পার্থক্য। হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সম্পর্কে একই কথা বর্ণিত রয়েছে, যেটা হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বর্ণনা করেন-
الا ان اولياء الله لا يموتون بل ينتقلون من دار الفناء الى دار البقاء.
সাবধান হয়ে যাও! নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক উনার ওলী উনারা মৃত্যুবরণ করেন না বরং অস্থায়ী জগৎ থেকে স্থায়ী জগতের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন।
এর ব্যাখ্যায় অনেক ওয়াক্বিয়া রয়েছে। তবে মাশহূর যে ওয়াক্বিয়া, আমাদের যিনি ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে যে ওয়াক্বিয়াটা বর্ণিত রয়েছে, সেটা শুনলেই বুঝা যাবে সহজেই। সেটা হচ্ছে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি বেমেছাল ইমাম উনার যে মর্যাদা-মর্তবা রয়েছে বেমেছাল। তবে যেহেতু হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শত্রু সবসময় ছিলো এবং থাকবে। উনারও শত্রু ছিলো, দুশমন ছিলো, মুনাফিক ছিলো যারা উনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য কোশেশ করতো সবসময়ই। এক বৃদ্ধা মহিলা সেও দুষ্ট প্রকৃতির মানুষের ওয়াসওয়াসার কারণে সেও গোমরাহ হয়েছিল। সে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে উনার যারা ছাত্র তাদেরকে সে বললো, আপনারাতো ইমাম আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছাত্র। উনারা বললেন: হ্যাঁ। সেই বৃদ্ধা মহিলা বললো: আমি শুনেছি উনি নাকি সমস্ত মাসয়ালার জাওয়াব দিয়ে থাকেন, খুব বড় আলিম মুহাক্কিক-মুদাক্কিক উনার ছাত্ররা বললো যে আপনি ঠিকই শুনেছেন। বরং যা শুনেছেন তার চেয়েও তিনি বেশি। তখন সেই বৃদ্ধা মহিলা তার ভিতরে দুষ্টামী বুদ্ধি ছিলো সে বললো: আমারওতো একটা মাসয়ালা রয়েছে। আপনাদের ইমাম ছাহেব কি তার জাওয়াব দিতে পারবেন?
উনার যারা ছাত্র উনারা বললেন: হে বৃদ্ধা মহিলা! তোমার প্রশ্নের জাওয়াব দেয়াটা আমাদের ইমাম ছাহেব উনার জন্য কোন ব্যাপারই না। তবে তুমি জিজ্ঞেস করতে পারো। কি মাসয়ালা? সে সেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, সে বৃদ্ধা মহিলা একটা ছাগল নিয়ে গিয়েছিলো, ছাগলের থোতার মধ্যে কিছু পশম ছিলো। তার উদ্দেশ্য ভালো ছিলো না। উদ্দেশ্য ছিলো উনাকে কি করে আটকানো যেতে পারে। নাঊযূবিল্লাহ! আপনার দাড়ি মুবারক রয়েছে আর এই ছাগলের থোতাতে কিছু পশম রয়েছে, এখন কোনটা শ্রেষ্ঠ? এটা আমাকে বলে দিতে হবে। ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জানতেন এ মাসয়ালা। উনার দাড়ি মুবারক লক্ষ কোটি গুণ শ্রেষ্ঠ এতে কোন সন্দেহ নেই। এরপরেও তিনি বললেন: তুমি তিনদিন পরে আসো। ইখতালিফ রয়েছে তিনি বলেছেন, তুমি কয়েকদিন পরে আসো। কয়েকদিন পরে তিনি বিছাল শরীফ লাভ করলেন। যখন বিছাল শরীফ লাভ করলেন তখন বৃদ্ধা মহিলা সুযোগ পেয়ে গেলো। দুষ্ট মহিলা সে বলাবলি করতে লাগলো দেখো, তোমাদের ইমাম ছাহেব আমার মাসয়ালার জাওয়াব দেয়ার ভয়ে তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!
এই দুষ্ট বুদ্ধির মহিলা এলোমেলো বক্তব্য ছড়াতে লাগলো সমস্ত এলাকায়। এদিকে ইমাম আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গোসল মুবারক সম্পন্ন করে উনার জিসিম মুবারক খাটিয়াতে করে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল রাস্তার মাথায় সেই বৃদ্ধা মহিলা দাঁড়িয়েছিলো। সেখানে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোক জনসমাগম রয়েছে, যখন ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি উনার জিসিম মুবারক বৃদ্ধার সামনে এসে উপস্থিত হয়ে গেলো, সেই খাটিয়া থেকে তিনি মাথা উত্তোলন করে বললেন: হে বৃদ্ধা মহিলা! তুমি যে আমাকে প্রশ্ন করেছিলে আমার দাড়ি মুবারক শ্রেষ্ঠ অথবা তোমার সেই ছাগলের থোতার পশম উত্তম? তুমি জেনে রাখো আমার দাড়ি মুবারক তোমার ছাগলের থোতার পশমের চাইতে লক্ষ কোটি গুণ বেশি মর্যাদা সম্পন্ন। সুবহানাল্লাহ! তিনি আরো বললেন দেখ, আমি তোমার এই প্রশ্নের জাওয়াব তখন দেইনি এজন্য যে, আমি যদি ঈমানের সাথে যেতে পারি তাহলে আমার দাড়ি মুবারক শ্রেষ্ঠ হবে। আর ঈমানহারা হয়ে যদি কেউ যায় তাহলে তার দাড়ি থেকে ছাগলের পশমই শ্রেষ্ঠ হবে। সেজন্য আমি জাওয়াব দেইনি। আমার জানা ছিলো তারপরও তাক্বওয়ার জন্য আল্লাহ পাক উনার ভীতির কারণে জাওয়াব দেয়া হয়নি। তুমি জেনে রাখ, তোমার ছাগলের পশম যা রয়েছে তার চেয়ে আমার দাড়ি মুবারক লক্ষ কোটি গুণ বেশি মর্যাদা সম্পন্ন। সুবহানাল্লাহ! তিনি খাটিয়া থেকে প্রশ্নের জাওয়াব দিয়ে আবার শুয়ে পড়লেন। সুবহানাল্লাহ!
এখন আল্লাহ পাক উনার ওলী উনারা যদি মিটেই যেতেন তাহলে বিছাল শরীফ-এর পর উনাকে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন কি করে তিনি সে কথার জওয়াব দিলেন। সেটাই বলা হয়েছে, যারা আল্লাহ পাক উনার ওলী উনারা আসলে বিলীন হয়ে যান না। বরং পর্দার আড়ালে চলে যান। অসমাপ্ত।