সম্মান-মর্যাদা লাভের জন্য কোন আমল বা ইবাদত-বন্দেগী করাটাও এক প্রকার গইরুল্লাহ। এ মন্দ স্বভাব বা কামনা-বাসনা থেকে অন্তরকে পবিত্র রাখতে হবে।
কারণ যারা মান-সম্মান অর্জনের জন্য কোন ইবাদত করবে তাদের ইবাদতগুলি দ্বিতীয় আকাশ অতিক্রম করে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে পৌঁছবে না, সেখানে হাফাযাহ (পরীক্ষক) ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি আমলগুলি আটকে রেখে দিবেন।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت كعب بن الـمالك الانصارى رضى الله تعالى عنه عن ابيه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما ذئبان جائعان ارسلا فى غنم بافسد لـها من حرص الـمرء على الـمال والشرف لدينه
অর্থ: হযরত কা’ব ইবনে মালিক আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি যদি মান-সম্মান হাছিল করার জন্য অথবা সম্পদ লাভের আশায় কোন ইবাদত-বন্দেগী করে থাকে, সে তার আমলনামা ততটুকু ক্ষতি করলো যেমন দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে এক পাল মেষের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হলে যতটুকু ক্ষতি করবে। (আহমদ, তিরমিযী, নাসায়ী, দারিমী)
যেমন এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াকিয়া বর্ণিত রয়েছে, হযরত মালেক দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একজন বুযুর্গ ছিলেন। তিনি একবার দামেস্কের এক বড় মসজিদে এক বৎসর ব্যাপী ই’তিকাফ করলেন। উনার উদ্দেশ্য ছিল, উনি সেই মসজিদের মুতাওয়াল্লী হবেন। এতে উনার মান-সম্মান, মর্যাদা-মর্তবা অর্জিত হবে। তাই এক বৎসর যাবৎ তিনি সেখানে ই’তিকাফ করলেন, নামায-কালাম খুব বেশি বেশি করে আদায় করলেন, যাতে লোকেরা উনাকে পরহেযগার, মুত্তাক্বী, আল্লাহওয়ালা মনে করে মুতাওয়াল্লীর পদটি দিয়ে দেয়। দেখা গেল, এক বৎসরের মধ্যে বেশ কয়েকজন মুতাওয়াল্লী পরিবর্তন হলো তথাপি উনাকে মুতাওয়াল্লী করার ব্যাপারে কেউ প্রস্তাবই করলো না। একদিন রাতে তিনি মসজিদ থেকে বের হলেন ওযূ করার জন্য, তাহাজ্জুদ নামায পড়বেন। তিনি যখন মসজিদ থেকে বের হলেন, একটা গইবী আওয়াজ হলো- হে মালেক! এখনও কেন তুমি তওবা করছো না? আর কতদিন তুমি ধোকাবাজি করবে, প্রতারণা করবে, ছলনা করবে মানুষের সাথে। আর মহান খালিক্ব, মালিক, রব আল্লাহ পাক উনার থেকে গাফিল হয়ে মাখলূক্বাতের মধ্যে মশগুল থাকবে এবং তাদের উপর ভরসা করবে? অতিসত্বর তুমি তওবা করো। তিনি যখন এ আওয়াজ শুনলেন, সাথে সাথে খালিছ তওবা করলেন, সত্যিই আর কতদিন মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে আমি গাফিল থাকবো? আর কতদিন আমি মাখলূক্বাতের তোয়াজ করবো? তিনি খালিছ তওবা করে অতঃপর তাহাজ্জুদ নামায পড়লেন এবং তিনি নিয়ত করলেন, আজ ফজর নামায জামায়াতে পড়ে তিনি এখান থেকে চলে যাবেন। এখানে আর তিনি ই’তিকাফ করবেন না। উনার যে উদ্দেশ্য ছিল মুতাওয়াল্লী হওয়ার; সে উদ্দেশ্য পরিহার করলেন। কিন্তু দেখা গেল, মসজিদ কমিটির লোকজন বাদ ফজর এসে সকলে প্রস্তাব করলো হযরত মালিক দিনার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মসজিদের মুতাওয়াল্লী হওয়ার জন্য। তারা বললো, হে হযরত মালিক দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি আজ থেকে আমাদের মসজিদে মুতাওয়াল্লী হয়ে যান। আমরা চিন্তা-ফিকির করে দেখেছি, এ মসজিদে মুতাওয়াল্লী হওয়ার জন্য আপনিই একমাত্র উপযুক্ত ব্যক্তি। তিনি বললেন, হে ব্যক্তিরা! আপনারা জেনে রাখুন, আজ এক বৎসর যাবৎ আমি ই’তিকাফ করেছি, নামায পড়েছি, রোযা করেছি, অনেক ইবাদত-বন্দেগী করেছি, অনেক কোশেশ করেছি মুতাওয়াল্লী হওয়ার জন্য তবুও আমি মুতাওয়াল্লী হতে পারিনি। কিন্তু যখন আমি খালিছ তওবা করে মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হলাম তখন আপনারা আমার দিকে রুজূ হয়ে গেলেন। এখন আমার এই মুতাওয়াল্লীগিরির দরকার নেই। এ পদের আকাঙ্খা আমি ছেড়ে দিয়েছি। এসব বলে তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন।
কাজেই, মান-সম্মান লাভ করার উদ্দেশ্যে কোন আমল করা হলে তা মহান আল্লাহ পাক তিনি কবূল করেন না।
মূলত: সম্মান দান করার মালিক হলেন মহান আল্লাহ পাক তিনি। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, ইয়া মহান আল্লাহ পাক! সমস্ত রাজ্যের মালিক আপনিই। আপনি যাকে ইচ্ছা বাদশাহী দান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা করেন বাদশাহী ছিনিয়ে নেন। যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা আপমানিত করেন। আপনারই হাত মুবারক-এ রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ।” (সূরা আলে ইমরান: আয়াত শরীফ ২৬)
কাজেই, কেউ যদি মান-সম্মান হাছিল করতে চায় তার উচিত মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হওয়া এবং উনার মুহব্বত হাছিলের জন্য কোশেশ করা। আর এ বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে ইলমে তাছাউফের মধ্যে বিদ্যমান।
তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল