যেটা হাদীছ শরীফ-এ এসেছে-
عن معاوية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من يرد الله به خيرا يفقهه فى الدين وانما انا قاسم والله يعطى
হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, æআল্লাহ পাক যাঁর ভালাই চেয়ে থাকেন তাকে দ্বীনি সমঝ দিয়ে থাকেন, দীনের বুঝ দিয়ে থাকেন।”
এরপর আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, æনিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন বণ্টনকারী। আর আল্লাহ পাক হচ্ছেন দানকারী, দাতা।” আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে দিয়েছেন তিনি সেটা বণ্টন করেন।
এখন এই যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, এই দায়িত্ব কখন থেকে কখন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে? এটা যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়, সে তো জাওয়াব দিতে পারবে না। এই দায়িত্ব শুরু থেকে, রোজ আযল থেকে অনন্তকাল ধরে আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে দিয়েছেন। শুরুতে দেয়া হয়েছে এবং অনন্তকাল ধরে সে দায়িত্ব চলতেই থাকবে। শুধু ক্বিয়ামত পর্যন্তই নয় অনন্তকাল ধরে। জান্নাতে যারা যাবে সেখানেও আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার দায়িত্ব রয়েছে, তিনি বণ্টনকারী। তিনি বণ্টন করতেই থাকবেন, করেছেন, এখন করছেন সামনেও করবেন।
কাজেই, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার যে বিষয়টা রয়েছে তিনি দুনিয়াবী জিন্দিগী থেকে বিদায় নিয়েছেন সত্যিই, পর্দার আড়ালে গিয়েছেন। কিন্তু হাক্বীক্বত এখনও উনার যে দায়িত্ব রয়েছে সে দায়িত্ব তিনি পালন করে থাকেন।
যেটা আমরা হাদীছ শরীফ-এ দেখতে পাই, কিতাবাদিতে দেখতে পাই, সেই অবস্থা, সে হাল। আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন-
حياتى خيرلكم ومماتى خير لكم
আমি যমিনে অবস্থান করি সেটা তোমাদের জন্য ভালো, আমি আল্লাহ পাক-উনার সাক্ষাতে চলে যাই সেটাও তোমাদের জন্য ভালো।
অর্থাৎ দুনিয়াবী জিন্দিগী মুবারকের ৬৩ বৎসর বয়স মুবারক এটাও তোমাদের জন্য উত্তম আবার আমি যে আল্লাহ পাক-উনার সাক্ষাতে গিয়ে থাকবো সেটাও তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি কিতাব যে নাযিল হয়েছে সেটা তিনি পৌঁছে দিয়েছেন। আদেশ-নির্দেশ যা রয়েছে, শরীয়তের হুকুম-আহকাম এবং যে দায়িত্ব রয়েছে সেটা তিনি সম্পন্ন করে তিনি চলে গেছেন। কিন্তু উনার দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে, তিনি দায়িত্ব থেকে অবসর হয়েছেন সেটা নয়। উনার দায়িত্ব যথাযথই রয়েছে। দু’ একটি মিছাল দিলে বুঝা যাবে সহজেই।
