হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালিম
(ধারাবাহিক) কুরআন শরীফে ‘পীরে কামিল’ শব্দের প্রয়োগঃ ‘পীরে কামিল’-এ শব্দ বা বাক্যটি যদিও সরাসরি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফে নেই। তবে মূল বিষয় বা তার আলোচনা ও বর্ণনা রয়েছে। যেমন শব্দ হিসেবে নেই- ‘নামায, রোযা, দুরূদ’ ইত্যাদি। কারণ এগুলো উর্দূ, ফার্সী শব্দ। আরবী ভাষায় নাযিলকৃত কুরআন শরীফে তা হুবহু কিভাবে থাকতে পারে? তবে তার প্রতিশব্দ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফে আছে। কুরআন শরীফে ‘পীর ছাহেবকে’ সাধারণত ‘ওলী ও মুর্শিদ’ বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তাঁরা কালাম পাকে ইরশাদ হয়েছে,
من يهد الله فهو المهتد ومن يضلل فلن تجد له وليا مرشدا.
অর্থঃ- “যে হিদায়েত চায়; আল্লাহ পাক তাকে হিদায়েত দান করেন। আর যে গোমরাহীতে দৃঢ় থাকে সে ওলী-মুর্শিদের ছোহবত (সংস্পর্শ) পায় না।” (সূরা কাহফ্/১৭) ولى (ওলী) শব্দের বহুবচন হচ্ছে اولياء (আওলিয়া)। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
الا ان اولياء الله لاخوف عليهم ولاهم يحزنون.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর ওলীগণের কোন ভয়ভীতি নেই এবং তাঁরা কোন প্রকার চিন্তিত হবেন না।” (সূরা ইউনুছ/৬২) নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম এবং আওলিয়ায়ে কিরামগণ হচ্ছেন আল্লাহ পাক-এর বিশেষ নিয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব। আল্লাহ পাক বলেন,
والله يختص برحمته من يشاء.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক যাকে ইচ্ছা তাকে তাঁর বিশেষ রহমত দ্বারা ভুষিত করেন।” (সূরা বাক্বারা/১০৫)
الله يجتبى اليه من يشاء ويهدى اليه من ينيب.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক যাকে ইচ্ছা খাছভাবে মনোনীত করেন এবং যে তাঁর দিকে রুজু (অভিমূখী) হয় তাকে হিদায়েত দান করেন।” (সূরা শূরা/১৩) উল্লেখ্য, ইবাদত-বন্দিগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত, মুশাক্কাত করলে ওলী-আওলিয়া হওয়া যায় কিন্তু নবী-রসূল হওয়া যায় না। অনুরূপভাবে আওলিয়ায়ে কিরামগণের মধ্যে বিশেষ এক শ্রেণীর আওলিয়ায়ে কিরাম আছেন তাঁরাও নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের মত বিশেষভাবে মনোনীত। যিকির-ফিকির ইবাদত-বন্দিগী, রিয়াজত, মুশাক্কাতের দ্বারা তাঁদেরও মাক্বাম বা মর্যাদা হাছিল করা সম্ভব নয়। সুতরাং একথা অতি সহজেই অনুধাবনীয় যে, ওলী-আওলিয়া এবং মুর্শিদগণ বিভিন্ন মাকাম বা শ্রেণীতে বিভক্ত। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
انعم الله عليهم من النبين والصديقين والشهداء والصلحين.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক নবী-রসূল, ছিদ্দীক, শহীদ এবং ছালিহীনগণকে (বিশেষ) নিয়ামত দান করেছেন।” (সূরা নিসা/৬৯) নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ হচ্ছেন এক তব্কা (স্তর)। আর ছিদ্দীক, শহীদ এবং ছালেহগণ হচ্ছেন আওলিয়ায়ে কিরামের তবকা (স্তর)। অর্থাৎ ছিদ্দীক, শহীদ, ছালেহ হচ্ছেন আওলিয়ায়ে কিরামগণের মাকামের স্তর। আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নৈকট্য, রেযামন্দীর কোন সীমা-পরিসীমা নেই। আর নৈকট্য ও রেযামন্দী অনুযায়ী ওলী-আওলিয়া, মুর্শিদগণ মাকাম বা মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। তবে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের শ্রেণী বিন্যাস করা তথা মর্যাদা-মর্তবার পার্থক্য করা যেমন উম্মতের জন্য জায়িয নেই তেমনি আওলিয়ায়ে কিরামগণের শ্রেণী বিন্যাস করা তথা মর্যাদা-মর্তবার তারতম্য ঘটানো জায়িয নেই। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে,
لانفرق بين احد من رسله.
অর্থঃ- “আমরা আল্লাহ পাক-এর রসূলগণের মধ্যে কোন পার্থক্য করিনা।” (সূরা বাক্বারা/২৮৫)