পূর্ব প্রকাশিতের পর
এখানে বিষয়গুলি স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে একজন মহিলা সারা পৃথিবীর মালিক হলেও তার জন্য হজ্জ ফরয হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার সাথে মাহরাম না থাকবে। তার আহাল (স্বামী) অথবা মাহরাম। শুধু মাহরাম হলে চলবে না, সৎ চরিত্রবান মাহরাম হতে হবে। এটা শর্ত দেয়া হয়েছে। অন্যথায় তার হজ্জ কখনও ফরয হবে না। সারা পৃথিবীর সে মালিক হলেও। ঠিক একইভাবে পুরুষও যদি সারা পৃথিবীর মালিক হয়ে যায় তারও কিন্তু হজ্জ ফরয হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত এ সমস্ত খারাপ কাজ থেকে সে বেঁচে থাকতে না পারবে। যেটা বলা হচ্ছে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে-
مَنْ لَّـمْ يَـمْنَعْهُ مِنَ الْـحَجِّ حَاجَةٌ ظَاهِرَةٌ، سُلْطَانٌ جَائِرٌ، أَوْ مَرَضٌ حَابِسٌ
বাহ্যিক কোন বাধা না থাকবে, জালিম শাসক না থাকবে, কঠিন অসুস্থতা। এখন অসুস্থতার কারণে সে চলতে পারবে না। আর বাহ্যিক বাধা তাকে যদি ফিরিয়ে রাখে তাহলে তো সে যেতে পারবে না। কিন্তু যেতে পারতেছে, অসুস্থ সে না, কিন্তু শাসক হচ্ছে জালিম। এখনতো সব শাসকই জালিম, ওহাবী সৌদি সরকারসহ। এখন পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেরই সরকার তারাতো জুলুম করে যাচ্ছে। ছবি ছাড়া পাসপোর্ট করতে দিচ্ছেনা। তাহলে তো জুলুম করা হচ্ছে। এখন ছবি তুলে হজ্জ করতে গেল, গুনাহতো সে করলো। এরপর দেখা যাচ্ছে, সেখানে সে যাওয়ার পরে শত সহস্র ক্যামেরা রয়েছে, তার ছবি উঠানো হচ্ছে। সে বেপর্দা হচ্ছে, তার কঠিন গুনাহ হচ্ছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে সব সরকারই জালিম, তাকে তারা জুলুম করে যাচ্ছে। ঈমান রক্ষা করতে ও আমল করতে তাকে বাধা দিচ্ছে। তাহলে কি করে তার হজ্জ ফরয হতে পারে। বিষয়টা ফিকির করতে হবে, পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্য। শরীয়তের প্রত্যেকটা শর্ত মিললে তারপর সেটা হবে। এখন যুহরের ওয়াক্ত হলে যুহরের নামায পড়তে হবে। জুমুয়ার নামাযও পড়তে হবে যুহরের ওয়াক্ত হলে। এখন যুহরের ওয়াক্তে কেউ আছরের নামায, মাগরিবের নামায, ইশার নামায, ফজরের নামায, ঈদের নামায পড়লে কিন্তু আদায় হবে না। ছলাতুত তারাবীহ পড়লেও আদায় হবে না। এখন যুহরের নামায আর পবিত্র জুমুয়ার দিন জুমুয়ার নামায পড়তে হবে। শর্ত পুরা হলে তখন সেই আমলটা পুরা করতে হয়। হজ্জের ব্যাপারে ঠিক সেটাই বলা হয়েছে। এখন মেয়েদের হজ্জের জন্য আলাদাভাবে তাকীদ করা হয়েছে। মাহরাম ব্যতীত সে যেন হজ্জ করতে না যায় এবং হজ্জের ব্যাপারে মেয়েদের জন্য অনেক তাকীদ রয়েছে। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি নিজে বর্ণনা করেন-
عَنْ حَضْرَتْ أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ، قَالَتِ اسْتَأْذَنْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْـجِهَادِ فَـقَالَ جِهَادُكُنَّ الْـحَجُّ
হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন-
اِسْتَأْذَنْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْـجِهَادِ
আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে জিহাদ মুবারক করার অনুমতি মুবারক চেয়েছিলাম।
فَقَالَ جِهَادُكُنَّ الْـحَجُّ
তিনি বললেন, মেয়েদের জিহাদ হচ্ছে হজ্জ করা। সুবহানাল্লাহ! আবার তিনি বর্ণনা করেন-
عَنْ حَضْرَتْ أُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ ، قَالَتْ : قُـلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَلَى النِّسَاءِ جِهَادٌ ؟ قَالَ : نَـعَمْ ، عَلَيْهِنَّ جِهَادٌ، لَا قِتَالَ فِيْهِ اَلْـحَجُّ وَالْعُمْرَةُ
হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
عَلَى النِّسَاءِ جِهَادٌ؟
মেয়েদের জন্য কি জিহাদ রয়েছে?
قَالَ : نَـعَمْ ، عَلَيْهِنَّ جِهَادٌ
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বতামুন নাবিয়্যীন হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ অবশ্য মেয়েদের জন্য জিহাদ রয়েছে।
لَا قِتَالَ فِيْهِ
মেয়েদের জিহাদে কোন কাটাকাটি নেই।
اَلْـحَجُّ وَالْعُمْرَةُ
মেয়েদের জিহাদ হচ্ছে হজ্জ করা, উমরাহ করা। সুবহানাল্লাহ! তাহলে কতটুকু তাকীদ করা হয়েছে এখানে। এখানে তাকীদ দেয়া হয়েছে। মেয়েদের জিহাদই হচ্ছে হজ্জ করা ও উমরাহ করা। উমরাহ করা হজ্জ করা। তারপরও বলা হচ্ছে, যদি মাহরাম না থাকে তাহলে তার জন্য হজ্জটা ফরয হবে না। ফরয হওয়ার যে শর্ত শারায়েত সেটা পূরা হচ্ছে না, কাজেই হজ্জ ফরয হচ্ছে না। এখন লোকেরা বলে থাকে, বদ মাযহাবের লোকেরা বলে থাকে, আমরা নাকি বলে থাকি যে, হজ্জ করা জায়েয নেই। নাউযুবিল্লাহ! হজ্জ করাতো ফরয। কেউ অস্বীকার করলেতো সে কাফির হবে। কিন্তু তার শর্ত পূরা হতে হবে। এখন গ- মূর্খ লোকগুলি হজ্জের শর্ত-শারায়েত বুঝতেছে না। এখন নামায পড়তে হলে আজকাল দেখা যায় ইউরোপ আমেরিকায় অনেক দেশে তারা তাদের মসজিদের মধ্যে ক্যামেরা ফিট করেছে। নাউযুবিল্লাহ! ছবি তুলে ছবি দেখে তারা নামায পড়ে। নাউযুবিল্লাহ! এদের একটা নামাযও হবে না। কারণ যেখানে ছবি থাকে সেখানে রহমতের পরিবর্তে জহমত নাযিল হয়। আর ছবি থাকলে সে ঘরে নামায পড়া, অবস্থান করাই মাকরূহে তাহরীমী, কুফরী। কাজেই সেখানে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না। সেটা সরিয়ে তারপর নামায পড়তে হবে। ঠিক বিষয়টা এরকমই। হজ্জ করতে হলে সব ক্যামেরা সিসিটিভি সরায়ে নিতে হবে। ছবি ব্যতীত হজ্জ করতে যেতে হবে। এখন কেউ যদি বলে, তাহলে আমরা হজ্জ করবো কি করে? কেন অসুবিধা কি? সরকারকে বলতে হবে, তাকীদ দিতে হবে। তারপর সরিয়ে ফেললে তারপরে হজ্জ করতে হবে। আর যদি সে না সরায় সে দায়ী থাকবে। হজ্জতো ফরযই হলো না। এখন তাহলে কারা হজ্জ করবে? মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মানুষ যদি হজ্জ করতে না যায় মহান আল্লাহ পাক তিনি না করুন তাহলে কি হবে? মহান আল্লাহ পাক তিনি ছয় লক্ষ ফেরেশতা দিয়ে প্রতি বৎসর হজ্জ করাবেন। সুবহানাল্লাহ! ওটা খালি থাকবে না। আর ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরতো তারা ছবি তুলতে পারবে না, বেপর্দাও করাতে পারবে না। কাজেই ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হজ্জ করবেন। কাজেই এটা মুসলমানদের ঈমান-আমল, বুদ্ধি-সমঝের ত্রুটি থাকার কারণে তারা শরীয়তের এই শর্তগুলি ভুলে গেছে। অর্থাৎ এর অর্থ তারা অনুধাবন করতে পারতেছে না। তাদের আক্বল-ছমঝ, ইমান আমল ছলব হয়ে যাওয়ার কারণে। বিষয়টা ফিকির করতে হবে। তখন তার জন্য বুঝতে সহজ হবে। যেমন অন্য এক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ أَهْلُ الْيَمَنِ يَـحُجُّوْنَ، وَلَا يَـتَـزَوَّدُوْنَ وَيَـقُوْلُوْنَ نَـحْنُ الْمُتَـوَكِّلُوْنَ فَإِذَا قَدِمُوْا مَكَّةَ سَأَلُوا النَّاسَ فَأَنْـزَلَ اللهُ تَـعَالٰى وَتَـزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْـرَ الزَّادِ التَّـقْوٰى
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كَانَ أَهْلُ الْيَمَنِ يَـحُجُّوْنَ
ইয়ামেনের কিছু লোক তারা হজ্জ করতে আসতো।
وَلَا يَـتَـزَوَّدُوْنَ
তারা কোন পাথেয় আনতো না। সাথে কোন টাকা পয়সা তারা আনতো না। খরচ যা কিছু লাগতো, প্রয়োজন সেটা তারা আনতো না। সেই ইয়ামেনবাসী উনারা বলতেন,
نَـحْنُ الْمُتَـوَكِّلُوْنَ
আমরা মহান আল্লাহ পাক যিনি খ্বালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব উনার কাছে, উনার উপর আমরা তায়াক্কুলকারী। (অসমাপ্ত)