তাফসীরুল কুরআন: সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালনই সর্বশ্রেষ্ঠ আমল

সংখ্যা: ২৬৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

يَا اَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِىْ الصُّدُوْرِ. وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ بِفَضْلِ اللّٰـهِ وَبِرَحْمَتِه فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يَجْمَعُوْنَ

তরজমা: “হে মানুষেরা! তোমাদের রব তায়ালা উনার তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন মহান নছীহতকারী, অন্তরের মহান আরোগ্য দানকারী, মহান হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য মহান রহমত দানকারী। (অতএব, আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ফদ্বল ও সম্মানিত রহমতস্বরূপ আপনাকে যে তারা পেয়েছে, সেজন্য তাদের প্রতি কর্তব্য তথা ফরয হচ্ছে খুশি প্রকাশ করা। এই খুশি প্রকাশের ইবাদত মুবারক হবে তাদের সমস্ত ইবাদত বা আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭, ৫৮)

তাফসীর : নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মহান নছীহতকারী সে সম্পর্কে ছাহাবী হযরত ইরবাদ্ব ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একটি বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি একবার নামায পড়ানোর পর উনার মুখ মুবারক আমাদের  দিকে ফিরালেন। অতঃপর আমাদের উদ্দেশ্যে مَوْعِظَةً بَلِيْغَةً “মর্মস্পর্শী নছীহত” মুবারক করলেন। (আহমদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ইত্যাদি)

অপর এক বর্ণনায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাবধান! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে অনেক বিষয়ে আদেশ মুবারক দিয়েছি, অনেক বিষয়ে وَوَعَظْتُ “উপদেশ মুবারক দিয়েছি বা নছীহত মুবারক করেছি” এবং অনেক বিষয় নিষেধও করেছি। (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)

অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মহান নছীহতকারী বা উপদেশ দানকারী তা উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত ও প্রতিভাত।

দ্বিতীয়ত: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্তরের শেফা বা আরোগ্য দানকারী। অন্তর আরোগ্য করার অর্থ হচ্ছে পরিশুদ্ধ করা, সংশোধন করা, পবিত্র করা ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, মানুষের অন্তর অনেকটা আয়নার মতো। যেমন স্বচ্ছ আয়নায় সবকিছু পরিষ্কার দেখা যায়। অনুরূপ যদি মুসলমানের অন্তর পরিষ্কার হয় তা দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত আরশ, কুরসী, লওহো, ক্বলম এমনকি স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার তাজাল্লী মুবারক দৃষ্টিগোচর হয়। সুবহানাল্লাহ!

যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

وَفِىْ اَنْفُسِكُمْ ۚ اَفَلَا تُبْصِرُوْنَ

অর্থাৎ আমি তোমাদের অন্তরসমূহে আছি, তোমরা কেন দেখছো না। (পবিত্র সূরা যারিয়াত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)

আর আয়না যদি অপরিষ্কার হয় তখন কোনো কাজে আসে না। আয়নাকে ধূলা-বালি অস্পষ্ট ও অপরিষ্কার করে ফেলে। তদ্রƒপ অন্তরকে বদ আক্বীদা, মন্দ আমল, লিপ্সা, হিংসা ইত্যাদি ঝাপসা করে দেয়। অপরিষ্কার বা ঝাপসা আয়না কাপড় দ্বারা মুছে দিলে যেমন পরিষ্কার হয়ে যায়, তেমনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত ও অনুসরণ মুবারক ঝাপসা অন্তরকে স্বচ্ছ ও পরিষ্কার করে দেয়। সুবহানল্লাহ!

আমীরুল মু’মিনীন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বলা হয়েছিল, আপনি যা ইচ্ছা করুন, আপনি জান্নাতী, কোনো কিছুই আপনাকে ক্ষতি করতে পারবে না। এখানে উনাকে গুনাহর অনুমতি প্রদান করা হয়নি। বরং উনার অন্তরকে মুত্মাইন্নাহ করে দেয়া হয়েছিল। ফলে তিনি আর মন্দ কাজ করতে পারেন না।

মূলত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহ্ববত ও আনুগত্য মুবারক দ্বারা সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তরসমূহ ‘মুত্মাইন্নাহ’ হয়ে গিয়েছিল। সুবহানাল্লাহ!

এমনিভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক গ্রহণের পর উনার মনোনীত ও নিসবতপ্রাপ্ত খলীফা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাদের মুহব্বত ও আনুগত্যে অন্তর মুত্মাইন্নাহ হয়ে যায়। যার কারণে প্রত্যেক জিন-ইনসান পুরুষ মহিলাদের জন্য কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয সাব্যস্ত হয়েছে।

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনা দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সমস্ত কায়িনাতবাসীর প্রতি মহান নছীহতকারী ও অন্তরের শিফা দানকারী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন সে বিষয়টি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। সুবহানাল্লাহ!

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৪

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরণের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৫

তাফসীরুল কুরআন: যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৬

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৭

তাফসীরুল কুরআন যে কোনো ধরনের যুলূম বা অত্যাচার ছারাছার হারাম এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য- ৮