আল্লাহ পাক-এর হাবীবকে তা’যীম কর, তাকরীম কর, উনার খিদমত কর। তাহলে তোমাদের কামিয়াবী রয়েছে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর যে অজুদ মুবারক রয়েছে সেই অজুদ মুবারকের জন্য খুশি প্রকাশ করা কত ফযীলত, উনার একটা ছিফতের জন্য খুশি প্রকাশ করলেই তার এত মর্যাদা হয়ে যায়।
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর নবী যিনি জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার প্রতি আল্লাহ পাক একবার ওহী করলেন, হে আমার নবী, আমার রসূল! আপনি এক কাজ করুন, অমুক এলাকায় একজন লোক ইন্তিকাল করেছে তার গোসল, কাফন, দাফনের ব্যবস্থা করুন। যেহেতু আল্লাহ পাক ওহী করেছেন আল্লাহ পাক-এর নবী-এর প্রতি, তিনি ওহী মুতাবিক সেখানে গেলেন। সেখানে গিয়ে এলাকাবাসীদের কাছে সংবাদ নিলেন, খোঁজ খবর নিলেন যে, তোমাদের এলাকায় একটা লোক নাকি ইন্তিকাল করেছেন? তারা বলল যে, হ্যাঁ। ইন্তিকাল করেছে। সে লোকটা কোথায়? তার গোসল, কাফন, দাফনের ব্যবস্থা কি তোমরা নিয়েছ? তারা বলল, আমরা তার কোন ব্যবস্থা নেইনি। কারণ, লোকটা চরম ফাসিক ছিল, চরম ফাসিক। সে দুইশত বৎসর হায়াত পেয়েছিল। তার অনেক দোষ-ত্রুটি রয়েছে, যার জন্য আমরা তাকে ফেলে রেখেছি। তার গোসল, কাফন, দাফনের কোন ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছিনা। এটা শুনে আল্লাহ পাক-এর জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম বললেন, তোমরা বল কি? তোমরা তার গোসল, কাফন, দাফনের ব্যবস্থা নিচ্ছনা। অথচ স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাকে পাঠিয়েছেন। তিনি উনার পরিচয় দিলেন যে, তিনি হচ্ছেন এ যামানার নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম। যে, আমাকে পাঠিয়েছেন তার গোসল, কাফন, দাফনের জন্য। আর তোমরা কি বলতেছ? লোকেরা, এলাকাবাসী উনার নাম মুবারক শুনে তারা আতকে উঠল, যে আপনি বলেন কি? আপনি আল্লাহ পাক-এর রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম! আপনি এসেছেন তার গোসল, কাফন, দাফনের জন্য অথচ আমরা তাকে পছন্দ করিনা। এটা কেমন কথা। সে একটা চরম ফাসিক ছিল। দুইশত বৎসর হায়াত পেয়েছিল, তাকে আমরা পছন্দ করতাম না। এটা শুনে আল্লাহ পাক-এর নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম, তিনি আল্লাহ পাক-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, হে বারে ইলাহী! এটা কেমন কথা? এলাকাবাসী তাকে পছন্দ করেনা। সে দুইশত বছর হায়াত পেয়েছিল। তার নাকি অনেক গুনাহ-খতা রয়েছে? অথচ আপনি আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি আপনার নবী ও রসূল। আমার প্রতি আপনি তাওরাত শরীফ নাযিল করেছেন। তার গোসল, কাফন, দাফনের জন্য পাঠিয়েছেন। এটা কেমন কথা।
আল্লাহ পাক তখন জানালেন, হে আমার নবী এবং রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম! এলাকাবাসী সত্য কথাই বলেছে। লোকটা দুইশত বৎসরই হায়াত পেয়েছিল। এবং মানুষ মাত্রই তো ত্রুটি রয়েছে। তারও গোনাহ-খতা ছিল।
ان الانسان مركب من الـخطاء والنسيان
“নিশ্চয়ই মানুষ ভুল-ত্রুটি যুক্ত।” তারও কিছু ভুল-ত্রুটি ছিল। তবে এই ব্যক্তি এমন একটা আমল করেছে, যে আমলের কারণে আল্লাহ পাক বলেন, আমি তার জিন্দিগীর দুইশত বৎসরের সমস্ত গোনাহ-খতা মাফ করে জাহান্নাম হারাম করে জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছি। সুবহানাল্লাহ। শুধু এতটুকুই নয়, আপনার মত একজন জলীলুল ক্বদর রসূলকে যাঁর প্রতি আমি তাওরাত শরীফ নাযিল করেছি, তাঁকে পাঠিয়েছি তার গোসল, কাফন, দাফনের জন্য। সুবহানাল্লাহ।
এটা শুনে স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর নবী এবং রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম বললেন, হে বারে ইলাহী! এমন কি আমল রয়েছে, যে আমল করলে দুইশত বৎসরের গোনাহ-খতা মাফ হয়ে যায়, জাহান্নামী জান্নাতী হয়ে যায়, একজন জলীলুল ক্বদর রসূল গোসল কাফন, দাফনের জন্য আদেশপ্রাপ্ত হন, এমন কি আমল রয়েছে? দয়া করে আমাকে জানিয়ে দিন বারে ইলাহী! সে আমলটা আমিও করব আমার উম্মতদেরকে করতে বলব। কারণ, এ আমলের আমার প্রয়োজন রয়েছে, যে আমলের দ্বারা এতো ফযীলত পাওয়া যায়। আল্লাহ পাক জানালেন যে, আপনাকে তো