আল্লাহ পাক-এর হাবীব, আখিরী নবী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মি’রাজ শরীফ-এ গিয়েছিলেন তখন দেখতে পেলেন, ঐ মহিলা সে জান্নাতে বিচরণ করতেছে। সুবহানাল্লাহ। তাকে জান্নাতে বিচরণ করতে দেখে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, এ মহিলা কি করে জান্নাতে আসল? আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে জানানো হল, সে তো খারাপ মহিলা ছিল। একটা কুকুরের কারণে তাকে জান্নাত দেয়া হয়েছে। একটা কুকুরকে সে পানি পান করিয়েছিল। পানি পান করে কুকুরটা ইত্মিনান হয়েছিল, খুশি হয়েছিল, তার জন্য দুয়া করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ পাক সেই মহিলাকে তওবা করার সুযোগ দিলেন এবং সে তওবা করে ঈমানের সহিত মৃত্যুবরণ করলো এবং সাথে সাথে আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ।
এখন চিন্তা-ফিকিরের বিষয়, একটা কুকুরকে তা’যীম-তাকরীম করার কারণে অর্থাৎ তাকে পানি পান করানোর কারণে তার পিপাসা দুর করার কারণে যদি এতো খারাপ একজন মহিলা যার থেকে খারাপ আর হতে পারে না, আল্লাহ পাক-এর যমীনে তার থেকে আর খারাপ হতে পারে না। এই খারাপ মহিলা সে জান্নাত পেয়ে গেল। এটা যদি হয়ে থাকে তাহলে, যে আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর জন্য সমস্ত ক্বায়িনাত সৃষ্টি হয়েছে, সমস্ত মাখলূক্বাত সৃষ্টি হয়েছে সেই আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অজুদ মুবারকের জন্য কেউ যদি তা’যীম-তাকরীম করে, খুশি প্রকাশ করে তার কতটুকু মর্যাদা হবে? এটা ফিকির ও চিন্তার বিষয়।
হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে-
عن ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال كان فى بنى اسرائيل رجل قتل تسعة وتسعين انسانا ثم خرج يسأل فأتى راهبا فسأله فقال له رجل ا له توبة قال لا فقتله فجعل يسأل فقال له رجل ائت قرية كذا وكذا فادركه الموت فناء بصدره نحوها فاختصمت فيه ملائكة الرحمة وملائكة العذاب فأوحى الله الى هذه ان تقربى والى هذه أن تباعدى وقال قيسوا ما بينهما فوجد الى هذه اقرب بشبر فغفرله.
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব ইরশাদ করেন, বনী ইসরাইলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল যে একে একে নিরানব্বইটি খুন করেছিল। নাউযুবিল্লাহ। নিরানব্বইটি সে খুন করেছিল। খুন করার পর তার মনে অনুশোচনা আসল। অনেক পাপ সে করেছে, তাকে তওবা করতে হবে, ইস্তিগফার করতে হবে। যেহেতু বয়স হয়েছে, মৃত্যু নিকটবর্তী তাকে তওবা করতে হবে। ইত্যাদি চিন্তা-ফিকির করে সে লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, কোন ব্যক্তি যদি নিরানব্বইটা খুন করে তাহলে তার কি তওবার কোন ব্যবস্থা রয়েছে? জিজ্ঞেস করতে করতে এক লোককে সে জিজ্ঞাসা করল, সে এক রাহিব, খ্রিস্টান দরবেশ, তার ইল্্ম্- কালাম ছিল না। তাকে সে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা ভাই! তুমি বলতে পার, যে লোকটা নিরানব্বইটা খুন করেছে তার কি কোন তওবার ব্যবস্থা রয়েছে?
ا له توبة
সে রাহিব যেহেতু মুর্খ ছিল ইল্ম্-কালাম ছিল না, সে দরবেশ ছিল। সে বলল না, যে লোক নিরানব্বইটা খুন করেছে তার তওবার কোন ব্যবস্থা নেই। এটা শুনে সেই খুনি লোকটা উত্তেজিত হয়ে فقتله সেই দরবেশকেও সে হত্যা করে ফেলল ,খুন করে ফেলল। فجعل يسئل
এরপরও সে লোকদের জিজ্ঞেস করতে লাগল তার যখন শরীরের রক্ত ঠাণ্ডা হলো। সে মনে মনে চিন্তা করল ব্যাপারটা কি হল? তওবা করতে এসে আরেকটা লোক খুন করে ফেললাম, এটা কেমন হলো। সে লোকদের জিজ্ঞেস করতে লাগলো, যে লোক একশটা খুন করেছে তার কি কোন তওবার ব্যবস্থা রয়েছে?