এক নম্বর হচ্ছে- যেটা কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, হযরত সায়ীদ বিন মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার তিনি মেয়ের জামাতা। হযরত সায়ীদ বিন মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশিষ্ট তাবিয়ী, বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ। তিনি একটা ঘটনা বর্ণনা করেন। সেটা হলো, যখন ইয়াযীদের বাহিনী মদীনা শরীফ আক্রমণ করে, আক্রমণ করে অনেক যুলুম সে করেছে। তার সৈন্য সামন্তরা। এবং এক পর্যায়ে, তারা এতবড় যালিম, তারা মসজিদে নববী শরীফ-এ রওযা শরীফ-এর পাশে একটা স্থানে ঘোড়া পর্যন্ত বেঁধেছিলো। নাউযুবিল্লাহ! তাদের যুলুমের কারণে হযরত সায়ীদ বিন মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মসজিদে নববী শরীফ-এর আশে পাশে যারা ছিলেন উনারা সকলেই দূরে চলে গেলেন। তিনি বর্ণনা করেন, আমি মসজিদে নববী শরীফ-এর ভিতরে ছিলাম, আমি যখন দেখলাম তারা যুলুম করতেছে, তারা যালিম, তারা হয়তো যুলুম করে আমাকেও শহীদ করে ফেলবে। তখন মসজিদে নববী শরীফ-এর ভিতরে একটা পাটি ছিলো প্যাঁচানো, গোল করে এক কোণায়। আমি সেটার ভিতরে প্রবেশ করে গেলাম। আমি প্রবেশ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারা দূর থেকে মনে করলো একটা পাটি রাখা হয়েছে, এর মধ্যে যে মানুষ রয়েছেন তারা সেটা বুঝতে পারলো না। হয়তো তারা বুঝতে পারলে আমাকে শহীদ করে ফেলতো। অনেককে তারা শহীদ করেছে। তিনি বললেন, আমি সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। এটা সকালের ঘটনা ৮-১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। যালিমরা তো পাশে ঘোড়া বেঁধেছে। সেখানে যুলুম করে তারা কয়েক ঘণ্টা থেকে যুহরের ওয়াক্ত হওয়ার আগেই সেখান থেকে সরে গেছে, চলে যায়নি। অর্থাৎ আশে পাশে তারা রয়েছে যুলুম করার জন্য মানুষকে। তিনি বলেন, একাধারা আমি লক্ষ্য করলাম- তিনদিন পর্যন্ত কোন লোকই মসজিদে নববী শরীফ-এ আসলোনা নামাযের জন্য। তিনি বলেন, আমি চিন্তা ফিকির করলাম, প্রথমে যখন যুহরের ওয়াক্ত হলো আমিতো পাটির ভিতরে দাঁড়িয়ে রয়েছি সোজা হয়ে তাহলে কি করে নামায পড়বো? আমার চিন্তা হলো, কে আযান দিবে? কোথায় নামায পড়বো? এখন যালিম লোকগুলো মসজিদে নববী শরীফ থেকে দূরে রয়েছে। আশে পাশে তারা নেই কিন্তু তারা দূরে থাকার পরও মানুষ সেখানে আসতেছে না তাদের ভয়ে। তিনি বললেন, যখন যুহরের ওয়াক্ত হয়ে গেল তখন প্রতিদিন যুহর ওয়াক্তের সময়, মসজিদে নববী শরীফ-এ যে সময় আযান হয়ে থাকে আমি লক্ষ্য করলাম রওযা শরীফ থেকে ঠিক সে সময় আযান হতে লাগলো, রওযা শরীফ থেকে আযানের আওয়াজ আসতে থাকলো। আমি বুঝতে পারলাম আযান হচ্ছে, আমি আযানের জাওয়াব দিলাম। কিছুক্ষণ পর আমি শুনতে পেলাম যে ইক্বামত হচ্ছে, আমি ইক্বতেদা করলাম। যুহর, আছর, মাগরিব, ইশা, ফজর এভাবে তিনদিন আমি ইক্বতিদা করলাম। সেখানে আযান হলো, ইক্বামত হলো, নামায হলো, আমি সেখানে ইক্বতিদা করলাম। তিনদিন পর যখন সে যালিমরা চলে গেলো লোকজন তখন আসলো, আমি সেখান থেকে বের হয়ে আসলাম। আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে ইমামতি করেছেন আমি আওয়াজ শুনতে পেয়েছি, ইক্বামত হয়েছে, জামায়াত হয়েছে এবং যথারীতি সালাম দিয়ে নামাযও শেষ করা হয়েছে। দোয়া ইসতিগফার সবই হয়েছে। তিনি বলেন, আমি সেই জামায়াতের মধ্যে শামিল হয়ে আমার এই তিন দিনের তিন পাঁচে পনেরো ওয়াক্ত নামায আমি যথারীতি আদায় করেছি। সুবহানাল্লাহ!
আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চলে গেছেন পর্দার আড়ালে কিন্তু উনার যে বণ্টন করার দায়িত্ব, আল্লাহ পাক-উনার তরফ থেকে যে দায়িত্ব উনাকে দেয়া হয়েছে সেটা ঠিকই রয়েছে। তিনি সেই রওযা শরীফ-এ থেকে থেকেই সে কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে বলা হয় আল্লাহ পাক-উনার যমীনে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদায় নেয়ার পর যেখানে যে বিষয় প্রয়োজন সেটা আল্লাহ পাক-উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রওজা শরীফ থেকেই সমাধা করেন। এর মিছালস্বরূপ বলা হয়, অনেক ওয়াক্বিয়া রয়েছে বিশেষ করে যিনি মাশহূর ওলীআল্লাহ সুলত্বানুল হিন্দ, খাজা গরীব নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি আজমীর শরীফ-এ শায়িত রয়েছেন। তিনি প্রথমে উনার শায়খ হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার সাথে মদীনা শরীফ গেলেন, সেখানে গিয়ে সালাম দিলেন। সালামের জাওয়াব আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার তরফ থেকে দেয়া হলো।
وعليكم السلام يا قطب المشائخ
সেখানে উনাকে ‘মাশায়িখদের কুতুব’ বলে সম্বোধন করা হলো। সুবহানাল্লাহ!
এরপর তিনি আরেকবার গেলেন উনার সালামের জাওয়াব দেয়া হলো-
وعليكم السلام يا قطب الهند يا امام الهند
হিন্দুস্তানের কুতুব, হিন্দুস্থানের ইমাম। সুবহানাল্লাহ! কয়েকবার তিনি যিয়ারত করতে গিয়েছেন। এরপর যখন আরেকবার যিয়ারত করতে গেলেন। যখন তিনি যিয়ারত করতে গেলেন তখন আল্লাহ পাক-উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে যিনি খাদিম ছিলেন উনাকে ডেকে বললেন, যে, মুঈনুদ্দীনকে ডেকে আনো। সেই খাদিম যখন মুঈনুদ্দীন বলে ডাক দিলেন তখন অনেক লোক দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অনেক মুঈনুদ্দীন রয়েছেন, কোন মুঈনুদ্দীন? আল্লাহ পাক-উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, খাজা মুঈনুদ্দীন সানজিরী, সঞ্জর থেকে যিনি এসেছেন উনাকে ডাকো। যখন তিনি এটা বললেন তখন হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী সানজিরী আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরিচয় দিলেন। উনাকে ডেকে আনা হলো। আল্লাহ পাক-উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে মুরাকাবায় বসালেন যে আপনি এখানে বসুন। আপনার জন্য কিছু নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ পাক-উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে নির্দেশ দিলেন, হে মুঈনুদ্দীন! আপনার হিদায়েতের কেন্দ্র হচ্ছে হিন্দুস্থান। আপনি সেখানে চলে যান। আপনার রিয়াজত, মাশাক্কাত যা কিছু প্রয়োজন ছিল সেটা আপনার হয়েছে, এখন আপনি আপনার হিদায়েতের, কেন্দ্রস্থল যেখানে, সেখানে চলে যান। যখন উনাকে এ কথা বলা হলো, সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তো হিন্দুস্থান চিনি না। কি করে হিন্দুস্থানে যাবো? আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনি মুরাকাবায় বসুন, মুরাকাবায় বসলে আমি কাশফের মাধ্যমে রাস্তা দেখিয়ে দিব। কোন কোন বর্ণনায় এক টুকরা মাটিও দেয়া হলো, আপনি এটা নিয়ে যান, যেখানকার মাটি এই মাটির সাথে মিলে যাবে সেখানেই আপনি অবস্থান করবেন। এবং কাশফের মাধ্যমে সমস্ত রাস্তা ম্যাপ দেখিয়ে দেয়া হলো। তিনি সে অনুযায়ী আস্তে আস্তে উনার হিদায়েতের কেন্দ্রস্থল আজমীর শরীফ-এ এসে উপস্থিত হলেন। সুবহানাল্লাহ!
(অসমাপ্ত)