‘কুফর’ শব্দের আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ হচ্ছে অস্বীকার করা। পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা অস্বীকার করাই হচ্ছে কুফর বা কুফরী। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিদায়েতসহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ নিয়ে এসেছেন। যেমন- পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
هو الذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله وكفى بالله شهيدا.
অর্থ : “তিনিই মহান আল্লাহ পাক যিনি উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে। এক্ষেত্রে সাক্ষী হিসেবে মহান আল্লাহ পাক তিনিই যথেষ্ট।” (পবিত্র সূরা ফাতহ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)
পবিত্র এ আয়াত শরীফ নাযিল করে মহান আল্লাহ পাক তিনি অতীতে ওহী দ্বারা নাযিলকৃত দ্বীন এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে উদ্ভাবিত বা প্রবর্তিত মানবরচিত সকল ধর্ম, মতবাদ, তন্ত্র, নিয়ম-নীতি, আইন-কানুন বাতিল ঘোষণা করেন।
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী এবং রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার পর ক্বিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী কিংবা রসূল আগমন করবেন না।
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে পবিত্র দ্বীন ইসলাম তথা পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিধান নিয়ে এসেছেন তা মেনে সকলকে সে মুতাবিক চলতে হবে। যারা মেনে সে মুতাবিক চলবে তারা ঈমানদার। আর যারা অস্বীকার করবে তারা কাফির।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخاسرين.
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র ইসলাম ব্যতীত অন্য দ্বীন-ধর্ম, মতবাদ বা তন্ত্রমন্ত্রের নিয়ম-নীতি চায় বা গ্রহণ করে, তার থেকে সেটা কবুল করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে অর্থাৎ জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫) তিনি আরো বলেন-
كيف يهدى الله قوما كفروا بعد ايـمانهم وشهدوا ان الرسول حق وجاء هم البينت والله لا يهدى القوم الظالـمين.
অর্থ : “ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি কী করে ওই সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করবেন, যারা ঈমান আনার পর এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সত্য (নবী-রসূল) হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ার পর এবং তাদের নিকট সুস্পষ্ট দলীল (পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ) আসার পর কুফরী বা অস্বীকার করে। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৬)
এ পবিত্র আয়াতে কারীমা উনার মধ্যে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, ঈমান আনার পর অর্থাৎ ঈমানদার বা মুসলমান দাবি করার পরও যারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম বা আদেশ-নিষেধ মুবারক মানবে না, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নিষেধ মুবারক মানবে না, উনার আনুগত্য বা অনুসরণ মুবারক করবে না এবং পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হুকুম-আহকাম বা বিধান তথা আদেশ-নিষেধসমূহ মেনে চলবে না, তারা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত। এরা হিদায়েত থেকে বঞ্চিত পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়। এদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পছন্দ করেন না। এরা জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত।
মোটকথা, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মত-পথ মুবারক উনার খিলাফ, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নাহ বা আদর্শ মুবারক উনার খিলাফ এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সুস্পষ্ট বিধানের খিলাফ আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব, নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা, তন্ত্র-মন্ত্র মতবাদ সবই কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
যেমন- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র রাজতন্ত্রের নিয়ম-নীতি, ভোট, নির্বাচন, হরতাল, লংমার্চ, ছবি, টিভি বেপর্দা-বেহায়াপনা, খেলাধুলা, গান-বাজনা, নারী নেতৃত্ব ইত্যাদি সবই কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, মুসলমানের জন্য সমস্ত কুফরী আক্বীদা ও আমল থেকে বেঁচে থাকা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। অন্যথায় কেউ যদি কুফরী আক্বীদা আমল গ্রহণ করে ইন্তিকাল করে সে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।
তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল