তাফসীরুল কুরআন: পুরুষ জাতিকে নারী জাতির উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে 

সংখ্যা: ১৩৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

(ধারাবাহিক)

 ولاتتمنوا ما فضل الله به بعضكم على بعض للرجال نصيب مما اكتبوا وللنساء نصيب مما اكتسبن وشئلوا الله من فضله ان الله كان بكل شئ عليما.

 তরজমাঃ “যা দিয়ে আল্লাহ পাক তোমাদের কাউকেও কারো উপর ফযিলত দান করেছেন, তোমরা তার তামান্না করোনা। পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ। আল্লাহ পাক-এর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।” (সূরা নিসা/৩২) বর্ণিত আয়াত শরীফের প্রথমেই ولاتتمنوا দ্বারা উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না-এর আরজুর জাওয়াব এবং للرجال نصيب الخ এ পরবর্তীতে প্রশ্নকারিণীর জাওয়াব প্রদান করা হয়েছে।  তাশরীহঃ এবং তোমাদের পুরুষ-মহিলার সবাইকে এই পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ পাক-এর ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়। তাঁর নির্ধারণই চুড়ান্ত। অতএব, তোমরা আল্লাহ পাক প্রদত্ত রূতবা ও ফযীলত বা মর্যাদাসমূহ হতে এমন কোন মর্যাদার তামান্না বা আকাঙ্খা পোষণ করোনা যাতে আল্লাহ পাক তোমাদের কাউকে (যেমন পুুরুষকে) অপরের (যেমন নারীর) তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন (যেমন পুরুষের পুরুষ হওয়া অথবা তাদের সাক্ষ্য পূর্ণমাত্রিক হওয়া ইত্যদি) এসব মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্ব কর্মফল স্বরূপ তারা প্রাপ্ত হয়নি বরং তা আল্লাহ পাক-এর দেয়া মর্যাদা। যেমন, এক ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তির উপর, এক নবীকে অন্য নবীর উপর, এক জনপদকে অন্য জনপদের উপর, এক পাথর খ-কে অন্য পাথর খ-ের উপর এক মাসকে অন্য মাসের উপর, এক রাতকে অন্য রাতের উপর, এক দিনকে অন্য দিনের উপর তিনিই শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।  তাই তোমরা এসব আত্বায়ি বা প্রদত্ত মর্যাদার সমকক্ষতা অর্জন করার আরজু পোষণ করোনা। বরং প্রত্যেকেরই উচিত এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টি ও রিযামন্দি অর্জনের মহান লক্ষ্যে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করা। কারণ, আল্লাহ পাক বলেছেন,

 رضوان من الله اكبر.

 অর্থাৎ- ‘আল্লাহ পাক-এর সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড়।’ (সূরা তওবা/৭২) অর্থাৎ পূণ্য অর্জনের জন্য সম্ভাব্য সকল প্রকার চেষ্টা সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত সুন্নাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে করে যাওয়া। মূলতঃ পুরুষদের ক্ষেত্র ও আমল যেমন নির্ধারিত, তেমনি নারীদের ক্ষেত্র ও আমল নির্ধারিত। পুরুষদের জন্য যুদ্ধ করা, গণিমত লাভ করা, দ্বিগুণ মীরাছ, ব্যবসায়িক সফলতা, ইমামতী, ক্বাযী হওয়া, বাদশাহ্ হওয়া আল্লাহ পাকই নির্ধারণ করেছেন। নারীদের আমলও তেমনি সুনির্ধারিত। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম, ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও আউলিয়ায়ে কিরামগণের মাতা হওয়া ও সঙ্গিনী হওয়া, সন্তানের জান্নাত মা’র কদমের নিচে হওয়া, স্বামীর অনুসরণ, শিশুর লালন-পালন, সতীত্ব রক্ষা করা, যোদ্ধা-গাযীদের পিছনে ঘরের শৃঙ্খলা রক্ষা করা- এগুলো হলো নারীর দায়িত্ব। তাদের জন্য রয়েছে মোহরানা, খোরপোষ, মীরাছ এছাড়াও রয়েছে নামায, রোযা, দান ইত্যাকার আরো অনেক নেক কাজের সুযোগ।  আমল ও কর্মক্ষেত্র কিছুটা ভিন্ন হলেও পুরুষ নারী উভয়েই আখিরাতে তাদের নেক কাজের বিনিময় লাভ করবে। আল্লাহ পাক-এর বান্দা-বান্দী হিসেবে সবাইকেই এই আক্বীদা রাখতে হবে যে, আল্লাহ পাক আ’লীম ও হাকীম। তিনি যাকে যা দিয়েছেন তাঁর হিকমত হিসেবেই দিয়েছেন যেহেতু তাঁর হিকমত কোন কিছু থেকেই খালি নয়। অতএব, তিনি তাঁর সব বান্দাকে একই রকম করেননি, আসমানের সব তারাগুলোকে সূর্যের ন্যায় গনগনে করেননি- তাঁর মহান হিকমতের কারণেই। সুতরাং তাঁর দানের প্রতি সন্তুষ্টি প্রদান অবশ্য কর্তব্য। তিনি উটকে দীর্ঘ গর্দান ও হাতিকে লম্বা শুঁড় বিশিষ্ট করেছেন। এগুলো হচ্ছে তাঁর মহান হিকমতের উদাহরণ। তাঁর এসব হিকমত নিয়ে হিংসা ও আপত্তি না করে গভীর চিন্তা ও গবেষণা করা উচিত।  উপরন্তু মুসলমানদের প্রতি হিংসা করা হারাম, আউলিয়ায়ে কিরামদের প্রতি হিংসা করা আরো কঠিন হারাম আর আম্বিয়ায়ে আলাইহিমুস্ সালামদের উপর হিংসা তো সারাসরি কুফরী- যা দ্বারা সমস্ত কৃত আমল ও নেকী বরবাদ হয়ে যায়। (অসমাপ্ত)

তাফসীরুল কুরআন: পুরুষ জাতিকে নারী জাতির উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে

তাফসীরুল কুরআন- পুরুষ জাতিকে নারী জাতির উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা শরীয়ত ও চরিত্র ধ্বংসের মূল হোতা

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা শরীয়ত ও চরিত্র ধ্বংসের মূল হোতা

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’রা গোমরাহীর মূল হোতা