(পূর্বপ্রকাশিতের পর)
বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বুঝার সুবিধার্তে এখানে একটি উদাহরণ পেশ করা হলো। কেউ একজন একটি বাতি জ্বালালো আর সেই আলো যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো, তখন বাতির আগুন দেখে পোকা-মাকড় এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগলো। যে ব্যক্তি বাতি জ্বালিয়েছে সে পোকা-মাকড়গুলো তাড়িয়ে দিচ্ছিলো কিন্তু সেই পোকা-মাকড়গুলো আবারও এসে আগুনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করে দিচ্ছিলো। ঠিক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ও উম্মতের মেছাল অনুরূপ। কতক উম্মত জাহান্নামে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আর রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের কোমর ধরে তাদেরকে সেখানে যেতে বাধা দিচ্ছেন। কিন্তু তারা উনার কথা শুনছেনা বা মানছে না অর্থাৎ উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ না করে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যেই কাজগুলোর দ্বারা জাহান্নামী হতে হবে সেই কাজগুলোই করে যাচ্ছে। যেমন: ছবি তোলা, দেখা এবং রাখা, গান-বাজনা করা ও শোনা, বেপর্দা হওয়া, কাফির-মুশরিকদের গোলামী ও অনুসরণ করা, অশ্লীল-অশালীন কাজ ইত্যাদি হারাম-নাজায়িয কাজ করা যাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ উনার ৬২ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَتَـرٰى كَثِيْـرًا مِّنْـهُمْ يُسَارِعُوْنَ فِي الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَأَكْلِهِمُ السُّحْتَ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُـوْا يَعْمَلُوْنَ
আপনি তাদের অধিকাংশকে দেখবেন, তারা গুনাহ, শত্রুতা বা সীমালঙ্ঘন এবং হারাম খাদ্যের দিকে দ্রুত ধাবিত হয়। তারা যে আমল করে, তা কতই না নিকৃষ্ট! নাউযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার ১০২ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
يَاۤ أَيُّـهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّـقُوا اللهَ حَقَّ تُـقَاتِهٖ وَلَاتَـمُوْتُنَّ إِلَّا وَأَنْـتُمْ مُّسْلِمُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করার মত ভয় করো অর্থাৎ প্রকৃতভাবেই ভয় করো এবং মুসলমান না হয়ে মারা যেওনা।
মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনীত বিধানের উপর যে ব্যক্তি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করবে সেই ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলমান হবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারকই আনিত বিধান যা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম।
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি প্রকাশ করে উনার আদর্শ মুবারক গ্রহণ করার মাধ্যমে প্রকৃত মুসলমান হয়ে ইন্তেকাল করার তাওফীক্ব দান করেন। আমীন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক পালনের অফুরন্ত ফযীলত
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার পবিত্র সূরা কলম শরীফ উনার ৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَإِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِـيْمٍ
নিশ্চয়ই আপনি সুমহান চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী।
অর্থাৎ, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সুমহান চরিত্র মুবারক উনার অধিকারী করেছেন। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ উনার ২১ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছেন তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
এই আদর্শ মুবারক গ্রহণ করা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার ২১ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
قُلْ إِنْ كُنْـتُمْ تُحِبُّـوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَـغْفِرْ لَكُمْ ذُنُـوْبَكُمْ ۗ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, যদি তোমরা খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহাব্বত করে থাকো, তাহলে তোমরা আমার অনুসরণ করো। তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহাব্বত করবেন এবং তোমাদের গুনাহখতা ক্ষমা করে দিবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং যারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক উনার অনুসরণ করবে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহাব্বত লাভ করবে এবং ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। এছাড়া আরো অসংখ্য নিয়ামত লাভে ধন্য হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা নূর শরীফ উনার ৫৪ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَإِنْ تُطِيْـعُوْهُ تَـهْتَدُوْا
আর যদি তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্তেবা তথা অনুসরণ করো, তাহলেই তোমরা সম্মানিত হিদায়েত মুবারক লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ!
আর “আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারানী ৭ম খণ্ড ২৫২ পৃষ্ঠায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَمَنْ أَخَذَ بِسُنَّتِىْ فَـقَدِ اهْتَدٰى وَ مَنْ تَـرَكَهَا ضَلَّ
যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক গ্রহণ করবেন, অবশ্যই হিদায়েত মুবারক লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! আর যে ব্যক্তি আমার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দিবে, সে গোমরাহ হবে। নাউযুবিল্লাহ!
‘মুয়াত্তা শরীফ’ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مَالِكِ بْنِ اَنَسٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ مُرْسَلًا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَـرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ رَسُوْلِهٖ
হযরত মালেক ইবনে আনাস রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তোমাদের কাছে দু’টি বিষয় রেখে যাচ্ছি। এই বিষয় দু’টি আঁকড়ে ধরে থাকলে কখনই গোমরাহ হবে না। (১) মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব মুবারক (২) পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তথা পবিত্র হাদীছ শরীফ।
(অসমাপ্ত)