সেটা জানানো হবে। আমি যে তাওরাত শরীফ আপনার প্রতি নাযিল করেছি সেই তাওরাত শরীফ-এর মধ্যে আমার যিনি হাবীব, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক ‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এই নাম মুবারক সেখানে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এই লোকটা, যে দুইশত বৎসর হায়াত পেয়েছিল, যার গুনাহ-খতা রয়েছে, ভুল-ত্রুটি রয়েছে, সে তাওরাত কিতাব একদিন খুলেছিল, খুলে দেখতে পেয়েছিল সেখানে এক স্থানে আল্লাহ পাক-এর হাবীব, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ আল্লাহ পাক বলেন, আমার যিনি হাবীব উনার নাম মুবারক সেখানে রয়েছে। সেটা সে দেখে আমার হবীব-এর মুহব্বতে শুধুমাত্র আমার হাবীব-এর নাম মুবারককে সে চুম্বন করেছিল মুহব্বতের সহিত। সুবাহানাল্লাহ। এই চুম্বন করার কারণে আল্লাহ পাক বলেন, যেহেতু সে আমার হাবীবকে মুহব্বত করে আমার হাবীব-এর নাম মুবারক চুম্বন করেছে সেজন্য আমিও তাকে মুহব্বত করেছি। সুবহানাল্লাহ। আমার হাবীবকে মুহব্বত করার কারণে আমিও তাকে মুহব্বত করে তার দুইশত বৎসরের গুনাহ-খতা মাফ করে দিয়েছি এবং তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছি। সুবাহানাল্লাহ। এবং আপনার মত একজন জলীলুল ক্বদর রসূলকে এই ব্যক্তির গোসল, কাফন, দাফনের জন্য আদেশ করেছি। সুবহানাল্লাহ।
এখন ফিকির এবং চিন্তার বিষয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর নাম মুবারককে চুম্বন করার কারণে যদি এটা হয়ে যায় যে, দুইশত বৎসরের গুনাহ-খাতা মাফ হয়ে যায়, জাহান্নামী জান্নাতী হয়ে যায়। একজন জলীলুল ক্বদর রসূল তার গোসল, কাফন, দাফনের জন্য আদেশপ্রাপ্ত হন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর নাম মুবারককে শুধু চুম্বন করার কারণে যদি এতটুকু ফযীলত লাভ করা যায় তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর অজুদ মুবারক তিনি যেদিন এসেছেন সেজন্য কেউ যদি খুশি প্রকাশ করে তাহলে সে কতটুকু মর্যাদা লাভ করবে। এটাতো আক্বলের বিষয়, চিন্তার বিষয়। আর সেই বণী ইস্রাঈলের সেই বান্দা, সে কিন্তু কোন ফযীলত জানত না। সে তাদের আসমানী কিতাবে বা নবী-রসূলদের ক্বওল মুবারকের মধ্যে এমন কোন কথা সে শুনেনি, পায়নি, জানেনি বা তার জানা ছিল না। যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর নাম মুবারককে সম্মান করলে, তা’যীম-তাকরীম করে চুম্বন করলে এত ফযীলত পাওয়া যাবে সেটা তার জানা ছিল না। কোথাও সে লিপিবদ্ধ পায়নি। তারপরেও সে তা’যীম-তাকরীম করেছে, মুহব্বত করে চুম্বন করেছে। এই মুহব্বত করে, চুম্বন করার কারণে যদি এই ঘটনা ঘটে যায়, দুইশত বৎসরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়, জাহান্নামী জান্নাতী হয়ে যায়, জলীলুল ক্বদর রসূল তাকে গোসল, কাফন, দাফনের জন্য আদেশপ্রাপ্ত হন তাহলে আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর অজুদ মুবারকের তা’যীম-তাকরীম করলে কতটুকু ফযীলত পাবে। এটা মানুষের ভাষা দিয়ে মানুষ কখনই প্রকাশ করতে পারবে না। যেটা ছিহাহ্ সিত্তার হাদীছ শরীফগুলোতে বুখারী শরীফ, মুসলীম শরীফ, অন্যান্য হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে অনেক ওয়াক্বিয়া রয়েছে।
আল্লাহ পাক-এর হাবীবকে তা’যীম-তাকরীম করলে তার জন্য জান্নাত তো ওয়াজিব রয়েছেই। এমনকি আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর ছিফতকে তা’যীম-তাকরীম করার কারণেও অনেক বদ আমলযুক্ত ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ পাক জান্নাতী করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ। এ সমস্ত মিছাল দিয়ে, ওয়াক্বিয়া দিয়ে আল্লাহ পাক এটা বুঝিয়েছেন যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব-এর ছিফতকে তা’যীম-তাকরীম করার কারণে যদি কেউ জান্নাতী হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ পক-এর হাবীব-এর অজুদ মুবারকের তা’যীম-তাকরীম করলে সে কতটুকু ফযীলত পাবে। যে, বুখারী-মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم غفر لا مرأة مومسة مرت بكلب على رأس ركى يلهت كاد يقتله العطش فنزعت خفها فاوثقته بخمارها فنزعت له من الماء فغفرلـها بذلك.
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক খারাপ মহিলা দেহ ব্যবসায়িনী অর্থাৎ ঐ মহিলা যে দেহ ব্যবসা করত, সেই মহিলাকে আল্লাহ পাক জান্নাত ওয়াজিব করে দিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ। কেন? আরব দেশের মরুভূমি রয়েছে। ফাঁকে ফাঁকে সেখানে মরুদ্যান ও বাগানও রয়েছে, পানির ব্যবস্থা রয়েছে। সেই মহিলা মরুভূমি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, সে হঠাৎ হেঁটে যেতে যেতে এক মরুদ্যান পড়ল, বাগান পড়ল সেখানে। একটা কূপের পাড় দিয়ে সে যাচ্ছিল। সে দেখতে পেল, সেই কূপের পাড়ে একটা কুকুর, পানির পিপাসায় কাতরাচ্ছে। মনে হচ্ছে, কুকুরটি এখনই মারা যাবে। তার জ্বিভ বের হয়ে গেছে। সে এমনভাবে কাতরাচ্ছিল জ্বিভ বের করে। পানির পিপাসায় মনে হচ্ছে সে এখনই মারা যাবে। মহিলা ব্যাপারটা বুঝতে পারল এবং তারও কিছু পানি পান করার প্রয়োজন ছিল। এটা দেখে, সে মনে মনে চিন্তা করল, কুকুরটাকে পানি পান করাতে পারলে হয়তো সে বেঁচে যাবে। তখন সে কূপের কাছে গিয়ে দেখল, পানি অনেক নিচে। এত নিচে পানি, সে কি করে তুলবে। আরব দেশের মহিলারা সাধারণতঃ সেলোয়ার, কামীছ, ওড়না এবং চামড়ার মোজা ব্যবহার করে থাকেন। সেই মহিলার পরিধানে এগুলো ছিল। সেই মহিলা কি করল?
فنزعت خفها “সে তার মোজাটা খুলে নিল।”
সে মনে মনে চিন্তা করল, এখনতো এখানে বালতি পাওয়া যাবে না, ডোল পাওয়া যাবে না, যেটা দিয়ে পানি তোলা হয় সেটা পাওয়া যাবে না।তাহলে কি করা যেতে পারে? মোজাটা খুলে নিয়ে
فاو ثقته بخمرها
“তার ওড়না দিয়ে মোজাটাকে বেঁধে মোজাকে বালতি বানালো, ওড়নাটাকে সে রশি বানালো”, কূপের মধ্যে ফেলে সে পানি তুললো। সেও পান করল, কুকুরটাকে সে পানি পান করালো। কুকুরটা পানি পান করে তার জান সে ফিরে পেল। কিছুদূর যেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু বলে কুকুরটা চলে গেল। কুকুরটা মহিলার জন্য এই দুয়া করেছিল, হে বারে ইলাহী! এই মহিলা আমার জানকে বাঁচিয়েছে, আমার কষ্ট দুর করে দিয়েছে, শান্তি দিয়েছে, ইত্মিনান দিয়েছে। আপনি তাকে শান্তি দান করুন ইহকাল এবং পরকালে। যার ফলশ্রুতিতে দেখা যায়, সেই খারাপ মহিলা সরাসরি নাজাত ও জান্নাত লাভ করে। সুবহানাল্লাহ। (অসমাপ্ত)