فقال له رجل ائت قرية كذا وكذا
তাকে এক ব্যক্তি বলল, যে দেখ, আসলে প্রকৃতপক্ষে যাকে জিজ্ঞেস করা হলো তারও ব্যাপারটা জানা নেই। তাই সে বললো, অমুক গ্রামে একজন লোক রয়েছে তার কাছে গেলে তুমি জানতে পারবে, যে একশটা খুন করেছে তার মাফ হবে কি না? এটা শুনে সে লোকটা মনে করল, সেখানে হয়তো তার একটা ব্যবস্থা হবে। সে তার সিনাটা শুধু সে গ্রামের দিকে ফিরিয়েছিল, রুজু করেছিল। যে গ্রামে গেলে সংবাদ পাওয়া যাবে, তওবার ব্যবস্থা হবে কি না। যখন সে শুধু সিনা ফিরিয়েছে তখন দেখা গেল তার মৃত্যুর পরওয়ানা এসে গেল। রহমতের ফেরেশতা যারা অর্থাৎ নেককারদের রূহ কবজ করে থাকেন তারাও আসলেন। আর যারা বদকারদের রূহ কবজ করে থাকেন তারাও আসলেন।
فاختصمت فيه ملائكة الرحمة وملائكة العذاب
দু’দল ফেরেশ্তা এসে পরস্পর উনারা আলোচনা করতে লাগলেন, ব্যাপারটা কি হলো। যারা আযাব-গযবের ফেরেশতা যারা আযাব-গযব দিয়ে থাকেন, বদকারদের রূহ যারা কবয করে থাকেন তাঁরা বললেন, এই লোকটা একশত খুন করেছে কাজেই সেতো জাহান্নামী। তাকে বদকার হিসেবে রূহ কবজ করতে হবে। আর যারা নেক্কারদের রূহ কবজ করে থাকেন তারা বললেন, এই লোকটাতো তওবার নিয়ত করেছে। যেহেতু তওবা করলে আল্লাহ পাক গোনাহ-খতা মাফ করে দেন তাকে নেক্কার হিসেবে রূহ কবয করতে হবে। উনারা আলোচনা করতে লাগলেন। পরে বললেন, তাহলে আল্লাহ পাক-এর কাছে ফায়ছালা করা হোক।
فاوحى الله
আল্লাহ পাক ওহী করলেন,
الى هذه ان تقربى و الى هذه أن تباعدى وقال قيسوا ما بينهما
আল্লাহ পাক বললেন, হে ফেরেশ্তারা এক কাজ করো, যে স্থানে তার মৃত্যু এসেছে এই স্থান থেকে তার বাড়ীর দিকের রাস্তাটা মেপে দেখ এবং যে স্থানে সে তওবা করার জন্য যেত সেই স্থানটা মাপ। দুই দিকে মেপে দেখ। যদি বাড়ীর দিকের রাস্তা নিকটবর্তী হয় তাহলে সে বদকার হবে। আর যদি তওবার দিকের রাস্তাটা নিকটবর্তী হয়ে যায়, তওবার কাছাকাছি সে হয় তাহলে সে নেক্কার হবে।
فوجد الى هذه اقرب بشبر فغفرله
যখন মাপা হলো। কি পাওয়া গেল? যখন মাপা হলো আল্লাহ পাক-এর কুদরত! তখন দেখা গেল, আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের এই কথা বলে দিলেন, তোমরা মেপে দেখ, তার মৃত্যুস্থল থেকে তার বাড়ীর দিকের রাস্তা নিকটবর্তী অথবা তার তওবার দিকের রাস্তা নিকটবর্তী। যদি তওবার দিকের রাস্তা নিকটবর্তী হয় তাহলে সে নেক্কার হবে। আর বাড়ীর দিকের রাস্তা নিকটবর্তী হলে তওবার রাস্তা দূরবর্তী হলে সে বদকার হবে। কিন্তু আল্লাহ পাকতো রহমান, রহীম, গফ্ফার, সাত্তার। তিনি কি করলেন? ওটা ফেরেশ্তাদের জানতে দিলেন না। তার তওবার দিকের রাস্তা আসলে বেশি দূরবর্তী ছিল, বাড়ীর দিকের রাস্তা নিকটবর্তী ছিল। আল্লাহ পাক যমীনকে বললেন, হে যমীন! এক কাজ কর, তার তওবার দিকের রাস্তাটা কম হয়ে যাও, বাড়ীর দিকের রাস্তা লম্বা হয়ে যাও। সুবহানাল্লাহ। ফেরেশ্তারা মেপে দেখলেন সত্যিই, কি দেখলেন?
اقرب بشبر
এক বিঘত তওবার দিকে নিকটবর্তী।
فغفرله
যখন মেপে দেখা হলো তখন ফেরেশ্তা জানালেন, হে বারে ইলাহী! সে এক বিঘত তওবার নিকটবর্তী। ফেরেশতারাতো ভিতরগত ব্যাপারটা জানেন না। আল্লাহ পাক আদেশ করে দিয়েছেন। আল্লাহ পাক-এর সব জানা রয়েছে তারপরেও কি করলেন? আল্লাহ পাক জিজ্ঞাসা করলেন, মাপা হয়েছে? হ্যাঁ, মাপা হয়েছে। কোন দিকে নিকটবর্তী? তার তওবার দিকে সে নিকটবর্তী। আল্লাহ পাক তখন জানালেন, তাহলেতো আমি আগেই বলেছি, সে যদি তওবার নিকটবর্তী হয় তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হোক। তাকে ক্ষমা করে দেয়া হল। সুবহানাল্লাহ।
এখন ফিকির এবং চিন্তার বিষয়, এতো বড় খুনি, সে একশটা খুন করেছে, সে তওবার নিয়ত করেছে, তার জন্য যদি তাকে এতো বড় ফযীলত দেয়া হয়। এতো বড় ফযীলত সে পেল কি করে? সে আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় সে সেটা পেয়েছে। তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর অজুদ মুবারক উপলক্ষ্যে যদি কেউ খুশি প্রকাশ করে তাহলে সেটার কি ফায়ছালা হবে। এটা ফিকিরের বিষয়।
(অসমাপ্ত)