هو الذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله وكفى بالله شهيدا.
তরজমাঃ “তিনি মহান আল্লাহ পাক যিনি তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন পূর্বের ওহী দ্বারা নাজিলকৃত সমস্ত ধর্ম এবং পূর্বের ও পরের অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানব রচিত মতবাদের উপর প্রাধান্য দিয়ে। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক-এর সাক্ষ্যই যথেষ্ট” (সূরা তওবা-৩৩, সূরা ফাতহ- ২৮, সূরা ছফ-৯)
তাফসীরঃ আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টিরাজির মধ্যে মানুষকে আশরাফুল মাখলূকাত করে সৃষ্টি করেছেন। উদ্দেশ্য হলো, এই মানুষ আল্লাহ পাক প্রদত্ত বা নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী আমল করে আল্লাহ পাক-এর মুহব্বত-মা’রিফাত দীদার ও সন্তুষ্টি হাছিল করবে। আর এই লক্ষ্যে আল্লাহ পাক প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে একলক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে পাঠিয়েছেন। এবং সর্বশেষ নবী ও রসূল হিসেবে যিনি নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, যিনি হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন।
আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়ে যেমনিভাবে নুবুওওয়াত ও রিসালতের ধারবাহিকতা বন্ধ করে দিয়েছেন ঠিক তেমনি পূর্ববর্তী নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি ওহীর দ্বারা নাযিলকৃত দ্বীন, কিতাব, ছহীফাসমূহের হুকুম বন্ধ বা রহিত করে দিয়ে একমাত্র তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি নাযিলকৃত কিতাব ও দ্বীনের হুকুম জারি করে দিয়েছেন। এবং এই দ্বীন ও কিতাব অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান বা হুকুমই কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ বা জারি থাকবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, অতীতের নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি ওহীর দ্বারা নাযিলকৃত দ্বীন- কিতাব-ছহীফার হুকুম যেখানে বাতিল ঘোষণা করা হলো, সেখানে মানবরচিত মতবাদ বা তার নিয়ম-নীতি কি করে জারি থাকতে পারে এবং তা মানুষ কি করে গ্রহণ করতে পারে?
তবে হ্যাঁ, যারা ইসলাম মানে না, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ মানে না, যারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী ও রসূল বলে স্বীকার করে না এবং উনাকে মানে না, কেবল তারাই মানবরচিত তন্ত্র ও মতবাদ তথা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, মাওবাদ, লেলিনবাদ, মার্কসবাদ ইত্যাদি গ্রহণ করতে পারে।
মানবরচিত তন্ত্র ও মতবাদ গ্রহণ এটা তো হিন্দু-মুশরিকদের বানানো বা তৈরিকৃত মূর্তিপূজা করার মতো হলো? যেটা তারা নিজেরাই তৈরি করে এবং নিজেরাই সেটা ধ্বংস করে ফেলে। মানবরচিত তন্ত্র ও মতবাদও ঠিক তদ্রুপই। একবার সেটা প্রণয়ন করা হয় এবং আরেকবার সেটা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
সুতরাং, যে আল্লাহ পাককে স্বীকার করে বা মানে বলে দাবি করে, যে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বীকার করে বা মানে বলে দাবি করে, যে কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ বিশ্বাস করে বা মানে বলে দাবী করে অর্থাৎ যে নিজেকে মু’মিন মুসলমান বলে দাবি করে, পরিচয় দেয়, সে কি করে হিন্দু-মুশরিকদের মূর্তির ন্যায় আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত ও মনোনীত দ্বীন-ইসলাম এবং কুরআন-সুন্নাহ’র হুকুম বা আদেশ-নিষেধ বাদ দিয়ে মানবরচিত মনগড়া তন্ত্র ও মতবাদ গ্রহণ করতে পারে, মানতে পারে? সেটা মানলে বা গ্রহণ করলে কি সে মু’মিন মুসলমান থাকতে পারে? কখনই থাকতে পারে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তো কুরআন শরীফে ইরশাদ করে জানিয়েই দিয়েছেন-
كيف يهدى الله قوما كفروا بعد ايمانهم وشهدوا ان الرسول حق وجاءهم البينات والله لا يهد القوم الظالمين. اولئك جزاءهم ان عليهم لعنة الله والملئكة والناس اجمعين. خالدين فيها لا يخفف عنهم العذاب ولاهم ينظرون.
“আল্লাহ পাক কি করে ঐ সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করবেন? যারা ঈমান আনার পর কুফরী করে এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর তাঁর নাফরমানী করে এবং তাদের নিকট কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর সুস্পষ্ট বিধান আসার পর তা অমান্য করে। এরা মূলতঃ যালিম। আর আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না। ঐ সমস্ত লোকদের শাস্তি হলো, তাদের প্রতি আল্লাহ পাক-এর, ফেরেশ্তাগণের এবং সমস্ত মানুষের লা’নত। অনন্তকাল ধরে সেই লা’নতের মধ্যে তারা থাকবে। তাদের উপর শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং তাদেরকে ফুরসতও দেয়া হবে না। (সূরা আলে ইমরান-৮৬, ৮৭, ৮৮)
তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল