তাফসীরুল কুরআন: মুসলমানের জন্য দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম ও মতবাদের নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা কুফরী-৩

সংখ্যা: ১৮৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

আল্লাহ পাক মানুষকে আশরাফুল মাখলূকাত করে সৃষ্টি করেছেন। উদ্দেশ্য হলো এই মানুষ তাঁর আদেশ-নিষেধ মুতাবিক চলে তার মুহব্বত-মা’রিফাত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি হাছিল করবে। এই লক্ষ্যে আল্লাহ পাক মানবজাতির মধ্য হতেই নবী-রসুল আলাইহিমুস্ সালামগণকে তাঁর খলীফা বা প্রতিনিধি মনোনীত করে যমীনে পাঠিয়েছেন। তাঁদের উপর যুগে যুগে তাঁর আহকাম-শরীয়ত নাযিল করেছেন।

আল্লাহ পাক যে যুগে যে নবী ও রসূল আলাইহিস্ সালাম-এর উপর যে আহকাম বা শরীয়ত নাযিল করেছেন সে যুগের লোকদের জন্য সে শরীয়তকে মেনে চলাটা অপরিহার্য করে দিয়েছেন এবং সেটাই হিদায়েত ও নাজাত লাভের কারণ হবে সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন। এবং সর্বশেষ যে শরীয়ত আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে নাযিল করেছেন তার নামই হচ্ছে দ্বীন-ইসলাম।

যেহেতু আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘খাতামুন নাবিইয়ীন’ অর্থাৎ সর্বশেষ নবী ও রসূল করে পাঠিয়েছেন সেহেতু তাঁর প্রতি নাযিলকৃত আহকাম- দ্বীন-ইসলামকে পূর্ণতা দান করে এর উপর স্বীয় নিয়ামত ও সন্তুষ্টি দানের ঘোষণাও করেছেন। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

ان الدين عند الله الاسلام

অর্থঃ “নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহ পাক-এর কাছে একমাত্র দ্বীন।” (সূরা আলে ইমরান-১৯)

আরো ইরশাদ করেন-

اليوم اكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتى ورضيت لكم الاسلام دينا.

অর্থঃ “আজ আমি তোমাদের দ্বীন- ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামতকে পূর্ণ করে দিলাম এবং আমি তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে সন্তুষ্টি দিয়ে দিলাম।” (সূরা মায়িদা-৩)

কাজেই, ইসলাম আসার পর অন্য কোন দ্বীন-ধর্ম, তন্ত্র-মতবাদ, নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীকা, মত-পথ গ্রহণ করা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। সেটা পূর্বের ওহীর দ্বারা নাযিলকৃত হোক অথবা পূর্বের বা পরের মানবরচিত তন্ত্র-মতবাদই হোক।

অতএব, আজকে যারা ইহুদী-নাছারাদের দ্বারা প্রবর্তিত গণতন্ত্রের নিয়ম-নীতিকে ইসলামের নামে বাস্তবায়নে মরিয়া  হয়ে উঠেছে, ভোট-নির্বাচনের জন্যেও ইসলামের নামে মাল-জান উৎসর্গ করছে, তারা প্রকাশ্য কুফরী করছে।

এদেরকে উদ্দেশ্য করেই আল্লাহ পাক বলেন-

لا تعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থঃ “তোমরা পাপ ও শত্রুতার মধ্যে অর্থাৎ হারাম-কুফরী এক কথায় ইসলামবিরোধী কোন  কাজে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগীতা করো না। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাককে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠোর শাস্তিদাতা।” (সূরা মায়িদা-২)

এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

اذا عملت الخطيئة فى الارض من شهدها فكرهها كان كمن غاب عنها ومن غاب فرضيها كان كمن شهدها.

অর্থঃ “যমীনের কোথাও যখন কোন পাপ কাজ সংঘটিত হয়, কোন ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত থাকার পরও যদি সেটা অপছন্দ করে তাহলে সে যেন সেখানে উপস্থিতই ছিল না অর্থাৎ উক্ত পাপে সে দোষী সাব্যস্ত হবে না। আর যদি কোন ব্যক্তি উপস্থিত না থাকা সত্বেও উক্ত পাপ কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বা সমর্থন করে তাহলে সে যেন সেখানে উপস্থিত ছিল অর্থাৎ সে উক্ত পাপে পাপী বলে সাব্যস্ত হবে।” ( আবূ দাউদ শরীফ)

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক একদা হযরত ইউশা বিন নূন আলাইহিস সালামকে ওহী করে জানালেন যে, তাঁর এক লক্ষ উম্মতকে ধ্বংস করে দেয়া হবে। তন্মধ্যে ৬০ হাজার উম্মত সরাসরি পাপে লিপ্ত। তখন হযরত ইউশা বিন নূন আলাইহিস সালাম আল্লাহ পাক-এর নিকট আরজ করলেন, বারে ইলাহী! তাহলে বাকী ৪০ হাজার উম্মতকে কোন্ কারণে ধ্বংস করা হবে? জাওয়াবে আল্লাহ পাক বললেন, তারা উক্ত ৬০ হাজার পাপীদের সাথে মেলামেশা করে এবং তারা তাদেরকে পাপ থেকে ফিরে থাকার জন্য বলে না। তাই তাদেরকেও ধ্বংস করে দেয়া হবে। নাউযুবিল্লাহ।

তাফসীরুল কুরআন: কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-৮

তাফসীরুল কুরআন : কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-৯

তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল

তাফসীরুল কুরআন: কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-১০

তাফসীরুল কুরআন:  কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-১১