يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِىْ الصُّدُوْرِ. وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَجْمَعُوْنَ
তরজমা: “হে মানুষেরা! তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন মহান নছীহতকারী, অন্তরের মহান আরোগ্য দানকারী, মহান হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য মহান রহমত দানকারী। (অতএব, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ফদ্বল ও সম্মানিত রহমতস্বরূপ আপনাকে যে তারা পেয়েছে, সেজন্য তাদের প্রতি কর্তব্য তথা ফরয হচ্ছে খুশি প্রকাশ করা। এই খুশি প্রকাশের ইবাদত হবে তাদের সমস্ত ইবাদত বা আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭, ৫৮)
তাফসীর : উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে খুশি প্রকাশ করার জন্য সমস্ত কায়িনাতবাসীকে আদেশ মুবারক করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে খুশি প্রকাশ করার বিষয়টি সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার মুবারক হাদিয়া করেছি। অতএব, আপনি আপনার মহান রব উনার উদ্দেশ্যে নামায পড়–ন এবং কুরবানী করুন। নিশ্চয়ই আপনার শত্রুরাই নির্বংশ।” (সূরা কাওছার শরীফ)।
স্মরণীয় যে, উক্ত ১নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে কায়িনাতবাসীর জন্য নিয়ামত সমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত মুবারক হাদিয়া করেছেন সে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। যেমন সম্মানিত কাওছার শরীফ উনার ব্যাখ্যায় দু’টি নিয়ামত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। (এক) হাওযে কাওছার; যার সুমিষ্ট পানি ব্যতীত হাশরের ময়দানে আর কোনো পানি থাকবে না। আর উক্ত পানি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অনুমতি ব্যতীত কেউ লাভ করতে পারবে না। (দুই) খইরে কাছীর অর্থাৎ সমস্ত খইর বা শ্রেষ্ঠ বিষয়। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু কায়িনাত বা মাখলূক্বাতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সেহেতু উনার সাথে নিসবত-তায়াল্লুক বা সম্পর্কযুক্ত বিষয়সমূহই অন্যান্য সমস্ত কিছু থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ। ব্যক্তি হোন, বস্তু হোন, বছর, মাস, দিন, তারিখ ইত্যাদি সবকিছুই সর্বশ্রেষ্ঠ।
পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ উনার ২নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি আদেশ মুবারক করেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যে ছলাত আদায় করো বা পেশ করো এবং কুরবানী করো। এখন সম্মানিত ছলাত উনার এক অর্থ নামায; যা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য পড়া হয়। আর অপর অর্থ প্রশংসা বা ছানা-ছিফত; যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে পেশ করা হয়।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَه يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে ছলাত পেশ করেন। হে ঈমানদাররা! উনার সুমহান শানে তোমরাও ছলাত পেশ করো এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে সালাম মুবারক পেশ করো।”
আর উনার জন্য কুরবানী করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّٰـى أَكُوْنَ اَحَبَّ اِلَيْهِ مِنْ وَّالِدِهٖ وَوَلَدِهٖ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ وَفِـىْ رِوَايَةٍ مِنْ مَّالِهٖ وَنَفْسِهٖ
অর্থ: তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত মানুষ থেকে আমাকে সবচেয়ে বেশি মুহব্বত না করবে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তার ধন-সম্পদ ও তার জীবন অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত না করবে। (মিশকাত শরীফ)
অতঃপর ৩নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে যারা ছলাত শরীফ পেশ করবে না, সালাম মুবারক পেশ করবে না, উনার প্রশংসা বা ছানা-ছিফত মুবারক করবে না এবং উনার মুহ্ববতে খরচ করবে না, মুহব্বতে মাল- জান ইত্যাদি কুরবানী করবে না তারা নির্বংশ, নিশ্চিহ্ন ও ধ্বংস হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ!
তাফসীরুল কুরআন: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল