(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আর এখানে কিন্তু আরেকটা বিষয় রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি তো গুনাহ্খতা ক্ষমা করে দিলেন। কিন্তু গুনাহ্খতা ক্ষমা করে দিলে তারপর কি হবে? এখানে পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেছেন-
إِلاَّ مَنْ تَابَ واٰمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولٰئِكَ يُـبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمًا
মহান আল্লাহ পাক তিনি এখানে বলতেছেন যে দেখ, যারা তওবা করলো, ইস্তেগফার করলো, তাদের তো গুনাহখাতা ক্ষমা করে দিলাম। এটা যারা তওবা করা পর্যন্ত থাকলো তাদের। তবে
إِلاَّ مَنْ تَابَ وَاٰمَنَ
যারা খালিছ তওবা করলো, তওবা করে খালিছ ঈমান আনলো
وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا
এবং তারা আমলে ছলেহ করা শুরু করে দিলো। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি এখানে বলতেছেন, যারা তওবা করলো এদেরতো আমি ক্ষমা করে দিলাম। তারা আরাফার ময়দানে, মুজদালেফাতে, হজ্জে যেয়ে ইস্তেগফার-তওবা করলো, কান্নাকাটি, রোনাজারী করলো, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিবো। এরপরে বলা হচ্ছে, যারা তওবা করবে খালিছভাবে, এরা ক্ষমা লাভ করবে। অর্থাৎ তারা ক্ষমা পাবেই। তবে যারা তওবা করার পরে খালিছ ঈমান এনে আমলে ছলেহ করা শুরু করবে যে, মহান আল্লাহ পাক! অতীতে অনেক ভুল হয়েছে, গুনাহ্খতা হয়েছে আর কখনও করবো না। এখন থেকে আমরা আমলে ছলেহ করবো, আপনার মতে মত, আপনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ থাকবো। যখন বান্দারা সেইভাবে তওবা-ইস্তেগফার করে খালিছভাবে ঈমান এনে আমলে ছলেহ করা শুরু করে তখন কি হবে? মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটাও বলতেছেন
فَأُولٰئِكَ يُـبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, এই সমস্ত লোকদের গুনাহ্ তো আমি ক্ষমা করবোই তবে পরবর্তী সময় এই গুনাহ্গুলিকে আমি আবার নেকীতে পরিবর্তন করে দিবো। সুবহানাল্লাহ! যাদের পাহাড় পাহাড় গুনাহ ছিলো সে এখন তওবা-ইস্তেগফার করার কারণে খালিছ ঈমান আনার কারণে এবং আমলে ছলেহ করার কারণে তাদের সেই গুনাহগুলিকে আবার পাহাড় পাহাড় নেকীতে পরিবর্তন করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কত বড় রহমতুল্লিল আলামীন, রঊফুর রহীম। উনার কতটুকু ইজ্জত-সম্মান রয়েছে মহান আল্লাহ পাক যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব উনার কাছে এবং উনার সম্মানার্থে উম্মতদেরকে কতটুকু ফযীলত দেয়া হলো? গুনাহ শুধু মাফ করে দেয়া হলো না, গুনাহ তো মাফ করে দেয়াই হলো, ছগীরা, কবীরা সমস্ত গুনাহ্খতা। বরং খালিছ তওবা-ইস্তেগফার করে, ঈমান এনে আমলে ছলেহ যখন সে শুরু করবে তখন তার জীবনের পিছনের কোটি কোটি অসংখ্য অগণিত ছোট বড় গুনাহ্খতাগুলোকে মহান আল্লাহ পাক তিনি নেকীতে পরিবর্তন করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত দয়ালু, তিনি ক্ষমাশীল। এ বিষয়টাই কিন্তু এখানে ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে। আরাফার ময়দানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে যারা খালিছভাবে হজ্জ করতে যাবে, হজ্জে মাবরূর যারা করবে তাদের একদিক থেকে জিন্দেগীর গুনাহ্খতা ক্ষমা করা হবে, আরেকদিক থেকে সমস্ত গুনাহ্গুলোকে মহান আল্লাহ পাক তিনি নেকীতে পরিবর্তন করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!
সেটাই বলা হয়েছে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسَلَّمَ
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন। সেটাই বলা হয়েছে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে-
كُلُّ بَنِيْ اٰدَمَ خَطَّاءٌ
সমস্ত আদম সন্তান হচ্ছে গুনাহগার। সমস্ত আদম সন্তান ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কিছু ভুল-ত্রুটি করে থাকে।
وَخَيْـرُ الْخَطَّائِيْنَ التَّـوَّابُـوْنَ
এবং আদম সন্তান যারা, তারা কম বেশি ভুল-ত্রুটি করে থাকে, তাদের ঐ ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, উত্তম যে খালিছ ইস্তেগফার-তওবা করলো। বেশি বেশি যে তওবা করে থাকে সে শ্রেষ্ঠ, সে উম্মত উত্তম। সুবহানাল্লাহ! এখন গুনাহ্গারদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ বা উত্তম যে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করে। সুবহানাল্লাহ! কাজেই এখানে কিন্তু বিষয়টা সুক্ষ্ম বিষয়। হজ্জে মাবরূরের যে ফযীলত, খুছূছিয়াত বলা হয়েছে, জিন্দেগীর গুনাহ্খাতা মাফ হবে, গুনাহগুলি নেকীতে পরিবর্তন হবে এবং তাকে বিশেষ মর্যাদা, ফযীলত দেয়া হবে। সেজন্য আমরা বলেছি অনেকবার, একটা লোক যখন হজ্জ করতে যায়, এখন হজ্জে মাবরূর তার নছীব হলো অথবা হলো না, কি করে বুঝবে? মহান আল্লাহ পাক তিনি কাকে ক্ষমা করলেন, কাকে করলেন না, কতটুকু করলেন, এটাতো আমভাবে বান্দা বুঝতে পারবে না। তবে এটার বাহ্যিক লক্ষণ, যা দেখে বুঝা যাবে যে, এই হাজী ছাহেবের হজ্জ কবুল হয়েছে। অথবা মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন, তারটা কবুল হয়নি। লক্ষণ হচ্ছে, কেউ যখন হজ্জ করে আসবে, বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করবে তখন যদি হজ্জ করে আসার পরে সে নেককাজে মশগুল হয়ে যায়, হারাম থেকে, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে, পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকে, নেক কাজে মশগুল হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে যে, এই ব্যক্তি, এই হাজী ছাহেবের হজ্জ কবুল হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! আর যখন দেখা যাবে যে, হজ্জ করে আসার পর সে আরো হারাম কাজে মশগুল হয়ে যাচ্ছে, পাপ কাজে মশগুল হচ্ছে, শরীয়তের খেলাফ কাজ করে যাচ্ছে, আরো জুলুম করে যাচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে, তার হজ্জটা কবুল হয়নি। নাউযুবিল্লাহ! তার হজ্জ কবুল হয়নি সেটা বুঝা যাবে। কারণ আমভাবে যেটা বলা হচ্ছে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ تَابِعُوْا بَـيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন খ¦তামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কি বলেন? যে, তোমরা হজ্জের সাথে উমরাহ্ও করে নাও। হজ্জ, উমরাহ উভয়টা আদায় করো।
(অসমাপ্ত)