তাফসীরুল কুরআন: সুন্নতের ইত্তিবা বা অনুসরণ ব্যতীত জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অসম্ভব

সংখ্যা: ১৮৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

খালিক্ব, মালিক, রব্বুল আলামীন আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহু তাঁর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উম্মতের হিদায়েতকারী বা পথপ্রদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছেন। এটা স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে এই উম্মতের প্রতি এক বড় ইহ্সান।

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা বা মাধ্যমেই উম্মত তাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা আল্লাহ পাক-এর পরিচয় লাভ করেছে, জানতে পেরেছে তাঁর হুকুম বা আদেশ-নিষেধসমূহ এবং আরো জেনেছে নিজেদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে।

মূলতঃ আল্লাহ পাক মানুষকে আশরাফুল মাখলূকাত হিসেবে ঘোষণা করেছেন এবং তারমধ্যে আবার আশরাফুল উম্মত হিসেবে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতকে ঘোষণা করা হয়েছে।

এই উম্মতের জন্য করণীয় কি সে সম্পর্কে আল্লাহ পাক স্বীয় কালাম পাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ পাক বলেন, যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালা’র মুহব্বত-মা’রিফাত, সন্তুষ্টি-রিযামন্দি চাও আর আল্লাহ তায়ালা’র অসন্তুষ্টি ও লা’নত থেকে, জাহান্নামের আযাব-গযব থেকে পরিত্রাণ পেতে চাও, তাহলে যিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্তিবা বা অনুসরণ করো।

মনে রাখতে হবে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ তথা সুন্নতের অনুসরণই হচ্ছে আল্লাহ পাক-এর অনুসরণ। আল্লাহ পাক বলেন, “যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করলো, সে আল্লাহ পাক-এরই অনুসরণ করলো।” মূলতঃ সুন্নতের অনুসরণ মানেই শরীয়তের অনুসরণ। কোন ফরয কিংবা কোন ওয়াজিবও সুন্নত থেকে খালি নয়। সুন্নত অনুসরণীয় আমলই আমলে ছালেহ। সুতরাং, সুন্নত না মানা বা আমল না করার অর্থই হচ্ছে শরীয়ত না মানা।

ফলে, সুন্নতের অনুসরণ জন্ম থেকে মৃত্যু এমনকি মৃত্যুর পরেও করার নির্দেশ করা হয়েছে। প্রশ্ন হতে পারে, জন্মের সময় তো নবজাতক উম্মত অবুঝ থাকে। আবার মৃত্যুর পর উম্মতের কোন ক্ষমতা থাকে না। তখন কিভাবে তারা সুন্নত পালন করবে?

হ্যাঁ, উক্ত দু’সময়ে উম্মত অবুঝ ও অক্ষম থাকে। যার কারণে অবুঝ সন্তানের যারা অভিভাবক এবং মৃত ব্যক্তির যারা ওয়ারিছ, জ্ঞাতী-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী তাদের মাধ্যমে আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত পালনের বিষয়টি সমাধা করিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

প্রকৃতপক্ষে, উক্ত দু’ অবস্থায় উম্মতের অপারগতা সত্ত্বেও আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত পালন করিয়ে নেয়ার মাধ্যমে পরকালে উম্মতকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন করবেন। আল্লাহ পাক বলবেন, হে উম্মত! তুমি যখন অবুঝ ছিলে, অক্ষম ছিলে তখন কিন্তু আমি আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতগুলি তোমার মধ্যে জারি করেছিলাম। জন্মের পর সুন্নতি নিয়মে তোমার নাভী কাটা হয়েছিল, গোসল দেয়া হয়েছিল, ডান কানে আযান, বাম কানে ইক্বামত দেয়া হয়েছিল, মধু দিয়ে তাহনীক করা হয়েছিল। সপ্তম দিনে চুল, নখ কাটা হয়েছিল, শরীয়তসম্মত নাম রাখা হয়েছিল এবং আক্বীক্বা দেয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

আবার তুমি যখন মৃত্যুবরণ করলে, তোমাকে ডান কাঁধে শোয়ানোর ব্যবস্থা করানো হয়েছিল, বড়ই পাতা দিয়ে কুসুম গরম পানি করে তোমাকে গোসল করানো হয়েছিল, অতঃপর পুরুষ হলে তিন কাপড় আর মহিলা হলে পাঁচ কাপড় দিয়ে কাফন পরিধান করিয়ে আতর-গোলাপ মাখানো হয়েছিল, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, দুয়া-দুরূদ, তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করানো হয়েছিল, জানাযা দেয়া হয়েছিল, তোমার মাগফিরাত ও নাজাতের ব্যাপারে দুয়া করানো হয়েছিল। অতঃপর খাটিয়ায় করে অত্যন্ত সাবধানে গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং সেখানে কিন্তু তোমাকে কুকুর শৃগালের মৃত দেহের মত মাটি চাপা দেয়া হয়নি। বরং তোমাকে সুন্নতি কায়দায় খননকৃত কবরে দাফন করা হয়েছিল। অতঃপর মুনকার-নাকীর ফেরেশ্তাদ্বয়ের সুওয়াল-জাওয়াব দিতে যাতে সহজ হয় সেজন্য কবরের উপর তালকীন দেয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।

এখন তুমি জবাব দাও, যখন তুমি অবুঝ ছিলে, অক্ষম ছিলে তখন আমি তোমার মধ্যে সুন্নত জারি করেছিলাম কিন্তু তোমার যখন জ্ঞান-বুঝ হলো, তোমাকে শরীয়ত ও সুন্নত পালনের হুকুম দেয়া হলো এবং সেটা পালনের সাধ্য-সামর্থ্য, ক্ষমতা সবকিছুই তোমার ছিল তখন সেটা কতুটুকু বাস্তবায়ন করেছ তার জাওয়াব দাও। যথাযথ জাওয়াব দিতে পারলে তো বেঁচে যাবে। আর জাওয়াব দিতে না পারলে কিংবা গরিমসি করলে তো বাঁচতে পারবে না।

যারা জাওয়াব দিতে পারবে না তখন তারা হা-হুতাশ করতে থাকবে। হা-হুতাশ করে তারা কি বলতে থাকবে তা কালামুল্লাহ শরীফ-এর বর্ণনায় শুনুন। “যেদিন জাহান্নামের আগুনে তাদের মুখমণ্ডল ঝলসিয়ে দেয়া হবে সেদিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আনুগত্য করতাম।” (সূরা আহযাব-৬৬)

তাফসীরুল কুরআন: কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-৮

তাফসীরুল কুরআন : কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-৯

তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল

তাফসীরুল কুরআন: কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-১০

তাফসীরুল কুরআন:  কুরআন ও সুন্নাহ’র বিধান অনুসারে চলা প্রত্যেকের জন্য ফরয অন্যথায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ-১১