‘লিসান’ অর্থ জিহ্বা বা যবান। জিহ্বা মানুষকে কামিয়াবীর শীর্ষে সমাসীন করতে পারে আবার ধ্বংসের অতলে ডুবাতে পারে। অধিকাংশ পাপ ও পূণ্যের কাজ জিহ্বা দ্বারাই সংঘটিত হয়। কাজেই জিহ্বাকে সংযত রাখা আবশ্যক।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
مايلفظ من قول الا لديه رقيب عتيد .
অর্থ:- “মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা পরিদর্শক ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি লিপিবদ্ধ করে রাখেন।” (সূরা ক্বাফ : আয়াত শরীফ-১৮)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত সাহল ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
من يضمن لى ما بين لحييه وما بين رجليه اضمن له الجنة .
অর্থ:- “যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তুর এবং তার দুই পায়ের মধ্যস্থিত বস্তুর জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য বেহেশতের জিম্মাদার হবো।” (বুখারী শরীফ) অর্থাৎ দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তু দ্বারা জিহ্বা বা মুখ আর দুই পায়ের মধ্যস্থিত বস্তু দ্বারা লজ্জাস্থানকে বুঝানো হয়েছে।
বস্তুত এই দুই অঙ্গ দ্বারা অধিকাংশ কবীরা গুনাহ সংঘটিত হয়। সুতরাং যারা কবীরা গুনাহসমূহ হতে বিরত থাকবে তারা বিনা বাধায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা কি জানো! কোন্ জিনিস মানুষকে সবচাইতে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তা হলো খোদাভীতি ও উত্তম চরিত্র। আর তোমরা কি জানো! মানুষকে কোন্ জিনিস সবচাইতে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করাবে? তা হলো দু’টি পথ। একটি মুখ (জিহ্বা) এবং অপরটি লজ্জাস্থান।” (তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, বান্দা কখনও কখনও এমন কথা বলে যাতে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি রয়েছে; অথচ সে তার গুরুত্ব জানেনা। কিন্তু খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এর দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। পক্ষান্তরে বান্দা কোনো কোনো সময় এমন কথাও বলে, যাতে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার অসন্তুষ্টি রয়েছে; অথচ সে তার অনিষ্টতা জানে না। কিন্তু সে কথাই তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে।” (বুখারী শরীফ)
হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ফাসিক বলবে না এবং কুফরীর অপবাদও দিবে না। কেননা, যদি সেই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে সেরূপ না হয়, তবে তার অপবাদ নিজের উপরই বর্তাবে।” (বুখারী শরীফ)
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন আদম সন্তান ভোরে উঠে তখন তার অঙ্গসমূহ জিহ্বাকে বিনয়ের সাথে বলে, আমাদের সম্পর্কে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। কেননা, আমরা সবাই তোমার সাথে জড়িত। সুতরাং তুমি ঠিক থাকলে আমরাও ঠিক থাকবো আর তুমি বাঁকা হলে আমরাও বাঁকা হয়ে পড়বো।” (তিরমিযী শরীফ)
প্রকৃতপক্ষে অঙ্গসমূহ ক্বলবের অধীনে পরিচালিত হয়। কিন্তু জিহ্বা যেহেতু উহার মূখপাত্র সেহেতু সমস্ত অঙ্গের কার্যকলাপকে উহার দিকে সংযোজিত করা হয়েছে।
হযরত সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ সাকাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদা আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার জন্য যেই জিনিসগুলো ভয়ের কারণ বলে আপনি মনে করেন তন্মধ্যে সর্বাধিক ভয়ঙ্কর কোনটি? বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি নিজের জিহ্বা ধরলেন এবং বললেন, এটা।” (তিরমিযী শরীফ)
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মুসলমান ঐ ব্যক্তি যার জবান ও হাত থেকে মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে।” (বুখারী শরীফ)
বর্ণিত রয়েছে, জবান আলিম বা আল্লাহওয়ালা উনাদের অধীন বা নিয়ন্ত্রনে থাকে। কিন্তু যারা জাহিল, ফাসিক, ফাজির তারা জবানের অধীন থাকে।
প্রতিভাত হলো, জবানের হিফাযত করা অপরিহার্য কর্তব্য। অন্যথায় কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। জবানকে হিফাজত বা সংযত রাখার বিষয়টি ইলমে তাছাউফের সাথে সম্পৃক্ত। আর ইলমে তাছাউফ তরীক্বতের পীর-মাশায়িখ উনাদের নিকট বাইয়াত হওয়া ও উনাদের ছোহবত ইখতিয়ার করার সাথে সম্পর্কযুক্ত।
তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল