গণতন্ত্র, নির্বাচন ও ভোট ইসলাম বহির্ভূত মানবরচিত নিয়ম-নীতি। শুধু মানবরচিতই নয়, বেদ্বীন-বিজাতীয়দের দ্বারা বিশেষ করে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের দ্বারা প্রবর্তিত ও সংষ্কারকৃত নিয়ম-নীতি। সুতরাং, কোন মুসলমান সে নিয়ম-নীতি কখনই গ্রহণ করতে পারে না। যদি গ্রহণ করে তাহলে সেটা কুফরী হবে এবং পরিণামে সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
من يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخاسرين.
যে দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদের নিয়ম-নীতি গ্রহণ করবে সেটা তার থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থাৎ জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান-৮৫)
আর হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই দলভুক্ত হবে অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাঁদের সাথেই হবে।” (মুসনাদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
এ প্রসঙ্গে হিন্দুস্থানের একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হিন্দুস্থানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ পাক-এর ওলী ছিলেন। যিনি ইন্তিকালের পর আরেকজন বুযুর্গ ব্যক্তি তাঁকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহ পাক-এর ওলী! আপনি কেমন আছেন?” সেই আল্লাহ পাক-এর ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাততঃ আমি ভালই আছি, কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন স্বপ্নদ্রষ্টা বুযুর্গ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আমাকে আপনার সেই কঠিন অবস্থা সম্পর্কে বলবেন? আল্লাহ পাক-এর ওলী জবাব দিলেন অবশ্যই বলবো। কারণ এতে যমীনবাসীর জন্য শক্ত ইবরত বা নছীহত রয়েছে। অতঃপর তিনি বলা শুরু করলেন, আমার ইন্তেকালের পর ফেরেশ্তারা আমাকে সরাসরি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট পেশ করেন। আল্লাহ পাক ফেরেশ্তাদের বললেন, “হে ফেরেশ্তারা! তোমরা তাকে কেন এখানে নিয়ে এসেছ”? ফেরেশ্তারা বললেন, হে বারে ইলাহী! আমরা তাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাত করার জন্য নিয়ে এসেছি। আল্লাহ পাক বললেন, “তাকে এখান থেকে নিয়ে যাও, তার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে। কারণ সে পূজা করেছে। আল্লাহ পাক-এর ওলী বলেন, একথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল। এবং আমি আরজু করলাম, “আয় আল্লাহ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সবসময়ই আপনার এবং আপনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফরমাবরদার ছিলাম। কখনও ইচ্ছাকৃত কোন নাফরমানি করিনি। আর পূজা করা তো দূরের কথা আমি কখনো মন্দিরের আশ-পাশ দিয়েও হাঁটিনি। তখন আল্লাহ পাক বললেন, “তুমি সেদিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন হিন্দুস্থানে হোলি পূজা হচ্ছিল। তুমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলে, তোমার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নিচে আশে-পাশে সমস্ত গাছ-পালা, তরুলতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ, বাড়ী-ঘর, সবকিছুতেই রং দেয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় তোমার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ (গাধা) হেঁটে যাচ্ছিল যাকে রং দেয়া হয়নি। তুমি সে সময় পান চিবাচ্ছিলে, তুমি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের পিক বা রঙ্গীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলে- হে গর্দভ! তোমাকে তো এই হোলি পূজার দিনে কেউ রং দেয়নি তাই আমি তোমাকে রং দিয়ে দিলাম। এটা কি তোমার পূজা করা হয়নি? তুমি কি জান না যে, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
من تشبه بقوم فهو منهم
“যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” সুতরাং, তোমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে। যখন আল্লাহ পাক এই কথা বললেন, তখন আমি লা-জাওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বললাম, “আয় আল্লাহ পাক! আমি তো বুঝতে পারিনি, আমাকে কেউ বুঝিয়েও দেয়নি আর আমার অন্তরও এ বিষয়ে কখনও সাড়া দেয়নি। হে আল্লাহ পাক! আমাকে দয়া করে ক্ষমা করুন।” কিছুক্ষণ পর আল্লাহ পাক বললেন, “হ্যাঁ। তোমাকে তোমার অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করা হলো।”
এখানে ফিকিরের বিষয়, সামান্য এক চিপটি বা এক পিক পানের রঙ্গিন রস গাধার গায়ে নিক্ষেপ করার কারণে সেটা যদি হিন্দুদের হোলি পূজার সাদৃশ্য হয়ে যায় এবং হিন্দুদের সাথে হাশর-নশর হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে যারা গণতন্ত্র, নির্বাচন ও ভোট করবে তাদের হাশর-নশর তাহলে কাদের সাথে হবে? বলার অপেক্ষা রাখে না, তাদের হাশর-নশর সবকিছু ইহুদী-খ্রিস্টানদের সাথেই হবে। (নাউযুবিল্লাহ)
আল্লাহ পাক প্রত্যেক মুসলমানকে যাবতীয় কুফরী মত-পথ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। (আমীন)
তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল